সাহিত্যপ্রেমী

সাহিত্যপ্রেমী
শুভ্রা রায়

‘শ্বেত বলাকার’ উদ্যোগে চন্দননগরে গল্প পাঠের আসর বসেছে। স্বনামধন্য প্রথিতযশা সাহিত্যিকদের সমাগমে উঠতি নবীন লেখকদেরও আহ্বান করা হয়েছে। দুর্গাপুর থেকে লগ্নজিতা মল্লিক ফেসবুক মারফত খবর পেয়ে এসেছে সাহিত্য সভায়। এসেই গল্পপাঠে নিজের নাম নথিভুক্ত করে সভাকক্ষের একটা চেয়ারে অপেক্ষা করছে। সভাকক্ষের কানায় কানায় দর্শকের ভীড়, তারমধ্যে অধিকাংশই প্রবীণ ও নবীন লেখক। স্টেজ থেকে এক এক করে লেখকদের ডেকে নেওয়া হচ্ছে। তাঁরা নিজ লেখা গল্প পাঠ করে নেমে আসছেন। লগ্নজিতা বেশ কিছুক্ষণ লক্ষ্য করে যে বিখ্যাত লেখকেরা স্টেজে উঠলে হাততালির সমারোহ দেখা যাচ্ছে। দর্শকগণ মন দিয়ে ওনাদের পাঠ করা গল্প শুনছে। কিন্তু অনামি লেখকের স্টেজে আবির্ভাব হলেই দর্শক মন্ডলী নিরুত্তাপ। প্রথমসারিতে বসা বিখ্যাত সাহিত্যিকরা সেইসময় নিজেদের মধ্যে গুঞ্জনে ব্যস্ত। সামনে স্টেজে নবীন লেখক তাঁর গল্পপাঠ করছেন সেদিকে বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই কারোর।

কিছুক্ষণ পরই লগ্নজিতার নাম ডাকা হলে লগ্নজিতা স্টেজে উঠেই অভাগতদের উদ্দ্যেশে বলে,
‘আমি লগ্নজিতা মল্লিক, সাহিত্যের আঙ্গিনায় নবীন, লেখালিখি ভাবনায় আবিষ্ট। আপনাদের সকলের ভালবাসার আশাকাঙ্ক্ষী, আমার গল্পের নাম ‘সাহিত্যপ্রেমী’। লগ্নজিতা পাঠ শুরু করে। সামনের দর্শকাসন অন্যমনস্ক ও গুঞ্জরিত। গুঞ্জনের আওয়াজে লগ্নজিতা এবার অন্যমনস্ক, মুখ তুলে দর্শকাসনের দিকে তাকায়। মূহুর্তের মধ্যে তাঁর স্বতঃস্ফূর্ততা কোণঠাসা হয়ে যায়। এবার লগ্নজিতা গল্পপাঠ বন্ধ করে একনাগাড়ে অ আ ই ঈ, ক খ গ ঘ ….চন্দ্রবিন্দু অবধি বলতে শুরু করে দেয়। দর্শকমন্ডলী স্তব্ধ। মিনিট খানেক বলার পর স্টেজ থেকে নেমে আসতে যায় লগ্নজিতা। তখনই একজন প্রখ্যাত লেখক চিৎকার করে বললেন, ‘এটা কি ফাজলামোর জায়গা? কি বলে নেমে যাচ্ছেন আপনি?’

লগ্নজিতা আবার মাইক্রোফোনের সামনে এসে দাঁড়ায়, বলে, ‘সাহিত্যচর্চা আমার ভালবাসা, চাহিদা নয়। পারলাম না আমার ভালবাসাকে অকারণে অবহেলার মুখাপেক্ষী করতে, নমস্কার।’

মাঝে মাঝে কিছু প্রতিবাদের দরকার হয়ে ওঠে। পিছনের সারি থেকে একজন নবীন লেখক উঠে দাঁড়িয়ে বললেন, ‘দিদি আপনার পাঠ আমার বেশ ভাল লাগল।’ এরপরই দর্শকাসনের পিছন সারির হাততালিতে সভাকক্ষ মুখরিত হয়ে ওঠে।

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

26 thoughts on “সাহিত্যপ্রেমী

  1. এক।।
    ছোটগল্প সম্পর্কে বলা হয়, যা শেষ হয়েও হলো না, আরও কিছু বাকি রয়ে গেল। অণুগল্প তার চেয়েও অনেক ছোট, সাহিত্যের নিরীখে যা অণু। সেই অণুগল্পের যে পুর্ণাঙ্গ রুপ দেওয়া সম্ভব, তা এই গল্পটি না পড়লে অজানা থেকে যেত।

    দুই।।
    প্রতিবাদের এই রুচিসম্মত, দৃঢ় ও স্পষ্ট ধরণ খুব আনন্দ দিল। প্রতিদিন সংবাদ মাধ্যমে, এমনকি আমাদের চারপাশেও রুচিহীনতার যে উদ্দাম নৃত্য দেখি, তার মধ্যে এই গল্পটি একটি মরুদ্যান।।

    লেখক, আপনি ভালো থাকবেন।। অনেক শুভেচ্ছা।।

  2. প্রতিবাদের ধরনটি চমৎকার। একদম অন্যরকম বিষয়।

  3. এরকমই হয় বাস্তবে , নামী লেখিকা বা লেখকদের মাঝে অনেক যোগ্য প্রতিভা হারিয়ে যায় . একদম যোগ্য জবাব দিয়েছে লগ্নজিতা … লেখিকা কে ধন্যবাদ কঠীন বাস্তব একটি ঘটনা কে তুলে ধড়ার জন্যে.

  4. একদম কঠীন বাস্তব কে লেখিকা তুলে ধরেছেন লগ্নজিতার চরিত্রের মাধ্যমে … বিখ্যাত দের ভীড়ে অনেক যোগ্য নতুন প্রতিভা অঙ্কুরেই বিনাশ হয়ে যায়.

  5. একদম কঠীন বাস্তব কে লেখিকা তুলে ধরেছেন লগ্নজিতার চরিত্রের মাধ্যমে … বিখ্যাত দের ভীড়ে অনেক যোগ্য নতুন প্রতিভা এভাবেই অঙ্কুরেই বিনাশ হয়ে যায়.

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *