দূর গ্রামে পড়ে আছে শূন্য পথরেখা
এবার হলো না যাওয়া
উঠোনে পড়ে আছে ছায়া, মাতৃস্নেহের মতো,
কিছুটা মায়াও বুঝি উড়ে যায় চৈত্রবাতাসে
মাঠের ওপাশে কঙ্কালের মতো তালবৃক্ষের সারি
এবার হলো না যাওয়া
রুদ্ধ নগরপথ, মহামারি— সামনে তুলেছে থাবা
শিরায় শিরায় শুধু প্রতিধ্বনি ওঠে
ক্ষীণ পিতৃপুরুষের ডাক
নিরীহ শস্যক্ষেত ডাকে, স্তব্ধ জলাশয় ডাকে
ক্ষুধার আশ্রয় …
মৃত্যুও ডাকে, প্রখর দুপুর শুষে নেয় প্রশ্বাসবায়ু
দূর গ্রামে পড়ে থাকে শূন্য পথরেখা
আমরা উদযাপন করছি শোক
হা-হা শব্দে হাসছি রাত্রি ছাপিয়ে
আড়াল করছি দু-চোখের মণি ছিঁড়ে গড়িয়ে পড়া রক্ত
যাতে অশ্রু বলে কেউ ভুল না করে…
স্তব্ধ সব মুহূর্তের পাহাড়শীর্ষে আমাদের তুমুল পিকনিক
বুকচাপা ভয় আর বিষাদের গহ্বরগুলি
অন্ধকারে ঢাকা দিয়ে
আমাদের প্রবল ঊর্ধ্ববাহু নাচ
নাচতে নাচতে খুলে পড়ছে পাঁজর
আর হাসিগুলি ক্রমশ গোঙানির ধ্বনি হয়ে উঠতে চাইছে বলে
আমরা লক্ষ লক্ষ করতালির আওয়াজ তুলছি
আমাদের মত্ত ড্রামের ছন্দে কেঁপে উঠছে
অন্ধকার দিগন্ত ও পায়ের তলার মাটি
ছিন্ন পলাশপাতা— চৈত্রঝড়ে উড়ে যেতে যেতে
আমার বুকের উপর পড়ে থাকে স্থির হয়ে,
তার শিরা-উপশিরা ছুঁয়ে যত জলকণা, রৌদ্রকণারা
দুলে দুলে উঠেছিল প্রাণপ্রবাহে, তারা আজ মৃত?
ছিন্ন পাতাটির ক্ষতে রাখি ঠোঁট
একদিন ভোরবেলা যারা এনেছিল গান
দুপুরের আগুনশিখায় তারা ত্রস্ত মুখ ঢেকে রাখে
চৈত্রের নিঃসঙ্গ ইতিহাসে,
গোপন অস্ত্রের নিচে শুয়ে থাকে আমার আয়ুষ্কাল
স্বদেশ-সীমানা আর ব্যক্তিগত আদরের লুপ্ত চিহ্নগুলি…
পাতাটির ক্ষত থেকে উঠে আসে বিষ
নীল হয়ে ওঠে আমার দু-ঠোঁট আর অবরুদ্ধ মাটি,
দু-পাশে দাঁড়িয়ে থাকে মৃত গাছেদের সারি
মৃত মানুষের সারি
শনশন চৈত্রঝড়ে উড়ে যায় মৃতদের গান
“গোপন অস্ত্রের নিচে শুয়ে থাকে আমার আয়ুস্কাল….”
আয়ুকাল/আয়ুষ্কাল জানি কিন্তু আয়ুস্কাল প্রথম দেখলাম।