aparbangla-editorial-edition-12

সম্পাদকীয়


শিব্রাম চক্রবর্তী ভাষায় বলতে গেলে সত্যিটা হল এই যে, নতুন বছর নিয়ে মাতামাতি করার কোনো অর্থই হয় না। কারণ, যখনই কোনো নতুন বছর এসেছে, এক বছরের বেশি টেঁকেনি।

তবুও আমরা করি, বেশ হুল্লোড়ের সাথে নতুন বছরকে বরণ করে নিয়ে কামনা করি, ঘুচে যাক গ্লানি, মুছে যাক জরা!

কিন্তু নতুন বছরে তো আর পুরনো বছর থেকে কোয়ান্টাম জাম্প করে পৌঁছাতে পারা যায় না যে সমস্ত বেদনা আর গ্লানিকে ওই প্ল্যাটফর্মেই বসিয়ে রেখে কেবল খুশিটুকুকে নিয়ে ড্যাংড্যাং করে এই নতুন প্ল্যাটফর্মে পা রাখা যাবে! বয়ে নিয়ে আসতে হয় সবটুকুই।

আমরাও এনেছি। বিগত বছরের সমস্ত বেদনা আর না-পাওয়ার সাথে রয়েছে তাকে অতিক্রম করে যাওয়ার সদিচ্ছা আর নতুন কিছু করতে চাওয়ার জন্য সদর্থক ভাবনা।

অপারবাংলার সমস্ত শুভানুধ্যায়ীকে সঙ্গে নিয়ে আমরা এবছর আরও দৃঢ় পায়ে এগোতে পারব, নতুন নতুন অনেক কিছু দিতে পারব পাঠকবন্ধুদের এই আশা।

এই বছরটা বাংলাভাষীদের জন্য মাতৃভাষার প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনের বছর। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষ এটি। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের জয় তো কেবল অত্যাচারী ইয়াহিয়া খানের সেনার হাত থেকে মুক্তি নয়, এই স্বাধীনতা একটা জাতির স্বপ্ন দেখার স্বাধীনতা। ভাষা আন্দোলনের মধ্যে দিয়ে যে প্রতিবাদের সূচনা হয়েছিল, সেই লড়াইয়েরই জিত হয়েছিল একাত্তরে। যে ভাষার দাবী একটা রাষ্ট্রের জন্ম দিল, সেই মহান বাংলাভাষাকে শ্রদ্ধা। শ্রদ্ধা জানাই তাঁদের সকলকে, যাঁরা এই স্বপ্নটা দেখিয়েছিলেন এবং যাঁরা সেই স্বপ্নের পথে হেঁটে আমাদের মাতৃভাষাকে মর্যাদার আসনে বসিয়ে দিয়ে গেছেন।

সমস্ত পৃথিবীর জন্য এ বড় দুঃসময়। তবু তো কোথাও থেমে থাকার উপায় নেই, এগিয়ে যেতেই হবে, জীবনের ধর্মই তাই। তাই, যা নেই, তার কথা না ভেবে বরং যা আছে তার প্রতি আরো যত্নবান হই, আরো বেশি ভালোবাসি জীবনকে, এই হোক আমাদের একবছরের থিম।

চতুর্থ বর্ষে পা দিলো অপারবাংলা। আরো অনেক নতুন বছরে পদার্পন করার আশা রাখি অপারবাংলা পাঠকবৃন্দর সাথে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ বাংলা ভাষার জয়গাঁথা। আর তার সুবর্ণ জয়ন্তী বর্ষের সাথে সাযুজ্য রেখে এবার কিছু লেখা প্রকাশিত হলো। পূরবী বসুর গল্প বাংলা ভাষা জয়ের প্রতীকী। ভারতবর্ষ, বাংলাদেশ এবং আমেরিকার বিশিষ্ট কথাসাহিত্যিকেরা কলম ধরেছেন গল্প বিভাগে।

শারদীয়া সংখ্যার উপন্যাসে পাঠকদের সাড়া জাগানো উচ্ছ্বাস দেখে আমরা এবার থেকে প্রতি সংখ্যাতে উপন্যাস রাখার চেষ্টা করবো। ওয়েবজিনের কথা ভেবেই উপন্যাসের শব্দসংখ্যা সীমিত রাখা হয়েছে। এই সংখ্যাতে সুমন ভট্টাচার্য এর উপন্যাস আশা করি আপনাদের ভালো লাগবে।

ভ্রমণ বিভাগে, নন্দিতা বাগচী আর ইন্দিরা মুখোপাধ্যায়ের কলমে আমরা দুবাই আর প্যারিস ঘুরে আসবো। প্রবন্ধ বিভাগে, দেবজ্যোতি ভট্টাচার্য সাহিত্য আলোচনা করেছেন সুন্দরবনের প্রেক্ষাপটে, যা পাঠককে অন্য দৃষ্টিভঙ্গিতেভাবাটা বাধ্য করবে। রোহিঙ্গাদের নিয়ে তথ্যসমৃদ্ধ লেখা বাংলাদেশে বসে লিখেছেন মাহাবুবা লাকি। অনুবাদে তপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের লেখায় আমরা কয়েকটি দুর্দান্ত চৈনিক কবিতা পড়বো, চৈনিক সাহিত্যের এক গুরুত্বপূর্ণ সময় সম্বন্ধে ওয়াকিবহাল হবো। বিবিধ বিভাগে পড়তে পারবেন ভিন্ন স্বাদের লেখা; স্মৃতিচারণা, গা ছমছম করা সত্যি ঘটনা আর রম্য রচনা।

এক গুচ্ছ অণুগল্প আর প্রথিতযশা কবিদের এক গুচ্ছ মন মাতানো কবিতা পাঠকদের আশা করি মন ভালো করে দেবে। প্রতিবারের মতো এবারও সমৃদ্ধ রান্নাঘর, বিনোদন বিভাগ।

আমরা মুখোমুখি হয়েছি বিশিষ্ট সাহিত্যিক ও কবি বিনায়ক বন্দ্যোপাধ্যায়ের। অনেক অজানা তথ্য আর তাঁর জীবন নিয়ে আলোকপাত পড়তে বিনোদন বিভাগে চোখ রাখুন। প্রিয়ব্রত দত্তর ধারাবাহিক “স্মৃতির ষ্টুডিওপাড়া” এবারও জমজমাট নতুন তথ্য নিয়ে। আর আছে ফিল্ম রিভিউ নিয়ে অপারবাংলার নিয়মিত রিভিউ।

অপারবাংলা পাঠদের কাছে বিনীত অনুরোধ, আপনারা লেখা পড়ুন, নিজেদের মন্তব্য সরাসরি ওয়েবসাইট এ রাখুন। এই মন্তব্য গুলো আমাদের কাছে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ অপারবাংলা পত্রিকার উৎকর্ষতা বাড়াতে। আর নিশ্চয়ই শেয়ার করবেন আরো বেশি করে। ছড়িয়ে যাক অপারবাংলার পত্রিকার লেখা সারা পৃথিবী জুড়ে। বাংলা ভাষার জয়ধ্বজা আমরা এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার শপথ করি।

ধন্যবাদ
শুভ নাথ
সম্পাদক – অপার বাংলা

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *