রম্যরচনা
চুমকি চট্টোপাধ্যায়
লেটার বক্সে হাত ঢুকিয়ে দু’খানা খাম বের করে আনলেন অজয়কালি মহাপাত্র। জোরে জোরে বলেই ফেললেন, “ওব্বাবা, বছরে তিনশো ষাট দিন শূন্যগর্ভা থেকে একেবারে যমজ প্রসব! দু’খানা খাম কীসের তা জানার জন্য একটু উত্তেজিত হয়ে উঠলেন তিনি। ভেতরে ঢুকে সদর দরজা বন্ধ করতেই ভুলে গেলেন।
ঘরে ঢুকে খাটে বসে প্রথম খামটা নিয়ে দেখলেন ইন্সিওরেন্স কোম্পানির চিঠি। নির্ঘাত প্রিমিয়াম জমা দেবার তাগাদা। পারেও এরা। আরে গুচ্ছের টাকা তো তোদের জিম্মাতেই আছে। সেগুলো সুদে খাটিয়ে দেদার রোজগারও করছিস। তাও কেবল দাও আর দাও। মেজাজের একটা সুতোয় একটু টান ধরল তার। বালিশের তলায় তাচ্ছিল্যের সঙ্গে গুঁজে দিলেন খামটা।
এবার দ্বিতীয় খামটা হাতে নিলেন। সুদৃশ্য খামটা দেখে একটু অবাকই হলেন অজয়কালি। বিয়ের চিঠি তো নয়! সেক্ষেত্রে লেখা থাকত শুভ বিবাহ। তাহলে? সন্তর্পণে খামের মুখটা খুলে ফেললেন। ভেতর থেকে টেনে বের করলেন চকচকে একখানা কার্ড। এক গুচ্ছ নানা রঙের বেলুনের ছবি। আরও অবাক হয়ে কার্ডটা খুলতেই দেখলেন,
প্রিয় বন্ধু,
আগামী শুক্রবার ১৭। ১১ তারিখে আমার শুভ জন্মদিন। সর্বমঙ্গলময় ঈশ্বরের আশীর্বাদে এবারে সত্তরতম বৎসরে পদার্পণ করব। সেই উপলক্ষে ওই দিন সন্ধ্যায় সামান্য পানভোজনের আয়োজন করা হয়েছে। সপরিবারে আপনার উপস্থিতি একান্ত কাম্য।
ইতি
বিরুপাক্ষ গৌতম
কার্ডটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ থম মেরে বসে রইলেন অজয়কালি। তারপর আবার পড়লেন কার্ডটা। সেই সময়ে অজয়কালির গৃহিণী আরতিবালা বারান্দায় কাপড় শুকোতে দিতে যাচ্ছিলেন। কর্তার ভ্যাবাচ্যাকা খাওয়া চেহারা দেখে দাঁড়িয়ে গেলেন। “কী হয়েছে? অমন হাঁ করে কী দেখছ? হাতে ওটা কী?”
তারপরেই ওনার নজরে পড়ল সদর দরজার দিকে। “অই দ্যাখো, সদর খুলেছিল কে? তুমি? দরজা তো খোলা! আটকাওনি কেন? মরণ দশা! এখুনি হাবুদের বাড়ির বেড়াল এসে ঢুকবে।”
“বেড়াল ঢোকে ঢুকুক! তুমি দেখে যাও কান্ডখানা। বিরুপাক্ষ গৌতমকে মনে আছে তোমার?”
“ভোলার উপায় আছে, পদবী নেই, দুখানাই নাম।”
“হে হে, যা বলেছ। এই নিয়ে তো কম পেছনে লাগিনি আমি।”
“গৌতমদা গৌতমদা বলেই তো ডাকতে। উনি যত বলতেন, বিরুপাক্ষদা বলতে অসুবিধে কী আপনার? তুমি বলতে, বড্ড বড় নাম, গৌতমদাই তো ভালো। আপনার কত সুবিধে। দুটোই নাম, পদবী নেই। যে কোনো একটা নামে ডাকলেই হল!”
“দেখো দেখো, সত্তর বছরের জন্মদিনে আমাদের সপরিবারে নেমন্তন্ন করেছে গো! হে হে, অবস্থা বোঝো! যখন ভাড়াটে ছিলাম তখন তো কই এসব ভড়ং দেখিনি! বৃদ্ধ বয়েসে ভীমরতি।”
“যাই বলো, কবেই তো আমরা চলে এসেছি, তাও মনে রেখে নেমন্তন্ন করেছে তো!” কার্ডটা হাতে নিয়ে দেখে আরতিবালা বললেন, “অ শুক্কুরবার! তাহলে আমি যাব না। আমার সন্তোষী মায়ের পুজো আছে। তুমি একাই যেয়ে ঘুরে এসো।”
“আরে ঘুরে এসো বললেই হয় নাকি? খালি হাতে তো আর যাওয়া যাবে না। এই মাগগি গন্ডার বাজারে যুতসই একটা উপহারের দাম কত বলো তো?”
“ভালো ভালো গিলবে আর তার বিনিময়ে কিছু দেবে না, সে কি হয়? এমন একটা কিছু নিয়ে যেও যা ওদের সবারই কাজে লাগবে। তোমার গুণগান করবে তাহলে ওরা সবাই।”
“হ্যাঁ, ওদের সবার কাজে লাগতে গিয়ে আমি ফতুর হই আর কি! ভালো খাওয়াবে না ছাইপাঁশ গেলাবে সে তো আর না খেয়ে বলা যাবে না। লোক তো সুবিধের নয়। চা বিস্কুট আর চানাচুর খাইয়েই হয়তো বিদেয় করল! দেখি, রাতে খোকাকে ফোন করে পরামর্শ করি। কী বলে দেখি ছেলে।”
ছেলের সঙ্গে পরামর্শ, ভাবনা চিন্তা সমস্ত করে ছোট্ট টবে একটা নকল পাতাবাহার গাছ কিনে আনলেন অজয়কালি। আশি টাকা দাম নিল গাছটা। এই দামে এমন চমৎকার একটা উপহার কিনতে পেরে বেজায় খুশি হলেন তিনি।
অজয়কালি একেবারেই অনুষ্ঠান করার পক্ষে নন। সে বিয়ে হোক কি জন্মদিন বা শ্রাদ্ধ। অনুষ্ঠান মানেই এক গঙ্গা বাজে খরচ। লোক খাওয়ানো হল সব চাইতে লোকসানের। যতই ভালো খাওয়াও, তাদের মন ওঠে না। কেবল নিন্দে মন্দ। এক ছেলে হলেও অজয়কালি খোকনের জন্মদিন পালন করেননি কোনদিনই। জন্মদিন মানেই তো জীবন থেকে একটা বছর খসে যাওয়া। তার জন্য আবার উৎসব করে কে! ছেলের বিয়ের অনুষ্ঠান করা নিয়েও লেগে যায় আরতিবালার সঙ্গে। রেজিস্ট্রি করে বিয়ে দিয়ে নিজেরা আর নতুন বৌয়ের বাড়ির ঘনিষ্ঠদের খাইয়ে দেবার পক্ষেই মত অজয়কালির। আরতিবালার এতে তুমুল আপত্তি। একটামাত্র ছেলে, তার বিয়ে একটু জমকালো ভাবে না দিলে হয়! নিজেদের সামর্থ বুঝেই যতটা সুন্দরভাবে আয়োজন করা যায়, সেই কথাই সমানে বলতে থাকেন তিনি।
ছেলে খোকন এ ব্যপারে মুখ খোলে না। সে চালাক ছেলে, বোঝে যা করার নিজেকেই করতে হবে। বিরুপাক্ষবাবুর জন্মদিনে সে তার বাবাকে উপহারের বিষয়ে কোনো পরামর্শই দেয়নি। সে জানে, তার বাবা নিজের মতেই চলবে।
সাদা ধুতির ওপর সাদা পাঞ্জাবি চাপিয়ে উপহারের বাক্স হাতে নিয়ে বিরুপাক্ষ গৌতমের বাড়ি গিয়ে উপস্থিত হলেন অজয়কালিবাবু। এই বাড়ির একতলায় দশ বছরের কাছাকাছি ভাড়া ছিলেন তিনি। জল নিয়ে আকচাআকচি লেগেই থাকত। অজয়কালির জলের বাতিক আছে। ভালোরকমই জল লাগে তার দৈনন্দিন কাজকর্ম সারতে। বিরুপাক্ষ তাই নিয়ে বিস্তর কথা শোনাতেন।
বাড়ির সামনে এক ফালি জায়গা আছে। সেখানে প্যান্ডেল হয়েছে। ব্যাঁকা হাসি ফুটে উঠল অজয়কালির ঠোঁটে। বললেন, ‘বর্বরস্য ধনক্ষয়’, আর তখনি কানে এল “আরে মহাকালি অজয়পাত্র যে! আসুন আসুন…” সামনে, কিছু দূরত্বে দাঁড়িয়ে এ কান থেকে ও কান অবধি ছেতরে হাসছেন বিরুপাক্ষ গৌতম। নিজের নামটা কানে যেতেই ব্যাঁকা হাসি মিলিয়ে গিয়ে ব্যাঁকা হয়ে গেল ভুরুজোড়া। অ্যাহ্, এটা কী বললেন বিরুপাক্ষ। মহাকালি… ইচ্ছাকৃত নাকি ভুলে গেছেন আসল নামটা!
মুখোমুখি হয়ে গেছে ফলে এগোতেই হল অজয়কালিকে।
প্লাস্টিক হাসি হেসে বললেন, “শুভ জন্মদিন গৌতমদা। অনেকদিন পর দেখা হল। মাঝে একবার মেসেজ করেছিলাম আপনাকে হোয়াটসঅ্যাপে দেখে। তা উত্তর দেননি আপনি।”
“এসে আগে বসুন এখানে। ওরে ও হরে, শরবত নিয়ে আয়।” সার দিয়ে পাতা চেয়ারের একটায় বসলেন অজয়কালি। সেখানে বেশ কিছু বয়স্ক এবং মাঝবয়েসী ভদ্রলোক বসে গজল্লা করছে। বিরুপাক্ষ বললেন, “এই যে সন্তোষ, মতিন, পার্থ, আলাপ করিয়ে দিই, ইনি হলেন মহাকালি…”
“না না, আমার নাম অজয়কালি মহাপাত্র। গৌতমদা গুলিয়ে ফেলছেন।”
“ওই একই হল। আমার নাম ধরে না ডেকে, পদবীতে দাদা বসিয়ে ডেকে আসছেন এতকাল ধরে, সে ব্যাপারে কম বার শুধরে দিইনি কি? আপনি তো মশাই গ্রাহ্যই করেন না। এখন নিজের নাম উলটোপাল্টা শুনে খুব খারাপ লাগছে তাই তো?”
অজয়কালির মাথাটা গরম হয়ে উঠছিল। এতগুলো লোকের সামনে অপমান! এজন্যই নেমন্তন্ন করেছে বুড়োটা। বুঝেছি। কিন্তু খুব জোর সামলে নিলেন নিজেকে। শত্রুপক্ষের ডেরায় কেরামতি দেখিয়ে লাভ নেই। জোর করে মুখে অমায়িক হাসি এনে বললেন, “আরে দাদা কী যে বলেন, গৌতম নামটা সহজ তাই ওই নামে ডাকি। কেন লোকে পদবীতে দাদা জুড়ে ডাকে না বুঝি? মুখার্জীদা, দত্তদা, ডাকে তো! যাকগে, আজ থেকে বিরুপাক্ষদা বলেই ডাকব’খন। এই নিন ধরুন, আপনার জন্মদিনের উপহার।”
“এসবের আবার কী দরকার ছিল! কেমন যেন মনে হল, আগামী বছর নাও থাকতে পারি, তাই সবাইকে নিয়ে হুল্লোড় করব বলে এই জন্মদিনের আয়োজন করেছি। এই বয়েসে উপহার নিয়ে আর কী বা করব। তা আছে কী ওতে, কাচের কিছু?”
“না বিরুপাক্ষদা, কাচ নয় গাছ।”
“অ্যাঁ? গাছ? এইভাবে প্যাক করা গাছ? সেতো দুমড়ে মুচড়ে একসা হবে হে!”
“আরে সত্যি গাছ নয়, আর্টিফিশিয়াল। আপনার তো আবার জল খরচের সমস্যা আছে। সত্যি গাছ হলে তাতে আবার জল দিতে হবে। এ গাছে ওসব ঝামেলা নেই। মেন্টেনেন্স ফ্রি। খুলে দেখুন নাহয়।” সুযোগ পেয়ে খোঁচা দিতে ছাড়লেন না অজয়কালি।
“আচ্ছা, তা বেশ। ও রতন, এই আয় দেখি এদিকে, নে এটা, চিলে কোঠার ঘরে রেখে দিগে যা।”
অজয়কালি পরিষ্কার বুঝলেন, ওনার উপহারটা জঞ্জালে ঠাঁই হল। নিজের গালেই দু’ঘা দিতে ইচ্ছে হল ওর। কেন যে কিনতে গেলেন উপহার এই মর্কট লোকটার জন্য। আশি টাকা জলে গেল। দশটা ডিম আর আড়াইশো সুজি হয়ে যেত ওই টাকায়… ভাবতে ভাবতেই খাবার ডাক এল।
“চলুন অজয়কালিবাবু, খেয়ে নেবেন। অ্যাই শক্তি, মতিন চল, তোরাও বসে পড়।”
“আপনি খাবেন না?” পীরিত দেখাতে জিগ্যেস করলেন অজয়কালি।
“আমি এখন খাব না, আপনারা খান, আমি সামনে থাকব।”
অজয়কালির সামনে দাঁড়িয়ে রইলেন বিরুপাক্ষ। প্রথম লটের দুটো লুচি বেগুন ভাজা দিয়ে শেষ করেছেন, আর দুটো নেবেন ছোলার ডাল দিয়ে খাবেন। বিরুপাক্ষ বললেন, “আপনার তো আবার হাই কোলেস্টেরল, তাই না? ভাজাভুজি খাওয়া ঠিক নয়। এই, এনাকে আর লুচি দিস না। পোলাও নিয়ে আয়।”
আগ্নেয়গিরির লাভা উদগীরণ হতে শুরু করেছে অজয়কালির অন্দরে। ডেকে এনে খেতে দিচ্ছে না! কেমন শয়তান লোক! কোলেস্টেরল বেশি তা ও জানল কেমন করে! আন্দাজে ঢিল ছুঁড়েছে ব্যাটা। পোলাও খুব একটা পছন্দের খাবার নয় অজয়কালির। তাও ঠিক করলেন নেবেন কিন্তু খাবেন না। যেমন লুচি খেতে দেয়নি তেমন জবাব পাবে।
বেশ পরিমাণ মতো পোলাও নিলেন পাতে। মাছ এল, নিলেন। দু’গ্রাস পোলাও খেয়ে মাছটা শেষ করলেন। আর পোলাও খেলেন না। বসে রইলেন।
“কী ব্যাপার অজয়কালিবাবু? পোলাও খেলেন না? এইত্তো মাটন এসে গেছে। অ্যাই, এখেনে মাংস দাও, একদম বেছে দেবে, হাড় জড়ানো মাংস এক পিস আর এক পিস মেটে। ঝোল অল্প দেবে। হাই প্রেশারের রুগী। শেষে অসুস্থ হয়ে পড়লে বৌমা আমাকে গাল দেবে।”
“এতো আচ্ছা জ্বালাচ্ছে! অসম্মান করার জন্যই কি নেমন্তন্ন করেছেন? কিন্তু কারণটা কী সেটা তো ধরতে পারছি না। যা করছে করুক। যাবার আগে একটা গুগলি দিয়ে যেতে হবে বজ্জাতটাকে।” মনে মনে ঠিক করলেন অজয়কালি।
অজয়কালিকে সবকিছুই রেস্ট্রিক্ট করে খাওয়ালেন বিরুপাক্ষ গৌতম। অজয়কালি ভেতরে ভেতরে ফুটছেন। এক খিলি পান হাতে নিয়ে বললেন, “পান খেতে পারি কি? নাকি আপনার লিস্টে আমার যা যা রোগ আছে তাতে পান চলবে না।”
“আরে ছি ছি, কী বলছেন আপনি অজয়কালিবাবু? পান তো কোলেস্টেরল কমায়! জানেন না? রোজ চার-পাঁচটা করে পান পাতা চিবিয়ে খাবেন, দেখবেন কোলেস্টেরল কমে গেছে। তা কেমন খেলেন?”
“ওই খেলাম আর কি, মন্দ নয়। আমার মতো অকিঞ্চিকর লোককে ডেকে খাওয়াতেই বা গেলেন কেন বুঝলাম না। এই বয়েসে এত খরচ করে জন্মদিন করারও কোনো মানে খুঁজে পেলাম না গৌতমদা। একেই বোধহয় বলে বর্বরস্য ধনক্ষয়।”
“আপনাকে ডাকার সত্যিই কোনো কারণ ছিল না। আমার ইচ্ছে হয়েছে, আমি জন্মদিন করছি। কিন্তু আপনার মেসেজটা পেয়ে আমার মনে হল, আমি কেন আছি, সেটা আপনাকে বোঝানো দরকার। জীবনটাকে উপভোগ করার জন্যই আছি, আপনার মতো হাড় কেপ্পন হয়ে বেঁচে থাকায় কোনো আনন্দ নেই।”
বিরুপাক্ষ কী বলে গেলেন তার বিন্দু বিসর্গ বুঝতে পারলেন না অজয়কালি। বিরুপাক্ষ কেন আছেন সেটা অজয়কালির বোঝার দরকার কী?
অজয়কালি গঙ্গারামের মতো তাকিয়ে আছেন দেখে বিরুপাক্ষ জিগ্যেস করলেন, “কী হল, বুঝতে পারছেন না আমি কি বলছি?”
ঘাড় নেড়ে না জানালেন অজয়কালি। পকেটে হাত দিয়ে মোবাইল বের করলেন বিরুপাক্ষ। তারপর কিছু একটা বের করে অজয়কালির চোখের সামনে ধরলেন।
অজয়কালির হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ, “কেন আছেন?”
কেমন আছেন-এর ‘ম’টা বাদ পড়ে গেছিল। তার জন্যই এই অজয়কালি কাব্য রচিত হল।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন
হাহাহা।
অনেকদিন পরে প্রাণ খুলে হাসলাম। এমন কিন্তু হতেই পারে।
জয়তীকে অনেক ভালোবাসা।
সুন্দর রম্য লিখেছ।
হা হা দারুণ দারুণ 😃💐
দারুণ মজার ।হা হা হা ।