short-story-kutchokre-kuntalnandini

কূটচক্রে কুন্তলনন্দিনী (৩৯৯১)
দীপান্বিতা রায়


রাত্রি প্রায় মধ্যযাম। কুন্তলরাজ্যের রাজধানীর কোলাহল অনেকক্ষণ স্তব্ধ হয়ে গেছে। অধিকাংশ গৃহে বাতি নির্বাপিত। গৃহস্থরা এখন নিশ্চিন্ত শয্যার আশ্রয়ে গভীর নিদ্রায় আচ্ছন্ন। শুধু রাজার মন্ত্রণাকক্ষ থেকে মৃদু আলোর শিখা গবাক্ষপথে চোখে পড়ছে। ঘরের কোণে একটি দীর্ঘ দীপদণ্ডে তিনটি প্রদীপ জ্বলছে। সেই আলোকবৃত্তের ভিতরে বসে আছেন দুটি মানুষ। একজন স্বয়ং কুন্তলরাজ। অন্যজন তাঁরই মহামন্ত্রী অনন্তদেব। দুজনেরই মুখ গম্ভীর। কপালে চিন্তার ভাঁজ।

শিপ্রানদীর তীরে কুন্তলরাজ্য। ছোট কিন্তু সমৃদ্ধ। জমি উর্বর। ধান, তিসি থেকে শুরু করে তুলার চাষ সবই ভালো হয়। রাজ্যের বাসিন্দারা অধিকাংশই কৃষক। চাষবাস কিংবা গবাদি পশু পালন করেই জীবিকা নির্বাহ করে। কৃষির পাশপাশি বাণিজ্য থেকেও প্রতিবছর বিপুল পরিমাণ স্বর্ণমুদ্রা রাজার কোষাগারে স্থান পায়। কুন্তলরাজ্যে তাই অভাব নেই। প্রজারা সুখে বাস করে। রাজপথের দুপাশে বিপণীতে নানা পণ্যদ্রব্য শোভা পায়। মোদকের দোকানগুলিতে সকাল থেকেই ভিড় জমান মিষ্টান্নপ্রিয় নগরবাসীরা।

কুন্তলরাজ হেমচন্দ্র আপাতভাবে সুশাসক হলেও ভীতু মানুষ। বেশ কিছুটা আরামবিলাসী এবং কুঁড়েও। নিজের ভোগ-ব্যসন, আমোদ-প্রমোদ নিয়ে থাকতেই পছন্দ করেন। রাজকার্য পরিচালনার দায়িত্ব মহামন্ত্রীর ওপর ন্যস্ত। মহামন্ত্রী অনন্তদেবের কূটনৈতিক বুদ্ধি অত্যন্ত তীক্ষ্ণ। তাই যে কোনও বিপদ-আপদে কুন্তলরাজ হেমচন্দ্র নির্দ্বিধায় তাঁর ওপর নির্ভর করেন। তবে আজ যে সঙ্কট উপস্থিত হয়েছে তাতে অনন্তদেবও খানিকটা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।

কুন্তলরাজ্য থেকে বেশ কিছুটা পশ্চিমে প্রায় আরবসাগরের তীর ঘেঁষে সৌরাষ্ট্র। অতি পরাক্রমশালী মকরবর্মা সেই রাজ্যেই অধীশ্বর। মকরবর্মা শুধু নিজের রাজ্যটি শাসন করেই সন্তুষ্ট নন। পুষ্করিণীতে বৃহৎ মত্স যেমন ক্ষুদ্র মত্সকে গ্রাস করে ফেলে, তেমনি মকরবর্মাও তার আশপাশের ক্ষুদ্র রাজ্যগুলিকে অধিকার করে ফেলেছেন। এখন তিনি ক্রমশ তাঁর ক্ষমতার পরিধি সহ্যাদ্রি পর্বতের এপাশেও বিস্তৃত করার চেষ্টা করছেন। সম্প্রতি গুপ্তচর খবর এনেছে মকরবর্মার দৃষ্টি পড়েছে কুন্তলরাজ্যের ওপর।

গুপ্তচরের মুখে এহেন সংবাদ শুনে কুন্তলরাজের তো মাথায় হাত। সৌরাষ্ট্র বিশাল রাজ্য। তার সৈন্যসংখ্যাও অনেক। তাছাড়া মকরবর্মার বিশেষ প্রশিক্ষিত সৈন্যদলের যুদ্ধকুশলী বলে রীতিমত নামডাক আছে। সেই তুলনায় কুন্তলরাজ্যের সৈন্যসংখ্যা নেহাতই অপ্রতুল। এমত অবস্থায় মকরবর্মা যদি কুন্তলরাজ্য আক্রমণ করেন তাহলে পরাজয় সুনিশ্চিত। তাই সিংহাসন হারানোর ভয়ে কুন্তলরাজ হেমচন্দ্র নিতান্তই কাতর হয়ে পড়েছেন। মহামন্ত্রী অনন্তদেবও কিঞ্চিত বিচলিত। তিনি অনেকক্ষণ নিঃশব্দে ভ্রু কুঞ্চিত করে বসে আছেন। মহারাজ তাই এবার একটু অধৈর্য হয়েই প্রশ্ন করলেন, ‘কী ভাবছেন মহামন্ত্রী? এই মহাবিপদ থেকে বেরোনোর কোনও পথ কি চোখে পড়ছে?’

রাজার প্রশ্ন শুনে অনন্তদেব অভ্যাসমত নিজের তর্জনী আর মধ্যমা দিয়ে কপালের মাঝখানে কয়েকবার টোকা দিয়ে বললেন, ‘একটি উপায় আছে মহারাজ। তবে সেক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা নিতে হবে আপনাকেই। যদি আমাদের পরিকল্পনা কার্যকরী হয় তাহলে সব দিকই রক্ষা পাবে। বলা ভাল কুন্তলরাজ্যের পক্ষেও ঘটনাটি মঙ্গলজনক হয়ে উঠবে।’

মন্ত্রীর কথা শুনে রাজার মুখ কৌতূহলে উদগ্রীব হয়ে উঠল। মহারাজের দিকে একবার তাকিয়ে মন্ত্রী বললেন, ‘উপায় হলেন রাজকন্যা হৈমশ্রী।’

হৈমশ্রী কুন্তলরাজের একমাত্র কন্যা। সুন্দরী হৈমশ্রীর রূপের খ্যাতি ভারতের দক্ষিণাঞ্চলে সুবিদিত। তবে শুধু সুন্দরী নয়, হৈমশ্রী অতি বিদূষী। কুন্তলরাজের অন্তঃপুরে বিদ্যাচর্চার পরিমণ্ডলের মধ্যেই হৈমশ্রীর দিনযাপন। তাই কূটনৈতিক প্রয়োজনে তাকে কাজে লাগবে শুনে মহারাজ একটু বিস্মিত হয়ে বললেন, ‘হৈমশ্রী এখানে কী করবে ? আমি তো আপনার পরিকল্পনা কিছুই বুঝতে পারছি না মহামন্ত্রী।’

‘বলছি মহারাজ। বিষয়টি খুবই সহজ। আমাদের রাজকন্যা হৈমশ্রীর রূপের খ্যাতি সর্বজনবিদিত। আপনি মকরবর্মার কাছে কন্যার সঙ্গে তাঁর বিবাহের প্রস্তাব দিয়ে দূত পাঠান। মকরবর্মা যদিও প্রায় মধ্যবয়স্ক এবং তাঁর আরও দুটি পত্নী আছে। তাহলেও তিনি বলশালী পুরুষ। সৌরাষ্ট্রের মত বিশাল সাম্রাজ্যের অধীশ্বর। আমার মনে হয় আপনার কন্যার জন্য তাঁকে সুপাত্র বলেই গণ্য করা যাবে। সৌরাষ্ট্ররাজ যদি বিবাহে সম্মত হন, তাহলে দুটি সুবিধা হবে। প্রথমত জামাতা হয়ে তিনি কখনও শ্বশুরের রাজ্য আক্রমণ করবেন না। দ্বিতীয় সৌরাষ্ট্রের সঙ্গে আপনার আত্মীয়তার বন্ধন থাকলে অন্যান্য প্রতিবেশী নৃপতিরাও কুন্তলরাজ্যের প্রতি দৃষ্টি দেওয়া থেকে বিরত থাকবেন।’

মন্ত্রীর কথা শুনে মহারাজ হেমচন্দ্র কিছুক্ষণ বিমূঢ়ভাবে তাঁর দিকে তাকিয়ে থেকে বললেন,

‘কিন্তু হৈমশ্রী তো মকরবর্মাকে বিবাহ করতে রাজি হবে না মন্ত্রীবর।’

‘কেন মহারাজ, রাজকন্যা কি অন্য কারোর বাগদত্তা?’

মন্ত্রীর কথায় সামান্য সচকিত হয়ে ওঠেন কুন্তলরাজ।

‘না না। সেরকম কোনও ঘটনা ঘটেনি। সপ্তাহ দুয়েক পূর্বে আমি হৈমশ্রীকে জিজ্ঞাসা করেছিলাম কী ধরনের পাত্র তার পছন্দ। কন্যা তখন আমাকে জানায় যে পাত্রের একটিমাত্র যোগ্যতা তার কাছে জরুরি, সেটি হল বিদ্যা। বিদ্বান পাত্র ছাড়া সে বিবাহ করবে না। এবং পাত্রের বিদ্যার পরীক্ষা সে নিজে নেবে।’

‘কীভাবে মহারাজ?’

‘হৈমশ্রীর ইচ্ছা তার বিবাহের জন্য স্বয়ংবর সভার আয়োজন করা হোক। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয় থেকে শুরু করে চণ্ডাল পর্যন্ত সকলের সেই সভায় প্রবেশাধিকার থাকবে। রাজকন্যা সকলকেই তিনটি প্রশ্ন করবেন। যিনি সেই তিনটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারবেন, তাঁকেই তিনি স্বামী বলে মেনে নেবেন।’

‘এ তো উত্তম প্রস্তাব মহারাজ। স্বয়ংবর সভার আয়োজন হলে তো মকরবর্মা অনায়াসেই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়ে রাজকুমারীকে জয় করে নিতে পারবেন।’

‘আপনি ভুলে যাচ্ছেন মহামন্ত্রী, স্বয়ংবর সভায় কিন্তু সকলেরই প্রবেশাধিকার থাকবে। তাই মকরবর্মার আগে কেউ প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিলে রাজকুমারী তাঁকেই স্বামীরূপে বরণ করবেন। তাছাড়া আমার কন্যা অতি বুদ্ধিমতী এবং বিদূষী। সৌরাষ্ট্ররাজ মহা পারক্রমশালী হতে পারেন, কিন্তু তিনি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারবেন, তারই বা নিশ্চয়তা কোথায়?’

মহামন্ত্রী অনন্তদেবের মুখে এবার একটি সূক্ষ্ম হাসির রেখা ফুটে উঠল। তিনি ঈষৎ নিম্নস্বরে বললেন, ‘মহারাজ কন্যা হৈমশ্রী বুদ্ধিমতী এবং বিদুষী নিশ্চয়ই। কিন্তু তিনি এখনও অষ্টাদশবর্ষীয় এক তরুণীমাত্র। আপনি নিশ্চিন্তে রাজকন্যার ইচ্ছা অনুসারেই স্বয়ংবরের আয়োজন করুন।’

‘কিন্তু মহামন্ত্রী, হৈমশ্রীর স্বয়ংবর সভা বসাতে হলে আমাকে তো ঘোষণা করতে হবে। রাজ্যের সর্বত্র ঘোষক গিয়ে সেই সংবাদ ঘোষণা করবে। বাইরের রাজ্যের রাজন্যবর্গের কাছে পত্র পাঠাতে হবে। রাজ্যের জ্ঞানী-গুণী, পণ্ডিতরা সভায় আসতে আগ্রহী হবেন। অন্য রাজ্যের যুবরাজ কিংবা রাজন্যবর্গও তো আসবেন…….’

সামনে একটি ভৃঙ্গারে অতি উচ্চমানের আসব এবং দুটি পানপাত্র রাখা ছিল। মহামন্ত্রী নিজের পাত্রটি তুলে নিয়ে একটি লম্বা চুমুক দিয়ে বললেন,

‘আপনি ঠিকই বলেছেন মহারাজ। রাজকুমারীর ইচ্ছা অনুসারে ঘোষক রাজ্যের সর্বত্র নিশ্চয় ঘোষণা করবে। বহিরাগত রাজন্যদের স্বয়ংবরে আসার জন্য নিমন্ত্রণ পত্রও অবশ্যই পাঠাতে হবে। সেই তালিকা আমি নিজে প্রস্তুত করব। তাতে আপনার অভিলাষ পূরণে কোনও বাধা আসবে না। কন্যা হৈমশ্রীও সন্তুষ্ট হবেন।’

আগুনের ওপর একটি বড় মৃত্পাত্র। তাতে টগবগ করে ভাত ফুটছে। রন্ধনশালার একপাশে বসে কমলাবতী অন্য রান্নার জোগাড় করতে করতে খেয়াল করলেন আগুনের শিখা যেন তেমন জোরালো নয়। কাঠের টুকরোগুলি থেকে আগুনের থেকে ধোঁয়াই বেশি বেরোচ্ছে। বিরক্তিতে ভ্রূ কুঞ্চিত হল কমলাবতীর। দ্বিখণ্ডিত বার্তাকুটি সরিয়ে রেখে রন্ধনশালার বাইরে এলেন। গৃহস্থের ঘরের লাগোয়া ছোট ক্ষেত্রটিতে কাজ করছে এক যুবক। কমলাবতী উচ্চ খরকণ্ঠে বললেন, ‘কালিদাস উনুনের জন্য ভিজা কাঠ এনেছিস কেন? ধোঁয়ায় যে চোখে অন্ধকার দেখছি। যা এখনি থেকে শুকনো কাঠ নিয়ে আয়…..’

আদেশ দিয়ে কমলবাতী পুনরায় রন্ধনশালায় প্রবেশ করলে যুবকটি উঠে দাঁড়াল। গৌরবর্ণ দীর্ঘ চেহারা। মেদের বাহুল্য নেই মোটেই। কিন্তু ভারী কোমল লাবণ্য শরীরটিকে ঘিরে আছে। বড় বড় চোখ। ঈষৎ লম্বা চুল ঘাড়ের ওপর এসে পড়েছে। মুখের রেখায়, চোখের দৃষ্টিতে এমন একটি সুকুমার স্বচ্ছতা যে দেখলে মনে হয় জগতের জটিলতার সঙ্গে এখনও মানুষটির পরিচয় ঘটেনি।

যুবকটি কমলাবতীর স্বামী শিবানন্দর ভাগিনেয়। শৈশবেই পিতৃ-মাতৃহীন কালিদাস মাতুল গৃহেই প্রতিপালিত। কমলাবতী এবং শিবানন্দের নিজের ছেলেরা চতুষ্পাঠীতে পড়াশোনা করে গুরুগৃহে গেলেও, কালিদাসের ভাগ্যে সে সুযোগ ঘটেনি। শিবানন্দ সকলকে বলেন, ‘ও হল বামুনের ঘরের এঁড়ে গরু। মাথায় বুদ্ধিশুদ্ধি কিছু নেই। ওকে পাঠশালে পাঠানো মানে খামোকা কতগুলো কড়ি জলে দেওয়া।’

ক্ষেতের কাজ ছেড়ে উঠে কালিদাস দেখল নারকেল গাছের ছায়া রন্ধনশালার সামনের অঙ্গন প্রায় স্পর্শ করে ফেলেছে। বেলা দ্বিপ্রহরের দিকে গড়াতে আর বেশি দেরি নেই। ফুটন্ত ভাতের সুগন্ধে উদরের জ্বালা ক্রমশ প্রকট হচ্ছে। কিন্তু শুষ্ক কাঠ না আনতে পারলে আহার জোটা সহজ হবে না। কালিদাস তাই কুড়ুলটি কাঁধে নিয়ে গৃহ থেকে নিষ্ক্রান্ত হল। বর্ষাকাল। গাছের শুকনো ডাল খুঁজে পাওয়া কঠিন। বেশ কিছু সময় এদিক-ওদিক দেখার পর কালিদাসের চোখ তিন্তিড়ি গাছের একটি শুকনো ডালের ওপর পড়ল। নীচের দিকের মোটা হ্রস্ব ডাল। কিন্তু এমন নীচে নয় যে ভূমিতে দাঁড়িয়ে সেটির নাগাল পাওয়া যাবে। আবার আশপাশে এমন ডালও নেই যেটায় বসে এটি কাটা যায়। এদিকে পেটের খাণ্ডবদাহন উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। কালিদাস লক্ষ্য করল গাছের নীচের মাটি ভিজে নরম। সে আর দ্বিধা না করে গাছে উঠে আগার দিকে বসে গোড়ার অংশে খটাখট কুড়ুল চালাতে শুরু করল। কয়েকজন রাখাল বালক একটু দূরে খেলা করছিল। কুড়ুলের শব্দে আকৃষ্ট হয়ে এদিকে তাকিয়েই সবাই মিলে হাততালি দিয়ে হেসে উঠল, ‘দ্যাখ দ্যাখ কালিদাস কী বোকা ! যে ডালে বসে আছে, সেই ডালেরই গোড়ায় কোপ দিচ্ছে……’

কালিদাস কিন্তু বালকদের কথায় দৃকপাত মাত্র না করে সজোরে কুড়ুল চালাচ্ছিল। অল্পক্ষণের মধ্যেই সেই আঘাত সহ্য করতে না পেরে ডালটি কালিদাস সহ মাটিতে ভেঙে পড়ল। নরম মাটিতে আঘাত লাগার প্রশ্ন ছিল না। কালিদাস দ্রুত মোটা ডালটিকে তিন-চারটি ছোট টুকরোয় কেটে মাথায় তুলে গৃহ অভিমুখে রওনা দিল।

বাড়ি পৌঁছতে মাতুলানি অন্যদিনের তুলনায় কিছুটা প্রসন্নমুখে বললেন, ‘কালিদাস এসেছিস। কাঠগুলো তুলে রেখে খেতে বোস। তোর মামার শরীরটা আজ আবার বড় খারাপ করেছে।

শিবানন্দ শূলবেদনায় কষ্ট পান। ইদানীং বেদনা বেশি বেড়েছে। কালিদাস দেখল মামা ঘরের অভ্যন্তরে শয্যায় শুয়ে আছেন। তাঁকে বড়ই অসুস্থ দেখাচ্ছে। ভাত বেড়ে দিয়ে মাতুলানি বললেন, ‘গ্রামের অনঙ্গ কোবরেজ বলেছে, এ রোগ সারানো তার সাধ্য নয়। রাজধানীতে গিয়ে রাজকবিরাজ সুগত ভদ্রকে দেখাতে হবে। উনি একটি পত্রও লিখে দিয়েছেন। কিন্তু তোর মামা তো একলা যেতে পারবে না। অনেকটা পথ। গো-শকটে গেলেও দু’দিন অন্তত সময় লাগবে। তুই মামার সঙ্গে যাবি।’

মাতুলানির কথায় মনে মনে খুশিই হল কালিদাস। সে কখনও গ্রামের বাইরে যায়নি। লোকমুখে শুনেছে কুন্তলরাজ্যের রাজধানী নাকি এক অপরূপ নগরী। রাজবাড়ি নাকী সোনায় মোড়া। মামার সঙ্গে গেলে নিশ্চয় রাজা-রানি-রাজকন্যা দেখার সুযোগ হবে। কালিদাসের মন আনন্দে ভরে গেল। সে প্রফুল্লচিত্তে আহারে বসল।

রাজকুমারী হৈমশ্রীর ইচ্ছা অনুসারেই কুন্তলরাজ তাঁর স্বয়ংবর সভার আয়োজন করেছেন। সারা রাজ্যে ঘোষণা করা হয়েছে, রাজকন্যা তিনটি প্রশ্ন করবেন। যিনি সেই প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারবেন, তাঁর গলাতেই বরমাল্য দেবেন কন্যা হৈমশ্রী। ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, চণ্ডাল কারোর স্বয়ংবরসভায় আসতে কোনও বাধা নেই। অন্যদেশে রাজন্যবর্গের কাছে দূত মারফত আমন্ত্রণ পত্র পাঠানো হয়েছে। শুধু সৌরাষ্ট্রের মহারাজ মকরবর্মাকে আমন্ত্রণ জানাতে গেছিলেন স্বয়ং মহামন্ত্রী অনন্তদেব।

রাজ্যজুড়ে স্বয়ংবরের আয়োজন সম্পূর্ণ। রাজধানীর প্রবেশপথে তৈরি হয়েছে বিশালাকৃতির তোরণদ্বার। রাজপথের দু’ধার সাজানো হয়েছে ফুলে-মালায়।

রাজার বিশাল সভাগৃহেই তিনদিনের জন্য স্বয়ংবরের আয়োজন। একপাশে বসবেন অতিথিরা। রেশম মোড়া আসনে বসার ব্যবস্থা। সোনার কাজ করা চাঁদোয়া দিয়ে সাজানো হয়েছে এই জায়গাটি। অপরপাশে রাজনন্দিনী এবং তাঁর সখী-সহচরীদের বসার জায়গা। মেঝেতে মহামূল্যবান গালিচা বিছানো। সখীরা সকলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে তাতে বসেছেন। একপাশে দুটি রৌপ্যপিঠীকা। তার একটি রাজকন্যা হৈমশ্রীর জন্য। অন্যটিতে বসে প্রশ্নের উত্তর দেবেন পাণিপ্রার্থী স্বয়ং। সিন্ধুপ্রদেশ থেকে নিয়ে আসা ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র মুক্তার মালা দিয়ে সাজানো হয়েছে কক্ষের এই অংশটি। রাজকন্যা নিজেও শুভ্রবসনা। সাদা শাড়িতে তারার মত ঝিকমিক করছে অসংখ্য রূপার ফুল। প্রিয়সখির জন্য কুন্দফুলের মালা গেঁথে থালিতে রেখেছে সখীরা। অগ্নিসাক্ষী করে বিবাহের অনুষ্ঠান পরে হবে। কিন্তু সখীদের ইচ্ছে, প্রশ্নের উত্তর সঠিক দিতে পারলেই, মালা বদলের আমোদটা তাঁরা এখানেই সেরে নেবেন।

মাতুলকে নিয়ে দুদিন ধরে দীর্ঘপথ গো-শকটে অতিক্রম করে কালিদাস রাজধানীতে এসে উঠেছে একটি অতিথিশালায়। মালিকটি সজ্জন মানুষ। পথশ্রমে ক্লান্ত কালিদাস এবং শিবানন্দের যথাযথ যত্নআত্তির ব্যবস্থা করেছেন। সন্ধ্যা-আহ্নিক সমাপনান্তে নৈশাহার পরিবেশনের পর তিনজনে বসে কথোপকথনের সময় কবিরাজ সুগত ভদ্রর বাটির পথনির্দেশও দিয়েছেন। আগামীকাল যে রাজকন্যা হৈমশ্রীর স্বয়ংবর সভা এবং কন্যার ইচ্ছা অনুসারেই সে সভায় ব্রাহ্মণ, ক্ষত্রিয়, চণ্ডাল কারুর প্রবেশেই বাধা নেই সেকথাও জানাতে ভোলেননি। তবে নিম্নকণ্ঠে একথাও জানিয়েছেন যে ঘোষণা যাই-ই হোক না কেন, রাজা-মন্ত্রী সকলেরই ইচ্ছা হৈমশ্রীর মত সুন্দরীর বিবাহ রাজপরিবারেই হোক। তাই ইচ্ছা থাকলেও তিনি ওপথ মাড়াবেন না। অসুস্থ শিবানন্দ স্বয়ংবর নিয়ে মাথা ঘামাননি। অনভিজ্ঞ কালিদাস কথাগুলো শুনেছে ঠিকই তবে বিষয়টি যে কী তা যথাযথভাবে বুঝতে পারেনি।

পরদিন প্রাতঃকালে মাতুলকে নিয়ে কালিদাস রওনা দিলেন রাজ কবিরাজ সুগত ভদ্রর বাটির উদ্দেশ্যে। আসার আগে মাতুলানি কালিদাসকে একটি নতুন ধুতি-উত্তরীয় দিয়েছিলেন। স্নান সেরে সেটি পরেছে কালিদাস। এই সামান্য পারিপাট্যেই তাকে এমন চমত্কার দেখাচ্ছে যে পথের অজানা মানুষও ঘুরেফিরে এই রূপবান যুবকটিকে দেখছেন। কালিদাসের অবশ্য সেদিকে কোনও খেয়াল নেই। সে আপনমনে নগরীর বিশাল হর্ম্যরাজি, তার অপূর্ব কারুকাজ দেখতে দেখতে চলেছে।

রাজ কবিরাজ সুগত ভদ্রর খ্যাতি বহুদূর বিস্তৃত। তাই প্রতিদিনই দূরতম প্রদেশ থেকে মানুষ তাঁর কাছে আসেন। শিবানন্দ দেখলেন, তাঁর আগেই বেশ কিছু মানুষ কবিরাজের দর্শনলাভের আশায় চলে এসেছেন। তার মানে অপেক্ষার সময়টি দীর্ঘ হবে। তিনি কালিদাসকে বললেন,

‘আমি এখানে অপেক্ষা করি। তুই যা, এমন সুন্দর মনোহর নগরী। ঘুরে-ফিরে দেখে আয়।’

মাতুলের কথায় আনন্দিতচিত্তে পথে বেরিয়ে ঘুরতে ঘুরতে কালিদাস উপস্থিত হল রাজপ্রাসাদের সামনে। কুন্তলরাজের প্রাসাদ দেখে কালিদাসের তো চক্ষুস্থির! শ্বেতপ্রস্তর নির্মিত বিশাল প্রাসাদের শীর্ষে ঝকঝক করছে সুবর্ণনির্মিত বিশাল কলস। প্রাসাদের গায়ে শ্বেতপঙ্খের কাজ। সামনে একটি পাথর বাঁধানো জলাশয়। তার মধ্যস্থলে তিনটি শ্বেতপাথরের রাজহংসী। তাদের চঞ্চু থেকে ক্রমাগত শীতল জলধারা নির্গত হচ্ছে।

প্রাসাদের সামনে কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর কালিদাস লক্ষ্য করল তোরণদ্বারের সামনে একটি বিশাল ডঙ্কা রাখা আছে। একজন অতিশয় বলশালী রক্ষী সেই ডঙ্কার সামনে দণ্ডায়মান। রক্ষীর হাতে বিশালাকৃতি ভল্ল। মাঝে মাঝে দু-একজন মানুষ স্বন্ত্রস্তভাবে ডঙ্কার সম্মুখে এসে দাঁড়াচ্ছেন। অনেকের ক্ষেত্রে রক্ষী গম্ভীরভাবে ভল্লটি তুলে তার দিকে এগিয়ে আসছে। তার সেই ভয়ঙ্কর মূর্তি দেখে মানুষটি তৎক্ষণাৎ সেখান থেকে পলায়ন করছেন। কিন্তু সবার ক্ষেত্রে এরকমটা ঘটছে না। কালিদাসের চোখের সামনেই এক অতি নিরীহ পথচারী এগিয়ে গিয়ে ডঙ্কায় ঘা দিলেন। রক্ষী স্থিরভাবে নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে রইল, কোনও বাধা দিল না। ডঙ্কার শব্দ শুনে প্রাসাদের ভিতর থেকে একজন মুণ্ডিত মস্তক বৃদ্ধ বেরিয়ে এসে মানুষটিকে ভিতরে নিয়ে গেলেন।

সব দেখেশুনে কালিদাসের ইচ্ছা হল সেও ডঙ্কায় ঘা দেবে। কারণ তাহলেই প্রাসাদের অভ্যন্তরে প্রবেশের সুযোগ পাওয়া যাবে। কিন্তু রক্ষীটা বড় বালাই। সে যদি ডঙ্কা বাজাতেই না দেয়? কালিদাস ধৈর্য ধরে অপেক্ষা করতে লাগল। একটু পরেই দ্বাররক্ষী তাম্বুল সংগ্রহের জন্য তোরণদ্বার ছেড়ে ভিতরে যেতেই সুযোগ এল। ডঙ্কার শব্দ শুনে ছুটে এল রক্ষী। কিন্তু ততক্ষণে সেই মুণ্ডিত মস্তক বৃদ্ধও বেরিয়ে এসেছেন। তিনি রাজার প্রধান অমাত্য। রক্ষীর রোষকষায়িত দৃষ্টির সামনেই তিনি কালিদাসকে নিয়ে প্রাসাদের অভ্যন্তরে স্বয়ংবর কক্ষে প্রবেশ করলেন।

শুভ্রবসনা রাজকন্যা হৈমশ্রী একটি রৌপ্য পিঠীকায় বসে আছেন। তার মুখ খুব সূক্ষ্ম একখণ্ড বস্ত্রে আবৃত। কুন্তলরাজ্যে মেয়েরা অসূর্যমপশ্যা নন। তারা পুরুষদের সামনে স্বচ্ছন্দে ঘোরাফেরা করেন। কিন্তু রাজকন্যা হৈমশ্রী অসংখ্য অজানা-অচেনা পাণিপ্রার্থীর সামনে নিজেকে উন্মুক্ত করতে চাননি। তাই এই বস্ত্রের আবরণ। যদিও ওই প্রায় স্বচ্ছ বস্ত্রখণ্ডে তাঁর অনুপম সৌন্দর্য ঢাকা পড়েনি মোটেই।

কালিদাসকে স্বয়ংবর কক্ষে প্রবেশ করতে দেখে সখীদের মধ্যে সামান্য চাঞ্চল্য লক্ষ্য করা গেল। অপরূপ সুন্দর যুবক। সাজসজ্জা, আড়ম্বরহীন দীর্ঘ গৌরবর্ণ শরীরটি যেন সূর্যের মত উজ্জ্বল। রাজকন্যা হৈমশ্রীও মনে মনে সামান্য বিচলিত বোধ করলেন। কালিদাস যদিও এসব কিছুই লক্ষ্য করেননি। তিনি মুগ্ধ বিস্ময়ে কক্ষের দেওয়ালের কারুকাজ, চারিদিকে ঝোলানো মুক্তার জাল দেখছিলেন। প্রধান অমাত্যের নির্দেশে রাজকন্যার সামনের পিঠীকায় বসেও তিনি সেভাবে হৈমশ্রীকে খেয়াল করলেন না। পুরুষের এমন উদাসীনতায় অনভ্যস্ত হৈমশ্রী বিস্মিত হলেও সংযতভাবে প্রথম প্রশ্নটি করলেন,

‘ভদ্র, আমার প্রথম প্রশ্ন হল, এই পৃথিবীতে সবথেকে শক্তিশালী কী?’

রাজকন্যার কণ্ঠ অতি সুললিত কিন্তু স্বভাবতই মৃদু। কালিদাস সম্ভবত প্রশ্নটি যথাযথভাবে শুনতে পাননি। কিন্তু তিনি কিছু বলার আগেই একটি দুর্ঘটনা ঘটে গেল। হৈমশ্রীর প্রিয় শুক পক্ষী বসেছিল বাতায়নে। বৃহৎ আকৃতির বিরল প্রজাতির শুক। কালিদাসের মত একজন অচেনা মানুষকে ঘরের ভিতরে দেখে সে হঠাৎ ডানা ঝটপটিয়ে এগিয়ে এল তাকে ভাল করে দেখতে। ওরকম বৃহৎ চঞ্চুর এক অচেনা পাখিকে তার দিকে উড়ে আসতে ভীষণ ভয় পেয়ে কালিদাস আর একটু হলে রৌপ্য পিঠীকা উল্টে পড়ে যাচ্ছিলেন। প্রধান অমাত্য অতিকষ্টে তাঁকে ধরে পরিস্থিতি সামাল দিয়ে বললেন, ‘ভদ্র, আপনি রাজকন্যার প্রশ্নের উত্তর দিন।’

কালিদাস কিছু বলার আগেই বস্ত্রের আড়ালে রাজকন্যার স্মিত হাসি দেখা গেল। মৃদুস্বরে হৈমশ্রী বললেন, ‘ভদ্র কালিদাস অভিনয়ের মাধ্যমে সঠিক উত্তর দিয়েছেন। পৃথিবীতে সবথেকে শক্তিশালী ভয়।’

প্রধান অমাত্য বিষয়টি একেবারেই আন্দাজ করতে পারেননি। তাই সামান্য অপ্রস্তুত হয়ে মাথা নাড়লেন। শুকপক্ষীটি ততক্ষণে নিশ্চিন্ত হয়ে রাজকন্যার কোলে এসে বসেছে। হৈমশ্রী তার জন্য পাত্র থেকে ফল হাতে নিয়ে বললেন, ‘ভদ্র আমার দ্বিতীয় প্রশ্ন দ্বন্দ্ব হয় কাদের মধ্যে?’

এদিকে শুক হৈমশ্রীর কোলে বসে ফল খাচ্ছে দেখে তার সঙ্গীনিও উড়ে এসে রাজকন্যার কোলে বসল। কালিদাসের ভয় ততক্ষণে কেটে গেছে। তিনি ভারী খুশি হয়ে সেদিকে আঙুল তুলে বললেন, ‘দুই..দুই।’

রাজকন্যা হৈমশ্রীর মুখে এবার অরুণ আভা দেখা দিল। তিনি নীরবে সম্মতিসূচক মাথা নেড়ে উত্সুক সহচরীদের দিকে ফিরে বললেন, ‘ভদ্র কালিদাস দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তরও সঠিক দিয়েছেন। দ্বন্দ্ব হয় দুইয়ের মধ্যে।’

হৈমশ্রীর কথা শুনেই সখীদের মধ্যে উল্লাসের ঝড় বয়ে গেল। দু-একজন উলুধ্বনিও দিয়ে উঠল। সেই শব্দ শুনেই সম্ভবত মহামন্ত্রী অনন্তদেব এসে দাঁড়ালেন স্বয়ংবর কক্ষে। তাঁর দু-চোখে বিপুল বিস্ময়। প্রধান অমাত্য তাঁকে দেখে এগিয়ে গিয়ে জানালেন যে কালিদাস ইতিমধ্যেই দুটি প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিয়েছেন। কথাটা শুনেই মন্ত্রীর মুখ ভ্রুকুটি কুটিল হয়ে উঠল। তিনি অতি দ্রুতপদে কক্ষ ত্যাগ করলেন। সখীদের উচ্ছ্বাস কমে এলে হৈমশ্রী তৃতীয় প্রশ্নের জন্য প্রস্তুত হলেন। কিন্তু তাঁর তখন বুকের ভিতর দুরুদুরু করছে। হৃদস্পন্দন দ্রুত।

‘ভদ্র কালিদাস, আমার তৃতীয় প্রশ্ন হল পৃথিবীতে সবথেকে মিষ্ট কী?’

হৈমশ্রী বুঝতে পারেননি প্রশ্ন করার সময় মানসিক উত্তেজনায় তাঁর মুখের ওপর থেকে বস্ত্রখণ্ডের আবরণ সরে গেছে। কালিদাসের দৃষ্টি সরাসরি তাঁর ওপর পড়ল। অনভিজ্ঞ কালিদাস। নাগরিক সহবত তো তাঁর জানা নেই। তিনি মুগ্ধ নেত্রে সেই অনিন্দ্যসুন্দর মুখের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলেন, ‘রাজকন্যা তুমি কী অপূর্ব সুন্দর! আমি এমন মানুষ কখনও দেখিনি…….’

লজ্জায় রক্তবর্ণ হয়ে দৃষ্টি নামিয়ে নিলেন হৈমশ্রী। অস্ফুট স্বরে বললেন,

‘ভদ্র এবারও সঠিক উত্তর দিয়েছেন। পৃথিবীতে সবথেকে মিষ্ট প্রণয়।’

রাজকন্যার কথা শেষ হওয়ামাত্র সখীদের মধ্যে হুড়োহুড়ি পড়ে গেল। চারিদিকে মুঠো মুঠো লাজবর্ষণ হতে লাগল। ঘনঘন উলুধ্বনি উঠল। একসখী কুন্দফুলের মালাদুটি এনে একটি রাজকন্যার গলায় অন্যটি কালিদাসের গলায় পরিয়ে দিয়ে সবে মালাবদলের উদ্যোগ নিচ্ছে এমন সময় কক্ষের অন্য প্রান্ত থেকে কুন্তলরাজের জলদগম্ভীর, কঠিন স্বর শোনা গেল,

‘শান্ত হও সবাই। রাজকন্যা স্বামী নির্বাচন করেছেন খুবই আনন্দের কথা। কিন্তু বিবাহ হতে হবে শাস্ত্রমতে। রাজপুরোহিত গণনায় বসেছেন। তিনি যে শুভক্ষণ নির্ধারণ করে দেবেন, সেই লগ্নেই বিবাহ সম্পন্ন হবে। এখন তোমরা অন্দরমহলে যাও। মহামাত্য আপনি ভদ্র কালিদাসকে রাজ অতিথিশালায় নিয়ে গিয়ে তাঁর বিশ্রামের ব্যবস্থা করুন।’

ফাল্গুন মাসের পূর্ণিমা। আকাশে পূর্ণচন্দ্র। নিজের কক্ষে বসেছিলেন হৈমশ্রী। প্রধানসখী বাসন্তিকা চুল বেঁধে দিচ্ছিল। রাজকন্যা কিঞ্চিৎ অন্যমনস্ক। পিতা জানিয়েছেন, বিবাহ হবে আগামীকাল গোধূলি লগ্নে। সংযত চরিত্রের হৈমশ্রীর মন কিন্তু আজ বারে বারেই উতলা হচ্ছে। ভদ্র কালিদাসের সুকুমার মুখটি মনে পড়লেই গালে লাল আভা দেখা দিচ্ছে। চুল বাঁধতে বাঁধতে পিয়সহির এই ভাব পরিবর্তন লক্ষ্য করছিল বাসন্তিকা। তাই খোঁপায় কাঁটা গোঁজার সময় কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,

‘একবার যাবে নাকী প্রিয়সন্দর্শনে?’

চমকে উঠে তার দিকে তাকায় হৈমশ্রী। বাসন্তিকা মৃদু হেসে বলে,

‘ওই তো উদ্যানের ওপাশে অতিথিশালা। মহামাত্য কোন ঘরে তাকে নিয়ে গেছেন আমি দেখেছি।’

‘পিতা জানতে পারলে অসন্তুষ্ট হন যদি……’

দ্বিধাগ্রস্ত কণ্ঠে বলেন হৈমশ্রী।

‘কেন হবেন? তিনি তো তোমার স্বামী। তাছাড়া মাহারাজ এখন মহামন্ত্রীর সঙ্গে বিবাহের আয়োজনের আলোচনায় ব্যস্ত।’

বাসন্তিকার কথাটা মনে ধরে হৈমশ্রীর। রক্ষীরা যাতে টের না পায়, তাই মুখ-মাথা শালে ঢেকে উদ্যান পেরিয়ে দুজনে ঢুকে পড়ে অতিথিশালায়। দরজায় টোকা দিতে কালিদাস দরজা খুলে দেন। হৈমশ্রীকে দেখে তাঁর মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। দুজনে একান্তে কথা বলার সুযোগ করে দিতে সখীকে ভিতরে যেতে বলে বাসন্তিকা।

ঘরের ভিতর উজ্জ্বল প্রদীপের আলোয় কালিদাসকে দেখে আবারও মুগ্ধ হন হৈমশ্রী। কী অপরূপ লাবণ্য! বুদ্ধির বিভায় উজ্জ্বল মুখ। অথচ শিশুর মত নিষ্পাপ, স্বচ্ছ। আনন্দে বুক ভরে যায় হৈমশ্রীর। কালিদাস এগিয়ে এসে তার হাত ধরে বলেন,

‘কী অদ্ভূত ব্যাপার দ্যাখো, এই সন্ধেবেলা আমি এখানে বসে আছি। তোমার সঙ্গে আমার বিবাহ ঠিক হয়ে গেছে। অথচ সকালেও এসব কিছুই জানতাম না।’

‘জীবন তো এরকমই অনিশ্চিত ভদ্র। জীবনের কোন বাঁকে কার জন্য কী বিস্ময় অপেক্ষা করছে, তা কী কেউ জানতে পারে! কিন্তু ভদ্র, স্বয়ংবর সভায় আসার আগে আপনার মনে কি কোনও প্রত্যাশাই ছিল না?’

হৈমশ্রীর মুখে দুষ্টু হাসি। কিন্তু কালিদাস কিছু বলার আগেই অতিথিশালার বাইরের রাস্তায় একটি বিকট আর্তনাদ শোনা গেল। কালিদাস চমকে তাকালেন। পণ্যবাহী গাড়ি নিয়ে যাচ্ছে উটের সারি। তাদেরই একটি বিকট স্বরে ডেকে উঠেছে। আশ্বস্ত করতে ভীত রাজকুমারীর দিকে ফিরে কালিদাস বললেন, ‘ভয় নেই রাজকুমারী, ও হল উট্রের ডাক।’

‘কী বললেন ভদ্র, কীসের ডাক?’

‘উট্র, উট্রের ডাক।’

কথাটি বলেই কালিদাসের সন্দেহ হয় তিনি বোধহয় ভুল বলছেন, তাই সংশোধনের চেষ্টা করেন, ‘উট্র নয় উষ্ট…..তাই না রাজকুমারী?’

হৈমশ্রীর মুখের দিকে তাকিয়ে কালিদাস বুঝতে পারেন আবার ভুল হয়েছে। তাই এবার একটু হতাশ হয়েই বলেন, ‘আমি ঠিক জানি না রাজকুমারী। আমি তো কোনওদিন চতুষ্পাঠীতে যাইনি। গেলে হয়তো শিখতে পারতাম। মামাকে অনেকবার বলেছি। কিন্তু তিনি রাজি হননি। তুমি কি অনেক পুঁথি পড়েছ রাজকুমারী? তাহলে তুমি আমাকে শিখিয়ে দিও।’

ঘৃণায় সারা শরীর শিউরে ওঠে হৈমশ্রীর। তবু বরফশীতল কণ্ঠে বলেন,

‘ওই কথাটা শেষ করলেন না তো ভদ্র। সকালে আপনার কিছুই জানা ছিল না…।’

রাজকুমারীর কথায় উত্সাহিত হয়ে ওঠেন কালিদাস,

‘সত্যিই তো কিছু জানতাম না। স্বয়ংবর কাকে বলে তাই জানি নাকী? কাল সন্ধেবেলা গ্রাম থেকে এসেছি। মামাকে কবরেজের ঘরে বসিয়ে আমি বেরিয়েছিলাম নগর দেখতে। রাজপ্রাসাদের সামনে ডঙ্কা দেখে তাতে ঘা দিলাম।’

স্তম্ভিত হয়ে বসে আছেন রাজকন্যা। কালিদাসের কথা শুনতে শুনতে তার দু’চোখ দিয়ে দরদর করে জল পড়ছে। তাঁর স্বামী অজ্ঞান, মুর্খ। রাজা-রাজপুত্র কিছুই তো চাননি। শুধু চেয়েছিলেন প্রিয়জন বিদ্বান হবে। অথচ নিজেই নির্বাচন করলেন এই অক্ষরজ্ঞানহীন, মহামূর্খকে। অনুশোচনায় হৈমশ্রীর সর্বাঙ্গ জ্বলে যাচ্ছিল। এই যুবকের প্রতি নিজের দুর্বলতার কথা ভেবে লজ্জাবোধ করছিলেন তিনি। কালিদাস কিন্ত কিছুই বোঝেননি। কথা শেষ করে অবোধ শিশুর মত হেসে তাঁর হাত ধরতে গেলে ঠেলে সরিয়ে দিলেন হৈমশ্রী। তাচ্ছিল্যে ওষ্ঠ বিকৃত করে বললেন, ‘ছিঃ ছিঃ তুমি মূর্খ! পৃথিবীতে আমি যা সবথেকে ঘৃণা করি…’

আর কথা বেরোল না। বিবমিষা বোধ হচ্ছিল। কালিদাসের দীর্ণ মুখের দিকে একবার তাকিয়েই ঘর থেকে বেরিয়ে সোজা গেলেন পিতার মন্ত্রণাকক্ষে।

মন্ত্রণাকক্ষে তখন কুন্তলরাজের মুখোমুখি বসে আছেন মহামন্ত্রী অনন্তদেব। দুজনেরই মুখই দুশ্চিন্তায় অন্ধকার। সৌরাষ্ট্রের মহারাজ মকরবর্মা আগামীকাল দুপুরের আগেই এসে পড়বেন। সেইমত গোধূলিলগ্নে বিবাহের আয়োজনও সম্পূর্ণ। আজকের ঘটনার খবর এখনও পর্যন্ত রাজপ্রাসাদের বাইরে যায়নি। কিন্তু মকরবর্মা এসে পৌঁছানোর পর কী হবে? ওই অজ্ঞাত-কুলশীল যুবককে নিঃশব্দে কারগারে নিক্ষেপ করাই যায়। কিন্তু হৈমশ্রী তো কখনোই দ্বিতীয়বার স্বয়ংবর সভায় আসতে রাজি হবেন না। রাজা-মন্ত্রী কেউ কোনও পথ খুঁজে পাচ্ছেন না। এমন সময় মন্ত্রণাকক্ষের দরজায় টোকা পড়ল। প্রতিহারী জানাল রাজকন্যা হৈমশ্রী মহারাজের দর্শনপ্রার্থী। অনুমতি দিতেই ঘরে এলেন রাজকন্যা। পোশাক আলুথালু, দুচোখে জলের ধারা। মহারাজের কোলের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে কেঁদে উঠে রাজকন্যা বললেন, ‘পিতা আমি প্রতারিত হয়েছি। ওই ব্যক্তি মহামূর্খ। অক্ষরজ্ঞানহীন!’

রাজকন্যার কথা শুনে মুহূর্তে চোখে চোখে বিদ্যুৎ খেলে যায় রাজা এবং মন্ত্রীর। রাজা হ্রস্ব কণ্ঠে বলেন, ‘তুমি কী করে জানলে বৎস?’

‘আপনার অনুমতি না নিয়েই আমি অতিথিশালায় গেছিলাম পিতা। তাঁর সঙ্গে আলাপ করতে। জানতে পেরেছি তিনি গ্রামের এক দরিদ্র ব্রাহ্মণ পরিবারের অনাথ সন্তান। তাতেও আমার আপত্তি ছিল না। কিন্তু তিনি মুর্খ। কোনওদিন চতুষ্পাঠীতেও যাননি।’

কন্যার পিঠে হাত রাখেন কুন্তলরাজ, ‘রাজকন্যাকে প্রতারণার শাস্তি মৃত্যু। তুমি চিন্তা কোরো না, আমি তাকে সেই দণ্ডই দেব।’

‘না না পিতা, তা কী করে সম্ভব? তিনি আমার স্বামী…’

‘তুমি স্বামী নির্বাচন করেছ হৈমশ্রী। কিন্তু অগ্নিসাক্ষী করে বিবাহ না হলে স্বামী হয় না।’

‘কিন্তু পিতা আমি তো মনে মনে তাকেই স্বামীত্বে বরণ করেছি।’

‘মনের কথার কোনও গুরুত্ব সমাজে নেই হৈমশ্রী। সমাজ আচার দেখে, নিয়ম পালন দেখে।’

পরিস্থিতি বুঝে এগিয়ে আসেন অনন্তদেব।

‘মহারাজ, রাজকুমারী স্বভাবতই কোমলপ্রাণা। মৃত্যুদণ্ডের প্রয়োজন নেই। নির্বাসনই যথেষ্ট। আজ রাতেই প্রহরীরা তাকে কুন্তলরাজ্যের বাইরে রেখে আসবে। ভবিষ্যতে আর কোনওদিন এ রাজ্যে তার প্রবেশাধিকার থাকবে না।’

মন্ত্রীর দিকে একবার তাকান কুন্তলরাজ। তারপর কোমল গলায় বলেন,

‘বেশ তবে তাই হোক। কিন্তু তুমি ভগ্নহৃদয় হোয়ো না কন্যা। কাল সৌরাষ্ট্ররাজ মকরবর্মা আসছেন। তিনি তোমার সব প্রশ্নের সঠিক উত্তর দেবেন। তোমার কাল গোধূলি লগ্নেই বিবাহ হবে।’

‘কিন্তু পিতা তা কী করে সম্ভব? আমি তো শাস্ত্রমতে পুনর্ভূ হয়ে যাব, আমি যে তাঁর বাগদত্তা!’

কন্যার কথায় এবার রুষ্ট হলেন কুন্তলরাজ। কঠিন স্বরে বললেন, ‘লগ্ন স্থির হয়ে যাওয়ার পর বিবাহ না হলে তুমি লগ্নভ্রষ্টা হবে। তাহলে সারাজীবন তোমাকে কুমারীই থাকতে হবে। তুমি কি তাই চাও কন্যা?’

‘কিন্তু পিতা সবাই তো জানে যে… কুন্তলরাজ্যের প্রজারা… প্রাসাদের সকলে…’

‘কেউ কিচ্ছু জানে না,’ কুন্তলরাজের গলায় এবার যেন বাজ ডেকে উঠল। চমকে উঠলেন হৈমশ্রী।

‘কেউ কিচ্ছু জানে না হৈমশ্রী। যারা জানে তারাও একটি শব্দ উচ্চারণ করবে না। তুমি শুধু নিজের মনকে প্রস্তুত করো।’

রাত্রি গভীর। নিজের কক্ষের বাতায়নের সামনে দাঁড়িয়ে আছেন রাজকন্যা হৈমশ্রী। দেখেছেন দুজন সশস্ত্র প্রহরীর সঙ্গে মানুষটি বেরিয়ে গেলেন অতিথিশালা থেকে। আজ রাতের মধ্যেই তাঁকে পেরিয়ে যেতে হবে কুন্তলরাজ্যের সীমান্ত। সিদ্ধান্ত কি সঠিক হল? তিনি তো মূর্খকে ঘৃণা করেন। তাহলে কেন বুকের মধ্যে এমন হু হু করছে? মানুষটি তো তাঁকে ঠকায়নি। সহজভাবে সত্য কথা বলেছে। তাহলে কি তিনিই নিজের অহমিকায় কোনও ষড়যন্ত্রের ফাঁদে পা দিয়ে ফেললেন?

এক টুকরো মেঘ কখন এসে পূর্ণচন্দ্রকে ঢেকে ফেলেছে। আকাশের এক প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্ত চিরে দেওয়া নীল আলোয় মুহূর্তের জন্য চারপাশ দৃষ্টিগোচর হল। হৈমশ্রীর মনে হল তাঁর মাথার ভিতরেও যেন বিদ্যুৎ খেলে গেল। ঘটনাপরম্পরা স্মরণ করলেন তিনি। মহামন্ত্রী অনন্তদেবের কন্যা প্রিয়সখী সুতনুকার সাধভক্ষণের নিমন্ত্রণ। সেখানে সখীর বারংবার অনুরোধ। বলেলেন তাঁর গোপন তিনটি প্রশ্ন আর তার উত্তর। নিমন্ত্রণ পত্র নিয়ে মহামন্ত্রী নিজে গেলেন সৌরাষ্ট্রে। স্বয়ংবরে আমন্ত্রিত হয়েছেন কাশী-কোশলের দুই হস্তিমূর্খ যুবরাজ। পরম পণ্ডিত অবন্তীরাজ অনুপস্থিত কেন? স্বয়ংবর সভায় আজ যাঁরা এলেন সকলেই নিতান্ত রবাহুত। কুন্তলরাজ্যে তো জ্ঞানী-গুণী মানুষের অভাব নেই। কার অঙ্গুলিহেলনে তাঁরা স্বয়ংবরে অংশ নিলেন না? পিতা নিশ্চিত, তার প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারবেন মকরবর্মা। সৌরাষ্ট্র শক্তিশালী রাজ্য। তার সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্ক তৈরি হলে নিরাপদ হবে কুন্তলরাজ্য…..

শ্বাসবন্ধ হয়ে আসে হৈমশ্রীর। অবোধ তিনি। তাঁকে শিখণ্ডি করে তৈরি হয়েছে এক নিশ্ছিদ্র কূটনৈতিক পরিকল্পনা। কালিদাস নামের এক মহামূর্খের অবিমৃষ্যকারিতায় তো তা নষ্ট হতে পারে না। তার তো শাস্তি হতেই হবে। নিজের আত্মম্ভরিতায় হৈমশ্রী শুধু সেই পথ আরও সুগম করে দিলেন। আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নেমেছে। রাজকন্যা বুঝতে পারলেন, তার দু-চোখ বেয়ে অঝোরে নামছে অশ্রুর ধারা।

বারণসীর মহাপণ্ডিত শুকদেবের গৃহ। চার বত্সরকাল গুরুগৃহে অধ্যয়নের যে পর্ব চলে তার আজ সমাপ্তিলগ্ন। শাস্ত্রজ্ঞান সমাপনান্তে গুরুকে প্রণাম করে বেরিয়ে আসছেন ছাত্ররা। এবার তারা নিজ গৃহে ফিরে যাবে। বাটির মূল দ্বার থেকে বেরিয়ে এল এক সুদেহী যুবক। এই বত্সর শ্রেষ্ঠ ছাত্রের শিরোপা পেয়েছে সে। কিন্তু তার মুখে হাসি নেই। চোখে উদাস দৃষ্টি। পাঁচ বছর আগে বৃষ্টির রাতে অসুস্থ, কর্দমাক্ত অবস্থায় তাঁকে আশ্রয় দিয়েছিলেন এক বৃদ্ধ ব্রাহ্মণ। অক্ষরপরিচয় তাঁরই কাছে। শাস্ত্রজ্ঞ ছিলেন তিনি। নিজের সবটুকু বিদ্যা সন্তানস্নেহে দেওয়ার পর তাঁকে পাঠান শুকদেবের কাছে। এই পাঁচ বত্সর শুধুই বিদ্যার আরাধনা করেছেন কালিদাস। জ্ঞান অর্জন করেছেন। পণ্ডিত হয়েছেন। কিন্তু এরপর কোথায় যাবেন তিনি? তাঁর তো কোনও গৃহ নেই।

ধীরে ধীরে গঙ্গার ধারে এসে দাঁড়ালেন কালিদাস। মাঝিরা বসে আছে নৌকা নিয়ে। শীতল বাতাসের স্পর্শে মনের অবসাদ মুছে গেল। মনে মনে বললেন, ‘কোহতিভারঃ সমর্থানাং/কিং দূরং ব্যবসায়িনাম্/কো বিদেশঃ সবিদ্যানাং/কঃ পরঃ প্রিয়বাদিনাম্ (শক্তি থাকলে অতি ভারী ঠেকে কীই বা আর, উদ্যমীদের কাছে দূর কী আবার? বিদেশই বা কী বিদ্যা আছে যার? প্রিয়ভাষিদের পর কে আবার?)।

নৌকায় উঠে বসলেন কালিদাস। মাঝি সস্মভ্রমে জিজ্ঞাসা করল,

‘কোথায় যাবেন ভদ্র?’

নদীর স্রোত যেদিকে যাচ্ছে, সেদিকে এগোও। যে স্থান পছন্দ হবে সেখানেই অবতরণ করব।

মাঝি নৌকা ছেড়ে দিল।

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *