রম্যরচনা
ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়
অতঃপর আজগুবি বাবু ঘুরতে ঘুরতে হাজির হলেন ফেসবুকের এক আজব ঠেকে। এক্কেবারে অচেনা গ্রুপ। দেখলেন আন্তর্জাতিক স্তরে সেই গ্রুপের কর্মকান্ডে এক্কেবারে ঢি ঢি পড়ে গেছে। পোর্টালে রমরমিয়ে তাদের খবর। অন্তর-জাতিক থেকে আন্তর্জাতিক তথা বহুজাতিক এই খ্যাতিমান গ্রুপের নাম ‘চূড়ামণি’।
আজগুবি অভিধান ঘেঁটে দেখলেন কৌতুকার্থে চূড়ামণির অর্থ চোরের রাজা। বলাই বাহুল্য আজগুবির জীবনযাপন এই চুরির সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। তিনি ছোট থেকেই পকেটে চোতা পুরে পরীক্ষা দিয়ে বীরদর্পে বাড়ি ফিরতেন। যেন রাজ্য জয় করে ফিরেছেন। তারপর জিততে জিততে এক নেশায় পেয়ে বসল। ইশকুল বয়সেই ঘুমন্ত মায়ের কানের সোনার দুল থেকে ঠাকুর্দার ট্যাঁক ঘড়ি, ঠাকুমার পেতলের পানের ডিবে সব হাতসাফাই করতে করতে বানভাসি কনফিডেন্স লেভেল একেবারে উত্তুঙ্গে। তার ফাঁকে হাতের পাঁচ ছিল বাবার পকেট কাটা, বন্ধুদের টিফিন বাক্স খুলে খাওয়া। আজগুবি বুঝেছিলেন চুরির মজা। রপ্ত করেছিলেন চৌর্যবৃত্তি।
একদিন চূড়ামণি ফেসবুক গ্রুপের অ্যাডমিন তস্কর প্রধান আজগুবিকে সম্মানের সঙ্গে গ্রুপের জয়েন্ট অ্যাডমিন করে প্রতিদিন গ্রুপটি চালু রাখার জন্য আদেশ দিলেন। দেশ বিদেশের নামকরা চোর এবং ডাকাতদের যোগ করতে করতে আজ চূড়ামণি গ্রুপের সদস্য সংখ্যা প্রায় শেষ সীমায়। এদের মধ্যে রয়েছে পাতি দিশী চোরেরা যেমন ছেলেধরা, সিঁধেল চোর, ছিঁচকে চোর, পকেটমার, কেপমার। ক্লেপটোম্যানিয়াক, ছ্যাঁচড়, ঠগ, জোচ্চোর, বাটপাড়, ওয়াগন ব্রেকার, ডাকাতদের মত ডাকসাইটের দলের সঙ্গে জুড়েছে বিদেশি জলদস্যুরা, প্লেন হাইজ্যাকার, নারী ও শিশু পাচারকারী, র্যানসম আদায়ী অপহরণকারী, সাইবার চোর হ্যাকার, রাহাজানির মাস্টারমাইন্ডদের মত দুঁধে চোরেরা। এছাড়াও কিছুদিন যাবত সেই গ্রুপের সঙ্গে যুক্ত হয়েছেন আরও সব সম্মানিত অতিথি চোরেরা। এদের মধ্যে অন্যতম নিতান্তই নবাগত প্লেজিয়ারিস্ট কুম্ভীলক। এরা কবিতা, গল্প টুকে টুকে চৌর্যবৃত্তিতে হাত পাকিয়ে স্বনামধন্য হয়েছেন কালে কালে। ফেসবুকের এক ছাদের নীচে এদের সঙ্গে আছেন ফর্জার বা জালিয়াত, আয়কর ফাঁকি দেওয়া ট্যাক্স চোর, নোট জালকারী, তুখোড় সই জাল করিয়েরা।
অতঃপর এই চূড়ামণি ফেসবুক গ্রুপের কর্মকান্ডের সাক্ষী রইল ভার্চুয়াল দুনিয়া থেকে বাস্তব মঞ্চে তাদের এক অনবদ্য অনুষ্ঠান। লোকাল চূড়ামণি চ্যাপ্টার সংবাদপত্রে বিজ্ঞাপন দিল। অবলীলায় স্পনসর পেল। চিরকুট ফান্ডের তাবড় তাবড় চিটরা সব এগিয়ে এলেন স্বেচ্ছায় অনুদান দিতে। রাজনৈতিক নেতৃবর্গ থেকে মহামান্য দুঁদে আইনজ্ঞ, ভুয়ো আমলা থেকে জোচ্চোর জ্যোতিষী, নকল ডাক্তার থেকে জালি ওষুধ প্রস্তুতকারক সংস্থারাও আমন্ত্রিত হলেন এই অনুষ্ঠানে।
আজগুবি অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক হিসেবে মঞ্চে উঠলেন অলোয় আলোয়। চোরেদের জন্য এগিয়ে এলেন ভালোয় ভালোয়। চৌর্যবৃত্তির নতুন টিপস দিতে। চোরবাগান স্টেডিয়ামে আয়োজিত চূড়ামণি-চোর মেলায় সম্বর্ধনা দেওয়া হল নাক কান কাটা বেহায়া তস্কর প্রধানকে। যার জন্য আজ চোর ডাকাতের বিশ্বজুড়ে এত রমরমা তার অবদান চোর সমাজে অনস্বীকার্য। তস্কর প্রধান ওরফে মন্টু সেদিন শোনাল নিজের জীবনের চোরা কাহিনি। নিজের পাড়ার সব বাগান থেকে সেই কোন ছোট্টবেলায় শুরু হয়েছিল তার চৌর্য বৃত্তিতে হাতেখড়ি। কাকভোরে উঠে ঠাকুমার পুজোর ফুল তুলে থুড়ি চুরি করে আনত সে। ঠাকুমা আশীর্বাদ করেছিলেন মাথায় হাত রেখে। “মন্টু! দেখিস তোর মনোবাঞ্ছা একদিন পূরণ হবেই। বিশ্বের দরবারে তুই তোর যোগ্য সম্মান ঠিক পাবি একদিন।”
সভায় ছোট, বড়, মেজ, সেজ, ফুল, রাঙা, কুট্টি, আন্না সব চোরেরা বুকে সাঁটা প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে বীরদর্পে ঘুরছিল সেদিন। কোনটায় লেখা ‘চুরিবিদ্যা মহাবিদ্যা যদি না ধরা পড়’। কোনটিতে, ‘চোরের মায়েরা বড় গলা করে কক্ষনও কথা বোলোনা’। আবার কোনটায়, ‘ঠাকুরঘরে কলা খাও কিন্তু চুপিচুপি’ কেউ লিখেছে ‘আমরা, চোরেরা সত্যি সত্যি শুধু মাসতুতো না, বিশ্বতুতো ভাই’… এমন দাপুটে সব শ্লোগান। একজন বিনয়ী, নম্র সাধুচোর হাতে ঝুলিয়ে ঘুরে বেড়ালেন ‘অতি ভক্তি কদাচ চোরের লক্ষণ নহে’।
আজগুবির ছোট্ট ছেলেটা যে সবে ক্যারাম আর লুডোর দানে চোরটামি করে হাত পাকাচ্ছে সে কোত্থেকে রং পেনসিল চুরি করে লিখে এনেছে, ‘বুদ্ধি বাড়াও নয়ত চোর পালাবে’।
নামকরা তারটানা চোর আজগুবির বৈমাত্রেয় ভাই পটলা কাল রাত থেকে পড়েই আছে রোয়াকে। মদ খেয়ে চুর এক্কেবারে। অভিমান হয়েছে তার। শোরগোল শুনে মেলা প্রাঙ্গণে আসতেই মিডিয়ার ক্যামেরা তাক করল তার দিকে। সে বলল, “আমি হলাম চোরের সাক্ষী মাতাল। যার জন্য চুরি করলাম সে আমাকেই আজ নেমন্তন্ন করেনি বলে খুব দুঃখ পেলাম। এই বলে দাদার দিকে তাকাল। আমি সব তথ্য গোপন করে গেছি এতদিন শুধু দাদাকে রক্ষে করব বলে। মিথ্যে কথা বলেছি পুলিশকে, যাতে দাদা ধরা না পড়ে।”
“আরে! তোকে তো আজ অন্য দায়িত্ব দিয়েছিলাম।” আজগুবি গর্বের সঙ্গে বলল। “এই যে এত বড় মেলার আয়োজন দেখছেন, এসবের ইলেকট্রিকের দায়িত্বে আছে আমাদের এই পটলা। কারেন্ট টেনে হুকিং প্রযুক্তিতে ওর জুড়ি মেলা ভার। ‘ইলেকট্রিক চোর’ বলে ওর নাম আমাদের ডেটাবেসে সেভ করা আছে। এখন আবার কেবল টিভির তার এ বাড়ি ওবাড়িতে দিব্য লাগাচ্ছে।”
“তা এর নাম পটলা কে দিল? জানেন? মশাই, চুরি আমাদের রক্তের শিরায় শিরায়। জন্মে এস্তোক পটলা পাক্কা চোর। সবে হামা দিচ্ছে। বাড়ির উঠোনে ঠাকুমা সবজি কিনছেন। কখন হামা দিয়ে টুক করে পাশ থেকে গোটা দুই নধর পটল এনে চুপিচুপি রান্নাঘরের ঝুড়ির মধ্যে রেখে দিয়েছিল। তারপরেই তো ঠাকুমা আদর করে ওর নাম দিল পটলা।”
সেদিন অনুষ্ঠানের শেষে আজগুবি পটলাকে নিজের অফিসে ডেকে পাঠালেন। “শোন্! এসব তারফার টানা চোরেদের দিন শেষ। ইলেকট্রিকের তারই বল্ বা কেব্লের। হাত পাকাতে শেখ তথ্যচুরিতে, বুঝলি? আসল পয়সা ওখানে।”
পটলা ফ্যালফ্যাল করে তার দাদার মুখের দিকে চেয়ে থাকে। “মানে?”
“মানে স্মার্টফোনের মাধ্যমে একটা ক্লিকে চুরিটা শিখে নে। কত্ত রকমের চুরি হয়েছে আজকাল। হাইফাই সব ব্যাপার। অ্যাপ লাগিয়ে নে ফোনে। সাবস্ক্রাইব করতে বল। এবার সাবস্ক্রাইবারদের ফোন থেকে সব ডেটা তোর ফোনে ঢুকে যাবে বুঝলি?” পটলা বলল “তাতে আমার কী?”
“মাথাটা চিরকাল মোটাই থেকে গেল। এত চুরি শেখালুম তবু আর মাথাটা খুললো না। একটা ক্লিকে সেবার পাসওয়ার্ড হাতড়ে ব্যাংক থেকে টাকা উধাও করেছিলুম মনে নেই? বেচারা সেই লোকটা! থানা পুলিশ করেও ধরতে পারেনি আমায়। তবে ওভাবে টাকা চুরি এখন অবসোলিট বুঝলি? আর রিস্কিও বটে। যে হারে দেশে সাইবার সিকিউরিটি টাইট হচ্ছে তাতে ওই কায়দায় আমাদের চেয়েও একধাপ স্মার্ট টেক স্যাভি চোর দরকার এই জমানায়। এখন ফোনে বারে বারে ওটিপি পাঠিয়ে ওরা পরখ করে। যাচাই করে নেয়। তার আগে তুই ফেসবুকে ঢোক পটলা। ফোন চুরি না করে মন চুরি করতে শেখ বরং। সোশ্যাল মিডিয়া হল সবচেয়ে বড় চুরির জায়গা এখন বুঝলি?” আজগুবি বুদ্ধি দেন। পটলা বলল, “সেটা কেমন?”
“ফ্রি সার্ভিস দিচ্ছে কোটি কোটি মানুষকে বুঝলি?”
পটলা বোকার মত বলল, “ফেসবুক ফ্রি?”
“তুই কী জানতি, পয়সা লাগে? আর ফ্রি মানেই ধান্ধা। থোড়িই তোকে এমনি এমনি দিচ্ছে ব্যবহার করতে! তোর সব ডেটা নিয়ে নিচ্ছে। তুইও চালাকি করে নতুন নতুন ফেক অ্যাকাউন্ট খুলে বড় বড় লোকেদের হাঁড়ির খবর নিতে পারিস।”
“একটু বুঝিয়ে বল।”
আজগুবি বললেন, “শোন তবে। এই যে কিছুদিন আগে গেল গেল রব উঠল। ফেসবুক থেকে সব তথ্য নাকি চুরি হচ্ছে। কারণটা রাজনৈতিক। মানে ফেসবুককে কাজে লাগিয়ে ভোট হয়েছিল সেবার এম্ব্রিকায়। একটি কোম্পানি সেই কাজটা সেরেছিল কৌশলে। এম্ব্রিকার ভোটযুদ্ধে ফেসবুক ইউজারদের রাজনৈতিক প্রেম কোন দলের দিকে সেই তথ্যটুকুনি ওরা কাজে লাগাল। কী বুঝলি?”
পটলা বলল “তার মানে ভোটদাতারা প্রভাবিত হল বিজ্ঞাপনের দ্বারা।”
“এই তো মাথা খুলেছে আমার ভাইয়ের।” আজগুবি বললেন।
পটলা হাসল।
“আর তাই ভরাডুবি হল লিনটনের। অভাবনীয় ভাবে পাম্প জিতে গেল।”
পটলার খিদে পেল। সে দাদাকে বলল, “তা আজকের ফ্যাংশনে প্যাকেট-ট্যাকেট করিসনি তোরা?”
ভায়ের জন্য রাখা একটা খাবারের বাক্স পটলার হাতে ধরিয়ে দিয়েই আজগুবি বলল,
“এবার সেই অ্যাপের কথা বলি? নীল রং না লাল রং কোনটা কার পছন্দের সেটা সাধারণ লোকেদের কাছে জানতে চাইল অ্যাপ বিল্ডাররা। ব্যস! সে ডেটা শিকার করাই কাজ তাদের, বুঝলি? মানুষ নীল পার্টি না লাল পার্টির দলে সেটা জানার কৌশল। আড়ালে নীরব যুদ্ধে দুই বিরোধী পক্ষ। সেটা কেউ জানল না। বোকা মানুষগুলো পাকে প্রকারে অ্যাপে ক্লিক করেই জানিয়ে দিল মনোগত অভিপ্রায়। এবার বুঝলি?”
পটলা মাথাটা চুলকে নিল খানিক।
“দেশের ভোট থেকে রাষ্ট্রের নীতি সবেতেই অনেক কাজে লাগে এইসব ডেটা, বুঝলি? আর পার ডেটা যোগান দিলেই তোর অ্যাকাউন্টে ঝাঁ করে টাকা ঢুকে যাবে রে মাথামোটা! লোকের মাথায় হাত বুলিয়ে বোঝানো। একপ্রকার ভোটারদের মন চুরি। কী রে মাথায় গেল কিছু?”
“এসবে আমার প্রোমোশন হবে দাদা?” আজগুবি বললেন, “হবে বৈকি। তুই তখন ডেটা চোর হয়ে যাবি এক ধাক্কায়। আর তারপরের ডেজিগনেশন হল এক লাফে সাইবার চোর। রাজা করে দেবে রাজা। বুঝলি ব্যাটা?”
বেশ চলছিল পটলার বিজনেস। মাঝে মধ্যে মুরগী মটন, দারুণ খ্যাঁটন, দেওয়ালে এলইডি টিভি, ফ্রিজ সব হল। আজগুবি ভায়ের বিয়ে দিল। বিয়ের পরেই মধুচন্দ্রিমায় পটলা নতুন বউ নিয়ে দু’রাত তিনদিন দীঘা বেড়িয়েও এল সে বসন্তে।
তারপরেই এল ঘোর দুর্দিন। অতিমারীর প্রকোপে গেল গেল রব সারা বিশ্বজুড়ে। চোরটামির ব্যওসায় কায়দা না জানলে লাভের চেয়ে লোকসান বেশী। আজগুবির শেখানো স্মার্ট ফোনের অ্যাপে ঢুকে পাসওয়ার্ড চুরিতেও লাভ হচ্ছিল না আর। এত ওটিপি সব্বস্ব হয়েছে সবকিছু!
“ওটিপি আবার কী রে দাদাভাই?” পটলা বলে বসল।
আজগুবি বলল “ফোনে আসে আবার চলেও যায় বড় তাড়াতাড়ি। আমাদের লাভ নেই এতে বরং লোকসান। সবাই আজকাল হেব্বি চালাক হয়ে গেছে রে।”
পটলার এখন দুয়ারে ঘটনা। এখন সে বেশ কিছুদিন চুরিটুরি থেকে বিরত। পাপ কাজ আর করবে না ঠিক করেছে মনে মনে। একে মনে চিন্তা মারণ রোগের তাই মনঃসংযোগে ঘাটতি কারণ মধুচন্দ্রিমাতে গিয়েই নতুন বউ সাবিত্রীকে ইম্প্রেগনেট করেছে পটলা। তখন কি আর জানত যে তারপরেই আসবে সেই মহামারী? সারাক্ষণ স্বামী স্ত্রী দুজনেই বিষাদগ্রস্ত হয়ে থাকে। পেটের সন্তানের কী হবে ভেবে ভেবে অতিমারী যখন দূর হবে তখন সন্তান প্রসব হয়ে হাঁটতে শিখে যাবার কথা। এমনকি কথা বলে, ছড়া শিখে পাড়ার প্রি-ইশকুলে নাচনকোঁদন শিখতে যাবারও কথা। কিন্তু দুয়ারে করোনা আর ডেলিভারি কড়া নাড়ছে।
তাহলে? পটলা আর সাবিত্রী এখন সারাদিন ঈশ্বরের স্মরণ মনন করতে থাকে। তাদের যা হবার হোক। সন্তান যেন করোনা জয় করে সুস্থ থাকে। এদিকে অতিমারীর ক্রান্তিকালেই এগিয়ে এল সাবিত্রীর প্রসবকাল। হাসপাতালে যাবে না তারা কিছুতেই। টেলিভিশনে শুনেছে আগেকার দিনের মত ঘরে প্রসব হলেই ভালো থাকবে মা আর বাচ্চা। তায় আবার সারাজীবন ধরে পটলার কুকীর্তির জন্য পাপ বোঝাই জীবন। মনের মধ্যে আশঙ্কার মেঘ বোঝাই। আজগুবি ব্যাবস্থা করে রেখেছে পাড়ার নার্সিং হোমের নার্স, আয়া, গাইনি সব নিপুণ হাতে। কোনও টেনশন নেই সাবু, ম্যায় হু না, মাথায় হাত রেখে বলে গেছেন ভাসুরঠাকুর। দুই ভাই মিলে আগেভাগেই ডিপার্টমেন্টাল স্টোর থেকে ঝেড়ে সোপ, মাস্ক, স্যানিটাইজার বা এসএমএস সব বোঝাই রেখেছে ঘরে।
সে যাত্রায় সুখ প্রসব হল সাবিত্রীর। তার চেয়েও আনন্দের কথা ফুটফুটে বাচ্চা মেয়ে মায়ের পেট থেকে শুধু বেরোলই না ককিয়ে কেঁদেই এক লাফে দাই মার হাত ফসকে পাশের কবোষ্ণ সাবানজলের গামলায় সজোরে তার পতন হল আর সঙ্গে সঙ্গে নাকানি চোবানি খেয়েই আয়ামাসীর হাতে তৎক্ষণাৎ উত্থান হল। এ যেন বিন্ধ্যবাসিনীর মত গল্প। আকাশে না উঠে সোজা সাবানজলে। তারপরেই গেল গেল রব উঠেছিল বটে তবে সাবিত্রীর মনে আনন্দের সীমা নেই। সে একে স্বস্তি পেয়েছে তায় শিশুটি জন্মেই আপাদমস্তক স্যানিটাইজড হয়ে সোজা মায়ের কোলের কাছে এসে শুয়েছে। বলাই বাহুল্য চোরের মেয়ের বুদ্ধি! সাবিত্রী বরের কানের কাছে মুখ নিয়ে গিয়ে বলল, বাপ, জ্যাঠার যোগ্য মেয়ে। জন্মানো মাত্রই দেহের ভেতর-বাইরে সব ক্ষার যুক্ত করে ফেলেছে গো। অন্ননালী থেকে শ্বাসথলি তথা পাকস্থলীর অলিগলি সব্বোমাটিতে সাবান জল দিয়ে এক্কেবারে হড়হড় করে করোনা জয় করল নিজে নিজেই! আজগুবি দৌড়ে এসে সদ্যোজাতর মাথায় চুরি করা একটা সোনার কয়েন ছুঁইয়ে বলল, এ মেয়ের নাম দিলাম করোনাশ্রী ।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন