micro-story-nojordari

নজরদারি
মৌসুমী বন্দ্যোপাধ্যায়


দরজায় কলিংবেলের শব্দে খুলে দেখি সামনে পুলিশ। মুহূর্তে নিজেকে কেমন অসহায় মনে হল। থতমত খেয়ে গেলাম, দেখলাম পিছনে কলেজের প্রিন্সিপাল স্যার ও সৃজনী আর তার মা।

“ভিতরে চলো অরিন্দম, কথা আছে। তুমি এমন কাজ করতে পার ভাবিনি।”

স্যারের কথায় আরও ধন্দ্বে পড়ে গেলাম। কী করেছি আমি? চোখ চলে গেল সৃজনীর দিকে। নির্বিকার দৃষ্টি নিয়ে এদিক-ওদিক দেখছে। কী চায় সৃজনী?

সোফায় বসে স্যার বললেন, “সৃজনী তোমার বিরুদ্ধে ভয়ংকর অভিযোগ এনেছে। তুমি ওর শ্লীলতাহানি করেছ। তাছাড়া খুব নোংরা ভাষায় ওকে মেল করেছ।”

“আমি! স্যার ওই তো…”

“সৃজনী তোমার ছাত্রী। এটা তোমার থেকে আশা করা যায় না।”

স্যারের কথায় আমি মেল চেক করতে শুরু করলাম। এ কি! এমন কোনও মেল আমি করিনি। আর যে সময়টা দেখাচ্ছে সেদিন সৃজনী আমার কাছে টিউশন নিতে এসেছিল। জড়িয়ে ধরে প্রপোজ করেছিল আমায়। আমি কঠিনভাবে রিফিউজ করেছিলাম। আর ও এইভাবে প্রতিশোধ নিতে চাইছে! কিন্তু মেল গেল কীভাবে?

“স্যার, আমি ওই মেল করিনি। মেল হয়তো হ্যাক হয়েছে।”

“চেক করেছি অরিন্দম। কোনও সমস্যা হয়নি। তুমি লিখিতভাবে অন্যায় স্বীকার করো। সৃজনীর মা চান না লোক জানাজানি করতে। যদি না করো…” কথা শেষ না করে পুলিশের দিকে চোখ রাখলেন।

পুলিশ নয়, আমি সৃজনীর দিকে তাকালাম। চোখে প্রতিহিংসা জ্বলজ্বল করছে।

“স্যার আসতে পারি?”

দরজার দিকে তাকিয়ে চমকে উঠি। আমার উল্টোদিকের বাড়ির মিসেস মৈত্র। এই আর এক মহিলা, নজরদার। দিনরাতের বেশিক্ষণ বারান্দায় কাটান। আমি ঘরে থাকলে তো কথা নেই। কখনও হাতে দূরবীন, কখনও ডিএসএলআর। ইনি আবার কী সমস্যা তৈরি করতে চলে এলেন!

“আপনি?”

স্যারের প্রশ্নের উত্তরে মিসেস মৈত্র বলেন, “মনালি মৈত্র। অরিন্দমবাবুর প্রতিবেশিনী। হাজব্যান্ড কাজের জন্য মাসে কুড়িদিন বাইরে থাকেন। সারাদিন সময় কাটে না বললেই চলে। সঙ্গী হয় দূরবীন না হয় ক্যামেরা। বলতে পারেন নিছক খেয়াল। সেদিনও তেমনই করছিলাম। হঠাৎ অরিন্দমবাবুর ঘরে চোখ চলে যায়। ভিডিও অন ছিল। না চাইতেই ভিডিও হয়ে যায়। অরিন্দমবাবুর কথা সত্যি। তার প্রমাণও আমার কাছে আছে।”

প্রমাণ! কী সব বলছেন ইনি!

আমাকে আরও বিস্মিত করে ক্যামেরা স্যারের টেবিলে রাখেন। ভিডিও চলতে থাকে। সৃজনী আমাকে কীসব বলে। উত্তেজিত হয়ে উঠলাম। সৃজনী আরও নাছোড়বান্দা। আমায় জড়িয়ে ধরে মুখের কাছে মুখ নিয়ে আসে। সৃজনীকে ধাক্কা দিয়ে আমি ঘরের বাইরে বেরিয়ে যাই। সৃজনী রাগে হাতদুটো উপরের দিকে ছুঁড়ে দেয়। তারপর আমার খোলা ল্যাপটপের সামনে বসে। কী সব করে। তারপর ঘর থেকে বেরিয়ে যায়।

আরে! সেইসময় আমার মেল তো খোলা ছিল। মেল চেক করছিলাম।

মিসেস মৈত্র মুচকি হেসে আমার পাশে এসে ফিসফিস করে বলেন, “নজরদারি ভালই করি। কী বলেন?”

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *