হাড়কাটা টু কালীঘাট – রাতচরা পাখী
(সুপ্রিয় চৌধুরী)
‘মাঘের শীত বাঘের গায়’। ছেলেবেলায় অনেকবার শুনেছি প্রবাদটা। মা দিদিমার মুখে। কোলকাতায় তেমন শীত পড়ে না বহুকাল হল। তবে অনেকদিন পর জাঁকিয়ে একটা লম্বা ইনিংস খেলছে এবারের ঠান্ডাটা। পৌষ টপকে মাঘের পাঁচ। তবুও উইকেট ছেড়ে প্যাভেলিয়ানে ফেরার নাম নেই। রাত সাড়ে আটটা। বৌবাজার থুড়ি বি বি গাঙ্গুলী স্ট্রিট আর প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রিটের মোড়ে, কোলকাতার সবচেয়ে ছোট বাংলার দোকানটার ( শহরের একমাত্র বাংলা মদের দোকান যেখানে বসে খাওয়ার ব্যবস্থা নেই, মাল নিয়ে জাস্ট ফুটে যেতে হয় ) পাশে চেপা গলিটার মধ্যে দাঁড়িয়ে আছি আমি আর স্বপন। কাঠের গোডাউনের লম্বা লম্বা চেরাই কাঠের ওপর রাখা একটা বাংলার বোতল। পাশে শালপাতায় বিটনুন ছড়ানো বাতাবিলেবু আর ঝালমশলা মাখানো কাঁচা ছোলার ভিটামিন। স্বপন মানে স্বপন কুমার দেব। বেঁটেখাটো পেটা চেহারা। বাঁ গালে আড়াআড়ি একটা ক্ষুরের দাগ। একসময় বৌবাজার এলাকার ত্রাস। বর্তমানে রিটায়ার্ড ফ্রম আন্ডারওয়ার্ল্ড কোম্পানি। জীবনদর্শন খুব সহজ। যে মুহূর্তে যে পলিটিক্যাল পার্টি রাজ্যে পাওয়ারে আসবে, জেট স্পিডে পুরোন জার্সি ছেড়ে ধাঁ করে সেখানে পাল্টি মেরে দাও। বামফ্রন্ট জমানায় স্বপন ছিল সি পি এম। ৯০-এর দশকে একটা মিউনিসিপাল ইলেকশনে হাতে মুঙ্গেরি ওয়ান শটার নিয়ে সাঙ্গোপাঙ্গোদের সঙ্গে এলাকা দাপিয়ে বেড়ানোর ছবি ছাপা হয়ে বেরিয়েছিল তখনকার প্রায় প্রত্যেকটা খবরের কাগজে। অ্যাকশনের সময় গালে একটা পেটোর স্প্লিন্টার লেগেছিল। লোকাল কমিটির নেতার নির্দেশে তৎক্ষণাৎ গিয়ে নীলরতনের বেডে শুয়ে পড়তে হয়েছিল গালে পুলটিস লাগিয়ে। পরদিন সকালে দলীয় মুখপত্রে সাদাকালো ছবিসহ নিউজ ‘কংগ্রেস আশ্রিত দুষ্কৃতিদের বোমার আঘাতে আহত কমরেড স্বপন কুমার দেব।’ ভোটে জিতে কাউন্সিলার হয়েছিলেন সেই এল সি-র নেতা। বেজায় খুশি স্বাভাবিকভাবেই। “বল কি চাই তোর?” জিগ্যেস করেছিলেন ভুতের রাজার মত ‘হঁবে হঁবে সঁব হঁবে’ মার্কা গলায়। “ফুটে মাছের দোকান দোবো দাদা, একটা জায়গার ব্যবস্থা করে দিতে হবে। এর সঙ্গে একটা ব্যাঙ্ক লোনফোনের ব্যাওস্তা যদি হয়….মানে দোকান চালাতে পুঁজিটুজি তো কিছু লাগবে।” ঝোপ বুঝে মোক্ষোম কোপটা মেরেছিল স্বপন।পরদিন সকালেই বৌবাজার কালোয়ারপট্টির ফুটপাতে স্বপনের জন্য জায়গা ফিক্সড! সেসময় একটা রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক ‘বেকারি দূরীকরণ’ না কি একটা প্রকল্পে হাজার পঁচিশেক টাকার লোন দিচ্ছিল। স্বপনের জন্য সেটা গ্রান্টেড হয়েছিল জেটগতিতে। “টাকাটা নিয়ে কি করেছিলে বস ?” প্রশ্ন করেছিলাম আমি। “আগেই বউয়ের কাছে বিশ গাড্ডি (হাজার) রেখে দিলুম। নইলে শালী হেব্বি কিচায়েন করবে” ( নিজে এলাকার ত্রাস হলেও বউকে যমের মত ভয় পেত )। “বাকি পাঁচ হাজার নিয়ে কি করলে?” প্রশ্ন করেছিলাম ফের। “সোনাগাছি চলে গেলুম।” নির্বিকার মুখে জবাব দিয়েছিল স্বপন। সত্যিমিথ্যে জানা নেই, মধ্যপ্রাচ্যের কোন একটা দেশে নাকি স্মাগলিং করার জন্য ব্যাঙ্কলোন দেয়। কিন্তু সোনাগাছি যাওয়ার জন্য লোন! আমার অন্তত জানা নেই। স্বপনের লোন শোধ হয়নি স্বাভাবিকভাবেই। কিন্তু পাড়ায় উপাধি পেয়েছিল ‘মাছ স্বপন’।
স্বপন এখনো সেই কালোয়ারপট্টির ফুটে মাছের দোকান। খুব অল্পবয়েসেই বেমক্কা প্রেমে পড়ে কালী টেম্পলে সিঁদুর দেগে দিয়ে লাভম্যারেজ। ফলে ছেলেমেয়েরা বড় হয়ে গ্যাছে। মেয়ের বিয়ে হয়েছে খাল গড়িয়ায়। স্বামীরও রেলবাজারে মাছের দোকান। পরে দুই ছেলের মধ্যে বড়জন, বৌবাজার স্ট্রিটের ফুটে রোল-চাউমিন-চিলিচিকেনের স্টল। ছোট ছেলেরটা শশীভূষণ দে স্ট্রিটে। চানা-কুলচা। দুজনেই টি এম সি। স্বপনের নীতি এবং পথনির্দেশ অনুযায়ী।
রাত দশটা বাজতে পাঁচ। বোতলের তলানিটুকু সমান দুভাগে দুজনের ভাঁড়ে ভাগ করলো স্বপন। স্প্রাইট মেশালো যত্ন করে। নিজেরটা এক চুমুকে শেষ করে উঠে দাঁড়ালো চেরা কাঠের ফালির সিট ছেড়ে । মুখে একটা অতৃপ্তির ছাপ। “ধ্যুত্ বাঁড়া ! ঠিক জমলোনা মাইরি। এদিকে দোকান তো বন্ধ হয়ে গ্যাছে সেই নটায়। বালের সরকারী নিয়ম যত্তসব। চলো ভোলাদার ঠেকে যাই।” অতএব স্বপনের অনুসারী হয়ে যাত্রা গলির ভেতরে। প্রেমচাঁদ বড়াল স্ট্রিট। এলাকার লোকের মুখে হারকাটা গলি। কলকাতার শতাব্দী পেরনো অন্যতম প্রাচীণ বেশ্যাপল্লী। নাম নিয়ে প্রচুর বিতর্ক রয়েছে এলাকার প্রবীণ মানুষজন এবং কোলকাতা বিশেষজ্ঞদের মধ্যে। কারো মতে আগে এইসব অঞ্চলে মহিলাদের গয়না ছিনতাই হত খুব জোর। সেই থেকে জায়গার এরকম নাম হয়েছে। কেউ বলেন পাশেই মির্জাপুর আর আমহার্স্ট স্ট্রিট এলাকার শাঁখারিপট্টির কারিগরেরা থাকতেন এই অঞ্চলে। যেহেতু হাড় কেটে শাঁখা তৈরি হয়, সেই কারণেই এর নাম হারকাটা নয়, হাড়কাটা গলি। আরেকদল বলে থাকেন – “ধ্যুৎ ,ওরা কিস্যু জানে না। দেখছো না এলাকা জুড়ে কত্ত সোনার দোকান। সেইসব স্যাকরা মানে সোনার কারিগররা তো থাকেই এখানে। সোনা কেটে হারে ডিজাইন তোলা হয় তাই এ পাড়ার নাম হারকাটা গলি। যাকগে, নামটাম নিয়ে জ্ঞানবৃদ্ধ আর শহরবিশারদরা কচকচ করুন। ওসব মাথা থেকে হাটিয়ে হে মহামহিম পাঠককূল, স্বপনের পিছু পিছু আমাকে অনুসরণ করুন অনুগ্রহ করে।
সরু গলিটা ধরে পা-বিশেক এগিয়ে হাতের বাঁফুটে নিষিদ্ধপল্লীর প্রথম বাড়িটা। তিনতলা, বহু পুরনো। সামনের রোয়াক আর দরজা দিয়ে ঢোকার গলিটায় সার দিয়ে বসে দাঁড়িয়ে নানাবয়েসী মেয়েরা। সস্তা রঙচঙে শাড়ী, টাইট সালোয়ার-কামিজ, ততোধিক সস্তা এবং উগ্র মেক-আপ। বেশিরভাগই উত্তর আর দক্ষিন ২৪ পরগণার মেয়ে। এলাকার কোডভাষায় এরা ‘ফেলাইন (ফ্লাইং)’। কেউই এখানকার স্থায়ী বাসিন্দা নয়। ভোরের ট্রেন ধরে সকাল সাড়ে দশটা এগারোটা নাগাদ ঢুকে পড়ে এলাকায়। সারাদিন কামিয়ে ধামিয়ে মোটামূটি শ-দুই আড়াই হলেই শেয়ালদায় লাস্ট ট্রেন ছাড়ার মিনিট পঁচিশ আগে বেরিয়ে পড়ে লাইনপাড়া ছেড়ে। ঘরে কারখানা লকআউট হয়ে যাওয়া কিম্বা কাঠবেকার চোলাইখোর স্বামী, আন্ডাবাচ্চা, বুড়ো এবং অবধারিতভাবে অসুস্থ শ্বশুর শাশুড়ি। “আর বোলো না দাদা, ৯০-এর গোড়া থেকে সেই যে চারপাশে কারখানা বন্ধের ধূম লাগলো, গোটা এলাকাটা শ্লা চেরা সায়ায় ( ফ্লাইং মেয়েদের আরেক কোডনাম ) ভরে গেল অ্যাকেবারে। এখন বাড়িওয়ালিরাও আর পার্মানেন্ট মেয়ে রাখতে চায় না তেমন একটা। পার্মানেন্ট ছুকরি রাখলেই তার দখল আর কামাই নিয়ে পাড়ার যত সেয়ানা আর ছেলেছোকরাদের মধ্যে বাওয়াল, মামুদের (পুলিশ) হুজ্জুত ফৈজত। কোন শ্লা যেতে চায় এসব ছেঁড়া ঝামেলায়। কাজ সেরে মাগী বেরিয়ে গেলে কাস্টমার পিছু আধিয়া ( কমিশন ) নিয়ে নাও। এ ধান্দায় ঘেন্না ধরে গেলে যে কোন সোনাওয়ালার কাছে তিনডবল দামে ঘর বেচে দিয়ে দেশগাঁয়ের বাড়িতে ফিরে গিয়ে পায়ের ওপর পা তুলে বসে খাও ড্যাংড্যাং করে। মুম্বাই, দুবাই থেকে পেটি পেটি (লাখ লাখ) নোট কামিয়ে নিয়ে আসছে ছোকরা কারিগররা। একটা অ্যাতোটুকু খুপড়ি ঘরের জন্য মুহমাঙ্গা দাম দিয়ে দিচ্ছে। এভাবেই তো শালা এই হাড়কাটা লাইনপাড়ার আদ্দেক ঘর সোনার কারখানায় বদলে গ্যাছে।” ফোঁৎ করে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো স্বপন।
প্রথম বাড়িটা শুরু হবার মুখেই উল্টোফুটে ভোলাদার সিগারেটের দোকান। পেছনের র্যাকে সিগারেট। কোম্পানির লাল ফ্রিজে কোল্ড ড্রিঙ্কস। সামনে বড় ট্রেতে সাজানো কাঁচা ছোলা, কাটা বাতাবিলেবু-পেয়ারা, কাঁচের বয়ামে সস্তা চানাচুর, ব্রয়লার মুর্গির ছাঁট-চর্বির বড়া, গিলেমেটের চচ্চড়ি, বাটিতে রাখা চাট মশলা আর বিটনুন। “ভোলাদা, একটা খাম্বা ( পাঁইট )।” গম্ভীর গলায় বললো স্বপন। ভোলাদা। ষাটোর্ধ। এই বয়েসেও ছিপছিপে শক্তপোক্ত চেহারা। মাঘের কড়া শীতেও গায়ে স্রেফ একটা হাফহাতা উলিকট। পাড়ার সিনিয়ার যৌনকর্মী শান্তিদির চল্লিশ বছরের বাবু। ততোধিক গম্ভীর গলায় বললো – “গলিতে যা, পাঠাচ্ছি।” এখানেও একটা গলি। টেবিল বলতে উপুড় করে রাখা একটা ফাটা বাথটব । আরো দুতিনজন খাচ্ছে। পাঁইট, জলের বোতল, স্প্রাইট আর চাট নিয়ে এল একটা বাচ্চা ছেলে। গায়ে সায়েবমরা উইন্ডচিটার। সিক্স পকেটস বারমুডা। এবার আর স্লো নয়। কুইক শট। একেকজন বড় বড় তিনটে করে পাটিয়ালা পেগে পাঁইট শেষ। “চলো বস।” ভোলাদার দোকানে টাকা মিটিয়ে বললো স্বপন।
রাত পৌনে এগারোটা। দ্রুত এলাকা ছেড়ে বেড়িয়ে যাচ্ছে ফ্লাইং মেয়েরা। পার্মানেন্ট কাস্টমারের সঙ্গে আগে থেকে পাকা কথা না বলা থাকলে একমাত্র সোনাগাছি ছাড়া শহরের আর কোন লাইনপাড়া সারারাত খোলা থাকেনা। ফলে দ্রুত ফাঁকা হয়ে আসছে হাড়কাটা গলি। শ-তিনেক মিটার হেঁটে এসে নিষিদ্ধপল্লীর শেষ বাড়িটার একদম গা ঘেঁষেই গেরস্ত পাড়া। শ্রীগোপাল মল্লিক লেন। গলিটা ধরে অজস্র সরু সরু ফ্যাঁকড়া আর গলতাকে পিছনে ফেলে এগিয়ে গেলে পুঁটিরামের গায়ে দুনিয়ার সবচেয়ে সরু গলতাটা। দুজন প্রমাণ সাইজের মানুষ পাশাপাশি হেঁটে যেতে পারবেনা, এতটাই চেপা। ঠাসাঠাসি করে বেরিয়ে এলেই সূর্য সেন স্ট্রিট। আশপাশে ভবানী দত্ত লেন, রামকান্ত মিস্ত্রি লেন, রমানাথ মজুমদার স্ট্রিট, বেনেটোলা, আরো অনেক, অনেক সব গলি। যদিও এইমুহূর্তে ওসব দিকে ঢোকার কোন গল্প নেই। তবু এই এলাকার অলিগলি ধরে হেঁটে গেলেই বুকের মধ্যে হড়পা বানের মত লাফ দিয়ে নামা কত, কত স্মৃতি। সত্তরের দশক। এলাকার প্রত্যেকটা গলি, ঠিক যেন ভিয়েতনাম! বাতাসে বারুদের গন্ধ। পেটো(হাতবোমা), ছিটকিনি পাইপগান আর ১২বোরের দানা (বুলেট)। পুরোদস্তুর যুদ্ধ পরিস্থিতি ! দেয়ালে দেয়ালে স্টেনসিলে আঁকা চেয়ারম্যান মাও। রাতের অন্ধকারে সি আর পির ভারী বুটের শব্দ। গলিতে ঢুকে পড়া ডি ডি-র খোঁচড় ভর্তি অ্যাম্বাসাডার, পিছনে পিছনে কালো ভ্যান। বাড়ির ছাদে ছাদে পেটো আর মলোটভ ককটেল হাতে প্রদীপদা, কেষ্টদা, দোদুলদা, বিধুদা, অনুপদা, শঙ্কুদা, গোবিন্দ, সুকুমারদা, রানাদা…আরো কত ভুলে যাওয়া নাম…আগুনে সময়ের সন্তান সব। এই অধম তখন ক্লাস টেন। উত্তর আর মধ্য কলকাতা স্কুল কমিটির ক্যুরিয়ার। জামার কলারের ভাঁজে চোরপকেটে নিষিদ্ধ ইস্তেহার আর গোপাল জাঙ্গিয়ার ভেতরে আট ভাঁজ করা দেশব্রতী নিয়ে পৌঁছে যাচ্ছে ইশকুলে ইশকুলে ….হোয়ার হ্যাভ অল দ্য ফ্লাওয়ারস গন! কলেজ স্ট্রিট আর ভবানী দত্ত লেনের মোড়ে আজ জীর্ণ রঙচটা একটা শহীদ বেদী, প্রায় মুছে যাওয়া, খুব অস্পষ্ট কয়েকটা নাম ! অনুপ, শঙ্কু, কেষ্ট, বিধু, গোবিন্দ, সুকুমার…।
“কি হলো দাদা? ওরকম হুব্বা মেরে দাঁড়িয়ে পড়লে ক্যানো? খোঁতায় (বাড়ি) ফিরতে হবে তো।” জড়ানো গলায় তাড়া লাগালো স্বপন। এতক্ষণে একটু চড়ে গেছে মনে হচ্ছে। ওর কথায় চটকাটা কেটে গেল। এসে দাঁড়ালাম মোড়ের মাথায়। ট্রামলাইন ঘেঁষা সরু ফুটপাতে। গলির একপাশে সিঁড়িওয়ালা কালী মন্দির। অন্যপাশে গোপাল মুখুজ্জের পাঁঠার মাংসের দোকান। গোপাল মুখুজ্জে। ৪০ থেকে ৬০এর দশক। আনক্রাউন্ড কিং অফ ক্যালকাটা আন্ডারওয়ার্ল্ড! এ শহরের ডন ভিটো কর্লিয়নি। পাঁঠার মাংসের দোকানের মালিক। তাই বিখ্যাত অথবা কুখ্যাত ছিলেন গোপাল পাঁঠা নামে।
এইসব পাঁচপ্যাঁচালি ভাবনার মাঝখানেই ধপ করে মন্দিরের মার্বেল বাঁধানো সিঁড়িতে বসে পড়লো স্বপন। জড়ানো গলা আরও জড়ানো, “বাড়ি ফিরলে ছাবি (বউ) বহুত খ্যাচম্যাচ করবে।” বলতে বলতেই সটান শয়ানে পদ্মলোচন সিঁড়িতে। মিনিটখানেকের মধ্যেই গুরুগম্ভীর নাসিকাগর্জন।
অতঃপর কি আর করা! স্বপনকে মহামায়ার জিম্মায় জমা রেখে হালকা টাপলা খেতে খেতে এসে দাঁড়ানো বউবাজারের মোড়ে। রাত এগারোটা দশ। উল্টোফুটে ছানাপট্টি, একটু এগিয়ে ভীম নাগ, নবকৃষ্ণ গুঁই, জয়শ্রী, বৌবাজার মার্কেটের গাড়িবারান্দার নীচে গুটকে কচুরি, তেলেভাজা আর বিশাল কড়াইয়ে জাল দেয়া রাবড়ির দোকান, উল্টোফুটে বহুকাল আগে উঠে যাওয়া বঙ্গলক্ষী রেস্তোঁরা। ভুবনভোলানো ডিমের ডেভিল আর মাটন কাটলেটের স্মৃতি! বাঙ্গালী ভোজনরসনার জাদুঠিকানা সব! এইমুহূর্তে ঝাঁপ বন্ধ সবার। এসবকে পেছনে ফেলে সোজা হাঁটা লাগানো বি বি গাঙ্গুলী স্ট্রিট ধরে। ব্যাঙ্ক অফ ইন্ডিয়ার মোড়ের পর থেকে শেয়ালদা ফ্লাইওভার অবধি রাস্তাটা সন্ধেবেলা গিজগিজ করে ভিড়ে। সব্জীওয়ালি মাসিদের হাঁকডাক, আপিসফেরত বাবুদের ট্রেন ধরার ছুট, কোলেমার্কেটের খালাসি আর মুটেদের হল্লাহাটি, ছোট হাতী আর ম্যাটাডোরের প্যাঁপোঁ, সব প্রায় নিশ্চুপ এখন। রাস্তাঘাট বলতে গেলে ফাঁকা। ফুটের ধারে পার্ক করে রাখা ম্যাটাডোর আর ভ্যানরিকশার ওপর অঘোর ঘুমে সব্জী আর মাছের পাইকিরি বাজারের খালাসিরা। কাল ভোরের আলো ফোটার আগেই উঠে কাজে লাগতে হবে। ফ্লাইওভারের তলায় প্রায়ান্ধকার সুড়ঙ্গপথটায় ঢুকতেই গা ছমছমে ভাব একটা। আবছা হলুদ আলোয় দু-চার হাত অন্তর অন্তর মাথার ওপর ছেঁড়া আর নোংরা কম্বল অথবা চাদর ঢাকা দিয়ে তিন চারটে করে ছায়ামূর্তি। শুকনো ক্ষয়া ক্ষয়া চেহারা। মলিন, ময়লা জামাকাপড়। কাঁপা কাঁপা হাতে ধরা রাংতার ওপর গলন্ত কালচে ব্রাউন সুগার। চালু ভাষায় ‘পাতা’। রাংতার তলায় জ্বলতে থাকা দেশলাই কাঠি অথবা সস্তা লাইটারের আগুন। শিরশিরিয়ে উঠতে থাকা নীলচে বিষের ধোঁয়া। ঠোঁটে ধরা কাগজের পাইপে করে গরল টেনে নিচ্ছে বুকের মধ্যে। বদ্ধ বাতাসে হেরোইনের গা গোলানো কটুগন্ধ। সুড়ঙ্গের আলোআঁধারির রহস্যময় খেলায় কেমন একটা ঘষা -ঘষা ধোঁয়াটে প্রেতমূর্তির মত দেখাচ্ছে ছায়ামানুষগুলোকে।
সুড়ঙ্গ থেকে বেরিয়েই এন আর এসের ফুটপাত। উল্টোফুটে প্রাচী। ফ্রন্ট স্টল, রিয়ার স্টাল, ব্যালকনির বদলে টিকেটের ওপর ছাপা বাংলা নাম – প্রথমা, মধ্যমা, অলিন্দ্য…আগে শুধু বাংলা সিনেমাই দেখানো হত। মাল্টিপ্লেক্সের সঙ্গে মরনপণ প্রতিযোগিতায় টিকে থাকার জন্য আপোস করতে হয়েছে ইদানীং। পুরোন ঐতিহ্য ধরে রাখা যায়নি, তবু শহরে টিমটিম করে টিকে থাকা হাতে গোনা গুটিকয়েক সিঙ্গল স্ক্রিনের মধ্যে দাঁড়িয়ে আছে মোটামুটি মাথা উঁচু করে। হাসপাতাল চত্বরে ইতিউতি পেশেন্ট পার্টির জটলা। প্রাচীর গায়ে লোরেটোর পর থেকে সার সার ওষুধের দোকান। সকাল-সন্ধে বেজায় ভিড়ে ঠাসা জায়গাটা শুনশান এই মুহূর্তে। পেশেন্ট পার্টির প্রয়োজনে রাতজাগা মাত্তর দুতিনটে দোকানের ঝাঁপ খোলা। রাস্তায় গাড়িঘোড়া নেই বললেই চলে।
আলগোছে এইসব দেখাশুনোর ফাঁকেই শীতরাতের কুয়াশা আর নিস্তব্ধতা চিরে তীক্ষ্ণ শব্দে হুটার বাজাতে বাজাতে তীরবেগে হাসপাতালের গেটে ঢুকে যাওয়া অ্যাম্বুলেন্সের পেছনে ঘ্যাড়ঘ্যাড় আওয়াজ তুলে দেবদূতের মত হেলতে দুলতে এগিয়ে আসা একটা ট্রাম। ফার্স্ট আর সেকেন্ড, দুটো ক্লাস মিলিয়ে গোটাচারেক যাত্রী। “কোথায় যাবে দাদা ?” “নোনাপুকুর” – লাস্ট সিটে বসে ঢুলতে থাকা কন্ডাক্টারের কেশো গলার উত্তর। অতঃপর লাফ মেরে উঠে পড়া পাদানিতে। অবশ্য না জিগ্যেস করলেও চলতো। কারণ কোথায় যাবো সেটাই তো জানা নেই।
নোনাপুকুর ট্রামডিপোর গা ঘেঁষে এল সি আর ডি ক্রিশ্চান বেরিয়াল গ্রাউন্ড। ১৮৪০ সালে বানানো কবরখানার গেট দিয়ে ঢোকার মুখেই হাতের বাঁদিকে একটা স্মৃতিফলক। অমোঘ সেই কবিতা – ‘রেখো মা দাসেরে মনে…।’ এখানেই শেষশয্যায় শায়িত করা হয়েছিল অমিত্রাক্ষর ছন্দের জনককে। যতবার ফলকটা দেখি ততবারই একটা কল্পদৃশ্য ভেসে ওঠে মনের মধ্যে। প্রবাসে নিজের গৃহে জানালার ধারে বসে আছেন মধুকবি। অসুস্থ, হতাশ, নিঃসঙ্গ, নির্বান্ধব, কপর্দকশূন্য! পাশে দাঁড়ানো সহধর্মিণী অঁরিয়েত্তা। সুখের সময়ের বন্ধুরা প্রায় সবাই ছেড়ে গেছেন। ব্যতিক্রম শুধু একজন। বীরসিংহ গ্রামের সেই বীরপুত্র, ঈশ্বরচন্দ্র বন্দোপাধায় নামক এক সিংহহৃদয় ব্রাহ্মণের পাঠানো অর্থসাহায্যের জন্য অপেক্ষা করছেন মহাকবি।
গেট থেকে বেরিয়ে পার্ক স্ট্রিট মোড়ের দিকে এগোতেই কবরখানার দেয়ালের গায়ে একটা স্ট্যাচু। হকিস্টিক হাতে দাঁড়িয়ে হকির ইশ্বর। লেসলি ক্লডিয়াস! আজো ভেবে গর্ববোধ হয় আমার সঙ্গে একই শহরে থাকতেন লেসলি। পার্ক স্ট্রিটে ফ্লুরিজের মোড়ে দেখা হয়েছিল একদিন। রাস্তা পার হয়ে বাড়ির দিকে যাবেন। ট্রাফিক সিগনালে অপেক্ষা করছেন। নর্মালি কাউকে প্রণাম করিনা। সামনে এগিয়ে গিয়ে সটান প্রণাম করেছিলাম পা ছুঁয়ে। প্রচন্ড লজ্জিত হয়ে আধহাত জিভ কেটে আংলো ইন্ডিয়ান অ্যাকসেন্ট হাঁ হাঁ করে উঠেছিলেন অসম্ভব ভদ্র আর বিনয়ী মানুষটি। “আরে ছি ছি, আপনি আমার পায়ে হাত দিয়ে প্রণাম করছেন!” “আপনাকে প্রণাম করবো না তো আর কাকে করবো? তিনটে অলিম্পিক গোল্ড, একটা সিলভার আমার এ পোড়া দেশে তো ছাড়ুন সারা দুনিয়ায় আর কজন খলিফার দখলে আছে?” জবাব দিয়েছিলাম ডেঁটে। ইতিমধ্যে রাস্তার সিগনাল সবুজ হয়েছে। বৃদ্ধ হয়েছেন হকির ইশ্বর। বয়স থাবা বসিয়েছে শরীরে। হয়তো ওনার প্রয়োজন ছিল না। তবুও মন তোলপাড় করে উঠে আসা একটা অদ্ভুত তাগিদে হাত ধরে পার করে দিয়েছিলাম রাস্তাটুকু। লেসলি চলে গেছেন বেশ কয়েকবছর হলো। ইশ্বরের স্পর্শটা হাতে রয়ে গেছে আজও।
রাস্তার উল্টোফুটে মল্লিকবাজার। ফুটপাতে লাইন দিয়ে লাচ্ছা সিমুই, ছোট ছোট বেকারির কুকিজ আর আফগানি নানখাটাই বিস্কুটের স্টল। বাজারের ভেতরে ঢুকলেই সারসার পুরোনো জামাকাপড়ের দোকান। গরম কোট, জ্যাকেট, সোয়েটার, পুলওভার থেকে শুরু করে শার্ট, প্যান্ট, ফ্রক। মাঝখানের রাস্তাটা টপকালেই বাজারের আরেকটা অংশ। আয়তনে আরও অনেক বিশাল। ভারতের অন্যতম বৃহৎ গাড়ির বাজার। একইসঙ্গে খানিকটা দুর্নামও রয়েছে এ বাজারের। সত্যিমিথ্যে জানা নেই, চুরির গাড়ি এবং গাড়ির পার্টস নাকি হরদম বেচাকেনা হয় এখানে। চোরাই গাড়ি অথবা বাইক একবার এ বাজারের গলতায় ঢুকে পড়লে তাদের প্রত্যেকটা পার্টস খুলে আলাদা করে ফেলতে একটা বাইকের ক্ষেত্রে পনেরো মিনিট আর প্রমাণ সাইজের একটা চারচাকা গাড়ির ক্ষেত্রে বড়জোর ঘন্টাখানেক সময় লাগে দক্ষ কারিগরদের। বাজারে এদের কোডনেম ‘কাটাইয়া’। এখানেই তেল-মবিলের গন্ধমাখা সরু সরু গলিগুলোয় ডজ, মরিস মাইনর, স্টুডিবেকার, অস্টিন ট্যুরার কিম্বা হিলম্যানের পার্টস খুঁজে বেড়াতো শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায়ের উপন্যাসের চরিত্ররা।
মল্লিকবাজারের শেষে পার্ক স্ট্রিটের মোড়ে সাউথ পার্ক স্ট্রিট সিমেট্রি। বয়েসের গাছপাথর নেই। সেই ১৭৬৭ সালে চালু হয়ে বন্ধ হয়ে গেছিল ১৭৯০ সালেই। সিপাহী বিদ্রোহেরও অনেক আগে। ওপারে শিষ্য তো এপারে গুরু। এখানেই ঘুমিয়ে আছেন দ্রোজো সায়েব। অধ্যাপক হেনরি লুই ভিভিয়ান ডিরোজিও । মধুসূদন, রামগোপাল, গৌরদাস, হরিশ মুখুজ্জেদের গুরু। ইয়ং বেঙ্গল তথা বাংলার বিখ্যাত নবজাগরণ আন্দোলনের পথিকৃৎ। টিচার কাম ফ্রেন্ড, ফিলোজফার অ্যান্ড গাইড অফ ক্রিম অফ দ্য সোসাইটি। আপনি শান্তিতে ঘুমোন দ্রোজোসায়েব, আমি বরং ফুট পেরিয়ে ফের ওপারে যাই। ইন্সটিটিউট অফ নিওরোলজির সামনে উদ্বিগ্নমুখ জনাতিনচার রোগীর আত্মীয়পরিজন। আলোচনা চলছে নীচু গলায়। রাত বারোটা বেজে চল্লিশ। মালের নেশাটা ফেটে আসছে একটু একটু করে। নিওরোসায়েন্সের দেয়াল ঘেঁষা নোংরা আর দুর্গন্ধময় গলিটা হরিজনপল্লী। এলাকার চালু লব্জে – ডোমপাড়া। প্রচুর ঘুপচি ঘুপচি ঝুপড়ি। মাতাল মরদদের হল্লা। টাইট আর চুড়ান্ত খাটো খাটো ব্লাউজ পরিহিতা দুর্দান্তরকম উথালপাথাল চেহারার সব ঝি-বহুরিরা। মেয়েমরদ উভয়েরই পেশা শহরের আবর্জনা পরিষ্কার। পুরুষদের কারো কারো বাঁদর নাচানো। সেই কারণেই এলাকাটার আরেক নাম বান্দরপট্টি। অনেক রাত অব্ধি জেগে থাকে এ মহল্লা। ভেতরে ঢুকলে একটা পাঁইট, নিদেনপক্ষে একটা নিপের বন্দোবস্ত হয়ে যেতে পারে। নাঃ থাকগে! বুকপকেটে হাত ঢোকালাম, প্যাকেটে একটা মাত্তর সিগারেট পড়ে আছে। লাইটার জ্বেলে ধরিয়ে অনেকটা ধোঁয়া টেনে নেয়া বুকে। এবার তাহলে কোনদিকে যাই? বাঁয়ে পার্ক সার্কাস, ডাঁয়ে পার্ক স্ট্রিট। মন কয়েনে ইচ্ছে দেবতার টস বারকয়েক। সোজা এগোনই স্থির হলো। ট্রামলাইনওয়ালা চওড়া বড়রাস্তা পেরিয়েই রহমানিয়া হোটেলের পাশে নুরমহল সিনেমা। বন্ধ হয়ে গ্যাছে অনেকদিন। এ প্রেক্ষাগৃহের অন্যতম আকর্ষণ ছিল তার দুর্দান্ত জোরালো আওয়াজের সাউন্ডবক্স। শুধু ছবি দেখার নেশাটা বাদ দিতে পারলে পুরো সিনেমাটাই হলের বাইরে দাঁড়িয়ে শুনে এবং বুঝে নেয়া যেত। স্থানীয় ব্রাইট স্ট্রিটের ডোমা। জন্মান্ধ। পেশা বাড়িতে বাড়িতে বালতি করে জল দেয়া। সিনেমার নেশা ভয়ঙ্কর। বার কুড়ি ‘মেরা গাঁও মেরা দেশ’ চলচ্চিত্রটি দেখেছিল থুড়ি শুনেছিল একই কায়দায়, সম্ভবত ৭০ দশকের শেষভাগে।
ডোমাস্মৃতি পিছনে পরিত্যাগ করে আবার এগোনো সামনে। পুরোনো বেকবাগান মোড় ছাড়িয়ে লা-মার্টসের উল্টোদিকে দাঁড়ানো একটা ম্যাটাডোর ভ্যান। বোধহয় বিগড়েছে। পালং, বেগুন, ফুলকপি, সিম, পেঁয়াজকলি, মরশুমি সব্জীতে ঠাসা। গাড়ির বনেট খুলে এটা ওটা কি সব পরীক্ষা করছে ড্রাইভার। পাশে টর্চ ধরা খালাসি। উদ্বিগ্নমুখ সব্জীবিক্রেতা যাত্রীরা। মিনিটদশেক বাদে গোঁ ও ও শব্দ তুলে চালু হল গাড়িটা। সঙ্গে সঙ্গে যাত্রীরা সবাই হুড়মুড় করে কেবিনের মধ্যে সেঁধিয়ে গেল তীরগতিতে। সেই প্রশ্নটাই করলাম ড্রাইভারকে যা বেশ কিছুক্ষণ আগে করেছিলাম ট্রাম কন্ডাক্টারকে – “গাড়ি কোথায় যাবে দাদা?” “কালীঘাট বাজার।” ছোট উত্তর। “একটু জায়গা হবে?” প্রশ্ন ফের। “কেবিনে একটা মাছিরও গাঁড় গলানোর জায়গা নেই। পেছনে খালাসির সঙ্গে বসে যেতে হবে, পারবেন? দশ টাকা লাগবে।” এবার উত্তর একটু বড়।
অগত্যা প্যারাশ্যুট জ্যাকেটের হুডটা মাথায় তুলে আর বুক অবধি জিপার টেনে খালাসির হাতের এক হ্যাঁচকা টানে উঠে পড়া গাড়ীর পেছনে। এ জে সি বোস রোড থুড়ি স্মৃতির সরণী ধরে ছুটছে ম্যাটাডর। হু হু করে পিছিয়ে যাচ্ছে মন। আজ থেকে বছর পয়ত্রিশেক আগেও প্রায় একটাও হাইরাইজ ছিল না এই গোটা রাস্তাটা জুড়ে। তার বদলে বিশাল বিশাল সব সাহেবি প্যাটার্নের বাংলো। অন্ধকার মিন্টো পার্কের রেলিঙের আড়াল থেকে পথচলতি মানুষকে হাতছানি দিতো নবারুণদার ভাষায় ‘এইডসহীন নিরাপদ বেশ্যারা’। ঠিক নিজাম প্যালেসের আগে টাটা মোটর্সের শোরুম তখন একতলা। বিশাল কাঁচের দরজার পেছনে সাজানো জগদীশ বোসের রোলস রয়েস। উল্টোফুটে গোর্কি সদন। গেটের সামনে সরু নীল নিয়ন আলোয় ডিজাইন করা গুম্ফশোভিত মহালেখকের অবয়ব। এখানেই বিনেপয়সায় দেখে ফেলা কত, কত সিনেমা! ‘বাহাদুর ছেলে’, ‘দ্য ব্যাটল অফ বার্লিন’, ‘ফল অফ বার্লিন’, আইজেনস্টাইনের ‘ব্যাটলশিপ পোটেমকিন’, ‘কুও ভিভা মেক্সিকান’, আন্দ্রেই তারাকোভস্কির সেই অমর সৃষ্টি ‘স্যাক্রিফাইস’! তখনো সোভিয়েত ইউনিয়ন ছিলো। বাবা বুশ, ছানা বুশ, ট্রাম্পসায়েবরা সারা দুনিয়ার একচেটিয়া বাদশা হয়ে বসেননি। সেই গোর্কি সদন এখন জীর্ণ রঙচটা একটা বাড়ি। সামনে শোকেসে ছিন্নপ্রায় রঙচটা ছবি। কাঁচের গায়ে পুরু তেলচিটে ময়লা। দেখলেই কেমন ভারী হয়ে যায় মনটা।
তীরগতিতে এক্সাইড মোড় থেকে বাঁদিকে বাঁক নিলো সব্জীর ম্যাটাডোর। গাঁজা পার্ক, জগুবাজার, স্যার আশুতোষের বাড়ি, বনফুল রেস্তোঁরা, উঠে যাওয়া ভারতী-পুর্ণ সিনেমা, শ্রীহরির ল্যাংচা, সবকিছুকে পেছনে ফেলে হাজরা মোড় থেকে ফের টার্ন ডানদিকে। কালীঘাট ব্রিজে ওঠার আগে পোটোপাড়ার উল্টোফুটে কালী টেম্পল রোড। বাঁহাতে পুরনো কোলকাতার গেরস্তপাড়া। ডানদিকে আরেক প্রাচীন বেশ্যাপল্লী। সম্ভবত কোলকাতার প্রাচীনতম। বৌবাজারের মত এপাড়ার ব্যাবসাও বন্ধ হয়ে যায় কমবেশি রাত এগারোটার মধ্যে। উৎসব পার্বণের দিন হলে আলাদা কথা। গলিতে ঢুকতেই ধীরে হয়ে গেল গাড়ির গতি। পর পর পেরিয়ে যাওয়া বিচিত্র নামের সব গলি। তবলা গলি, বিরিজ (ব্রিজ) গলি, পোস্ট অফিস গলি, সরু গলি, বড় গলি, তারা হোটেল গলি, নেপালি গলি, এখানেই শেষ নিষিদ্ধপল্লীর সীমানা। কালীঘাট বাজারের সামনে এসে ক্যাঁচ করে ব্রেক কষলো ম্যাটাডোর। বাজারের উল্টোফুটে ছাগলগলি। সেখানে এক বৃদ্ধা হিন্দুস্তানি মহিলা, অনেকগুলি ছাগলের মালকিন, ছাগলের দুধ আর তাড়ি বেচতেন একই সঙ্গে। দুই অনুজপ্রতিম কবিবন্ধু সার্থক রায়চৌধুরী ওরফে গুন্ডা আর সুমন ওরফে বাঁকার সঙ্গে বারদুয়েক গিয়েছি ওখানে। অসম্ভব বোঁটকা গন্ধওয়ালা একটা গলি, চারদিকে ছড়ানো ছাগলের নাদি, থেকে থেকে অজকন্ঠে ব্যা ব্যা মার্গসঙ্গীত। এরকম একটা স্যু-রিয়াল পটভুমিকায় চুনোমাছ আর মকাইভাজা দিয়ে ছাগলমাসির তাড়ি। সত্যিই যাকে বলে ‘অনির্বচনীয়! দুজনের মধ্যে সার্থক, বাড়ি এখান থেকে ঢিল ছোঁড়া দুরত্বে, বকুলবাগানে। পেট খারাপ হলেই একছুটে এসে গেলাসদুয়েক তাড়ি খেয়ে যেত ছাগলগলি থেকে। পেটের গন্ডগোলে মহৌষধ নাকি। হাতে কলমে প্রমাণ পাইনি কোনদিন। ছাগলমাসি গত হয়েছেন কিনা জানিনা তবে গলিটার নাম ছাগলগলি রয়ে গেছে আজো।
ছাগলগলির উল্টোফুটে হারান মাঝির গলি। দিনের বেলায় ব্যস্ত সময়ে যদি ঢোকেন, মনে হবে সময় ষোড়শ শতাব্দীতেই আটকে রয়েছে। লাল রঙের শান বাঁধানো টালির চালের চটি, ধর্মশালা, পান্ডানিবাস, ধুপ, ফুল আর তুলসি-বেলপাতার একটা মিশ্র গন্ধ। এর মাঝে হারান মাঝির দেড়শো বছরের মিষ্টির দোকান। চোখের সামনে ছানা ডলা হচ্ছে কাঠের বারকোশে, পেতলের ডাবু বা গামলায় মিষ্টি। স্বর্গীয় স্বাদের ছোট ল্যাংচা, ক্ষীরমোহন, কমলাভোগ। গলি ছেড়ে বেড়িয়ে দু-দশ কদম হাঁটলেই কিংবদন্তী কালীঘাটের কালী কলকাত্তেওয়ালির আবাসস্থল। বাটি হাতে ভিকিরি, ভক্তদের লাইন, তীর্থযাত্রী শিকারি পান্ডা, পান্ডাদের চটি কাম ফুল আর প্যাঁড়ার দোকান, কাঁসা পেতলের বাসনালয়, শঙ্খ এবং শাঁখা ভান্ডার, দেবদেবীর বাঁধানো ফটো বিপনী, সব শুনশান এখন, এই একটা কুড়ির শীতরাতে।
অবশেষে চেতলা ব্রিজ। পচা খাল থুড়ি আদিগঙ্গা থেকে উঠে আসা বিটকেল পেঁকো গন্ধ। ওপারে ক্যাওড়াতলা শ্মশান। এ চত্বরে পা রাখলেই খুলে যাওয়া সুখ দুঃখ মেলানো মেশানো স্মৃতির প্যান্ডোরা বক্স! নাগা সাধুর জাম্বো কল্কেয় মনিপুরি গাঁজায় টান দিয়ে ব্ল্যাকআউট হয়ে পুরো একটা দিন পড়ে থাকা ঘাটের চাতালে। পুরনো কাঠের ব্রিজের তলায় ব্ল্যাকে বাংলার ঠেকে শক্তি, তারাপদ, সুনীল, দীপক মজুমদারদের আনাগোনা। ধ্রুব, ভীম আর স্বপনের মধ্যে গ্যাংওয়ারে স্তব্ধ হয়ে যাওয়া এলাকার জনজীবন, ৭৭-এ জেল থেকে ছাড়া পাওয়া নকশাল ছেলেদের ওইসব কুখ্যাত দুষ্কৃতিদের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ গড়ে তোলা, এখানেই বড় বড় দুটো সার্চলাইট লাগানো ভ্যানে শুইয়ে নিয়ে আসা হয়েছিল মনোহরপুকুরের ভানু আর তপাকে। প্রশাসনের রক্তচোখ, টিকটিকি, ইনফর্মার আর ডি ডি-র খোঁচড়দের উপস্থিতি উপেক্ষা করে ক্যাওড়াতলায় সেদিন হাজার হাজার ছেলে, ‘ভানু, তপার লাল রক্তে লালবাজার জ্বালিয়ে দাও’ – পোড়া কাঠকয়লা দিয়ে শ্লোগান লেখা হয়েছিল শ্মশানের দেয়ালে। ভাবতে ভাবতে পেরিয়ে আসা কাঠের খড়ম, চটি সাইজের গীতা, চাদর আর অগুরু সেন্টের দোকান, সঙ্গে সারারাত খোলা থাকা অখাদ্য খাবারের হোটেলগুলো। এক প্যাকেট সিগারেট কিনে ঢুকে পড়া হ্যালোজেন আলোয় আলোময় হাই-ফাই শ্মশানে। কাঠের চুল্লি উঠেই গেছে প্রায়। নতুন ঝাঁ ঝকঝকে সাজানো শ্মশানে এ সি ওয়েটিং রুম। একটা মাত্র মৃতদেহ পুড়ছে বৈদ্যুতিক চুল্লীতে। বেশ সম্পন্ন ঘরের কেউ হবেন। পার্কিং প্লেসে দাঁড় করানো কয়েকটা গাড়ি। নিজের প্রিয়জনকে পুড়তে দিয়ে আত্মীয়পরিজনরা এ সি রুমের নিরাপদ আশ্রয়ে। সবাই দুধসাদা পাটভাঙ্গা শাড়ি অথবা পাজামা-পাঞ্জাবী। ক্লাব বা পার্টিতে যাওয়ার মত একটা ড্রেসকোড বিরাজমান এখানেও। সবার মুখে কেমন যেন একটা মেকী শোক আর গাম্ভীর্য। একফোঁটা জল নেই চোখে। ভাবার ভুল হতে পারে তবু কেন জানি না এদের মুখ দেখে মনে হচ্ছে এই ব্লাডি বোরিং অ্যান্ড ডিসগাস্টিং রিচুয়ালটা কখন শেষ হবে সেই অপেক্ষায় অধীর হয়ে রয়েছেন সবাই। এই মুহূর্তে এখানে অনুপস্থিত সেইসব ঝুপড়ি-বস্তিবাসি দিন আনি দিন খাই শ্মশানযাত্রীরা, যারা ভ্যান চালান, সাইকেল রিকশা টানেন, দশ বাবুর বাড়িতে ঠিকে খাটেন, যারা হৈহৈ করে পাড়া কাঁপানো উৎকট ‘ব্যালাহ্যারি’ চিৎকারে পল্লীবাসির কাঁচাঘুম ভাঙ্গিয়ে প্রিয়জনকে কাঁধে অথবা ভাড়ার ম্যাটাডরে চাপিয়ে এখানে নিয়ে আসেন, থেকে থেকেই কাঁচা খিস্তি করেন, ছেলেরা শ্মশানে ঢুকেই চুল্লুর সন্ধানে এবং দাহকার্যের জোগাড়যন্ত্রে বেড়িয়ে পড়েন। মেয়েরা শবদেহ ঘিরে মেঝেতে বসে থাকেন। সবাই মিলে কান্নায় উপুড় হয়ে ভেঙে পড়েন প্রিয়জনের শবদেহের ওপর। আমাদের চোখে এইসব ব্যাপারস্যাপার সো-কলড লুম্পেনদের সাব-অল্টার্ন ছোটলোকামি ঠেকতে পারে, তবু খেয়াল করলে দেখবেন কান্নাটা কিন্তু ভারী আন্তরিক। লোকদেখানো ভনিতার লেশমাত্র নেই সেখানে! এরাই নবারুণদার ভাষায় সেইসব ‘সারপ্লাস পিপল’, সেইসব ‘ফ্যাতাড়ু’, সেইসব মদন, ডি এস, ভাটকবি পুরন্দর, ভদি, নলেন, ব্যাচামনি, এরা সবাই অনুপস্থিত, ঠিক এখন, রাত পৌনে তিনটের এই ক্যাওড়াতলা শ্মশানে। ফলে জায়গাটাকে মেঘে ঢাকা তারায় নীতার সেই অসহায় বৃদ্ধ বাবার সংলাপে ‘নির্বান্ধব পুরী’ বলে মনে হচ্ছে আমার। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ছিটকে বেরিয়ে যাওয়া দরকার এখান থেকে। মাথায় ঘুরছে সেই কতকাল আগে শোনা একটা কবিতার চারটে লাইন — ‘সব পথ আর পাখী ঘরে ফেরে/সন্ধে নামার অজুহাতে/নাগরিক শূন্যতা নিয়নে ঝলসে নিয়ে/বেঁচে আছি কার ভরসাতে?’ সন্ধের অজুহাতে ঘরে ফেরা হয়নি, ভোরের অজুহাতে তো ফেরা যাক।
** এ প্রতিবেদনে অন্যতম চরিত্র স্বপনের নামটি আসল নয়, পরিবর্তিত। বাকি কীর্তিকাহিনীগুলি পুরোটাই সত্যি।
*** এই ভ্রমণ পর্বটির আগে মধ্য থেকে উত্তর কলকাতা ভ্রমণের আরেকটি পর্ব প্রকাশিত হয়েছিল banglalive.com নামে একটি ওয়েব ম্যাগাজিনে। শিরোনাম – ‘বারাদুয়ারি থেকে সোনাগাছি, রাত কলকাতার হাতছানি।’ পরবর্তীতে আমার লেখা একটি বই প্রকাশিত হয় আনন্দ পাব্লিশার্স থেকে। শিরোনাম; ‘আরেকটা কলকাতা’। সেখানে একটি পর্ব হিসাবে লেখাটির ঠাঁই হয়। শিরোনাম বদলে হয় -’সারারাত ফুটপাত”। সেইদিক থেকে ধরতে গেলে বর্তমান লেখাটিকে আগের লেখাটির সিক্যুয়েল বলা যেতে পারে।
একই রকম অনবদ্য। এ লেখা নয় যেনো ফিল্ম, সব আলো অন্ধকার আর স্মৃতি দৃশ্য বড় সুন্দর করে সাজানো।
Rater Tara sab jemon din er aloteo thake temni Supriyo Chowdhury r lekhate Andhokar rasta, andhoker jibon er majheo Alo fute othe. Aloe ferar larai r kato sadharan manus modhye kato Sath chotto Ananda ( Sacchidananda ) roeche tar khoj den lekhae.
অসামান্য মন্তব্য !
অসামান্য মন্তব্য !
এই অসাধারণ লেখাটাকে ঠিক কী বলব তার ভাষা হাতড়াচ্ছি। যেন দুরন্ত গতিময় একটা সিনেমা দেখলাম মনশ্চক্ষুতে। স্ট্রীম অফ ডিটেলিং নাকি স্ট্রীম অফ কনসাসনেস? নাকি দুটোই? রিয়ালিজমকে এভাবে অক্ষরে প্রকাশ এমিল জোলার জার্মিনালকে মনে করিয়ে দেয়।
আপনি অনন্য, সবসময় মুগ্ধ।
আমি ধন্য !
সুপ্রিয়, কাল তুই ফোন করার পরই লেখাটা পড়েছি। এই লেখা পড়ে লেখকের নাম না জানলেও নিশ্চিন্তে বলে দেওয়া যায় এটা সুপ্রিয় চৌধুরীর লেখা। তোর লেখার ডিটেইলিং মাঝেমধ্যেই মতি নন্দীর কথা মনে পড়িয়ে দেয়। তোকে একটা শুধু অনুরোধ করব। মাঝেমধ্যে একটু স্লো মোশান নিয়ে আয়। লেখা আরো জমে যাবে। আর যেহেতু লেখালিখি করছিস, বানানের দিকে নজর দে। শুরুতেই পাখি বানানে দীর্ঘ ঈ দিয়েছিস। এটা হয়তো তোর ভুল নয়, যাঁরা টাইপ করেছেন তাদের ভুল। কিন্তু তাছাড়াও ছোটখাটো বানান ভুল আছে অনেক। কোথাও ছাপার আগে আমাকে একবার দেখিয়ে নিস। একটা ব্যাপার খালি জানতে চাইছি। শাঁখা কি হাড় থেকে তৈরি হয়? নাকি শাঁখ, মানে শঙ্খ থেকে?
ফেসবুক আর অপার বাংলার মন্তব্যের দেয়াল, দুটো পেজেই তোমার মন্তব্যের উত্তর এখানেই মিলিয়ে মিশিয়ে দিলাম। তুমি মতি নন্দীর কথা লিখেছ। আমি আরো অনেকের কথা লিখেছি। এরকম আরো অনেকের কথাই হয়তো লেখা যেতে পারতো। যেমন সন্দীপন, যেমন সমরেশ বসু, যেমন মার্কেজ। অতঃপর আসি বানানের ব্যাপারে। আমার প্রচন্ড কম বিদ্যেশিক্ষের ফলে আমার যে ভয়ঙ্কর রকম বানান ভুল হয় সেটা তো আমি হাজারবার স্বীকার করি, প্রকাশ্যে, নির্দ্বিধায় এবং নির্লজ্জভাবে। তবে দাদা, একটা কথা বলার আছে এখানে। বানানের পরেও সাহিত্যে দুটো ব্যাপার থেকে যায়। তা হল গদ্য এবং কন্টেন্ট। ৫৭ বছর বয়েসে লেখালেখি শুরু করে বছর ৫/৬ বছর হল কলম চলছে। আজ ভাবি, যে সব প্রকাশকরা আমার লেখা অথবা বই ছেপেছেন তারা যদি আমার গদ্য বা কনটেন্টকে গুরুত্ব না দিয়ে শুধু গাদা গাদা বানান ভুলটাকেই গুরুত্ব দিতেন তাহলে এই অধমকে লেখক হিসেবে যে দুচারজন আজ চেনেন সেটা কদাপি সম্ভব হতো না। এবং এই অজ্ঞাত কুলশীল জীবটি, যে কিনা আগে কোনদিন একটা অনুগল্পও লেখেনি তার প্রথম উপন্যাসটিই শারদীয় দেশ পত্রিকায় ছাপা হয়ে বেরোত না। ফলে এটা প্রমাণিত যে প্রচুর বানান ভুল থাকলেও গদ্য আর কনটেন্ট যদি শক্তিশালী হয় তাহলে প্রকাশনা সংস্থার দক্ষ প্রুফ রিডাররা সেই ভুলগুলোকে শুদ্ধ করে নিয়েও লেখাটা ছেপে দেবেন। যার জীবন্ত প্রমাণ এই আমি। তুমি লেখার গতিকে মাঝেমাঝে শ্লথ করার কথা বলেছ। জানিনা সেটা কিভাবে করতে হয়। বুঝে উঠতে পারলে চেষ্টা করবো। শেষে আসি শাঁখা এবং হাড় প্রসঙ্গে। শুধু একজন বিশ্লেষকের দৃষ্টিতে বিষয়টিকে দেখো না। দুধের ভেজাল যেমন ডিটারজেন্ট, সর্ষের তেলের ভেজাল যেমন শেয়ালকাঁটা, ঠিক একইভাবে শাঁখায় শঙ্খের বিকল্প হিসেবে ভেজাল হাড়। কোন গবেষকের দিস্তে দিস্তে গবেষণাপত্র নয়, এসব গুহ্য তথ্য জানতে গেলে ওইসব মহল্লার লাথখোর, ক্যাওড়া, ফ্যাতাড়ুদের সঙ্গে রাতের পর রাত ফুটে বসে ছাঁট-চর্বির বড়া দিয়ে বাংলা খেতে হবে, তাদের গুরু মানতে হবে, কুয়াশাঘেরা ঝিম ঝিম হ্যালোজেনের আলোয় যেতে হবে অনেক বেমতলব, বেপরোয়া, বেমক্কা, বেপথু সব নিষিদ্ধ অভিযানে। তবে গুরুমন্ত্র লাভ হবে।
কিছু বলার আগেই সুপ্রিয়প্রেমীরা সব কিছু বলে ফেলেছেন। অমর কথাসাহিত্যিক শরতবাবুকে পড়ার সৌভাগ্য হলেও দেখার সৌভাগ্য হলো আমার এই ছোট্টবেলার সাথীর সঙ্গে।পড়লুম না নাতিদীর্ঘ সাদাকালো ছবি দেখলুম সেটাই ভাবছি।
মাল্টিপ্লেক্সের দাম না দিস অন্তত ফ্রন্ট স্টলের ৭৫ পয়সা তো দিবি।
আপনার সঙ্গে সঙ্গে আমিও যেন রাতের কলকাতায় ঘুরে বেড়াচ্ছিলাম এভাবে! অপূর্ব চিত্র পট তৈরি হয়েছে লেখার মাধ্যমে।
নক্ষত্রের নীল আলোয় শীতের কলকাতা পরিক্রমার পর ভোরের ঘুমে বার বার ফিরে ফিরে এল ফেলে আসা রাতের মায়াবী স্তব্ধতা। কুর্নিশ লেখককে।
অসাধারণ। এমন লেখা আরও চাই।
—সুব্রত দত্ত, ডিমাপুর, নাগাল্যান্ড।