micro-story-content-creator

কন্টেন্ট ক্রিয়েটর
মহুয়া সমাদ্দার

 

অয়ন মন শক্ত করে উঠে দাঁড়ালো। আজও সে বের হবে। আজও চারিদিকে শকুনের দৃষ্টি ফেলে দেখতে হবে কোথাও কিছু অদ্ভুত ঘটনা ঘটছে কিনা। এত টাকা দিয়ে ক্যামেরা কিনেছে।  পরপর বেশ কিছু রিল আপলোড করাও হয়ে গিয়েছে ইতিমধ্যেই। কিন্তু ওইটুকুই সার। কাজের কাজ কিছুই হয়নি। এখনও পর্যন্ত তার রিলে সর্বোচ্চ দু হাজার ভিউ এসেছে। অয়ন দেখেছে কত হাবিজাবি কন্টেন্টেও মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ হয় কত কন্টেন্ট ক্রিয়েটরের। কিন্তু তার বেলাই লবডঙ্কা। 

বর্তমানে চাকরির বাজার খুবই খারাপ। তার চেয়ে অনেক বেশি শিক্ষিত ছেলেরাও ফ্যা ফ্যা করে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আর সে কোথা থেকে আলাদিনের আশ্চর্য প্রদীপের মতো চাকরি খুঁজে আনবে? তার অবশ্য ওইসব চাকরি-টাকরি করার বিশেষ ইচ্ছেও নেই। তার বাবাকেই তো এখনও পর্যন্ত দেখছে। সেই কোন সকালে নাকে মুখে দিয়ে অফিসে গিয়ে ফেরে সেই রাতে। আর এত পরিশ্রমের পরে কিনা মাস শেষে কয়েক হাজার টাকা মাত্র উপার্জন হয়। তার বাবাদের সময়ে না হয় এসব ফেসবুক টেসবুকের ব্যাপার ছিল না। কিন্তু এখন তো ঘরে বসে নিশ্চিন্ত নিরাপদে উপার্জন করার অজস্র পন্থা রয়েছে! আর এত উপায় থাকা সত্ত্বেও সে অযথা চাকরির জন্যে চেষ্টা করবেই বা কেন? এই নিয়ে তার বাবার সঙ্গে বেশ কয়েকবার ঝগড়াঝাঁটি হয়েও গিয়েছে। কিন্তু অয়ন শক্ত গলায় তার বাবাকে তার ভবিষ্যত পরিকল্পনা জানিয়ে দিয়েছে। মন থেকে মানতে পারেননি ঠিকই। কিন্তু তাতেও কিছু করার নেই। আর মাসখানেক আগে ই.এম.আই করে এই ক্যামেরাটা কেনার পরে নিজেকে একজন সফল কন্টেন্ট-ক্রিয়েটর হিসেবে দেখার আশা ক্রমশই তাকে ঘিরে ধরেছে।

বাড়ি থেকে বেরিয়ে অটো ধরে গড়িয়াহাট ব্রিজের কাছে চলে গেলো অয়ন। দিন দুই আগেই ঠিক ব্রিজের মুখে একটা মারাত্মক অ্যাক্সিডেন্ট হয়েছিল। বেশ কয়েকজন সেই ভিডিও আপলোড করতেই লাখ লাখ ভিউয়ার পেয়ে গিয়েছিল নিমেষের মধ্যেই। সে দাঁত কামড়ে বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে রয়েছে সেখানে। কিন্তু সদ্য এত বড় দুর্ঘটনা ঘটে যাওয়ায় এখানে বর্তমানে ট্র‍্যাফিক খুবই নিয়ন্ত্রিত। তাই এদিকে তেমন কিছু ঘটবে বলে মনে হচ্ছে না তার। সে চলে যাবার জন্য পেছন ঘুরতেই একটা দৃশ্যতে তার চোখ আটকে গেলো। একটা দোকানের আড়ালে এক ভদ্রমহিলা টিফিন বক্স থেকে খাবার খাইয়ে দিচ্ছেন কাকে যেন। কাকে খাওয়াচ্ছে? সে আরেকটু এগোতেই দেখতে পেলো একটি কুড়ি বাইশ বছরের ছেলেকে খাবার খাওয়াচ্ছেন ওই ভদ্রমহিলা। অয়ন বুঝলো আজ হয়তো আর ভালো কিছুই জুটবে না। তাই সে অতি সন্তর্পণে ক্যামেরা অন করে মিনিট দুয়েকের একটা ভিডিও করেই সঙ্গে সঙ্গে সেখান থেকে সরে গেলো। 

বাড়ি ফিরে ভিডিওটাতে মা সম্পর্কিত একটা গান সেট করে সেটা ফেসবুকে ছেড়ে দিলো। ওপরে লিখে দিলো “মায়ের স্নেহের পরশ” অবাক কান্ড! ভিডিওটা ছাড়ার পরেই হুহু করে ভিউ আসতে লাগলো। আজকালকার মানুষের মন বোঝাই দুষ্কর। কী এমন আছে এই ভিডিওতে তা কে জানে! এত ভিউ হবার আছেটা কী! যা হোক। এতদিন বাদে সে আনন্দে দিশেহারা হয়ে উঠলো। কয়েক ঘন্টাতেই তার কয়েকশো ফলোয়ার বেড়ে গেলো। 

খুব সকালে একটা আননোন নাম্বার থেকে ভয়েস-কলে অয়নের ঘুমটা ভেঙে গেলো। ট্রু-কলারে   নাম এলো “রূপসা”। সে ঘুম চোখে হ্যালো বলতেই এক মহিলার কর্কশ কণ্ঠস্বর শোনা গেলো। ভদ্রমহিলা চিৎকার করে বলছেন – আপনি আমার ভিডিও ফেসবুকে ছেড়েছেন কেন? আর সেখানে মায়ের স্নেহের পরশই বা লিখেছেন কেন?

–আপনি আমার নাম্বার পেলেন কোথায়?

–ফেসবুক ডিটেলসে পেয়েছি। ওখানে না পেলে অন্যভাবে জোগাড় করে নিতাম। আমার পেছনে কাঠি করা! 

এক ঝটকায় অয়নের ঘুমের দফারফা হয়ে গেলো। সে একটু ভয়ই পেয়েছে যেন। মা ছেলের এমন সুন্দর ভিডিও আপলোডেও যে কেউ আপত্তি করতে পারে, তা সে ভাবতেই পারেনি। সে কাঁপা গলায় বললো –ম্যাডাম, এমন স্নিগ্ধ সম্পর্ক আর কি আছে কোথাও? আমার মা নেই তাই আমি আরও বেশি ফিল করি। 

–কী সেই থেকে ম্যা ম্যা করে চলেছেন? কে কার মা? 

– কেন? আপনারা মা-ছেলে নন? 

–জাস্ট শাট আপ ইডিয়ট। এক্ষুনি ভিডিওটা ডিলিট করুন। নইলে থানায়! আর হ্যাঁ, আমরা কাপল। 

–কিন্তু বয়স…!

–বয়সের আবার আছে কী হ্যাঁ? আমি ওর চেয়ে একটু বড়ই না হয়! বছর পনেরোর বড় আবার বড় কী? 

অয়ন ফোনটা কেটে কিছুক্ষণ স্তব্ধ হয়ে বসে রইলো। আজ থেকেই তাকে কাজের খোঁজে নামতে হবে। শর্টকাট ইনকাম তার দ্বারা হবে না, সে নিশ্চিত।

 



এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *