ঘন্টা দেড়েক পরেই পাহাড়ের গায়ে এক দোকানে থামল গাড়ি। গাড়িতে পানি ভরে নেয়া আর যাদের গায়ে গরম কাপড় ছিল না, তারা এখানে এসেই গরম কাপড় গায়ে চাপিয়ে, এক প্লেট মোমো আর চা খেয়ে বিরতিটুকু উপভোগ করে নেয়। আগে এখানে কেবল একটাই দোকান ছিল, সেই ২০১২ সালের দিকে। এখন পাশাপাশি তিনটে। একটা দোকানে বসে ডাল্লে মরিচের সসে ডুবিয়ে আমি আর আমার বউ যখন গরম মোমো আর চা খাচ্ছি, তখন আমার মেয়ে দোকানে তারই সমবয়সী একজনের সঙ্গে বন্ধুত্বও করে ফেলল। দু’জনের কেউই কারও ভাষা না বুঝলেও কিভাবে যেন এক বাঁধনে বাচ্চারা নিজেদের এক জগত তৈরি করে নিয়েছে। পরে জানা গেল, বৃদ্ধা দোকানির নাতনি সে, নাম সুরভী ছেত্রী। আমার বউয়ের পোষাকি নাম আবার সুরভী। ছোট্ট সুরভীকে চকোলেট গিফট করে আবার যখন যাত্রা শুরু হল- তখন কেবলই পাহাড় বেয়ে উঠছি। আমার কাছে এই পথ বা দৃশ্য কোনওটাই নতুন নয়। তবে অপ্তি আর তার মায়ের কাছে নতুন। তাই তাদের বিস্ময়ে বাদ সাধলাম না। যেদিক থেকে সবচে ভাল দেখা যায় পাহাড় আর উপত্যকা, সেদিকেই বসতে দিলাম তাদের। পাহাড়ে সূর্যের ডুবে যাওয়া থেকে দেখতে ভাল আর কি আছে?
দার্জিলিংয়ে হোটেল করা ছিল টুং সুং রোডে, শেরপা বুদ্ধিস্ট এসোসিয়েশনের লাগোয়া নতুন এক হোটেলে -হোটেলের নামও শেরপা। আমাদের রুমের পরেই সামনে আর কোনও কিছু নেই। আদিগন্ত কেবল পাহাড়, উপত্যকা আর মেঘ।জামা কাপড় বদলে পাড়া বেড়াতে বেরোলাম- ম্যালে। এখানেও উৎসবের আমেজ। পরদিন যে বড়দিন। আমাদের দার্জিলিং আসার কারণও ঐ এক। বড়দিনের দার্জিলিংয়ের যেসব উৎসবের লেখা পড়েছি সাহেব-সুবোদের লেখায় সেটা দেখা, আর আমার মেয়েকে ‘সান্তা-ক্রিসমাস ট্রি’ দেখানো। জানা গেল আমাদের এক বন্ধু তার অফিস কলিগের সঙ্গে দার্জিলিংয়ে আছে। ফোন দেয়া হল ম্যালের বিখ্যাত অক্সফোর্ড বুক শপে আসার জন্য। পছন্দসই একটা বই জুটে গেল- পরিমল ভট্টাচার্যের No Path in Darjeeling is Straight। ভদ্রলোকের লেখার ভীষণ ভক্ত আমি, বিশেষ করে তাঁর আরেকটি বই Bells of Shangri-La: Scholars, Spies, Invaders in Tibet পড়ার পর থেকে। তাই এবারে দার্জিলিং ট্রিপের আগে ভদ্রলোকের সঙ্গে কথাও বলে নিয়েছিলাম ফেসবুকে। অপ্তিও পেয়ে গেল তার প্রিয় পেপা পিগের সফট টয়- যেটা পুরো ট্রিপে তার কোলছাড়া হয়নি।
বন্ধুরা এলে সবাই মিলে সবার প্রথমে গেলাম কফি খেতে- গ্ল্যানারিজে। ভিড় হট্টগোলের মাঝেও জায়গা মিলে গেল বারান্দায়। অনেকেই ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসা করতে পারেন, চায়ের দেশে গিয়ে কফি? আসলে, চা ব্যাপারটা আমার বউয়ের প্রিয়, আর আমার কফি। আর অপ্তির জন্য নেয়া হল ব্লুবেরি চিজ কেক। বেশ খানিক পর উঠে খোঁজ হল রাতের খাবারের। কুঙ্গায় গিয়ে খাওয়ার ইচ্ছে থাকলেও বন্ধুদের খিদেটা নিখাদ ভাতের। তাই কাছেপিঠে মহাকালে গেলাম। আট বছর আগে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের ধারের এই রেস্টোর্যান্ট ছিল বেশ ছোট-খাট। এখন কালের ব্যবধানে সেটার উপর রাত কাটানোর হোটেলও হয়েছে। তবে ভীড় আর সেখান থেকে ভেসে আসা চিৎকার শুনে মনে হল- বেশি ভীড় সামাল দেয়া এখনও এদের অভ্যেসে আসেনি।
ভাতের চিকেন থালি, ফ্রায়েড চিকেন মোমো আর চিকেন থুকপা অর্ডার করা হল। যথারীতি হতাশ হতে হল-চিকেন থালির চিকেন আধা সেদ্ধ, চিকেন থুকপায় চিকেন নেই। যাহোক, কোনও রকমে খেয়ে ফেরার সময় ঘড়ির দিকে চেয়ে দেখি- রাত প্রায় সাড়ে দশটা। হোটেলে ফেরার পথে গ্লেনারি’জ-এর পাব ‘বাজ’ থেকে ভেসে আসা গানের তালে অপ্তি খানিক নেচেও নিল।
অপ্তির জন্য ক্রিসমাস কেক নেয়া হল ম্যালের আরা থেকে।আর উডেন আভেনে বেক করা ডোনাট নেয়া হল ড.জাকির হোসেন রোডের এক ছোট্ট বেকারি থেকে। গ্লেনারিজ, ক্যাভেন্টার্স থেকে শুরু করে ছোট বড় সব বেকারিতেই চলছিল ক্রিসমাস কেকের রাজত্ব। রেগুলার প্লাম অ্যান্ড নাট ক্রিসমাস কেক যেমন আছে, তেমনি আছে আরার স্পেশাল ক্রিসমাস কেক, কাস্টার্ড সসে ভেজানো।
ভোরে ঘুম যখন ভাঙা চোখে জানালা দিয়ে তাকালাম,আকাশে তখন মাত্র আলো ধরতে শুরু করেছে। ধীরে ধীরে ভোর হল। পাহাড়ের ওপার থেকে সূয্যি মামা এলো। কাঞ্চনজঙ্ঘার দেখা নেই! পরে সকাল নয়টায় গেলাম সেইন্ট অ্যান্ড্রু’জ চার্চে। সেখান থেকে জিমখানা হয়ে বজ্র লামার বৌদ্ধ মন্দির আর মহাকাল মন্দিরে একটু ঘুরে সোজা পেট পূজোয় ক্যাভেন্টার্সে।
বলা হয় কেভেন্টার্স হল আস্ত এক অভিজ্ঞতা। সত্যজিৎ রায়ের লেখায়, বিশেষত দার্জিলিং নিয়ে লেখায় এই রেস্টোর্যান্টের নাম এসেছে বারবার। কাঞ্চনজঙ্ঘা সিনেমার শুটিংও হয়েছে এই কেভেন্টার্সের রুফটপে। শতবর্ষী এই খাবারের রেস্টোর্যান্টে বসতে হলে লাইনে দাঁড়াতে হয়। নিচতলায় বেকারি, চা আর খুচরো চকোলেট-চিপসের পসরা। দোতলায় ওঠার চিকন সিড়ি একদম প্রান্তে। সেখানে লাইন ধরে দাঁড়িয়ে প্রায় পৌনে এক ঘন্টা পর মিলল বসার জায়গা। এককালে এখানে সাহেব-সুবোরা খেতে আসতেন,এখন নেটিভ আমাদেরই জয়জয়কার। মালিকানার হাত বদলও অবশ্য হয়েছে- সাহেবদের কাছ থেকে ভারতীয়দের কাছে।
নিচে দেখা হয়ে গেল রাহুল ঝায়ের সঙ্গে। তিনিই এখন কেভেন্টার্সের হর্তা-কর্তা। তার সঙ্গে কথা বলেই জানা গেল এখানকার মাস্ট ট্রাই আইটেম হল মিট প্ল্যাটার। প্রায় পাঁচ’শ গ্রাম মিট- পর্ক বা চিকেন দু’টো অপশন। আর যদি এটা বাড়াবাড়ি মনে হয়, তবে বেকন বার্গার বা চিকেন সালামি বার্গার। উপরে উঠেই তাই অর্ডার হল চিকেন মিট প্ল্যাটার, একটা চিকেন সালামি বার্গার, ফ্রেঞ্চ ফ্রাই, চা আর তোপসের প্রিয় হট চকোলেট।
কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখতে দেখতে সকালের খাবার (যদিও ব্রাঞ্চই হয়ে গেছে বেলা ১১ টায়) খাওয়ার একটা অদ্ভুত প্রশান্তি আছে। মিট প্ল্যাটার এলো- বারো টুকরো সসেজ, ছয় টুকরো করে মোট বারো টুকরো চিকেন সালামি আর চিকেন বেকন। দু’টো ডিম পোচ-সূর্যমুখী অর্থাৎ সানি সাইড আপ। ডাল্লে মরিচের সস, টম্যাটো কেচাপ আর কাসুন্দি দিয়ে পেটে পড়তে থাকল আমাদের। এরপর বার্গার। বান মাঝখান দিয়ে কেটে আগুনে ঝলসে নেয়া হয়েছে। ফ্রেশ মেয়ো আর চার টুকরো সালামি দিয়ে অসাধারণ স্বাদের এই বার্গার। সিম্পল, বেসিক, কিন্তু স্বাদে অসাধারণ। ফাস্ট ফ্লাশ চায়ে চুমুক দিতে দিতে অপ্তির মা ব্যস্ত হয়ে পড়ল ঢাকায় ভিডিও কল দিতে। সবাইকে এক ঝলক কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখাতে হবে যে! আমি আর আমার কন্যা ব্যস্ত আলু ভাজা আর চকোলেট খেতে। এখানকার হট চকোলেট একটু ভিন্ন। ফুল ক্রিম দুধে চকোলেট সস আর চকোলেট দু’টোই দেয়।
এরপর সারাদিন গেল দার্জিলিং শহর ঘুরতে ঘুরতে। ভারি ব্রাঞ্চের কল্যাণে আর দুপুরের খাওয়া হয়নি। একবারে সন্ধ্যেয় ফেরত এসে ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের এক ছোট্ট দোকানে বসে খেলাম থুকপা। মাঝে আট বছর কেটে গেছে, দোকানটা আগের মতই আছে, থুকপার স্বাদও বদলায়নি বিন্দুমাত্র। প্রথমবার দার্জিলিং আসার সুখস্মৃতি ফিরিয়ে দিল ড্যাফি মুনাল রেস্টোর্যান্ট। রাতে আর কোথাও যাওয়া হয়নি। হোটেলের রুম সার্ভিস থেকে চাপাতি আর ডাল খেয়ে রাত কাবার হয়ে গেল। দার্জিলিং শহর ঘোরা বলতে লোকে যেখানে যেখানে ঘোরে আরকি- তবে ফেরার পথে যখন সন্ধ্যে।
এই ফেরার পথেই আভা আর্ট গ্যালারির পেছনের এলাকায় ক্ষণিকের যাত্রা বিরতি দিলাম। গাড়ি পার্ক করা সেখানে উটকো ঝামেলা। অনেক অনুরোধ করে এক হোটেলের গ্যারেজে গাড়ি রেখে ছুটলাম লাসা ভিলার খোঁজে। এই লাসা ভিলার সন্ধান নিতেই শরণ নিয়েছিলাম পরিমল ভট্টাচার্যের। তিনিই জানিয়েছিলেন কিভাবে যাওয়া যায় সেখানে। গাড়িতে বউ বাচ্চা রেখে সন্ধ্যার মিটমিটে আলোয় ছুটলাম লাসা ভিলার খোঁজে। যাকেই জিজ্ঞাসা করি- বলে এই এলাকার নামই লাসা ভিলা। পুরোন সাহেবি ধাঁচের বাংলো বলেও যখন কাউকে চেনানো যাচ্ছে না, তখন এক বয়স্ক লোক এসে জানালেন নিচের ঐ বাড়িটাই লাসা ভিলা। অনেক কাল আগে নাকি এক বাঙালি বাবু সেখানে থাকতেন। বুঝে নিলাম সেটাই শরৎ চন্দ্র দাসের আবাস ছিল।
শরৎ চন্দ্র দাস আসলে কে? আসলে প্রথমে তিনি ছিলেন তিব্বতে বৃটিশ গুপ্তচর, পরবর্তীতে হয়ে ওঠেন ভারতের অন্যতম তিব্বত বিশেষজ্ঞ। তাঁর লেখা তিব্বতি থেকে ইংরেজি অভিধান এখনও ব্যবহৃত হয়। শেষ জীবনে তিনি একা একা কাঞ্চনজঙ্ঘা দেখে কাটিয়েছেন এখানে। ভাবতে অবাক লাগে- শৈশবের চট্টগ্রামের সবুজ পাহাড় ছেড়ে সাদা বরফ চূড়ার মায়ায় কিভাবে যে জড়িয়ে গেলেন তিনি?
যা হোক, সেখানে যাওয়ার উপায় জানতে চাইলেই তিনি জানালেন এখান থেকে আরো মিনিট দশেক নিচে নামতে হবে। বরং এখান থেকেই ছবি তুলে চলে যাওয়াটাই ভাল হবে বলে তিনি মত দিলেন। ওদিকে আবার গাড়িতে বউ-মেয়েকে ফেলে এসেছি। নিচে নেমে অন্ধকারে যখন কিছু দেখাই যাবে না, তখন আর নিচে গিয়ে কি হবে? তাই পথের উপর থেকেই ক’টা ছবি তুলে ফিরলাম গাড়িতে।
সারাদিনের ক্লান্তিতে রাতে হোটেল রুমেই ব্রেড আর জ্যাম দিয়ে রাতের খাবার সেরে নিলাম। সঙ্গে খেলাম ধোয়া ওঠা কফি।
পরদিন সকালে হ্যাপি ভ্যালি চা বাগানের ধারে কয়েকখানা কবর দেখতে গেলাম একলাই। আর্কিওলজিক্যাল সার্ভে ইন্ডিয়ার সংরক্ষিত এলাকা। এখানে ঘুমিয়ে আছেন বহু টি প্ল্যান্টার, ইংরেজ প্রশাসনের হর্তা-কর্তারা। তবে দু’তিনজনের নাম না উল্লেখ করলেই নয়। একজন লুই ম্যান্ডেলি- টি প্ল্যান্টার ত বটেই,পক্ষীবিদ হিসেবেও তার সুনাম রয়েছে। দার্জিলিংয়ে এখন যেটা নেহরু রোড,সেটা এককালে মান্ডেলিগঞ্জ নামে পরিচিত ছিল। খুব সম্ভবত চা ব্যবসায়ে আশানুরূপ সাফল্য না পেয়ে তিনি এক সময়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নেন। অবশ্য দার্জিলিংয়ের কুখ্যাত অবসাদের কথাও ফেলে দেয়া যায় না। আরেকজন আলেক্সান্দার সোমা ডি কোরোস। সেই কাউন্ট ড্রাকুলার শহর ট্রান্সালভানিয়া থেকে ভারতবর্ষ আর তিব্বত ঘুরে বেড়িয়ে সংগ্রহ করেছেন প্রাচীন সব তিব্বতি পুঁথি। তার দৃঢ় বিশ্বাস ছিল লাসার এক গুম্ফায় ইউরোপীয়দের অতীত লুকিয়ে আছে তিব্বতি পুঁথিগুলোর ভেতরে।সিকিম হয়ে লাসা যাওয়ার পথে দার্জিলিংয়েই তিনি মারা যান ১৮৪২ সালে। আরও রয়েছেন জেনারেল লয়েড- কোম্পানির ক্যাপ্টেন হয়ে যিনি দর কষাকষি করে সিকিম রাজার থেকে লিজ নিয়েছিলেন এই শৈলশহর। পরে দার্জিলিংয়ের টানে আর কোলকাতামুখো হননি। ১৮৬৫ সালে তিনি মারা যান আর এখানেই শেষ নিদ্রায় আছেন তিনি।
ন’টার দিকে ফিরে এসে ব্যাগ গুছিয়ে দার্জিলিংকে বিদায় জানানোর পালা। টুং সুং রোডেই এক ফ্যামিলি রেস্টোর্যান্টের খোঁজ পেয়েছিলাম সকালবেলার চায়ের সঙ্গে। থাইপো আর মোমো তৈরি করছিল ষাটোর্ধ্ব যুগল। ব্যাগ গুছিয়ে হোটেলকে বিদায় জানিয়ে তাই প্রথম ভাগের নাস্তা করতে দৌড়লাম সেখানে। শেরপা এক পরিবার চালায়। সেখানেও অপ্তি একটা বাচ্চার সঙ্গে বন্ধুত্ব জমিয়ে ফেলল- বছর দেড়েকের তেনজিং শেরপা।
ছোট্ট দুটো টেবিল ঢোকার ঠিক মুখেই। একপাশে কাউন্টারের মত করে সাজানো। বিড়ি, সিগারেট, চকোলেট আর ড্রিংক্স দিয়ে সাজানো। পেছনে চলছে কর্মযজ্ঞ। মোমো আর থাইপো ছাড়া সকালে কিছু নেই। এই ট্রিপে শেষদিনে এসে ঠিকঠাক মত মোমো খাওয়ার সুযোগ মিলল। রাস্তার ধারের মোমো খেতে ভাল সন্দেহ নেই, তবে সেখানে মোমোর স্যুপ তৈরির ঝক্কিতে যায় না কোনও বিক্রেতাই। তাই সেখানে ভেজিটেবল স্টকের নোনতা এই ক্লিয়ার স্যুপ ব্রাত্য। একটু মরিচের সস আর সয় সস দিয়ে মিশিয়ে নিলে তার স্বাদ খোলতাই হয়।
মোমোর বড় ভাই হল থাইপো। ছোটখাট পাঁচটা মোমোর সমান এই থাইপো। আর যদি বলি স্বাদ- দার্জিলিংয়ের এই ছোট দোকানে তারা মোমো আর থাইপো প্রায় একই পুর দিয়ে করে থাকে। তবে যারা টুকটাক খাওয়া দাওয়া করেন তারা একবার মুখে দিয়েই বলে দিতে পারেন থাইপো জিনিসটার ময়দার আবরণ মোমোর থেকে আরো নরম। কারণ জিজ্ঞাসা করতেই আন্টি বলে দিলেন, ‘ওতে খানিকটা বেকিং সোডা রয়েছে যে’। আর পুরের ভেতরে খানিকটা তারতম্য আনার জন্য মোমোর চিরাচরিত ফিলিংয়ের সঙ্গে দেওয়া হয়েছে আধখানা সেদ্ধ ডিম। মোমো স্যুপের সঙ্গেই পরিবেশন করা হল। সুযোগ মিলতেই জিজ্ঞাসা করলাম –
আন্টি আমরা এত এত রেসিপি দেখে মোমো বানাই ঘরে – আপনাদের মোমোর মত স্বাদ যে আসে না। সিক্রেটটা কি?
হাসিমুখে তিনি এই সিক্রেটটাও শেয়ার করলেন -পুরের সঙ্গে অল্প একটু ডালডা মিশিয়ে দেখো এরপর থেকে!
ফেনা ওঠা দুধে অল্প চায়ের লিকার খেয়ে এরপরের গন্তব্য নাথমুল’স।
আমাদের উপমহাদেশে চায়ের ইতিহাস অনেক পুরোন। আপার আসামে রবার্ট ব্রুস ১৮২৩ সালে এক চায়ের জঙ্গল আবিষ্কার করে বসেন। পরের বছর তারই ছোট ভাই চার্লস আলেকজান্ডার ব্রুস দায়িত্ব নিয়ে কিছু চারা ও বীজ পৌঁছে দেন কলকাতার বোটানিক্যাল গার্ডেনে। তবে বিভিন্ন কারণে এর সুফল পেতে দেরি হয় কোম্পানির। সে সময়ে চীনের একচেটিয়া রাজত্ব চায়ের বাজারে, পুরো বিশ্বজুড়ে। এই আবিষ্কার বেনিয়া ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির জন্য এক নতুন দরজা খুলে দেয়। আর এরই মাঝে মিলে যায় দলছুট কিছু চৈনিক চা প্রস্তুতকারী আর প্রায় দু’হাজার গাছের চারা ও বীজ। চীন হয়ে নৌপথে তা মুঘল শহর সারাহনপুরে পাঠানো হয়। আর সেখান থেকেই হিমালয়ের কোলের শহরগুলোতে তৈরি হয় চা বাগান। সে কারণেই আসামের চা আর দার্জিলিংয়ের চায়ের এত তফাৎ, একটা আসামেরই জঙ্গল থেকে পাওয়া জাত আরেকটা চীনে জাতের বংশধর।
ম্যালের থেকে ভুটিয়া বস্তির দিকে যাওয়ার পথেই দ্বিতীয় কি তৃতীয় দোকান। জানালার দিকের টেবিলে বসলে দেখা মেলে ঘুমন্ত বুদ্ধ। নাথমুল’সে বসে চায়ে চুমুক না দিলে নাকি দার্জিলিং আসাটাই বৃথা। অগত্যা বউয়ের চায়ের নেশা পুরণ করতে আর দেশে আত্মীয়দের বিলিয়ে দেবার জন্য চা কিনতে যাওয়া নাথমুল’সে। নাথমুল’সের সেলসম্যান খুব সম্ভবত চাইলে কাস্টমারদের অ্যাটম বোমও গছিয়ে দেবার ক্ষমতা রাখে- চমৎকার সেলসম্যানশিপ। দার্জিলিং চায়ের বুঝদার হতে শুরু করল আমার বউ। আর আমি ব্যস্ত হলাম বাচ্চাকে নিয়ে। হালকা ক্রিসমাস মিউজিকের তালে তালে সে নাচতে শুরু করেছে নাথমুল’সের উডেন ফ্লোরে,সাজানো ক্রিসমাস ট্রি ঘিরে। কথায় কথায় বউ পরিচয় দিয়ে ফেলেছিল আমার, যে আমি খাবার নিয়ে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে লিখি বাংলাদেশের পত্রিকাগুলোয়। ফলে মিলে গেল খানিকটা রাজকীয় সম্মাননা।
কোনার এক টেবিলে বসে ম্যানেজার সাহেব নাথমুলসের তরফ থেকে একটা টি এক্সপেরিয়েন্স অফার করেই বসলেন। এই অভিজ্ঞতাকে না করার দুঃসাহস অন্তত আমার নেই। তিনিই প্রথমে সবুজরঙা আস্ত-পাতার চা চেখে দেখালেন। বললেন এটা এখানকার সেরা চাগুলোর একটা। এরপর গ্রিন টি, আসলেই রংটা সবুজাভ হলুদ। জানালেন এটা প্রিমিয়াম গ্রিন। যার কারণে এটা অনেকটাই হালকা ও মৃদু স্বাদের আর অনেকটাই স্মুথ। এরপর উলং। কোনও তিতকুটে স্বাদ পাওয়া যায় না। দার্জিলিংয়ের উলং চা-ও চেখে দেখলাম। সাদা, সবুজ চা যেখানে নন-ফার্মেন্টেড, সেখানে এই উলংকে বলা যায় সেমি ফার্মেন্টেড- অর্থাৎ গ্রিন টি আর ব্ল্যাক টি’র মাঝামাঝি এটা। এতে চায়ের স্বাদ ও গন্ধও পাওয়া যায় ভাল (আমরা যে ধরনের খাই আর কি!) আবার হেলথ বেনিফিটও নাকি রয়েছে। তবে দার্জিলিং বিখ্যাত তার ব্ল্যাক টি’র জন্য। ফ্লেভার, টেস্ট আর অ্যারোমা মিলে তার ধারে কাছে কেউ নেই। ব্ল্যাক টি’র দু’টো ভ্যারিয়েশন চেখে দেখা হল। একটা স্প্রিং-সামার আরেকটা অটাম। নাম শুনেই বোঝা যায় সিজনাল ভ্যারিয়েশন। তবে স্বাদে-গন্ধে তফাৎ আকাশ-পাতাল। স্প্রিং-সামার অনেক হালকা ও মৃদু স্বাদের আর অটাম- আমরা যেমনটা খেয়ে অভ্যস্ত- অনেক বোল্ড আর খানিকটা তিতকুটে ভাবও চলে আসে। অনেক সময় ধরে বুঝলাম চা, আরও যেটা বুঝলাম- নাথমুলস কেন এত জনপ্রিয়; যে লোনলি প্ল্যানেটও দার্জিলিংয়ের এত এত চায়ের দোকান ফেলে বলে বসে- ‘নাথমুল’সে বসে চা খাওয়াটাই একটা অভিজ্ঞতা’। আসলেই এই আতিথেয়তা আর জ্ঞানের কি কোনও তুলনা চলে। ঢাকার জন্য একগাদা চা কিনে এবারের গন্তব্য গ্লেনারি’জ- দুপুরের খাবারের জন্য।
গ্লেনারি’জে ঢুকে অপ্তি মহাখুশি। লাল রঙের ফোন বুথ, কাঁচের গ্লাসে তৈরি ক্রিসমাস ট্রি, কাঠের সিঁড়ি আর অনেক অনেক কেক- সবই তার আগ্রহের জিনিস। বারান্দায় বসে সাব স্যান্ডউইচ, আমেরিকানো আমাদের জন্য আর অপ্তির জন্য স্ট্রবেরি টার্ট আর ব্ল্যাক ফরেস্ট পেস্ট্রি অর্ডার করা হল। গ্লেনারিজের ইতিহাস অনেক আগের- ভাদো সাহেব তার দার্জিলিংয়ে তার কনফেকশনারি বিক্রি করতে চাইলে পাশের ক্লাবের কনফেকশনার অ্যাডলফ প্লিভা ৫০% শেয়ার কিনে নেন- শুরু হয় ‘ভাদো অ্যান্ড প্লিভা’র। চকোলেট, বেকারি, ডিনার সব মিলিয়ে বেশ ভালই চলছিল ব্যবসা। এক সময়ে ভাদো সাহেব তার তিব্বতি বউ আর পাঁচ সন্তান নিয়ে ইতালি চলে গেলে পুরো ব্যবসাটাই নিয়ে নেন প্লিভা। বেশ ভালই চলছিল সব। তার প্রমাণ মেলে প্লিভা যখন উইন্ডামায়ার হোটেলও শুরু করেন। ছন্দপতন হয় দেশভাগের পর। প্লিভা ফেরত যান বিলাতে, আর ম্যানেজার অগাস্টিন এডওয়ার্ড হাল ধরেন,আর শুরু করেন গ্লেনারি’জ নাম দিয়ে, যা এখনও চলছে। গ্লেনারিজে এখনও পুরোন ঐতিহ্যের খোঁজ পাওয়া যায় তার অন্দরসজ্জায় আর খাবারে।
মাংসে ভরপুর সাব স্যান্ডউইচ আর সদ্য গুড়ো করা কফি বিনসের আমেরিকানো দিয়ে চমৎকার লাঞ্চ হয়ে গেল। খাবারের ব্যাপারে খুঁতখুঁতে অপ্তিও কোনও রকম বিরক্তি প্রকাশ না করেই পেস্ট্রি আর জ্যাম টার্ট খেয়ে নিল, আমাদের ভাগ না দিয়েই! এরপর যাত্রা কালিম্পংয়ের দিকে।
কালিম্পংয়ে যাওয়ার লোকাল ট্যাক্সি স্ট্যান্ডটা দার্জিলিংয়ের ব্রাহ্ম সমাজের সাবেক দপ্তরের ঠিক সামনে। টিকেট নিয়ে বসতেই জানা গেল লোক নেই, গাড়ি ছাড়তে তাই দেরি হবে। সেই অবসরে রাস্তার ধারের এক দোকান থেকে সফট ছুরপি কিনে মুখে পুরে বসে রইলাম। নরম ছুরপিই মুখে গলতে যে সময় নেয়, না জানি শক্ত কতক্ষণ লাগে! পাহাড়িরা মুখে এই লোকাল চিজ নিয়ে কাজ করে যায় ঘন্টার পর ঘন্টা। এতে করে নাকি মনোযোগ বাড়ে কাজে আর খিদেও লাগে কম।
দুপুরে খেতে গেলাম একদম ছোট্ট একটা তিব্বতি দোকানে। দার্জিলিং-কালিম্পং ট্যাক্সি স্ট্যান্ডের ধারেই। নিমা রেস্টোর্যান্ট। মেন্যুটা একদম সাদা-মাটা। মোমো আর থুকপা। বিফ আর পোর্ক। একটা বিফ মোমো আরেকটা বিফ থুকপা অর্ডার করা হল। নিজেদের তিব্বতি শেকড়টা অন্যদের কাছে পোক্ত করতেই যেন লাসা প্রাসাদের ছবিটা বড় করে ঝোলানো রেস্টোর্যান্টের শেষ প্রান্তে। চাইলে উঁকি দিয়ে কিচেন দর্শনও দেয়া যায়। প্রথমে এলো মোমো, স্যুপের সঙ্গে। আর বাটিতে করে ডাল্লে খোরাসানির সস। চাইতেই এলো খানিকটা সয় সসও। পারফেক্ট টিবেটান মোমো যাকে বলে আর কি- তলাটা খানিকটা ফ্ল্যাট, উপরটা বিভিন্ন কোণা জড় করে পুটলি বানানো হয়েছে। স্বাদ খাসা। এরপর চেখে দেখার পালা থুকপা। বিশাল এক বাটি স্যুপের ভেতরে ভাসছে অনেকখানি নুডুলস। উপরে গার্নিশিং হিসেবে বিফ, কিছু গাজর আর পেয়াজপাতা ভাসছে। লবণ খানিকটা কম হলেও একটুখানি ডার্ক সয় সসে তা আমাদের স্বাদেন্দ্রিয়কে সুখ দিতে সক্ষম।
সেদিন রাতে নিরাজ’দা আবারও একটু চমকে দিলেন। আগের রাতে কথা হয়েছিল পোর্ক-শ্যাফটা নিয়ে। পাহাড়িদের হেঁসেলের সাবেকি পদ। রেস্টোর্যান্টে মেলে না এর স্বাদ। এ বেলায় বলে রাখি, স্বাদে ভাল হলে কোনও পদ চেখে দেখতে আপত্তি নেই আমার। তবে অনভ্যস্ততার জন্য দু’একবার যে নাজেহাল হতে হয়নি তা নয়! তবে স্বাদেন্দ্রিয়কে মাঝে মাঝে চমকে দিতে হয়, নইলে আর কিসের রসনালিখিয়ে। আর পোর্ক খাবার ক্ষেত্রে আমার গুরু হল সমস্ত বাঙালির গুরু সৈয়দ মুজতবা আলী- তওবা করে না হয় জাত ফেরানো গেল; কিন্তু মুখে যে স্বাদ লেগে আছে তা ভুলি কি করে ধরনের আর কি! যা হোক ফিরে আসি রক ভিলেজের দোতলায়, ডাইনিংয়ে। নিরাজ’দা রেধে দিলেন চমৎকার পোর্ক-শ্যাফটা। থকথকে গ্রেভির নদীতে আধডোবা অসংখ্য চ্যাপ্টা-চৌকো মাংসের টুকরো। কয়েকজনের মাথায় মোটা চর্বির পরত। দাদা বললেন, ‘আসলে এটার জন্য একদম খাঁটি মাংস লাগে, তাহলেই স্বাদ খোলতাই হয়। পরেরবার এলে লিন মিটেরটা খাওয়াব’। কিসের কি? ততক্ষণে আমরা হারিয়ে গিয়েছি অসম্ভব স্বাদের জগতে, ভাত দিয়ে মাখিয়ে। ডাল্লে খোরাসানির ঝাল, খানিকটা টক স্বাদ।
পরদিন দেরি করে ঘুম থেকে উঠলাম। আলুর দম, ডিম ওমলেট আর লুচির আকৃতির দু’টো রুটি খেয়ে, কাপড় গুছিয়ে কালিম্পংকে বিদায় জানানোর পালা। আবারও আসার আমন্ত্রণ পেলাম, নিরাজ’দা জানালেন উপরের পাহাড়ে জঙ্গলের ভেতরে এক ক্যাম্প তৈরি করছেন তিনি। সামনের বছর এলে সেখানেই ঠাঁই নিতে পারি চাইলে। আর খাওয়ার সময় আমার লঙ্কা বা মরিচপ্রীতি দেখে বেঁধে দিলেন ভিনেগারে ভেজানো এক বয়াম ডাল্লে খোরাসানি।
ফেরার সময় বাজার থেকে কিছু সুভ্যেনির আর কালিম্পং ললিপপ কিনে নেয়া হল। ইচ্ছে ছিল এখানকার কোনও এক ডে্ইরি ফার্মে ঘুরে কটেজ চিজ, ছুরপি তৈরির কৌশলগুলো দেখে আসার। সময় আর ভাল গাইডের অভাবে আর হয়নি। এটাও তোলা থাকল পরেরবারের জন্য। কালিম্পং ছাড়ার আগে শেষবারের মত কালিম্পংয়ে খাওয়া হল জা খাং-এ। পুরো বাংলা জুড়ে বাঙালি খাবারের একমাত্র রেস্টোর্যান্ট এটা।
অবিশ্বাস্য রকমের সস্তায় নন-ভেজ বুফে খাওয়ার ব্যবস্থা আছে এখানে। ভর দুপুরে কাঞ্চনজঙ্ঘায় চোখ রেখে ৩০০ রুপি জন প্রতি বুফের অফার লুফে নিলাম। প্রথমেই এলো সুজা আর জং। এটা স্টার্টার। ভুটানি তরিকার মাখন আর লবনের দুধ চা হল সুজা আর জং হল তুলসির ছোট ছোট ফল, মাখন আর চিনি দিয়ে মাখানো চাল ভাজা। অল্প একটু মুখে দিয়েই প্রথমে চেখে দেখলাম স্পিনাচ স্যুপ- জাজু। একদম সিম্পল।ভেজিটেবল স্টকে পালং পাতা। এরপর প্লেট নিয়ে লেগে পড়লাম অন্য খাবারগুলো চেখে দেখতে। ঙো ঙোউ (ফ্রায়েড নুডুলস), ফাকশা পা (পোর্ক স্ট্যু), জাটশা শোয়েম (মুরগির ঝোল), মেঠো কপি দাতসি (পনির দিয়ে ফুলকপি) আর এমা দাতসি (মরিচ দিয়ে পনির)। এমা দাতসি ভুটানের জাতীয় খাবার। এমা হল এক ধরনের লম্বা দেখতে ভুটানি মরিচ, আর দাতসি মানে চিজ বা পনির। মেঠো কপি দাতসিতে একই তরিকায় পনির আর মরিচ বিদ্যমান, অতিরিক্ত সঙ্গ দেয় ফুলকপি। চিকেন কারিতে পর্যাপ্ত পুদিনা পাতার উপস্থিতি ছিল অসাধারণ। গরম এই কারি থেকে ঠান্ডা একটা বায়বীয় স্বাদ মুখের ভিতরে অনেকক্ষণ রয়ে যায়। পোর্ক স্ট্যুতে লাউশাকের মত একটা পাতা ছিল, স্বাদটাও অনেকটাই সেরকম। নাম বের করা গেল না, জিজ্ঞাসা করেও। নুডুলসটাও মনে রাখার মত। প্রচুর সব্জি আর মাংসে ভরপুর। আর এসব খাবারকে সঙ্গ দিচ্ছিল ইজে। মরিচ, ট্রি টম্যাটো, আদা, তেল, লবন, সিচুয়ান পেপার মিশিয়ে তৈরি করা এক সস। খাবার শেষে কর্ণধার মিসেস ওয়াংদি ভুটিয়ার সঙ্গে কথা হল। জানালেন দু’ বছর হল তারা এখানে আছেন। প্রচুর বাঙালি আর স্থানীয় ভুটিয়ারা আসেন এখানে খেতে। তবে বাংলাদেশি পরিচয়ে এখানে খেতে বসা আমরাই নাকি প্রথম। তাদের এই রেস্টোর্যান্টের জন্য শুভ কামনা জানিয়ে রওনা হলাম শিলিগুড়ির দিকে।
তবে গন্তব্য সেটাই শেষ নয়। সেখান থেকে যেতে হবে কোলকাতায়ও। সেই গল্প না হয় হবে পরে কোনও একদিন।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে এখানে ক্লিক করুন
এই লকডাউনে বোর,হতে হতেএইলেখার মধ্যে দিয়েই যেন দার্জিলিং ভ্রমন হয়ে গেল আর চা মোমো ,থুকপা র গন্ধ যেন,নাকের পাশে ঘোরাঘুরি করছে শুধু স্বাদ আস্বাদন না করতে পারার জন্য বড্ড কষ্ট হচ্ছিল আর কিছু না জানা জায়গার কথা জেনেও ভালো লাগল, সব মিলিয়ে বেশ লাগল পড়তে পরের লেখার অপেক্ষায় রইলাম