micro-story-foolish

ফুলিশ
প্রতিমা রায়


আগে জঙ্গলের নাম শুনলেই মাহী ভয় পেত। এখন জঙ্গল তাকে দিনেরাতে নেশার মতো টানে। বুকের ভেতর কেমন একটা খিদে ছটফট করে।‌ আবার তাই‌ ছুটি নিয়ে চারদিনের জন্য সুন্দরবন। হোটেল গাড়ি সব প্ল্যানমাফিক বুক করে নিয়েছে।

মা জিজ্ঞেস করে– জঙ্গল সাফারিতে গাইড নিয়েছিস? অভিজ্ঞ, জঙ্গলকে তালুর মতো চেনা আর পরিস্থিতি মোকাবিলা করার মতো ঝানু গাইড?

মাহী হাসে। গাইড ছাড়া সে জঙ্গল সাফারিতে যাবে! তার ঘাড়ে ক’টা মাথা আছে! মুখে বলে- হাঁ মা।


# #


সুন্দরবনের নিবিড় জঙ্গল, জলাভূমিতে মাথা তুলে ইকোসিস্টেমের ভারসাম্য বজায় রেখে চলেছে সুন্দরী গরান, গেওয়া আর বিখ্যাত ম্যানগ্রোভ অরন্য। স্পটেড ডিয়ার, বন্য শূকর, মেছো বাঘ, লবণ জলের কুমীরও ইকোসিস্টেমের পার্ট। অসংখ্য প্রানী, জলস্থল ও জোয়ার ভাটার সঙ্গে মিতালী করে বসবাস করছে।

গাইড দেখায়- ওই দেখ গ্রীন করিডোর। ও পথই বাঘেদের চলাফেরার জন্য নিরাপদ। বনদপ্তরের নজরদারি রয়েছে ওপথে, কোথাও কোথাও সিসিটিভি ক্যামেরাও রয়েছে। তবে ওপথ আমাদের জন্য স্বর্গ।

খাঁড়ির মুখেই দৃশ্যটা চোখে পড়ে। অল্প দূরত্বে মোহনায় জল খেতে নেমেছে কয়েকটা হরিন।‌ ওদের নৌকা তীব্র আওয়াজ করে পাড়ে ধাক্কা মারে।‌ ভয়ে ভীত হয়ে হরিনগুলো এদিকে ওদিক দৌড়তে থাকে। কেউ কেউ নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে জঙ্গলে লুকিয়ে পড়ে। একটা হরিণী শুধু ঢুকে পড়ে বাঘেদের করিডোরে, এই ভেবে – এটা বাঘেদের জন্য সুরক্ষিত হলে হরিণদের জন্য নয় কেন? জঙ্গল তো সবার।

সেই সময়ই গ্রীন করিডোরের পাশ ফুঁড়ে বেরিয়ে আসে মাছ আঁকা নৌকাটা। গাইড ডাকে- মাহী! কাজ শুরু করো। আশপাশে কেউ নেই।

মাহী ফিসফিস করে বলে- স্যার হরিণীটা,,,!

ও সামান্য, অতি তুচ্ছ। তুমি কুইক নাও।

মাহী নৌকার পেট থেকে বের করে মারিজুয়ানার প্যাকেটগুলো। অতি দ্রুততায় তা্ মাছ আঁকা নৌকাটার পেটে চালান হয়ে যায়, ভিনদেশের উদ্দেশ্য পাড়ি জমাতে।

হরিণীটা কি লুকিয়ে দেখে সবকিছু?


# # #


কলকাতা থেকে মা মাহীকে ফোন করে – কবে ফিরবি বাবা?

জানিস এখানে সকাল থেকে পশুপ্রেমীরা তার সঙ্গে সাধারণ মানুষের জনরোষ আছড়ে পড়েছে।‌ এক হরিণী একদল পশুর হাতে লাঞ্চিত অত্যাচারিত হয়ে প্রাণ হারিয়েছে। আমারও কষ্ট হচ্ছে রে।

মাহী গাইডের মুখের দিকে তাকায়।

গাইড হাসে, সুন্দরবনের কাঁকড়ার মতো ধীর চলনে। বলে- ওসব কিছু না। বিচ্ছিন্ন ঘটনামাত্র।

আজ সকাল থেকে টিভি চ্যানেলগুলো দেখাচ্ছে বাঘেরা কীভাবে হরিণীটার উপরে ঝাপিয়ে পড়েছিল। প্রান বাঁচাতে কতক্ষন ফাইট দিয়েছিল হরিণীটা।

টি ভি স্ক্রিনে দেখে কেউ বিমর্ষ, কেউ বলে – আহা রে! অত সুন্দর হরিণীটাকে এইভাবে,,,! কারো কারো মনে হয়- আপনা মাঁসে হরিণা বৈরী।

শুধু শক্ত হলো গাইডের চোয়াল। সে জানে- বড় বেশি সাহসী ছিল হরিণীটা! বাঘের ডেরায় ঢিল ছুঁড়তে এসেছিল,,,,,!

অ্যাবসোলিউটলি ফুলিশ আর কী!



এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *