poem-bhikkhuni

ভিক্ষুণী 

বেবী সাউ 

 

জলের প্রচণ্ড শব্দ 

পাতাদের জন্ম এবং মরণ 

জন্ম ছোট ছোট মাছ, কীটপতঙ্গ, ফড়িং

 

চাতুর্মাস্য যোগ, বর্ষাবাস

 

পরিব্রাজকেরা মৌন, গম্ভীর, গভীর…

বৃষ্টির সময় এই স্থির, ধ্যানস্থ

ছাত্রদের অনধ্যায়, ঘরে ফিরে গেছে তারা

এসময়ই সঠিক আসলে গবেষণাকার্য সব শেষ করে ফেলা

লিখে রাখা আরও কিছু সাধন পদ্ধতি 

 

এমনই জানো,

এই ক্ষণভঙ্গুর সংসারের পরে

যেমন ভোরের সে নক্ষত্র 

নদীর তীরের কাছে বসে থাকা ছোট্ট বুলবুলি

চাতক চাতকী, ব্যাঙ্গমা শাবক আর

বৃষ্টি চেয়ে চেয়ে চমকে যাওয়া বিদ্যুতের চকিত চাহিনি

আর একটি প্রদীপ, নম্র, শান্ত শিখা নিয়ে 

ভুলে যেতে বসেছে সে আজ 

শত শত বছরের পুরনো হিসাব 

 

দূর থেকে ভেসে আসা ময়ূরের ডাক; ময়ূরীরা ইন্দ্রিয়বিলাসী 

ব্যাঙেদের ডাক শুনে বোঝা যায় আজ তার বিয়ে

সমতলভূমি জুড়ে কৃষিকাজ, প্রশিক্ষণ 

রোপিত বীজের মধ্য থেকে জেগে ওঠে সরু ধানগাছ 

 

সাপেদের হেঁটে যাওয়া অতি ধীরে পদে

কেননা, সময় হয়েছে এবার জন্মের

শত শত পুত্র কন্যাদের নিয়ে সাপমাতা

ময়ূরের কাছ থেকে,  

নেউল, বেজির চোখ থেকে 

বাঁচাতে চেয়েছে শুধু উত্তরাধিকারী 

তোমার অহিংসার পথে গিয়ে, হে বুদ্ধ!

 

তারপর ধীরে ধীরে বিয়োনের সময়ের কাছে 

নত হয়ে বারবার স্মরণ করেছে তোমাকে— 

“হে বুদ্ধ, মহান বুদ্ধ

এই নবজন্ম, এই দুনিয়ায় প্রচলিত ধারা ও নিয়ম 

তুমিই গড়েছ প্রভু

এত কষ্ট করে তোমার সৃষ্টিকে সাকার করেছে যে মাতৃরূপ

সেই মাতৃরূপে তুমি করুণার ধারা 

অহিংসার মন্ত্রবীজ 

সত্য সাধনার স্থৈর্য, ধৈর্য এবং দয়ার মূর্তি করে 

আমাকে দিয়েছ মাতৃসুখ… আর কিছু চাই না তো 

এই সফলতা, এই আনন্দঘন মুহূর্ত 

তুমি শুধু দেখে শুনে রেখো প্রভু!” 

 

খানা খন্দ ভরে ওঠে জলে 

আলপথে খেলা করে ময়ালের ছানা 

কচি কচি লতা পাতা ফুল ফল 

সাধারণ উপত্যকা জুড়ে স্বর্গীয় আবেশ আনে জাতককাহিনি 

 

মুদিত বুদ্ধের চোখ, মুখে স্মিত হাসি 

নীরব হয়েও যেন অন্তহীন কথা পারদর্শী 

গভীর চোখের দৃষ্টি— দৃশ্য থেকে দৃশ্যান্তর তুলে রাখে 

গোপন থাকে না কিছু

 

কোনও ফাঁকি নেই 

কোনও ভয় নেই

অভয়মুদ্রার দিকে চেয়ে থাকা বিষহীন ময়াল গৃহিণী 

প্রফুল্লতা সঙ্গে নিয়ে শিশু-ছানাদের বেড়ে ওঠা দেখে

দেখে, বুদ্ধের আশ্রয়ে এলে সব কিছু শান্ত এবং সুন্দর 

সবকিছু নির্মল, নির্মাণ, অহিংসা আর অষ্টাঙ্গিক মার্গ

 

যা ঘটে, যা ঘটে যেতে পারে

কিংবা অঘটনের দায়টুকু সবই তো তাঁরই

 

বুদ্ধ, মহান বুদ্ধ…

 

সেদিনও সূর্য ছিল পুবের আকাশে

সেদিনও ঋতুচক্রে ছিল না কোথাও ভুল কোনও 

আলপথে লকলকে ঘাসেদের মাঝে 

খেলে বেড়ানো শিশুর দল 

ফড়িং এবং ছোট ছোট পোকাদের পেছনে পড়েছে…

 

খিল খিল হাসি নিয়ে ময়ালগৃহিনী

বুদ্ধ তোমাকেই স্মরণ করেছে একমনে…নিশ্চিত, নিরুদ্বেগ 

 

পার্বত্য প্রদেশে এই 

পাহাড়ের খাঁজে খাঁজে সৌন্দর্য ছড়ায়

বুদ্ধের প্রদেশ এই 

শান্ত, সহজ, নির্মল…

কোনও ভয় নেই, ভয়ের বাহুল্য নেই— 

 

হঠাতই অধিক সৌন্দর্য নিয়ে 

ডানা আর পাখাদের মাঝে রং 

বিরাট বিশাল সুন্দরের সংজ্ঞা ভেবে 

বৈশিষ্ট্য নিপুণ সেই জাতীয় পাখির দল

ঝাঁকে ঝাঁকে উড়ে আসে পার্বত্য প্রদেশে 

 

বহু বহু প্রদেশের পথ ভেঙে 

এসেছে বর্ষার অবকাশে বুদ্ধের সামনে তারা

প্রার্থনায় ভরে ওঠে উপাসনা ঘর

প্রদীপের শিখা গাঢ় হয়

বুদ্ধের মুখের হাসি প্রসারিত আরও…

 

মুদিত চোখের দৃষ্টিও গভীর শান্ত, সৌন্দর্যমণ্ডিত 

বহু বহু দিন পরে এমন আনন্দঘন পরিবেশ আজ 

উপাসনা ঘর পরিপূর্ণ 

প্রদীপের আলো অধিক উজ্জ্বল 

 

একধারে চুপচাপ ময়ালগৃহিণী সেই

মৃত শোক, স্থির,  চলচ্ছক্তিহীন 

সন্তানের স্মরণ এবং মরণ নিয়ে

একা…একা…একা…

 

তুমি, তথাগত! নীরব, নির্বাক 

মুদিত নয়ন 

 

ক্ষমাই ঈশ্বর  

ঈশ্বরই আসলে ক্ষমা

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *