বহুগামী
দেবব্রত দাশ
রেশমির বয়েস যখন ছয়, আমার তখন আট । উত্তর কলকাতার বনেদিপাড়া শোভাবাজারে পাশাপাশি দুই বাড়িতে থাকতাম আমরা ৷ ওই বয়েসে শিশুসুলভ উচ্ছ্বাসে খেলতে খেলতে খেলার মাঝে জড়িয়ে ধরে একে অপরকে চুমু দিয়েছিলাম ঠোঁটে ঠোঁট মিলিয়ে কত কত বার…! তারপর কৈশোর, কৈশোর পেরিয়ে অশান্ত যৌবন…গঙ্গা দিয়ে বয়ে গেছে অনেক অনেক জল…এখন আমি আটচল্লিশ আর রেশমি ছেচল্লিশ । বাইশ বছরের বিবাহিত জীবন আমাদের । সুখেদুখে অনেকটা সময় পার হয়ে এসেছি, বিচ্যুতি ঘটেছে আমার বারবার… বহু নারী এসেছে জীবনে, একের পর এক সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছি অবলীলায় । রেশমি কিন্তু একনিষ্ঠ… একনিষ্ঠ আমাতে… ধ্যানজ্ঞানপ্রাণ আমি ওর কাছে । মুখ তুলে তাকাতে পারি না তাই রেশমির চোখের দিকে, মাথা ঝুঁকে আসে আপনা আপনি… ও তো সব জানে কীর্তিকলাপ আমার । আমি জানি, ভাগ্য করে এমন বউ পেয়েছি । সতীসাধ্বী বউ !কিন্তু গতকাল রাত্তিরে মিলন-শেষে রেশমি আমায় বলল, “বহুদিন ধরে বলব বলব করেও বলতে পারিনি তোমায় ঋজু , আজ বলবই ।”“কী কথা ?” আমি কৌতূহলী হয়ে বিছানায় উঠে বসি তক্ষুনি । রেশমিও বসে । বেড-ল্যাম্পের মায়াবী নীল আলোয় মুখোমুখি আমরা দু’জনে।“আশ্চর্য ! বলবেই বলেও চুপ করে আছ কেন তুমি রেশমি !”“শেষ দ্বিধাদ্বন্দ্বটুকু কাটিয়ে উঠে স্বচ্ছ হওয়ার চেষ্টা করছি এবং হ্যাঁ — সফলও হয়েছি এইমাত্র… তাহলে বলি শোনো — তুমি আমাকে এতকাল ধরে জেনে এসেছ যে, তুমি ছাড়া কেউ নেই আমার জীবনে…আমি একনিষ্ঠ । কিন্তু সত্যিটা হল — আমি তা নই ।““মানে !”“মানেটা তো কঠিন কিছু নয় ! আমিও তোমার মতোই বিচ্যুত ঋজু…”“কী বলছ তুমি রেশমি ? ভাবতেই পারছি না আমি !”“একেবারে সত্যিকথা বলছি ঋজু…চরম সত্যি । প্রতিবারের মিলনমাঝে আমি তোমার মুখমণ্ডলে বসিয়ে নিই আমার পছন্দের…আমার কামনার এক এক জন পুরুষকে । তাই, তোমার মতোই আমিও আসলে — বহুগামী ।”
সাধারণ প্লট । অসাধারণ উপস্থাপন ।