micro-story-chirkut

চিরকুট
পায়েল চট্ট্যোপাধ্যায়

– “মোমো অর্ডার করব? ভেজ করি বা চিকেন?”

– “দু’প্লেট চিকেন চিজ মোমো। চিজ অলওয়েজ গুড ফ্যাট। চিজ, চিকেন দিয়েই অর্ডার করো। এই সময় তোমার এগুলো খেতে ভালো লাগবে। জাস্ট ট্রাই করে দেখো।”

– “সোহম, আমার তো ননভেজ দেখলেই বমি পাচ্ছে। আর চিজ আমি পছন্দ করি না। চিকেন ট্রাই করতে পারি। কিন্তু চিজ যদি খেতে না পারি?”

– “কিচ্ছু হবে না পিয়া, আজ দুপুরে তো ডিম খেলে। অসুবিধা হয়নি তো।”

– “তাও, চিজের ব্যাপারে শিওর হতে পারছি না।”

– “ডোন্ট ওরি ডিয়ার, ঠিক খেতে পারবে, অর্ডার করো।”

 সবে তিন মাস। প্রথমে ইউরিন টেস্ট। কদিন আগে আল্ট্রাসাউন্ডেও প্রাণের অস্তিত্ব ধরা পড়েছে। খাবারে রুচি নেই পিয়ার। মাছ-মাংসের নাম শুনলেই বমি পাচ্ছে। বর্ষার বিকেলে মোমো খেতে ইচ্ছে করছিল। সোহম এই তিন মাস কিছুতেই না বলছে না। নইলে না শব্দটা অসময়ে আসা বলিরেখার মতো ওর চোখে-মুখে লেগে থাকে। পিয়ার মন এখন মেঘলা। আনন্দের পাখি হঠাৎ করে আসে-যায়।

সোহম এতটা যত্নবান নয়। বরং যে যার মত ভাল থাকি, এটাই ওর মত। সম্পর্কের মাঝে আলো-বাতাস খেলে বেড়াবে, পিয়ারও মন্দ লাগে না। তাই ইদানিং ওর আঁটো-সাঁটো যত্ন দমবন্ধকর লাগছে মাঝেমাঝে। পিয়া এমনিতে সম্পর্কে জড়াজড়ি করে থাকতেই ভালোবাসে। শুরু থেকে সোহমই অন্যরকম। পিয়া মফঃস্বলে বড় হওয়া মেয়ে। কলকাতার আকাশছোঁয়া অথচ আকাশবিহীন বাড়ি আর মানুষগুলোর মাঝে ছটফট করে ওঠে। অন্তঃসত্ত্বা হওয়ার পর অনুভূতির বেড়াজালটা আরো কঠিন হয়ে গেছে।

– “ম্যাডাম আপনাদের মোমো অর্ডার ছিল! লোকেশনে পৌঁছে গেছি। লিফটে উঠছি। ফ্ল্যাট নম্বর ২১ তো। একটু দরজাটা খুলে রাখবেন।”

ফোনের শব্দে চিন্তার জাল ছিঁড়ে যায় পিয়ার। গলার স্বরটা বড্ড চেনা। ওদের ফ্ল্যাট দ্বিতীয় তলায়। লিফ্টে করে এলে এতক্ষণ সময় লাগার কথা নয়। এটুকু সময় এমন অনন্ত প্রতীক্ষার মত কেন মনে হচ্ছে ওর! অবিকল কলেজের সেই কবিতা বলা কণ্ঠস্বর! সে ডেলিভারি বয়! কেমন করে হয়!

 মোহমুগ্ধ পিয়া। কলেজ সোশ্যালগুলোতে প্রথম সারিতে বসার জন্য ছটফট করত পিয়া। কলিংবেল বাজছে ফ্ল্যাটের। হেলমেটে ঢাকা মুখ। হাতে মোমোর প্যাকেট। “এই যে আপনার অর্ডার, পেমেন্ট তো অলরেডি ডান।”

পিয়া স্থাণু। তাড়াতাড়ি করে অর্ডার সামারিতে নামটা দেখে নেয়। স্বর্ণেন্দু। এই নাম তো ছিল না। কিন্তু অবিকল একই কন্ঠস্বর। কলেজের সিনিয়র ছিল। এক্সকরশন, পিকনিক, ক্যান্টিন। স্মৃতিরা হিমশীতল স্রোতের মতো আঁকড়ে ধরেছে পিয়াকে। মুগ্ধতা শুধুই পিয়ার দিক থেকে ছিল। তাও অভিব্যক্তিবিহীন।

– “ম্যাডাম আপনার অর্ডারটা নিয়ে নিন, আমায় এখনিই অন্য আরেকটা অর্ডার দিতে যেতে হবে।”

চোখে মোটা কালো ফ্রেমের চশমা। এটা পেরিয়ে চোখ দুটো চেনার চেষ্টা করে পিয়া। দশ বছর আগের সময়টা কুয়াশা। নাম দুটো আলাদা কেন? ছেলেটা প্যাকেটটা হাতে ধরিয়ে দিয়েছে। একটা প্যাকেটে দু’বাক্স মোমো। বিল হাতে নিয়ে দেখে, একটা চিকেন চিজ মোমো, অন্যটা শুধু মোমো। সঙ্গে চিরকুট “চিজ তুমি কখনোই পছন্দ করতে না, অর্ডার সামারিতে তোমার ছবিটা দেখাচ্ছিল। আমি অর্ডারটা পাল্টে দিয়েছি। অসুবিধাটুকু সামলে নেব।” ফোনটা হাতে নিয়ে ডেলিভারি বয়ের নম্বরটা খুঁজে বের করার চেষ্টা করে পিয়া। একটা সিস্টেম জেনারেটেড নম্বর দেখতে পায়। কুয়াশার মত। নিষ্ফলা ডায়াল করে কয়েকবার। হুল ফোটানো একটা শব্দ করে ফোনলাইনটা কেটে যায়।

 

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *