— এই ভুচান মইটা এদিকে নিয়ে আয়, প্রচুর কাজ বাকি, আজ সন্ধ্যার মধ্যে সব লাইটিং সেরে ফেলতে হবে,কালই তো অতনুদার বিয়ে।
অতনু আর সুজাতার বিয়ে হয়ে গেলো, অষ্টমঙ্গলার পর নববধূ আর অতনু মিলে বিয়ের সমস্ত উপহার গুছিয়ে ওদের ছোট্ট দু’কামরার ফ্ল্যাটের বাংকে তুলে দিতে লাগলো, মইটার নীচে সুজাতা আর ওপরে অতনু।
— যাই বলো,সু,ভাগ্যিস মা মনে করে মইটা কিনিয়েছিলো কত কাজে দিলো বলো তো!
— তা আর বলতে? এই মইটা খুবই কাজের,যত্ন করে রাখতে হবে।
বছর দু’য়েক পরে।
সুজাতা ওর ছোট্ট তিনমাসের ছেলেকে বাপের বাড়ি থেকে অতনুর কাছে ফ্ল্যাটে ফিরেছে।
— ইস্ ফ্ল্যাটটার কি হাল করেছ? আমি ছয়মাস ছিলাম না তাতেই এই অবস্থা! মইটার একটা পাদানি কি করে ভাঙলো? এটাকে সারাতে হবে তো!
—উফ্ সু, প্লিজ এত ব্যস্ত হয়ো না, সব হবে,আগে বাবুকে নিয়ে একটু সুস্থ মতো বসো।
সেদিন সকাল থেকে খুব বৃষ্টি হচ্ছে, সুজাতা বাবুর জামাকাপড় বারান্দায় শুকোতে দিতে পারছে না, হঠাৎই ওর মইটার কথা মনে পড়লো, মইয়ের পাদানিগুলোয় ও জামাগুলো শুকোনোর জন্য মেলে দিলো।
বাবু এখন প্রায় নয় মাসের হঠাৎ একদিন অতনু সুজাতাকে রান্না ঘর থেকে ডেকে নিয়ে এল, সুজাতা দেখলো বাবু ওই মইটাকে ধরে দাঁড়িয়ে। সুজাতা আর অতনু খুব খুশী হলো সেদিন।
বাবুর এখন ক্লাস নাইন, সুজাতার চুলে রুপালী রেখা, অতনুর চেহারা বেশ ভারিক্কি হয়েছে।
— মা, প্লিজ, স্যারকে অনেক কষ্টে বাড়িতে পড়াতে আসতে রাজী করিয়েছি, সাথে ডিম্পি, রোহনরাও আসবে ওই মইটা ডাইনিং এ কিছুতেই রাখা যাবে না। কি বিশ্রি দেখাচ্ছে ।
— বাবু, ওটা আমার বিয়ের সময়ের, অনেক স্মৃতি আছে ওটা নিয়ে, তোর বাবার অফিসের সবাই আসেন, আমাদের সব আত্মীয়রা আসে, কই তাদের তো কোনোও দিনই বলতে শুনিনি?
— মা, প্লিজ ফর গড সেক্ মইটা বারান্দায় রাখছি।
বাবু মইটা তুলে বারান্দায় নিয়ে গেলো,কেউ লক্ষ্য করলো না, মইয়ের বেশ কয়েকটা পাদানি নড়বড়ে হয়ে গেছে।
এরপর মইটা বারান্দার এককোণে পড়ে রইলো। কখনও চৈত্রের কাঠফাটা রোদ আবার কখনও শ্রাবণের অবিরত ধারায় ভিজে যেতে লাগলো। সময়ের ধূলোয় পুরোনো হতে থাকলো মইটা।
রিটায়ারমেন্টের পর অতনু বাড়িতেই বেশী থাকতো, শরীরটাও কদিন ভালো যাচ্ছিলো না, সুজাতার বাতের ব্যথা, সুগার, প্রেশার, বাবুর নতুন চাকরী গার্হস্থ্যের নৈমিত্তিক টানাপোড়েনে মইটা কখন যেন অপাংক্তেয় হয়ে গেলো।
অতনু চলে যাওয়ার পর সুজাতা এখন বেশীরভাগ সময় দক্ষিণের এই বারান্দাতেই কাটায়, বাবুর নতুন বৌ এখন সংসারের কর্ত্রী, মাঘমাসের শীতে আজ রোদের তাপ বেশ কম, হঠাৎই সুজাতার নজর পড়লো ভাঙা মইটার দিকে, গুরুত্বহীন হয়ে বারান্দার এককোণে জীর্ণ অবস্থায় পড়ে রয়েছে, মইটাকে দেখে সুজাতার নিজের কথা মনে হচ্ছিল, সংসার বুঝি এমনই হয়, একসময় সবাই নিজের গুরুত্ব হারায়।
শীতের হিমেল হাওয়ায় সুজাতার সাদা অবিন্যস্ত চুলগুলো উড়তে লাগলো, মইটার চারপাশের ঝুলগুলো নড়তে লাগলো, নিজের অজান্তেই সুজাতার চোখ থেকে একফোঁটা জল গড়িয়ে পড়ল।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে এখানে ক্লিক করুন
Nice story ,khub mon ta var hoye gelo, jiboner ses e r situation tule dhorle,lekhika, carry on
অনেক ধন্যবাদ।ভালো থাকবেন।☺@Sanjoy babu
অনুভা, আপনার অণুগল্প “সমান্তরাল” আগেই পড়েছিলাম। আবারও পড়লাম। এককথায়, ভালো গল্প! একটা বার্তা দিয়েছেন সুন্দর! সংবেদনশীল পাঠকের মন ছুঁয়ে যাবেই!
তবে, এমন অণুগল্প আমি এই প্রথম পড়লাম, যার বিস্তৃতি বহু বছর। সাধারণত, খুব অল্প সময়ের পরিমণ্ডলে অণুগল্প লেখা হয়ে থাকে। কিন্তু, আপনি প্রথার বাইরে গিয়ে লিখেছেন বলে ঠিক হয়নি — বলছি না আমি। শুধু উল্লেখ করলাম বিষয়টি। ধন্যবাদ এবং আন্তরিক শুভেচ্ছা।
অনেক ধন্যবাদ দাদা,গল্পের গঠনমূলক আলোচনার অবশ্যই প্রয়োজন আছে।
শুভেচ্ছা নেবেন।☺