short-story-valobasar-somikaran

ভালোবাসার সমীকরণ
পলাশ মজুমদার


অপূর্বকে কেন খুন করলেন? তদন্তকারী পুলিশ কর্মকর্তা বারবার আমার কাছে জানতে চান। তিন দিনের রিমান্ডের আজ শেষ দিন। আমার নিরুত্তর ভাব দেখে কর্মকর্তা রেগে উঠলেন। একপর্যায়ে ঝাড়ি দিয়ে বললেন, স্বীকার না করলে আপনার ফাঁসি হতে পারে। সত্য কথা বললে বাঁচানোর চেষ্টা করতে পারি। কিছু না লুকিয়ে বলুন কী হয়েছিল?

তবু আমার মুখে কোনও কথা নেই। আমি কিছু জানি না। খুনটা আমি করিনি। তবে কে করল? অপূর্ব কীভাবে খুন হলো? আমার বাসায় কেন পাওয়া গেল অপূর্বর লাশ?

সেই দুপুরে বাসায় কাজের মেয়ে সুমি আর আমি ছিলাম কেবল; আমার স্বামী তমাল অফিসের কাজে রাজশাহীতে ছিল। খবর পেয়ে তমাল পাগলের মতো ছুটে এলো। সে আসার আগেই পুলিশ আমাকে ধরে নিয়ে যায়। মুহূর্তে অনলাইন পত্রিকায় চলে এসেছে খুনের আদ্যোপান্ত। জ্বলজ্বল করছে আদি-রসাত্মক কল্পকাহিনি। ফেঁদেছে পরকীয়া প্রেমের গল্প। স্পষ্ট অক্ষরে লেখা – অপূর্ব পরকীয়ার বলি।

তমাল বারবার জানতে চায় নেপথ্যের কাহিনি। তার সঙ্গেও কথা বলিনি। আমি মূক; আমার কণ্ঠনালি কেউ যেন ছিঁড়ে নিয়ে গেছে। তমালের বিমর্ষ মুখের দিকে তাকানো আমার পক্ষে অসম্ভব। আমার ওপর সে এতটাই নির্ভরশীল যে আমাকে ছাড়া তার এক দিনও চলে না। এখন কীভাবে কাটছে তার দিনরাত, ভাবতে পারছি না। বিশ্ববিদ্যালয়-জীবনের প্রেম তিনজন মানুষকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যাবে, তা কি ভাবতে পেরেছিলাম! এত দিন পর কেন প্রায়শ্চিত্ত করতে হবে? এসব ভাবনা আমাকে উথাল-পাথাল করে দিচ্ছে। জেলে বসে নিজেকে হারিয়ে ফেলছি অতীতে। কত কথা মনে ভাসছে।


দুই


সেদিন সোমবার। মধ্যাহ্নভোজ সেরে সবেমাত্র বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছি। বোধহয় ঘুম লেগে এসেছিল চোখে। এমন সময় দিদি দিদি ডাক শুনে জেগে উঠলাম। সুমি ডাকছে। ডাকটা যেন কেমন। অস্বাভাবিক। সাধারণত সুমি এভাবে ডাকে না। ওর গলার স্বর অচেনা মনে হচ্ছিল। ভয় গ্রাস করে আমাকে।
বললাম, ‘কী হয়েছে? ভরদুপুরে এভাবে ডাকছিস কেন?’
‘আপনার কাছে দুজন লোক এসেছে। একজনের মেয়েদের মতো লম্বা চুল। পেছনে ঝুঁটি করা। আরেকজনের চেহারা বিদঘুটে; লোকটা আমাকে দেখে দরজার সামনে থেকে চলে গেছে। ভূত দেখার মতো চমকে উঠেছি আমি। ভয় লাগছে আমার।’ সুমি বলল।
‘কী নাম বলেছে? জানতে চেয়েছিস।’ আমি জানতে চাইলাম।
‘নাম বলেনি। শুধু আপনার নাম ধরে ডেকে দিতে বলল।’

সুমির চোখে-মুখে আতঙ্ক। ওর এমন চেহারা কখনো দেখিনি। ও যে খেপাটে, একরোখা ও জেদি, তা ওর কিছু কাজে প্রমাণ পেয়েছি। কোনও কাজের জন্য ওকে বলে দিতে হতো না। আপন খেয়ালে মনের আনন্দে কাজ করত। চোখে পড়ার মতো কোনো খারাপ কাজ ও কখনো করেনি।

বুঝতে পারছিলাম না, কে এলো এই অসময়ে। কে আসতে পারে। আরেকজন লোকটিকে ভেতরে ঢুকিয়ে নিজে চলে গেল কেন? কেন দুজন একসঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করল না। কেমন যেন সবকিছু রহস্যময় মনে হচ্ছিল।

ধীরে ধীরে উঠে বসলাম। মাথা ধরেছে। কলেজ থেকে ফিরতে একটু দেরি হয়ে গেল। কাজের চাপ যাচ্ছিল। চাকরি ছেড়ে দেব দেব করেও ছাড়তে পারছিলাম না। ছেড়ে দিলে সময় কাটাব কীভাবে, এটা ভেবে শঙ্কা জাগে। কেন জানি আর চাকরি ভালো লাগছিল না।

কে এলো – ভাবতে ভাবতে বাথরুমে ঢুকে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। ড্রয়িংরুমে প্রবেশ করতেই চমকে উঠলাম। কে এই লোক? লম্বা উস্কোখুস্কো চুল। ঝুঁটি করা। মুখে সাদা কালো খোঁচা খোঁচা দাড়ি। গায়ে মলিন পোশাক। একপলক তাকিয়ে দেখলাম। কেমন আছ, প্রশ্নটি করতেও কোথায় যেন বাধছিল। কী আর হবে জেনে। অপূর্বও কোনও কথা না বলে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিল যেন আমাকে প্রথম দেখছে।


তিন


অপূর্বের সঙ্গে শেষ দেখার পর প্রায় দশ বছর কেটে গেল। সময় যে কীভাবে গড়ায়, যেন এই তো সেদিন দেখা হয়েছিল টিএসসিতে। কত আনন্দে আমরা সময় কাটাতাম। কত জায়গায় ঘুরতে যেতাম। ওকে দেখে সেসব দিনের কথা অকস্মাৎ মনে পড়ল।

অপূর্ব আমার বিশ্ববিদ্যালয়-জীবনের বন্ধু। শুধু বন্ধু বললে মিথ্যে বলা হবে। ও ছিল আমার প্রেমিক। যেমন তেমন প্রেম নয়। আঠার মতো লেগে থাকা সার্বক্ষণিক সহচর। ক্যাম্পাসের সবার মুখে মুখে ছিল আমাদের প্রেমকাহিনি। রসাল গল্পও ছিল। কিন্তু সেসব আমরা পাত্তা দিতাম না।

প্রেমের সফল পরিণতি হিসেবে শেষ পর্যন্ত আমরা বিয়ে করতে পারিনি। কেন পারিনি? না পারার নেপথ্যে ছিল একটি না, একাধিক কারণ। না-পারার ক্ষোভ আমার ভেতর জন্ম দিয়েছিল জিদ। এমনকি ঘৃণাও। তখন অপূর্বকে ঘৃণা করতে শুরু করেছিলাম।

অপূর্ব বিয়ে-প্রথায় বিশ্বাস করত না। মানত না প্রচলিত নিয়মকানুন। এককথায় প্রথাবিরোধী। নাস্তিক কিংবা মুক্তচিন্তার মানুষ বলা চলে। নিয়ম-ভাঙার মধ্যেই ছিল ওর মুক্তি। অথচ আমি ছিলাম গতানুগতিক চিন্তার মানুষ। তবে ওর যুক্তি ভালো লাগত। কিন্তু মা-বাবার অবাধ্য হওয়া কিংবা তথাকথিত অনৈতিক কোনও কাজ করার সাহস আমার তখন ছিল না। এখনও নেই। এমন মূল্যবোধ কিংবা নীতিবোধ মা-বাবাই বয়ঃসন্ধির সময় আমার মধ্যে প্রোথিত করে দিয়েছিলেন।

আমি গৃহবধূ। ঠিক গৃহবধূ নই, পাশাপাশি একটি বেসরকারি কলেজে পার্টটাইম পড়াই। তমাল বেসরকারি ব্যাংকের বড় অফিসার। অনেক টাকা মাইনে। টাকার আমাদের অভাব নেই। অভাব সন্তানের। দীর্ঘ দশ বছরের দাম্পত্য জীবনে আমি কোনও সন্তান জন্ম দিতে পারিনি। তবু জীবনকে পরিপূর্ণ মনে করতাম। কারণ, আমার দুঃখ দূর করার জন্য তমালের চেষ্টার কমতি ছিল না; বরং বেশিই ছিল যা অনায়াসে অন্যদের চোখে পড়ত। এমনকি তমাল ভুলিয়ে দিয়েছিল অপূর্বর স্মৃতি; তার কথা কখনও মনে পড়ত না।

আসলেই কি অপূর্বকে ভুলে গেছি? এর মধ্যে অপূর্বের সঙ্গে একবারও দেখা হয়নি। সে দেখা করেনি। হয়তো ইচ্ছা করে। আমিও যোগাযোগের চেষ্টা করিনি। প্রয়োজনবোধও করিনি। তবু বন্ধুবান্ধবের কাছ থেকে তার খবর পেতাম। জানতে না চাইলেও তার খবর দেওয়াকে অনেকে দায়িত্ব মনে করত। অপূর্ব ছিল প্রাণোচ্ছল। সদা হাস্যময়। সাহিত্য-সংগীত, ইতিহাস, রাজনীতি – সব বিষয়ে ভালো দখল ছিল। ছিল সরলতার মতো সহজাত প্রবৃত্তি। চারপাশের মানুষকে সহজে সে আপন করে নিতে পারত। আমাকে যে সে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছিল, তা নয়, বরং অনেকের মতো আমি তার সঙ্গ পাওয়ার জন্য ব্যাকুল ছিলাম। তার সঙ্গে গল্প করতে কিংবা সময় কাটাতে ভালো লাগত। একসঙ্গে চলতে চলতে কখন যে এক ভুবনের বাসিন্দা হয়ে গিয়েছিলাম, টের পাইনি। প্রতিনিয়ত প্রেমের সাগরে হাবুডুবু খেতাম।

মাস্টার্স ফাইনালের পর পরিবার থেকে বিয়ের জন্য আমার ওপর চাপ ছিল। সে কথা অপূর্বকে জানিয়ে কোনো ফল পাইনি। সে বিয়ে করতে চায়নি, তবে আমার শরীর চেয়েছিল। মন তো আগেই দখল করেছিল। সে বলত, যদি ভালোবাস, তবে মিলনে বাধা কেন? মনের প্রয়োজন মেটালে শরীরের প্রয়োজন মেটাবে না কেন? শরীর তো শরীর চায়, যেমন মন চায় মন।

আমার এত কালের সংস্কার সেখানে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছিল। আমি পারিনি নিজেকে মেলে ধরতে। প্রেমের কাছে স্বর্বস্ব উজাড় করে দিতে; বরং তার প্রতি ঘৃণা জন্মেছিল। হয়তো আমার যুক্তির ভিত্তি ছিল না। তবে নীতি ও মূল্যবোধকে আঁকড়ে অনড় ছিলাম।

বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিলাম, যেদিন অপূর্ব সত্যিকারের আঘাত করল। আমি মুষড়ে পড়েছিলাম। কিছুতেই মানতে পারিনি। সে বলেছিল, তুমি যখন শরীর দিতে পারছ না, আবার বিয়ে করাও আমার পক্ষে অসম্ভব, তাই শরীরের প্রয়োজন অন্যভাবে মেটাব। আর প্রেম চলবে তোমার সঙ্গে।

ওই দিনই সে একটা খারাপ মেয়ের সঙ্গে টাকার বিনিময়ে হোটেলে রাত কাটিয়েছিল, যা আমাকে জানায়। তখনই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম অপূর্বের সঙ্গে আর সম্পর্ক রাখব না। আমাদের দুজনের পথ হবে আলাদা। সেটাই হয়েছিল। আমি আর অপূর্বর সামনে পড়িনি।

অপূর্ব এখন আমার সামনে। কোথায় উবে গেল সেই উদ্যমী প্রেম, ভালোবাসা! আমি একটুও বিচলিত নই। স্বাভাবিক। আমার হৃদয় একবারের জন্যও কেঁপে উঠছে না। অথচ এই অপূর্ব দীর্ঘ সাত বছর আমার জীবন-নদীতে জোয়ার এনেছে, ভাটা এনেছে। অপূর্ব থাকত আমাদের কাছাকাছি। বিশ্ববিদ্যালয়ে একই বাসে যাতায়াত করতাম। সময়ে-অসময়ে বাসায়ও চলে আসত। অনেকটা আমাদের পরিবারের সদস্য হয়ে গিয়েছিল। স্বভাবসুলভ আচরণ দিয়ে জয় করে নিয়েছিল আমার মা-বাবার মন। সেই দিনগুলোর কথা মনে পড়ছে। অথচ সেখানে ফিরে যেতে ইচ্ছে করছে না। কেন করবে? অপূর্ব আমার অতীত, আর তমাল আমার বর্তমান। ভবিষ্যৎও।

‘হঠাৎ কী ভেবে আমার ঘরে পদার্পণ?’ জানতে চাই আমি।
অপূর্ব বলল, ‘তুমি কি আমাকে ভুলে গেছ?’
‘মনে রাখার কোনো কারণ তো দেখছি না।’ বললাম আমি।
‘কেন?’ অপূর্ব জানতে চায়।
‘সে কী করে বলব? সত্যি বলতে, ভুলতে চাইলেও অনেক কিছু ভোলা যায় না।’ আমি বললাম।

আর কোনও কথা জিজ্ঞেস না করে অপূর্ব হঠাৎ আমার হাত দুটো ধরে ফেলল, ‘মালবিকা, তোমাকে আমি চাই।’
‘কী সব পাগলের মতো বলছ? তোমার কি মাথা খারাপ হয়ে গেছে?’ আমি উত্তেজিত হয়ে বললাম।
‘না, আমি ঠিক আছি। শোনো, আমার সেই অতৃপ্ত বাসনা মাথাচাড়া দিয়ে উঠেছে। দু’বছর হলো বিয়ে করেছি। এর মধ্যে অনেক মেয়ের সঙ্গে সম্পর্কও হয়েছে, কিন্তু পরিপূর্ণ উপভোগ করতে পারিনি। অপূর্ণ থেকে গেল আমার যৌনজীবন। সারাক্ষণ মনে হয়, আমি যা চাই, তা তুমি ছাড়া পৃথিবীর কোনো মেয়ের পক্ষে দেওয়া সম্ভব নয়। আমি শুধু দেখতে চাই – তুমি অন্য মেয়েদের থেকে মোটেও আলাদা নও। আমার ইচ্ছেটুকু পূরণ করো।’

‘প্লিজ, অপূর্ব। তোমার দোহাই লাগে। এখন চলে যাও। যা বিয়ের আগে দিতে পারিনি, তা এখন দেব তুমি ভাবলে কেমন করে। বললাম আমি।’

‘একবার, শুধু একবার। আমাকে যে একসময় ভালোবাসতে সেই দাবি নিয়ে বলছি।’ অপূর্বের কণ্ঠে অনুনয়।

‘না। তা সম্ভব নয়। তুমি আমাকে মুক্তি দিয়েছ। আমিও তোমাকে মুক্তি দিয়েছি। সেসব ম্মৃতি মন থেকে একটা একটা করে উপড়ে ফেলেছি। তোমার কোনও অস্তিত্বই আমার কাছে নেই।’

হঠাৎ সোফা থেকে উঠে অপূর্ব ভেতরের দরজা বন্ধ করে দিল। তার চেহারা অপরিচিত এবং হিংস্র মনে হচ্ছে। সে ধীরে ধীরে কাছে এসে আমাকে জড়িয়ে ধরে। আমি সরতে চাইলে সে জোর খাটাতে থাকে। কিছু বুঝে ওঠার আগে টান মেরে আমার কাপড় খুলে ফেলে। অর্ধ-উলঙ্গ আমি তার পা ধরলাম। ক্ষমা চাইলাম। অপূর্ব কিছুই শুনছে না। জোর করে কোলে নিয়ে আমাকে খাটের ওপর শুইয়ে দেয়। আমার কোনো অনুরোধ তার কানে প্রবেশ করছে না। সমস্ত শক্তি প্রয়োগ করল সে। হঠাৎ আমার মাথায় একটি বুদ্ধি খেলে গেল। বললাম, ঠিক আছে। আমি রাজি। জোরাজুরি করো না। আমাকে একটু সময় দাও। বেশি না, দশ মিনিট হলে চলবে। এ কথায় কাজ হলো। সে আমাকে ছেড়ে দিয়ে স্বাভাবিক হওয়ার চেষ্টা করল। তখন ওর মোবাইলে একটি কল এলো। আমি কাপড় ঠিক করে ভেতরের রুমে গেলাম। শোকেসের ড্রয়ার থেকে ছুরি নিলাম। ছুরি বের করার সময় কলবেলের আওয়াজ শুনতে পাই। শুনতে পেলাম দরজা খোলার শব্দও। সুমি তখন বাথরুমে। পনেরো মিনিট পর ফিরে এসে দেখি, অপূর্ব সিগারেট খেতে খেতে টিভি দেখছে। একটা কটু গন্ধ টের পাচ্ছিলাম।

অপূর্বর পাশে বসার সঙ্গে সঙ্গে আমি অজ্ঞান হয়ে গেলাম। তারপর কী হয়েছিল মনে নেই। জ্ঞান ফিরতেই দেখি, সোফার ওপর অপূর্বর লাশ। খাটের ওপর আমার শরীর ক্ষত-বিক্ষত। কাপড়ে ফোঁটা ফোঁটা রক্তের দাগ। হাতের পাশে পড়ে আছে রক্তমাখা ছুরিটি। বেডরুমে গিয়ে দেখি ধর্ষিতা সুমি অচেতন। গায়ে কোনো কাপড় নেই। আমি আবার সংজ্ঞা হারিয়ে মেঝেতে পড়ে গেলাম।


চার


তমাল প্রায়ই আমার সঙ্গে দেখা করতে জেলগেটে আসে। চোখের দিকে তাকিয়ে থাকে। বেশিরভাগ সময় নির্বাক। কোনও কথা বলে না। হয়তো কথা খুঁজে পায় না। আমারও কিছু জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে করে না। তার চোখের দিকে তাকিয়ে অনুমান করতে পারি সে কীভাবে দিন পার করছে। তমাল কখনও জানতে চায়নি, কেন আমি অপূর্বকে খুন করলাম। না-জানতে চাওয়াটা আমার কাছে অবিশ্বাস্য লাগে। হঠাৎ একদিন তমাল প্রশ্ন করল, অপূর্বকে খুন করতে গেলে কেন?

তার প্রশ্নের কোনও উত্তর সেদিনও দিতে পারিনি। মনে ভাসছিল, অন্য একটা কথা। স্বামী ছাড়া কারও কাছে দেহদান আমি করতে পারতাম না। আমার সংস্কারই এখানে বাধা। এই কথা তমালকে কীভাবে বলব। কিছু আর বলা হয়ে ওঠে না।

মাস ছয়েক পর শুনতে পেলাম, আগামীকাল আমাকে মুক্তি দেওয়া হবে; শনাক্ত হয়েছে অপূর্বের প্রকৃত খুনী। আদালতে প্রমাণ হয়েছে, অপূর্বর বন্ধুটি তাকে পূর্ব শত্রুতার জের হিসেবে খুন করেছে। বন্ধুর ছদ্মাবরণে সে অপূর্বর কাছাকাছি থেকে জেনে গিয়েছিল অপূর্বর বৃত্তান্ত। দ্বন্দ্বের কারণ বৈষয়িক লেনদেন। সে সব জানত বলে সুযোগটি কাজে লাগিয়েছে। শেষ পর্যন্ত বাঁচতে পারল না সুমির কারণে। সুমি সাক্ষ্য দিয়েছে যে সে নিজের চোখে অপূর্বকে হত্যা করতে দেখেছে। তারপর ধর্ষণ করেছে সুমিকে। সুমির মনের ওপর ধর্ষণের বিষয়টি এমন প্রভাব ফেলেছিল যে দীর্ঘ পাঁচ মাস সে বাক্রুদ্ধ ছিল; কয়েকদিন আগে কথা বলতে শুরু করেছে।

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *