পায়েল চট্টোপাধ্যায়
-“তুমি এখনো এখানে কেন? চলে যাও।”
-“আমি থাকব। চলে চাওয়ার জন্যে তো আমি আসিনি”
-“কিন্তু আমাদের যে এখনই আলাদা হয়ে যাওয়ার কথা শমিত।”
ছাদের ওপর একটা মাদুর পেতে বসে ওরা কথা বলে। আজ পূর্ণিমা। চাঁদ উঠেছে। জোৎস্না মাদুর ভালোবাসে না। মাটিতেই দুম করে বসে পড়ে। সুমিত জোৎস্নার কোলে মাথা দেওয়ার চেষ্টা করে। পারে না। উষ্ণতাবিহীন কোলে মাথা রাখা যায় না।
-“তুমি কেন বুঝতে পারো না, আমার কোথায় থাকতে ইচ্ছে করে জ্যোৎস্না?”
শমিতের কথায় আধ-বোজা চোখ মেলার চেষ্টা করে জোৎস্না। আলো ফোটে ওর মুখে। চাঁদের আলো। মাদুরের উপর উঠে আসে। আকাশের দিকে তাকায়।
-” আমাদের বিয়ে হলে কি রংয়ের শাড়ি পরতে?”
-“তোমার তো হলুদ রং পছন্দ, তাই না শমিত?”
-“কী করে বুঝলে! আমাদের ভাঙা ঘরে চাঁদের আলো ঢোকে না, তোমাদের বাড়ি রোজ চাঁদ দেখতে আসি বলে?”
-“তুমি চাঁদের দিকে এমন অদ্ভুত ভাবে তাকিয়ে থাকতে যে আমার মনে হত, চাঁদনী রঙের শাড়ি পরলে তবেই তুমি তাকিয়ে থাকবে।”
-“তুমি তো নিজেই আলো। জোৎস্না।”
-”তুমি কোন রং পরতে শমিত?”
-“নীল।”
-“নীল রংটাই বাছলে শেষ পর্যন্ত!”
-“তোমার শরীরটা তো এখনো নীল হয়ে রয়েছে, অন্য রং আর কী করে বেছে নিতাম বলোতো?” তুমি হলুদ রং কেন বাঁচলে জোৎস্না?”
-“তুমি মাঝে মাঝে আমায় সূর্যমুখী বলে ডাকতে। তাই।”
-“তাহলে সূর্যমুখীর রং পাল্টে গেল কেন ? বিশ্বাসঘাতকতার রং কী হয়? এই ছাদেই কালো শাড়ি পরে দেখেছিলাম তোমায়। কালো শাড়ির সঙ্গে আরেকটা কালো পোশাক তোমার শরীরে সাপের মতো মিশে ছিল। তোমার যে হাত আমার চুলে বিলি কেটে দিয়েছে, সেই হাতে অন্য আরেকটা হাত। তোমার সারা শরীরে ঘুরছে।”
-“তাই বলে তুমি আমায় নীল রঙে রাঙিয়ে দেবে!” তোমার নিজের হাতে তৈরি চাউমিনের রং যে নীলচে আমি খেয়ালই করিনি।”
-“শুধু তোমায় নয় জোৎস্না, আমি আজ নিজেও নীল রঙেই ডুব দিচ্ছি। তুমি যে আমার চিরসখা। যে চাউমিনটা খেতে খেতে তুমি আমার বুকে ঘুমিয়ে পড়লে, সেটা এবার আমার শরীরে নীল রঙ ভরে দেবে।”
বাক্সটা থেকে বাকি চাউমিনটা গোগ্রাসে গিলছে শমিত। জোৎস্নার শরীরটা মাদুরের উপর পড়ে। শমিতের শরীরে শিরশিরানি শুরু হয়েছে। একটু পরেই শেষ হয়ে যাবে সবটা। কিছুক্ষণ আগে এভাবে এখানে জ্যোৎস্নাও শেষ হয়েছে।
শমিতদের বস্তি থেকে জোৎস্নাদের বাড়িটা অট্টালিকার মত দেখতে লাগে। ওরা বন্ধু। জোৎস্নার প্রিয় খাবার মাঝে মাঝেই নিয়ে আসতো শমিত। সেদিন চাউমিন নিয়ে আসার আগে দুটো শরীরকে চাঁদের আলোয় মিশে যেতে দেখেছিল শমিত। একজন জ্যোৎস্না, আরেকজন! জানতে চায় না শমিত।
চাউমিন-এর সঙ্গে তীব্র বিষটা মেশাতে কিছুটা সময় নিয়েছিল শমিত। বাড়ি গিয়ে সবটা সেরে যখন জোৎস্নাদের বাড়ি আসে, ছাদটা ফাঁকা হয়ে গেছে।
শমিত আর জ্যোৎস্না দুজনে ছাদে উঠে খেতে খেতে চাঁদ দেখছিল। আজ পূর্ণিমার চাঁদ বড় উজ্জ্বল। জোৎস্নার শরীরটা ধীরে ধীরে ঢলে পড়ে। শমিত ওকে মাদুরের ওপর নিয়ে আসে, জড়িয়ে ধরে। শমিতের শরীরেও শিরশিরানি শুরু হয়েছে। ঝিমিয়ে পড়ছে ও। একটু একটু করে জোৎস্নার পাশে শুয়ে পড়ে।
হলুদ চাঁদের আলো দুটো নীলচে শরীরের উপর পড়ছে। চিরসখার মত একে অপরের হাত ধরাধরি করে শুয়ে রয়েছে ওরা।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন