poem-vinsir-brush

ভিন্সির ব্রাশ ভেঙে চুরমার হয়ে যায়
আবেদীন মোহাম্মদ জয়নুল

গেলো রাতে আমি একটি প্রেমের কবিতা লিখতে বসেছিলাম;
ভাবছিলাম…প্রেয়সীর রূপের বর্ণনায় বানাবো এক শ্রেষ্ঠ কবিতা
তরুণ প্রেমিক-প্রেমিকার হৃদয়ে শিহরণ জাগিয়ে, মূহুর্তে ভাইরাল হবে সেই কবিতা;
লাইক কমেন্টে ছাড়িয়ে যাবে পৃথিবীর তাবৎ রচনা।

প্লট নির্মান শেষ – শুরু হয় ভবিষ্যৎ অমর কবিতার প্রথম চরণ…
গ্রীস ইতালি ফ্রান্সের বড় বড় শিল্পীর তুলি ও রঙ সাজিয়ে রাখি আমার মনের তাকে।
কবিতায় শুরু হয় আমার প্রাণ-প্রিয়ার সিল্কি কালো কেশের মন-ভোলানো ছবি আঁকার কাজ।
কবিতার উৎকৃষ্ট মনোযোগের তৃতীয় স্তরে প্রবেশ করতেই
আমার মন ও মগজে এক ঘূর্ণিঝড় বয়ে যায়!
আমি কোথায় যেনো হারিয়ে যাই-
যেনো যশোর মনিহার সিনেমা হলের পরিষ্কার পর্দায় ভেসে আসে
আমার গ্রামের ডেবরিদাসীর মেয়ে মুন্দা অভাগীর চুলের জটপাকানো পাখির বাসার মত ছবি।
সাবান শ্যাম্পু তেল পড়েনি কতদিন – উঠতি বয়সের ছোকরারা তবু ছাড়েনি তাকে
সুযোগে অনেকবার ধর্ষণ করেছে – খালে বিলে মাঠে জঙ্গলে ও পড়োবাড়ির ভুতুড়ে ঘরে।
ভিঞ্চির ব্রাশ ভেঙে চুরমার হয়ে যায়, মুন্দার চুলের ছবি আঁকতে গিয়ে!
শত শত মুন্দার জটপাঁকানো মাথা আমার মনের পর্দায় ভেসে ওঠে।
ভেনগগের মতো, কান কেটে প্রেয়সীর প্লেটে রাখার পরিবর্তে
নিজের কলিজা কাটার রক্ত দিয়ে মুন্দার চুলের ছবি আঁকতে থাকি।

অতঃপর আমার প্রেয়সীর চোখের বর্ণনা দিতে গিয়ে দেখি
অপুষ্টিতে ভোগা অজস্র কোটরাগত চোখ আমার দিকে অসহায় ভঙ্গিতে তাকিয়ে আছে।
সবকিছু ঝাপসা হয়ে আসে – আমার প্রেয়সীর চোখের বর্ণনা লিখতে আমার কলম প্রতিবাদ করে ওঠে।

এরপর নাক ঠোঁট দাঁত হয়ে পৌঁছে যাই প্রিয়ার আপেলরঙা কোমল স্তনে।
এই স্তনের নান্দনিক বর্ণনা এঁকে দিলে আমার কবিতা এবার সুপারহিট হবেই।
সুগোল সুকোমল সুঢৌল গোলাপী আকর্ষণের মাঝে লালচে কড়মচা বসানো
পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সৌন্দর্যে আমার শরীর জেগে ওঠে গভীর আলিঙ্গনের তীব্র আকর্ষণে।
সহসাই দেখি হিঙ্গুলের ভিখেরী মা আর আফ্রিকার কঙ্গো-কম্বোডিয়া-সুদান-সোমালিয়ার
চিটের মত জঠরের বড় বড় পোকার মত নারী।
ওদের কারো কারো স্তন, পুষ্টির অভাবে হাড্ডিসার দেহের সাথে মিশে গেছে পুরুষের মতন।
কারো কারো স্তন শুকিয়ে পুরনো ময়লা টাকার থলির মত ঝুলে আছে।
আমার মাথা নত হয়ে আসে – প্রেয়সীর স্তনের বর্ণনায় আমার কলম থেমে যায়
বুকের রক্তের কালি দিয়ে লেখে যাই হিঙ্গুলের ভিখেরী মায়ের স্তনের ব্যথার কাহন।

এবার আমার প্রেয়সীর নাভির নিচে যেতে চাই
নন্দন-তত্ত্বের সবচেয়ে সেরা নান্দনিক ভাষায় প্রেয়সীর স্বর্গনদী এমনভাবে তুলে ধরবো যে
আমার প্রেমের কবিতা এবার সুপার-হিট হবেই হবে।
কলম ধরেছি শক্ত করে – এবার হবে আমার প্রেমের শ্রেষ্ঠ কবিতা।
এ কী!! পৃথিবীর সমস্ত ধর্ষিতা নারী শিশু বালিকা নাভির নিচে পশুর কামড়ের ক্ষত নিয়ে
আমার সম্মুখে এসে দাঁড়ায়, আর তুমুল চিৎকার করে বলে ওঠে…
কবি! তুমি প্রেমের কবিতা লিখতে বসেছো?!
হা হা হা…! এই দ্যাখো – যুদ্ধে পরাজিত জাতির নারী আমি – আমার নাভীর নিচে এখনও কেমন রক্ত ঝরছে।
এক অভাগী বালিকা শরীরের বসন খুলে, ভৌতিক ভঙ্গিমায় দাঁড়ায় আমাকে কাঁপিয়ে দিয়ে;
বলে, কবি!! তুমি প্রেমের কবিতা লিখতে বসেছো?!
এই দ্যাখো – আমার স্তনের বোটা হারিয়ে গেছে আরব বনিকের দাঁতের কামড়ে!
নাভীর নিচে দ্যাখো বাপ-বেটা-নাতীর ছোবল!
পরাবাস্তবতার নির্মম আঘাতে আমি প্রায় পাগল হয়ে যাই – প্রেমের কবিতা লেখার সাধ মিটে যায়;
কলম ও কবিতার ডায়েরি ছুড়ে ফেলে, দরজা খুলে, ফাঁকা মাঠের মধ্যে চিৎকার করে দৌড়াতে থাকি;
পৃথিবীর সমস্ত নির্যাতিত মানুষ আমাকে ধাওয়া করতে থাকে;
একযোগে ভৌতিক সুরে চিৎকার করতে থাকে – দাঁড়াও কবি!! তোমাকে আমরা প্রেমের কবিতা লেখা শিখিয়ে দেই!
আমি হাতজোড় করে ক্ষমা চাই; আর দুহাতে দুই কান ধরে বলি –
এই আমি শপথ করছি – প্রেয়সীর প্রেমের কবিতা লিখবো না আর
এখন থেকে প্রসব হবে শুধু মানুষের কবিতা – মানুষ ও মানবতার ভালোবাসার কবিতা।
প্রেমের সুপার-হিট কবিতা লেখা আর হলো না আমার।



এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *