সাগরিকা রায়
বিনায়ক দেখলেন বেডসাইড টেবিলের উপর গ্লাস। গ্লাসের ভেতরের লাল জল টলটলে। আঙ্গুলের চাপে ঠুনকো কাচ ভেঙ্গে বরফ কুচি হয়ে গ্লাসের জলে ভাসবে এখনই। যদি বিনায়ক ইচ্ছে করেন। ইচ্ছে করলো না। তাকিয়ে তাকিয়ে বিনায়ক দেখলেন জল তেমনই লাল। লাল জলে হেডমাস্টারের মেয়ের গোলপানা মুখ! একই দৃশ্য দিনের পর দিন! মাথা খারাপ হয়ে গেল নাকি?
টেবিলের উপর অমন জিনিস, অথচ ফ্যালফেলে মুখে সেদিকে চেয়ে থাকার কোনও মানে হয়? পাঁচিলের উপর উঠে দাঁড়ালে পোপেচার ছা্রের শোবার ঘরটা বেশ দেখা যায়। দেখে শুনে শ্বাস ফেলে রাধেশ। আলো শুনলে হাসবে- তোমার তো টাইম কলের জলেও নেশা হয়!
আলো ঠিক বলে না। নেশার মত জিনিস সহজে মেলে নাকি? সাদা জলেই যদি নেশা জমতো, তাহলে কেন আলোর কাছে হাত পাততে হয়? কেনই বা পোপেচার ছারের বাড়ির পাঁচিলের উপর উঠে জানালার ফোঁকর দিয়ে ওঁর গেলাসের দিকে তাকিয়ে থাকতে হয়?
বিনায়ক রাধেশকে দেখেননি। টলটলে এক পুকুর জল গ্লাসের ভেতরে বন্দী। জলের ভেতর থেকে বুদবুদ ওঠে ক্রমাগত। দুটো চুড়ি পরা হাত বাঁচার জন্য আঁকুপাঁকু করে। কর্ণাবতী রোজ বাঁচতে চায়। পঁচিশ বছর আগের মত ঝাঁপিয়ে পড়তে চান বিনায়ক। পারেন না। হাফ প্যান্ট পরা বিনায়ক ভয় পান। জলে ডুবে যাওয়ার ভয়। আজও। তবুও কর্ণা জলে ভাসে। ওর ভেজা মুখ, ভেজা চুল, সোনার চুড়ি পরা হাত শঙ্খের মত বুক জলের ভেতর থেকে উঠে আসতে চায়। রেলকলোনির বাবু এসে কবে বউ করে নিয়ে গেছে হেডমাস্টারের মেয়েকে। সেই মেয়ে বিনায়ককে নির্জন দ্বীপে নির্বাসন দিয়ে গেছে। যদি সেদিন লোকজন জড়ো হয়ে না বাঁচাতো, তাহলে মাস্টারের মেয়ে আজ জাস্ট ছবি। ইদানিং একা থাকতে ইচ্ছে করে। নিজেকে ঠিকঠাক বোঝা হল না। টিভি মিউট করে ছবি দেখতে দেখতে ঘুমোতে চেষ্টা করে। আই কনট্যাক্ট সেনসর সময় মতো টিভি অফ করে দেয়।
-বুঝলে আলোমনি কান্ড বড় মজার। রাধেশ মুচকি হাসে- আজব দুনিয়া কি গজব কাহানি।
ফেস ওয়াস দিয়ে মুখ ধুচ্ছে আলো, রাধেশকে কাছ ঘেঁসে দাঁড়াতে দেখে ভ্রু নাচাল, এখন কিন্তু টাকা ফাকা দিতে পারবনা।
-ধুস! টাকা চেইচি নাকি? দেখগে, পোপেচার ভর্তি গেলাস নে বসে আচে। একটা চুমুকও দিল না মাইরি বলচি। লোকটার বড় দুঃখ আচে কোতাও।
আলো মুখে জল দিতে ভুলে গেল। মানুষের কত দুঃখ! যে বলে, সে বেঁচে গেল, যে বলে না সে বুকের খাঁচায় আটকে রাখে দুঃখকে! রাধেশ যেমন সব দুঃখ উজাড় করে দেয় সিনেমা দেখতে বসে। ভিলেনের দিকে তেড়ে যাবে –সম্পত্তিকা লিয়ে লালচ করতা হ্যায়? রাধেশ নিজেই ভাইকে ঠকিয়েছে। মদ খেলে ভাইয়ের প্রতি দুঃখ উথলে ওঠে!
-দুঃখ তো আছে! হয়তো দুঃখটা ভেবে ভেবে উনি মাতাল হন। মদ খাওয়ার দরকার পড়ে না!
– এত বুদ্ধি মনের খাঁচায় লুকিয়ে রাখো? কী করে রাখ গো? রাধেশ গলে পড়তে থাকে। আজ হাতে মোটে পয়সা নেই। আলো ভরসা।
আলো হাসে। মনের খাঁচায় অন্য কেউ আছে! দুপুরের ঝা ঝা রোদে অনেক দূর থেকে দেবুদার গলা ভেসে আসে। “স্বামী যদি সখা হয়”- পালার সেই গানটা আজও কানে এঁটে আছে কানপাশার মতো। আলো বলেছিল মদ ছেড়ে দাও। ঘোর চোখে তাকিয়ে দু হাত ছড়িয়ে দিয়েছিল – “ম্যায় দেবদাস হুঁ। পারো নে বোলা মদ ছোড় দো। পর , মদ নে মুঝে নেহি ছোড়েগা রে!” পাগল ছাগলের জন্য জীবন নষ্ট করার পাত্রী নাকি আলো? তবু এখনও…! এই যাঃ! আলু চচ্চড়িটা পুড়ে গেল বুঝি।
– “যাক না! তুমি যা রাঁধো, তাই অমৃত।”
– “তেল মেরো না। মদের টাকা দিতে পারব না!”
– “ধ্যাত, বলচি পোপেচারের কথা। তার কত টাকা। কিন্তু নেশা করতে পারে? আমার উলটো কেস।”
– “ভাব জমাও। দেখ, ওর পয়সায় নেশা করতে পারো কিনা!”
ভালই বলেচে আলো। কিন্তু ভাব করবো কী করে? আমাকে থোড়াই পাত্তা দেবে!
– “কোন ভাবে নিরাপদর ঠেকে নিয়ে যাও” আলো মুচকি হাসে।
কথা বলতে হবে পোপেচারের সঙ্গে? কী বলবে রাধেশ?
আরে! পোপেচারের গলা পাওয়া যাচ্চে! রাধেশ পাঁচিলের উপর উঠে বসে। পোপেচার ঠায় বসে আছে। পেছনে মেয়েদের ইস্কুলের ছায়া দিদিমনি। পোপেচারের ওয়াইফ। কী কথা স্বামী ইস্তিরিতে? দিদিমনির ভ্রু বেঁকে আচে – “খাও না, তো নাও কেন? অযথা অপচয়।”
– “ভাল লাগছে না। ফেলে দাও।” পোপেচার উঠে দাঁড়িয়েছে। ইস! অতগুলো মাল ফেলে দেবে?
রাধেশ লাফিয়ে ওঠে – “এই যে চার! আমাকে দিন। এই যে আমি এদিকে!” পাঁচিলের উপর থেকে ঝুঁকে পড়ে রাধেশ। অবাক বিনায়ক দেখেন, লোলুপ দৃষ্টি মেলে যে লোকটা হাত বাড়িয়ে আছে, সে যেন বড় আপন। আনন্দময়। জানালা টপকে বিনায়ক লাফিয়ে ওঠেন ওয়ালে। যদিও শরীর ঘরের মধ্যে স্থির। লাফিয়ে উঠে রাধেশের হাত জড়িয়ে ধরেন। ছায়া দিদিমনির সময় নেই রঙ্গরস দেখার। স্কুলে যেতে হবে। রাস্তায় নেমে রিকশার জন্য চোখ ঘোরাতে ঘোরাতে জবার সঙ্গে চোখাচোখি। তাতেই মনটা রস কষ সিঙ্গারা বুলবুলির সব হারিয়ে শুধু কষ পড়ে থাকলো। ধুত।
বড্ড ফর্সা বলে জবাকে ফ্যাকাশে দেখায়। ছায়ার সামনে পড়ে থতমত খেল। ছায়াকে অনেকেই একটু ভয় পায়। চোখে কেমন শুকনো ভাব আছে বলে কি? ভাবে ছায়া। খুঁটিয়ে জবাকে দেখে ছায়া। শরীর আছে জবার! উদ্ধত যৌবনা। স্কুলের মিটিঙে বিনায়ক বারবার জবার দিকে তাকাচ্ছিল কেন? স্কুলের সেক্রেটারি বলে বিনায়ককে মাঝে মধ্যে স্কুলে যেতে হয়। জবার সঙ্গে দেখা হয়। ছায়াকে ফাঁকি দেবে বিনায়ক? বলে, হাতি ঘোড়া গেল তল, মশা বলে কত জল?
বিনায়ক অস্বীকার করেছে – “তোমার যেমন কথা! কী বলতে কী যে বল। মাথামুন্ডু নেই কথার।”
– “নয়? তাহলে হাবলার মত তাকিয়ে থাক কেন ওটার দিকে?” খরখরে গলা ছায়ার। বিনায়ক তাকিয়ে দেখে ছায়ার গলার কাছে গুটি গুটি চারটে আঁচিল। থুজা নামে হোমিওপ্যাথি ওষুধে কাজ হবে। কথা বলছে ছায়া, আর তাল মেরে মেরে আঁচিলগুলো নৃত্য করছে।
– “কাল অচিন্ত্য ডাক্তারের কাছে যাও। আঁচিলগুলো দেখাও। সেরে যাবে।”
আনমনেই আঁচিলের উপর হাত চলে যায় ছায়ার। খুব কি খারাপ দেখতে ছায়াকে? কমপ্লেকশন জবার মত নয়। চাউনিতেও জবার মত ইনোসেন্ট ব্যাপার স্যাপার নেই। ভরাট শরীরও নেই জবার মত। সিন্থেটিক শাড়ি পরতে পারে না। শরীরের দৈন্য বোঝা যাবে ওতে। লু বইলেও মাড় দেওয়া তাঁতের শাড়ি পরতে হয়! বিনায়ক বারবার আঁচিলগুলোর কথা তোলে কেন? বিনায়ক কেন জবাকে দেখছিল? আজ রোদের ঝাঁঝ বড্ড বেশি। মন খাঁ খাঁ করে! এবার পুজোয় স্টিলেটো কিনলে হয়! ফ্যাশনেবল নারী পছন্দ বিনায়কের।
এসব মনে হয় ছায়ার! বিউটি পার্লারে যাবে ছায়া? হেয়ার স্পা, বডি ম্যাসাজ…একটু আধটু মেকআপ …কী দোষ এতে? নাহ, নিজেকে নিয়ে এবারে ভাবতে হবে। স্কুলের রাস্তায় পড়ে না বলে বাঁদিকের গলিতে ঢুকতে হল। মাড়োয়ারি দোকানদার। ছায়া মাঝে সাঝে শাড়ি কিনেছে এখান থেকে। আজ মনে হল একটা শাড়ি কিনলে হয়। বহুদিন নতুন কিছু পরা হয়নি। গুচ্ছের শাড়ি দেখল ছায়া। একটাও শাড়ি পছন্দ হচ্ছে না। বিরক্তি চেপে বসছিল মাথায়। এরা আজে বাজে শাড়ি নিয়ে কেন দোকান খুলে বসে কে জানে! চলে যাবে বলে উঠে দাঁড়াতে দাঁড়াতে পিঙ্ক লেসের শাড়িটা চোখে পড়ল। ভ্রু সোজা হয়ে গেল।
শাড়ির প্যাকেটটা নিয়ে বেরিয়ে আসতে আসতে চাপা খুশি টের পেল ছায়া। ঠিক এই রকম শাড়ি পরেছিল জবা সেই মিটিঙের দিন। আজ বিকেলে একটু ফুলি কাকিমার বাড়িতে গেলে হয়। নতুন শাড়িটা পরে…অল্প লিপ্সটিক…! বিনায়ক খুশি হবে?
– “এখানে কেন?” বিনায়ক চারপাশে তাকালেন। ঘুপচি মত জায়গাটা। আধ অন্ধকার। একটা উঁচু ওয়ালের কাছে এসে দাঁড়িয়েছে রাধেশ। কিছু লোক চোরা গোপ্তা চোখে এদিক ওদিক তাকাতে তাকাতে চলে যাচ্ছে। বিনায়ক দেখলেন ওয়ালের গায়ে একখানা লম্বা মই ঠেস দিয়ে রাখা। মাঝে মাঝে মই বেয়ে উঠে যাচ্ছে কেউ কেউ। ফের নেমে আসছে দুই থেকে তিন মিনিটের মধ্যে। মই বেয়ে উঠছে চোরের মত মুখ করে। নেমে আসছে দারোগার মত। রাধেশ বিনায়ককে দাঁড়াতে বলে। বিনায়ক তাল পাচ্ছিলেন না। এই জায়গাটা কোথায়? রাধেশ নামের লোকটা কোথায় নিয়ে এল তাঁকে! উচিত হল কিনা এই লোকটার সঙ্গে আসাটা! লোকালিটিতে একটা সম্মান আছে তাঁর! চোলাই–এর ঠেক এটা। কলেজের প্রফেসর বিনায়ক সাঁতরা চোলাই খাচ্ছে একটা আনকালচার্ড ফালতুর সঙ্গে বসে!
হি হি হাসে রাধেশ। এমন জায়গার কথা পোপেচার জানেই না।
– “সত্যি! রাস্তার এত কাছে এমন ঠেক আছে, কে জানতো?” বিনায়ক দেখেন অনাস্বাদিত আমেজে আচ্ছন্ন হয়ে আছে ঘুপচিটা। এই আমেজের সন্ধানে কতকাল ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছেন বিনায়ক!
রাধেশ কিন্তু কিন্তু করে
– ইয়ে, পয়সা আছে?
– হ্যাঁ, হ্যাঁ। বিনায়ক ওয়ালেট বের করেন।
– তো, মই বেয়ে উঠে যান।
– মানে?
– একগেলাস পঁচিশ টাকা। বিনায়ক দেখেন দেওয়ালের গায়ে আর কিছু মই ঠেস দেওয়া। টাই গলায় লোকটি ব্যাগ সামলে নেমে আসার সময় হাতের পেছন দিয়ে ঠোঁট মুছে নিল।
অগত্যা বিনায়ক ওয়ালেট থেকে পঁচিশটাকা বের করেন। মুঠোয় চেপে মই বেয়ে উঠতে থাকেন । ওয়ালের মাথায় পৌঁছে বিনায়ক অবাক। এক পৃথুলা রমণী তাঁকে দেখে ওয়ালের ওপাশ থেকেও ঠেস দিয়ে রাখা মই বেয়ে উঠে আসছে। হাতে একটি গ্লাস। তরল আগুনে পূর্ণ।
মুঠোর টাকা রমণীর হাতে দিয়ে গ্লাস নিলেন বিনায়ক। মইয়ের উপর দাঁড়িয়েই খেতে হব। চোখ বুজে গ্লাস খালি করে ফেলেন বিনায়ক।
এবারে বিনায়ক নামছেন, রাধেশ উঠে যাচ্ছে। একজন নামছেন, অন্যজন উঠছে। নেমে আসা, উঠে যাওয়ার মধ্যে এত এত আনন্দ ছিল, জানতেন না বিনায়ক। রাধেশ যেন মেফিস্টোফেলিস!
– বিষাক্ত মদ নয়তো রাধেশবাবু? বিনায়কের গলায় মধুর আমেজ চু কিত কিত খেলে।
– ধুর! সব দুঃখ ভুলে যাবেন চার। ঝোলা ঠোঁটের ফাঁক দিয়ে পানরসে সিক্ত ডোরাকাটা দাঁত বেরিয়ে আসে অভয় দিতে – ভুলে যাওয়ার ওষুধ আছে এখানে।
– আপনাকে ওয়াইন খাওয়াব একদিন। আঙ্গুরের রস গেঁজিয়ে ওয়াইন তৈরি হয়। বিয়ারও খেতে পারেন। আজ যেটা খাচ্ছি, অনেকটা বিয়ারের মত।
-খাব। চব খাব চার। মজা পাচ্চেন তো? দুঃখ নেই তো?
দুঃখ! জবা দিদিমনির চোখ দুটো কর্ণাবতীর মত। কতবার হেডমাস্টারের বাড়ির সামনে দিয়ে গেছেন বিনায়ক। একবার ডেকে কথা বলতে পারেননি। ভয় করতো খুব। দুধের স্বাদ ঘোলে মেটাতে গিয়ে জবা দিদিমনির দিকে তাকাতে হয়! ছি ছি ছি! কী ভাবলো ছায়া? লুজ ক্যারেক্টার ভাবলো বিনায়ককে? লুজ …ক্যারেক্টার রররর! এই বিনায়ক, তুই কিছুই করতে পারলি না? সবাই রেল কলোনিতে চলে গেল তুই আহাম্মক …কে জবা দিদিমনি? এ জীবনে লাইফ বলে কিছু নেই। কাউকে সুখী করতে পারলাম না। কাউকে সুখী করিনি? আমার ওয়াইফ। ছায়া? সে সুখী নয়? তুই কী দিয়েছিস ওকে? কর্ণাবতী রেলকলোনির বাবুর বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে আছে রে বিনায়ক। তুই শালা আহাম্মক লাল জলে পরের বউয়ের মুখ দেখিস। পাশাপাশি শুয়ে হেডমাস্টারের মেয়েকে ভাবো, আর নিঃশ্বাস ফেলে শুয়ে থাকে ছায়া দিদিমনি। কর্ণাবতী একপুরুষঘাতিনী অস্ত্রে সত্যি কি মেরে দিল বিনায়ককে? ছি ছি! ছায়ার কী দোষ? কিচ্ছু না। কিছ…ছু…না! …। রাধেশবাবু বড্ড ভাল লোক! ফ্রেন্ডলি! এমন বন্ধু আর…। ছায়াকে আজ একটু আদর দিস বিনায়ক। সব ভুলে মেরে দিয়েছিস বাস্টার্ড! প্রেম নেই প্রাণে ছায়ার জন্য! কোন জলে ডোবা শাঁপলার জন্য ছায়া সাফার করছে!
রাধেশ গান ধরেছে। দূর থেকে গান শুনতে পেল আলো। কখনও গুনগুন করেনি যে লোক, সে আজ গান গাইছে গলা ছেড়ে! মন রে কিসিকাজ জাননা রে এ এ এ …
ছায়া বিনায়কের গলা পেয়েছিল। চিন্তা হচ্ছিল ছায়ার। ওই … ওরা এল। একজনের বাহুবন্ধনে অন্যজন। দুজন দুখী সুখী মানুষ ফিরে আসছে। কে কোনজন, চেনা যাচ্ছে না! গেটের কাছে এসে টলছিল বিনায়ক। হাত নড়ে যাচ্ছে। গেট খুঁজে পাচ্ছে না হাত। কী বলে যাচ্ছে জড়িয়ে মড়িয়ে –‘ক্লারেট ফর লেডিজ, শেরি ফর উইমেন। ব্রান্ডি ফর হিরোজ! ছায়া গিয়ে গেট খুলে সরে দাঁড়াল। অন্ধকারেও ছায়াকে ঠিক চিনেছে বিনায়ক – শ্যাডো! মাই ডিয়ার শ্যাডো! সব মানুষ এক বুঝেছ? সবাই সব ভুলে যায়। … হাউ হাউ করে কাঁদেন বিনায়ক। রাধেশও দেখাদেখি কাঁদে – সব শালা সম্পত্তিকা লিয়ে লালচ করতা হ্যায়!
গাঢ় আমেজে তলিয়ে যাচ্ছেন বিনায়ক। এক অত্যাশ্চর্য মায়াপুরীতে ডুবে আছেন বিনায়ক। সেই মায়াপুরীতে, কী যেন…কার যেন থাকার কথা ছিল…! মনে পড়ি পড়ি করেও পড়ে না। উফ! সে কোথায়? তাকে ছাড়া …! মিছে মায়ার জাল ছিঁড়ে যাচ্ছে যেন!
বড় কষ্টে তাকালেন বিনায়ক। এই তো সে এসেছে ! আদর করে তাকে জড়িয়ে ধরেন বিনায়ক। আঁচিলগুলোর উপর আস্তে আস্তে হাত বুলিয়ে দেন – খুব দুঃখ তোমার শ্যাডো? অ্যাঁ? তুমি টাকিলা খাবে? মই বেয়ে উঠে যেতে পারবে তো? ওঠা আর নামা! নামো, আর ওঠো মজা খুব বুঝলে …! মজাটা বুঝতে পারলেই মজা! কোনও দুঃখ থাকেনা শ্যাডো। বুঝেছ? শুধু একবার চল! দেখবে সব এক। সব গোল রঙের লোক।
ছায়া আস্তে আস্তে হাত বুলিয়ে দেয় বিনায়কের কপালে – যাব। চল।
ছায়ার শরীরে রক্ত চলাচল করে। ছায়া নয়, এক রক্ত মাংসের নারী তৈরি হয় এক অভিযানের জন্য। কোমল ঠোঁট নামিয়ে আনে…।
বিনায়ক ভুলেছে। এবারে ছায়া ভুলতে যাচ্ছে।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন