aparbangla-editorial-edition-13

সম্পাদকীয়
পৃথিবীর বড্ড অ-সুখ। ভালো নেই তার সন্তানেরাও। বিগত দুটো বছরে অনেক অসহায় মৃত্যু দেখেছে মানুষ, যা প্রতিরোধ করা অসম্ভব ছিল। কিন্তু মাসাধিককাল অতিক্রম করে যাবার পরও রাশিয়া-ইউক্রেনের যুদ্ধে লাশের স্তুপের উচ্চতা যখন বেড়েই চলেছে, তখন মনে প্রশ্ন আসেই, ‘বিশ্বায়ন’ নিয়ে আমাদের উল্লম্ফন কি তবে স্রেফ ফুটো ফানুস! আর রাষ্ট্রসংঘ আমাদের জগন্নাথদেব, যার উপস্থিতি আছে কিন্তু কর্মক্ষমতা নেই।

মারিয়ুপোলের দখল রাশিয়া পাক বা না পাক, গোটা পৃথিবী কিন্তু যুদ্ধের কুফল পেতে শুরু করেছে। সবচেয়ে বড় ছ্যাঁকাটা লাগছে তৃতীয়বিশ্বের দেশগুলোর গায়ে। যুদ্ধের কারণে টালমাটাল অর্থনীতি, বৈদেশিক বাণিজ্যনীতি, তাই ব্যবসার ক্ষেত্রে গ্লোবাল ভিলেজের ধারণাটা আর ভবিষ্যতে প্রয়োগ করা যাবে কি না ভেবে অর্থনীতিবিদদের ভুরুতে ভাঁজ পড়ে গেছে ইতিমধ্যেই।

বড়ই দুঃসময় এখন। এই দুঃসময়ে তবে কি আমরা শোকগ্রস্ত হয়ে ভুলে যাব জীবনের উদযাপন?

জীবিত মানুষদের নজর অত সুদূরপ্রসারী হলে চলে না। দৃষ্টিক্ষেত্রকে ছোট করে এনে মনকে ফোকাস করতে হয় সামনে থাকা ছোটোখাটো প্রাপ্তিগুলোর ওপর, জীবিতেরা যা চায়, সেই আশা আর আনন্দের সাময়িক সংস্থান হয় তাতে। অতএব ফিরে ফিরে দেখব সুসময়ের ছবি।

দুবছর পরে গত মার্চে আন্তর্জাতিক কলকাতা বইমেলা হয়ে গেল দুই সপ্তাহ ধরে। মাথার ওপর চাঁদিফাটানো রোদ আর গরম সত্বেও দমিয়ে রাখা যায়নি বইপ্রেমীদের। বাঙালি, যাদের হুজুগপ্রিয়তার কুখ্যাতি বিশ্বজুড়ে, তারা কেবল ভীড় বাড়াতেই মেলায় যাননি, বিপুল অঙ্কের বিক্রিবাটা আর প্রকাশকদের মুখের হাসিতে স্পষ্ট হয়ে গেছে, এই আকালেও মানুষ স্বপ্ন দেখতে ভুলে যায়নি। দুটো বছর বন্দীদশায় মানুষ ওয়েবসিরিজে আসক্ত হয়ে গেছে ব’লে যে দীর্ঘশ্বাস শোনা যাচ্ছিল সেটা মিথ্যে প্রমাণ করে দিয়েছে কলকাতা বইমেলার সাফল্য। ফলতঃ সাহস পাচ্ছি আমরাও।

‘অপারবাংলা’র পক্ষ থেকে বাংলা নববর্ষের শুভেচ্ছা সকলকে। নতুনবছর অনেকটা নতুন জামার মত, গায়ে পরে নিলে সাময়িকভাবে ভুলে থাকা যায় পুরনো রংচটা জীর্ণ বসনকে। ২৮ এর জঞ্জালগুলো ঝেঁটিয়ে ফেলে ১৪২৯ নিয়ে আসবে সুদিন, যা কিছু না-পারাকে পেছনে রেখে লক্ষ্যে পৌঁছতে পারব, এই আশা করতেই পারি আমরা, যখন ইচ্ছেপূরণের জন্য হাতে রয়েছে গোটাগুটি একটি বছর।

তাহলে আসুন এক ঝলকে দেখে নেওয়া যাক এবারের অপারবাংলার সূচীপত্র। প্রতি সংখ্যাতে উপন্যাস রাখার সিদ্ধান্তটা আমাদের ভ্রান্ত ছিলো না। এবারের সংখ্যাতে তৃষ্ণা বসাকের উপন্যাস এক নিঃশ্বাসে পরে ফেলা যায়। ওয়েবজিন উপন্যাস ছোট হলে মোবাইল বা ল্যাপটপ এ পড়া যায় ভালোভাবে। সেই কথা মাথায় রেখে উপন্যাস ছোট রাখা হয়। আগামীতেও আপনাদের আরো ভালো উপন্যাস দেওয়ার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ আমরা। বিবিধ বিভাগে ,বাঘা যতীনকে নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা করেছেন শ্রদ্ধেয় প্রফেসর, ডিন, বাংলা সাহিত্য,নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়, বাংলাদেশ, ডক্টর রকিবুল হাসান। হারিয়ে যাওয়া বিগত দুবছর – নতুন করে বাঙালিকে ভরসা, আশা, সাহস জোগাবে তাঁর এই আলোচনা অকুতোভয় বাঘা যতীনকে নিয়ে।

বিবিধ বিভাগে, সুপ্রিয় চৌধুরী “অলি গলি চলি রাম..” আমাদের প্রিয় কলকাতা আর বাংলা সংষ্কৃতিকে নিয়ে অন্যভাবে বিশ্লেষণ করেছেন। সুমনা সাহার প্রবন্ধে স্বামীজিকে নিয়ে আবর্তিত অনেক অজানা কথা আপনারা জানতে পারবেন। তথ্য সমৃদ্ধ এই প্রবন্ধের পিছনে আছে অক্লান্ত গবেষণা। এবারের অনুবাদে যুথিকা আচার্য্য কলম ধরেছেন অন্য ভাবে। অ্যামব্রোজ বিয়ার্স এর বিখ্যাত ছোট গল্প “ওয়ান সামার নাইট” কে অবলম্বন করে এই লেখা, এ এক অবশ্যম্ভাবী সংযোজন। বিনোদনে, স্মৃতির ষ্টুডিও পাড়া নিয়ে প্রিয়ব্রত দত্তর ধারাবাহিক লেখার এটা শেষ সংখ্যা। আশা করি আপনারা উপভোগ করছেন ষ্টুডিও পাড়ার অনেক অজানা তথ্য। রজতাভ দত্ত এবার সোজাসাপটা উত্তর দিয়েছেন স্বাতী চ্যাটার্জী ভৌমিকের প্রশ্নের।

বিশিষ্ট লেখকদের (ভারত, বাংলাদেশ, আমেরিকা, কানাডা) এক ডজন গল্প, এক গুচ্ছ কবিতা আর অণুগল্প নতুন বছরে উপহার অপারবাংলা পাঠকদের জন্য। নিয়মিত বিভাগের লেখা আপনাদের মনোরঞ্জন করবে, এই আশা রাখি আমরা।

নববর্ষের প্রীতি ও শুভেচ্ছা অপারবাংলা পরিবারের পক্ষ থেকে। আনন্দ হোক!

শুভ নাথ
সম্পাদক
অপারবাংলা সাহিত্য পত্রিকা

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

3 thoughts on “aparbangla-editorial-edition-13

  1. ‘অপার বাংলা’ পত্রিকা প্রশংসনীয়। সহযাত্রী সকল লেখক/পাঠক বন্ধুকে নববর্ষের আন্তরিক শুভেচ্ছা জানাই।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *