মহুয়া সেন মুখোপাধ্যায়

সে প্রায় পঁচিশ বছর আগেকার কথা। স্প্রিং সেমেস্টার শেষ হওয়ার আনন্দে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ইন্দোনেশিয়ান বন্ধু, আমাদের বিভাগের প্রায় সব ছাত্রছাত্রীদের নিজের বাড়িতে নেমন্তন্ন করে। তারা বেশ কয়েকজন আন্তর্জাতিক ছাত্রছাত্রী মিলে থাকতো একটি বাড়িতে। হৈ হৈ করে আমরা জড়ো হয়েছিলাম সেই বাড়িতে। মে মাসের কবোষ্ণ একটা ঝলমলে দিনে। এতকাল বাদেও মনে আছে ওদের বাড়ির রান্নাঘরের মাঝখানে এক বিরাট টেবিলের ওপর সাজানো ছিল হরেক দেশের খাবার ও পানীয়। ওই টেবিল ঘিরে বিভিন্ন বেমানান চেয়ারে বসে সারা দুপুর সন্ধ্যে জুড়ে আমাদের গল্প, খাওয়া-দাওয়া চলেছিল। কারণ-অকারণ হাসাহাসির মধ্যেও চিনচিন করে মনের মধ্যে বাজছিল চোরা বিষাদের সুর। পাঠক্রম শেষ হয়ে আসছে। এদের মধ্যে অনেকে ফিরে যাবে নিজেদের দেশে। কত রকমের ইংরাজী উচ্চারণ, কতরকম খাবার, কত ধরনের হাসির আওয়াজে ভরা ছিল ওই রান্নাঘরটি। ওভেন থেকে গরম হয়ে বেরোচ্ছে রোস্ট, ফ্রিজ থেকে হরেক রকমের ডেসার্ট। কেউ প্লেট নিয়ে সেদিন অন্য কোনো ঘরে যায়নি। আমি তখন আমার পরিবারের সঙ্গে থাকতাম একটি এপার্টমেন্টে। আমার ভারতীয় বন্ধুবান্ধবেরাও তাই। রান্নাঘরে জড়ো হয়ে গল্প, আনন্দ, আড্ডার ওই অভিজ্ঞতা আমার কাছে প্রথম। যা কখনো ভোলার নয়। কেন ভুলিনি? আড্ডা তো আমাদের কম হয়নি। আমার মনে হয়, ওই অত রকম খাবার, পানীয় একটা আরামদায়ক উষ্ণতা দিয়ে ঘিরে ফেলেছিল আমাদের সেদিন। চেনা অচেনা মিশে গেছিল। তখন সেভাবে খেয়াল করিনি কিন্তু সময়ের সঙ্গে সঙ্গে আমেরিকা প্রবাসে এপার্টমেন্ট থেকে আমাদের সমসাময়িক বন্ধুরা মূলত শহরতলীর নিজস্ব বাড়িতে স্থানান্তরিত হলাম। এখানকার স্থানীয় বন্ধু, প্রতিবেশী, সহকর্মীদের বাড়িতে হওয়া আড্ডা যদিও ভুলিনি।
ইংরেজি সাহিত্যে পড়া গল্পে, গত তিরিশ বছর ধরে দেখা বহু আমেরিকান সিনেমা, সিরিজে একটি বাড়ির মধ্যে কোনো একটা ঘরকে যদি কেন্দ্রবিন্দু হিসাবে ভাবতে চাই- সেটা কিন্তু হল রান্নাঘর। বাড়ির মানুষরা রান্নাঘরের কাউন্টারে, খোলা রান্নাঘরের ভেতরে বা সামনে রাখা খাবার টেবিলে খাচ্ছে, পড়াশোনা করছে, গল্প করছে, ল্যাপটপে কাজ করছে সেটা যেন সহজাত ভাবনায় ঢুকে গেছে। দু তিনজন বন্ধুবান্ধব একত্রিত হলে পুরো সময়টা রান্নাঘরে খেয়ে, আড্ডা দিয়ে কেটে গেছে সেটা খুব স্বাভাবিক। আমেরিকার স্থানীয় বন্ধুদের ছোটবেলার গল্পে তাদের ক্রিসমাস, পারিবারিক উৎসব, প্রত্যেক দিনকার খাওয়া, হোমওয়ার্ক, ক্রাফট বানানো সব কিছুর কেন্দ্র হলো ওই রান্নাঘর। এই কথাগুলো নিয়ে চিন্তা করতে গিয়ে আমার মনে হলো এই বিষয়টি নিয়ে আগে সেভাবে কখনো ভাবিনি তো? কলকাতায় আশি নব্বই দশকে বড় হয়ে ওঠা মধ্যবিত্ত জীবনে সে ফ্ল্যাট হোক বা বাড়ি, রান্নাঘরের স্মৃতি আলাদা করে করে বলতে গেলে আমার মনে হয় – খাবারের নস্টালজিয়া। সেটা সকলের ক্ষেত্রেই বোধহয় ব্যক্তিগত, আর কিছুটা সমষ্টিগত। খুব ক্লিশে হয়ে গেলেও, পাড়ার গলি দিয়ে হেঁটে গেলে রোববারের দুপুরে প্রেসার কুকারের তীব্র হুইসিলের সঙ্গে মাংসের উথাল পাথাল গন্ধ, শীতে নতুন গুড়ের পায়েস ইত্যাদি। কিন্তু এই অনুষঙ্গের সঙ্গে রান্নাঘরে কাটানো সময়ের অনুষঙ্গটা তেমন নেই। অর্থাৎ ওই বয়সে রান্নাঘরে হওয়া খাবারটাই আমাদের নস্টালজিয়া। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ছোট, বদ্ধ, স্যাঁতস্যাতে গরম রান্নাঘরের প্রতি তেমন কোনো আকর্ষণ থাকতো না, যদি না রান্নাঘরে খাওয়া দেওয়ার ব্যবস্থা থাকতো। যদিও বা বড় হবার সঙ্গে রান্নাঘরে সাহায্য করার দায়িত্ব এসে পড়ে, সেটা যত তাড়াতাড়ি সেরে বেরিয়ে আসা যায় ততটাই ভালো। সেটার একটা প্রধান কারণ বোধহয় গরম। আমাদের গ্রীষ্ম প্রধান দেশে বাড়ির মেয়েরা যারা রান্না করেন, তারা ছাড়া সে সময়ে কেউ রান্নাঘরে সময় কাটাতো না।

অন্য দিকে ইউরোপীয়ানরা যখন আমেরিকায় প্রথম আসে, তারা আসে আমেরিকার উত্তর-পূর্বাঞ্চলে, যা অত্যন্ত ঠান্ডা। তাদের প্রথম বাসস্থানে, বাড়ির প্রধান ঘরে খোলা উনুন অর্থাৎ হার্থে রান্না হতো এবং ওই একটাই ঘরে তাদের খাওয়া, বসা, রান্নার ব্যবস্থা ছিল। ওই হার্থের উত্তাপে প্রবল নিউ ইংল্যান্ডের শীতে ঘর উষ্ণ হতো। ম্যাসাচুসেটসের প্লিমথ প্লান্টেশনে গেলে এখনো সেই সময়কার মানুষদের ঘর বাড়ি জীবনযাত্রার অনুকরণ দেখা যায়। ইতিহাসের কোনো সময়কে অবিকল ধরে রাখায় পশ্চিমের জুড়ি মেলা ভার। তাই সেখানে বেড়াতে গেলে কাঠ দিয়ে বানানো ছোট্ট বাড়ির খোলা রান্নাঘরে, খোলা ‘হার্থে’ ওপরে টাঙানো কালো হয়ে যাওয়া একটি কেটলিতে জল গরম হতে থাকে, চেয়ারে বসে সেই সময়কার পিলগ্রিমদের পোশাক পরা মহিলা সতেরোশো শতাব্দীর কথা বলেন। ওই ঘরের চেয়ারে বসে আগুনের সামনে সন্ধ্যেবেলা খাওয়া, পরিবারের বিশ্রাম, গল্পগুজব, গৃহকর্তার বাইবেল পাঠ সবই চলতো। বাইরে তারা পশুপালন করতেন, গ্রীষ্মে চাষ করে সব্জি ফলাতেন। বুচারিং সিজনে পরিবার এবং প্রতিবেশীদের সাহায্যে মাংস কাটা এবং সম্বৎসরের জন্য সংরক্ষণ করতে হতো। প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য, ন্যান্সি কার্লাইল, একজন ইতিহাসবিদ, যিনি বহু বছর ধরে আমেরিকার রান্নাঘরের বিবর্তন নিয়ে গবেষণা করেছেন, তার একটি বক্তৃতা থেকে জানলাম, যে, আমেরিকার বেশ কিছু প্রদেশে এই দেশের কয়েকশো বছরের বিভিন্ন সময়কার রান্নাঘর মিউজিয়ামের মতো সংরক্ষিত আছে। যেমন ১৭১৩ সালে বানানো রান্নাঘর নিউবেরি শহর, ম্যাসাচুসেটস। যেখানে দেখা যায় প্রশস্ত রান্নাঘর, দামি বাসনপত্রের ক্যাবিনেট, আর রান্নার জন্য একটি বড় হার্থ।
যেমন যেমন ইউরোপীয়ানরা ছড়িয়ে পড়তে শুরু করে আমেরিকার দক্ষিণে, পশ্চিমে সময়ের সঙ্গে, জায়গার সঙ্গে, আবহাওয়ার সঙ্গে তাদের রান্নাঘরের ধরন আলাদা হতে শুরু করে। যেমন দক্ষিণের কটন প্লান্টেশনের মালিক বিত্তশালী মানুষদের রান্নাঘর অনেক সময়েই থাকতো বাড়ির বাইরে, আর রান্নাঘরে প্রধানত কাজ করতো দাসেরা। তবে দক্ষিণপ্রান্তে রান্নাঘরের এই ঐতিহাসিক সংরক্ষণ তুলনামূলকভাবে কম। ন্যান্সি কার্লাইলের মতে, গরম জায়গায়, উইয়ের উপদ্রবে সংরক্ষণ সম্ভব হয়নি আর আমেরিকার দক্ষিণে সিভিল ওয়ারের সঙ্গে পরিস্থিতির উত্থান পতন হয়েছে অনেক বেশি। ন্যান্সির বর্ণনায় পাই, মধ্য উনিশ শতকে, স্প্রিংফিল্ড ইলিনয়ে ডেভিড ডেভিস, একজন বিচারপতির বাড়ির কথা, যিনি ছিলেন আব্রাহাম লিঙ্কনের বন্ধু। ডেভিড ডেভিসের বৌ সারা ডেভিস রান্নাঘর সাজিয়েছিলেন স্টেট্ অফ দা আর্ট বিল্ট ইন স্টোভে, চায়না ক্যাবিনেট, ছোট খাবার টেবিল, যেটি দেওয়ালে সরিয়ে রাখা হতো। হার্থের পরে আসে আমেরিকার রান্নাঘরে বিল্ট ইন স্টোভ। বিশাল আকৃতির এই স্টোভ ফুয়েল এফিসিয়েন্ট, কম কাঠ লাগে, বাইরে থেকে দেখা যায় না, অনেক ক্ষেত্রে পাইপের সাহায্যে ধোঁয়া বাইরে পাঠানো হয়, উবু হয়ে বসে কাজ করতে হয় না। আমেরিকার রান্নাঘরে প্রথম টেকনোলজির আবির্ভাব।

ডেভিসদের বা অন্যান্য ধনীগৃহে ছিল প্রথম গরম জলের ব্যবস্থা, রান্নাঘরে আলোকিত জানলা, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা। ঠান্ডা আবহাওয়ার কারণে উত্তরে রান্নাঘর আলাদা করা না গেলেও খানিকটা আলাদা জায়গায় শুরু হয়। রান্নাঘর মহিলা এবং দাস-দাসীদের জায়গা। বাড়ির গৃহিণীদের এবং বাড়ির মেয়েদের রোজকার রান্নাঘরের কাজ করতে হতো, ব্যবস্থাপনা আর তদারকীর কাজ। দক্ষিণে যেহেতু দাসদাসীরা রান্নাঘর সামলাতেন, সেখানে সময় বা পরিশ্রম বাঁচানোর জন্য ইনোভেশন বা টেকনোলজি আসার দরকার হয়নি। বিংশ শতাব্দীর প্রথম দিকে মেইন্ রাজ্যে ওয়েস্ট ক্যাসেট নামের একটি জায়গায় সংরক্ষিত একটি বাড়ির রান্নাঘরে এই মেটাল স্টোভের সঙ্গে আর একটি আধুনিক জিনিস দেখা যায় যেটাকে পরবর্তী আধুনিক আমেরিকান রান্নাঘরের একটি পথিকৃৎ বলা যায়। সেটি হলো ‘হুজিয়র ক্যাবিনেট’। এখানে, ড্রয়ার, ক্যাবিনেট, কাউন্টার স্পেসের একটা সংমিশ্রণ ঘটানো হয়। অর্থাৎ নীচে থেকে বাসনপত্র বার করে, ওপরের তাক থেকে খাবারের উপাদান বার করে মাঝখানে কাউন্টার স্পেসে খাবারের প্রস্তুতি সম্পূর্ণ করা যেত। ক্যাথরিন ফ্রেডরিক্স নামের একজন মহিলার পরিকল্পনায় বানানো এই নতুন ওয়ার্কস্টেশন মেয়েদের বহু পরিশ্রম বাঁচিয়ে দিল। যা রান্নাঘরের টেকনোলজিতে এক গুরুত্বপূর্ণ মাইলস্টোন।
সময়ের সঙ্গে যদি খানিকটা এগিয়ে যাই, ব্যবহারযোগ্যতা, রান্নাঘরের সবচেয়ে প্রয়োজনীয় উপাদান হয়ে দাঁড়ালো। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর জার্মানিতে বড় শহরে এপার্টমেন্টে মানুষের বসবাস শুরু হয়, এবং সেখানে ছোট জায়গায় সুবিধাজনক রান্নাঘরের পরিকল্পনা করেন ফ্রাঙ্কফুর্টের একজন মহিলা স্থপতি। সেটা থেকে উদ্বুদ্ধ হয়ে ওয়াল্টার গ্রোপিয়াস নামের একজন স্থপতি ফ্রাঙ্কফুট কিচেনের থেকে একটু বড় মাত্রায় তৈরী করেন আজকের আমেরিকান রান্নাঘরের প্রথম সংস্করণ। এখন যে দেওয়ালের উপরে এবং নীচের একই উচ্চতায় বানানো ক্যাবিনেট, বিস্তৃত কাজ করার জায়গা অর্থাৎ কাউন্টার স্পেস, এবং এই জায়গার মধ্যে সিংক, স্টোভ সমস্ত কিছু পরিকল্পিত ভাবে ধরানো, যাতে কাজ করা সহজ হয়ে যায়, এই পুরো ব্যবস্থাটি শুরু হয় তখন। শুরু থেকেই এটি বেশ জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর আমেরিকান সৈন্যরা দেশে ফিরে আসার পর এবং মহিলারা কর্মক্ষেত্রে যোগদান করার পর, নতুন পরিবারদের জন্য বাসস্থানের একটা সাময়িক অভাব হয়। সেই সময়ে নিউ জার্সি, পেনসিলভেনিয়া, লং আইল্যান্ডে শুরু হয় লেভিট টাউন হাউস, যা উইলিয়াম লেভিট নামের ইঞ্জিনিয়ারের বানানো। এই বাড়িগুলিতে ইউ আকৃতির সুচিন্তিত ব্যবহারযোগ্য রান্নাঘর, একদিকে খোলা, যেখানে পরিবারের খাবার টেবিলের ব্যবস্থা – এই মডেলটি চালু হয়।

এর পরের দশকগুলোতে কিছু পরিবর্তন আসে। ১৯৭০ এ ক্যালিফোর্নিয়া এবং অন্যান্য জায়গায় কমিউনিটি কিচেন, সাধারণ ভাবে ফ্রিজ, ওভেন, পিছনের দেওয়ালে উজ্জ্বল রঙের ব্যবহার, ১৯৮০-র দশকের রান্নাঘরের অলংকরণ সুন্দর করে তোলা। ১৯৯০-এর দশক থেকে ধীরে ধীরে এখনকার রান্নাঘর এসেছে। এখন রান্নাঘরে রঙের ব্যবহার স্তিমিত, যন্ত্রপাতিগুলি বিদ্যুৎ সংরক্ষণ করে। এখনও রান্নাঘরে মেয়েরা অনেক বেশি সময় কাটালেও পুরুষরাও তুলনামূলক ভাবে কাজ বেশি করেন। তবে অবশ্যই আমেরিকার মতো এরকম একটি বড় দেশে, এতরকম অর্থর্নৈতিক অবস্থানে, শহরে, গ্রামে, শহরতলিতে এতরকমের দেশ থেকে আসা মানুষ-তাই রান্নাঘরের ছবি একটা রঙের পোঁচে কখনোই আঁকা সম্ভব নয়। অতীতেও সম্ভব ছিল না, বর্তমানেও নয়। রান্নাঘরে যারা রাঁধেন, সেই পরিবার, সেই সংস্কৃতি, তাদের নিজস্ব খাবার, আবার এখানে থাকতে থাকতে পরবর্তী প্রজন্মের পছন্দের খাবার, আবার তার মধ্যেই নিজেদের সস, নিজেদের মসলা, নিজেদের হার্ব মিশিয়ে নিজের জিভ আর হৃদয়কে আরাম দেওয়া এইভাবেই চলতে থাকে রান্নাঘর। তাকে জমতে থাকে নতুন কৌটো বোতল, ওভেনে ঢুকতে থাকে অপটু বা পটু হাতে বানানো ময়দা, চিনি, ক্রিমের মিশ্রণ, স্টোভে ওপরে বসা প্যানে ফুটতে থাকে চাল অথবা পাস্তা অথবা নুডল, কাটিং বোর্ডে কাটা হয় চেনা অচেনা সব্জী, মাংস। এক একটি পরিবার বা একসঙ্গে থাকা মানুষ শুরু করে তাদের নতুন গল্প ।

তথ্যসূত্র:
- https://www.youtube.com/watch?v=z9Ng8FlBYmU&ab_channel=AshlandPublicLibraryMA
- Brent Hull. (2021, November 6).The AWESOME History of Kitchens- Historic Kitchens revealed. [Video]. YouTube. https://www.youtube.com/watch?v=vnATqshLDes
- Ashland Public Library MA. (2022, April 28). The History of America’s Kitchens with Historic New England [Video]. YouTube.https://www.youtube.com/watch?v=z9Ng8FlBYmU
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন