পার্থ দে
আজকাল রাতে ওরা তিনজন পাশাপাশি বিছানায় শোয়। প্রণবেশ আর স্বাতীর মাঝখানে একটা কোলবালিশ সারারাত চৌকিদারের মতো জেগে থাকে। ওদের দুজনের শুকনো দাম্পত্যের কথা শোনে।
স্বাতী বলে, “বুবুন ফোন করেছিল, ওর এমটেক–এর থার্ড সেমিস্টারের টিউশন ফি–টা আরটিজিএস করতে বলল।”
“হুম। কাল করে দেব। আচ্ছা, তুমি শোওয়ার আগে গ্যাস ওভেনের নবটা বন্ধ করেছিলে? আর চিমনির সুইচটা?” কোলবালিশের দেয়ালের এপাশ থেকে প্রণবেশ বলল।
“উফ্ রোজ সেই এক কথা। করেছি বাবা করেছি।”
“বেশ। দ্বৈতা তোমাকে কিছু বলেছে? আমাকে বলবে না, আমি তো বাবা।”
কোলবালিশটা প্রণবেশের কথা শোনে। কোনো মতামত দেয় না।স্বাতী ঘুম জড়ানো গলায় বলে, “আমার মেয়ে হলেও ঘর তো করবে ও। বলেছে ছেলেটা ভাল। দুটির মনের মিল হলেই হল, আর কী চাই?”
“বলছ, মনের মিলই সব। তাতেই দাম্পত্য জমাট বাঁধবে? তাহলে মনিদির মেয়েটা কেন শ্বশুরবাড়ি থেকে ফিরে এল?”
কোলবালিশটা উৎকর্ণ হয়। টেনসড্ হয়ে ভাবে, নতুন গল্প, শোনা যাক।
“ওর বর বিশ্বাস ভেঙেছিল, তাই,” স্বাতী গজগজ করে।
“তাহলে মনের মিলের সঙ্গে বিশ্বাসের কোনো সম্পর্ক নেই বলছ? কারণ তিন বছর আগে মনিদির মেয়ে–জামাইকে বিয়ের পর যেদিন এবাড়িতে নেমন্তন্ন করে খাইয়েছিলে সেদিন তুমিই বলেছিলে, দুটির কি মনের মিল দেখেছ?”
“বিশ্বাস তো পুরুষেরাই ভাঙে। মনের মিল থাকলেও পুরুষেরাই বিশ্বাস ভাঙে।”
“আচ্ছা, তাহলে মনের মিল থাকলেও বিশ্বাসবাবু মাঝে মাঝে গৃহত্যাগী হন বলছ? ঠিক কোন কোন প্যারামিটারের ওপর বিশ্বাস দাঁড়িয়ে থাকে একটু বলবে?”
কোলবালিশটা তটস্থ হয়ে ওঠে। গত ছ’মাসে তো এমন তাত্ত্বিক আলোচনা হয়নি। এগুলো সব তার সিলেবাসের বাইরে।
“তুমি থামবে? রাতদুপুরে এসব কী শুরু করলে বল তো?” বিছানার ওপর উঠে বসে রাগে ফেটে পড়ে স্বাতী।
প্রণবেশ আমতা আমতা করে বলে,“আচ্ছা ঠিক আছে, আমি থামছি, তুমি শুয়ে পড়ো।”
স্বাতী ফের শুয়ে পড়ে। কোলবালিশটাও নিশ্চিন্ত হয়ে একটা হাই তোলে। যাক টেনশনটা যেন কমল!
প্রণবেশ বিছানা ছেড়ে ওঠে। ড্রইংরুমে গিয়ে ফ্রিজ খুলে বোতল থেকে জল খায় ঢকঢক করে। তারপর টয়লেট যায়।
দু–মিনিট পর প্রণবেশ টয়লেট থেকে বেডরুমে ফিরে এসে চমকে ওঠে।
জানলার ফাঁক গলে একটুকরো মায়াবী চাঁদের আলো এসে পড়েছে বিছানায়। বুকের কাপড় সরিয়ে স্বাতী নদী হয়ে শুয়ে আছে। আর হতচ্ছাড়া কোলবালিশটার জায়গায় বিছানায় পড়ে আছে একটা আধ–খাওয়া আপেল।