মৌসুমী চক্রবর্তী ষড়ঙ্গী
বাইরের দরজাটা খোলা দেখে চমকে ওঠে পৌষালি, ছুটে যায় বাবার ঘরে। সব রুম গুলো খুঁজে দেখে। না, কোথাও নেই। ছুটে আসে বিবেকের কাছে ,
— বিবেক! বাবা কে কোথাও দেখছি না!
— সে কি!
— বাইরের দরজাটা খোলা আর তোমরা কেউ খেয়াল করোনি?
পৌষালির বাবা শিবেন্দ্র ব্যানার্জি মাস খানেক হল মেয়ের কাছে এসেছেন। ছয় মাস এখানে থেকে আবার ছেলের কাছে ফিরে যাবেন। কয়েক বছর ধরে এমনই চলছে। তাই এখানে বাবার জন্য একটা নির্দিষ্ট ঘর আছে আর তাকে পৌষালি সুন্দর করে সাজিয়েছে নানা ঘটনার স্মৃতি ফোটো ফ্রেমে বন্দি করে ঘরময় টাঙানো আছে। মুম্বাইয়ের এই ফ্ল্যাট টা অনেক বড়, বিবেক কাস্টমস এক্সাইজ এর উচ্চ পদে চাকরি করে এই ফ্ল্যাটের ভারি রেন্টটা ডিপার্টমেন্ট থেকেই পায় সে, তাই সুবিধে।
পৌষালির বয়স যখন সতেরো বছর আর তার দাদার কুড়ি তখন ঘুমের মধ্যে হার্ট এ্যাটাকে চলে যায় মা। ছেলে মেয়েকে মার অভাব অতটা বুঝতে দেননি শিবেন্দ্র বাবু। বিয়ের পর জলপাইগুড়ি ছেড়ে পৌষালির মুম্বাই চলে আসা তারপর বুবায়ের জন্ম, মা এসবের কিছুই দেখেন নি।
অনেক দিন পর বাবা নিজের মুখে মেথির পরোটা খাবে বলেছিল, তাই যত্ন সহকারে ব্রেকফাস্ট রেডি করতে ব্যস্ত ছিল পৌষালি। বিবেক আর বুবায়ের জন্য সাদা ধোসা আর চাটনি বানিয়েছে। মেথির পরোটা ওদের তেমন পছন্দের নয় সঙ্গে ফ্রুট জুস আর ডিম সেদ্ধ। এদিকে পৌষালির ছেলে বুবাই ডান্স অ্যারোবিক এক্সসারসাইজ নিয়ে ওর ঘরে দরজা বন্ধ অবস্থায়, ওদিকে নিউজ পেপার পেয়ে বিবেক মনোযোগ দিয়ে পড়েই চলেছিল। কাজের মেয়ে চলে যাওয়ার পর দরজাটা তাই খোলা থেকে গেছে।
হঠাৎ কলিং বেল টা ঘন ঘন বাজতে থাকে। ওরা দ্যাখে ওয়াচম্যান শক্ত করে বাবার হাতটা বগলদাবা করে ধরে আছে পাশে রুদ্রমূর্তিতে দাঁড়িয়ে মিসেস চৌধুরী। উনি মাত্র সাত মাস হল এখানে এসেছেন। মুখোমুখি হতেই ঝড়ের মত সমস্ত রাগ উগরে দিতে থাকলেন মিসেস চৌধুরী।
_ ওয়াচম্যান চিনতে না পারলে তো মারধোর, পুলিশ অনেক কিছুই হত; কি করতেন তখন? উনি তো নিজের ফ্ল্যাট নম্বর ই বলতে পারছেন না।
— সরি, উনি আমার বাবা। আসলে বাবা আলঝেইমার পেশেন্ট।
— সেকি! জেনেশুনে এভাবে ছেড়ে দিয়েছেন? যখন নিজেদের হুশ নেই তখন ঘুমের ওষুধ খাইয়ে তো রাখতে পারেন।
আসলে কাজের মেয়ে চলে যাওয়ার পর দরজা খোলাই ছিল। শিবেন্দ্র বাবু সবার অজান্তে কখন ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন কিন্তু ফেরার সময় আর চিনতে পারেন নি। দরজা খুলতেই সোজা মিসেস চৌধুরীদের ঘরের ভেতরে ঢুকে যান, উনি ভয়ে চিৎকার করেন অবশেষে সোসাইটির ওয়াচ ম্যানকে ফোন করেন। সে এসে চিনতে পারে।
অনেক চেষ্টা করেও আজ চোখের জল আটকানো পৌষালির কাছে বড় কঠিন হয়ে পড়েছে । বাবার মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে পৌষালি। অমানুষিক পরিশ্রম আর অসম্ভব ধৈর্য্য নিয়ে ছেলে মেয়েকে মানুষ করার দিনগুলোর কথা অনেকটাই পৌষালির জানা। বিবেকের দিকে তাকিয়ে পৌষালি বলে ,
— এখন তো দশ মিনিট আগের ঘটনাও বাবা মনে রাখতে পারে না। আমাকেও মাঝে মাঝে চিনতে পারছে না। তবুও দাদার মত বাবাকে আমি ঘরে লক করে রাখতে পারবে না বিবেক।
বিবেকের মৃদু হাসি ও ভ্রুর ভঙ্গি বুঝিয়ে দেয় যে পৌষালির পাশে সব পরিস্হিতিতেই সে সাথে থাকবে। বুবাই দাদুভাইকে আদর করে কপালে একটা আলতো চুমু দিয়ে বলে ,
— আমার সোনা দাদুভাই। আমরা সবাই তোমার সাথে আছি, সো ডোন্ট ওরি – – –
পরোটার টুকরো গুলো বাবার মুখে তুলে দেয় পৌষালি। ঝাপসা দৃষ্টি নিয়ে ভাবে রক্ত মাংসের মানুষ থেকে বাবা ধীরে ধীরে কেমন যেন মূর্তি হয়ে যাচ্ছে।
— বিবেক! বাবা কে কোথাও দেখছি না!
— সে কি!
— বাইরের দরজাটা খোলা আর তোমরা কেউ খেয়াল করোনি?
পৌষালির বাবা শিবেন্দ্র ব্যানার্জি মাস খানেক হল মেয়ের কাছে এসেছেন। ছয় মাস এখানে থেকে আবার ছেলের কাছে ফিরে যাবেন। কয়েক বছর ধরে এমনই চলছে। তাই এখানে বাবার জন্য একটা নির্দিষ্ট ঘর আছে আর তাকে পৌষালি সুন্দর করে সাজিয়েছে নানা ঘটনার স্মৃতি ফোটো ফ্রেমে বন্দি করে ঘরময় টাঙানো আছে। মুম্বাইয়ের এই ফ্ল্যাট টা অনেক বড়, বিবেক কাস্টমস এক্সাইজ এর উচ্চ পদে চাকরি করে এই ফ্ল্যাটের ভারি রেন্টটা ডিপার্টমেন্ট থেকেই পায় সে, তাই সুবিধে।
পৌষালির বয়স যখন সতেরো বছর আর তার দাদার কুড়ি তখন ঘুমের মধ্যে হার্ট এ্যাটাকে চলে যায় মা। ছেলে মেয়েকে মার অভাব অতটা বুঝতে দেননি শিবেন্দ্র বাবু। বিয়ের পর জলপাইগুড়ি ছেড়ে পৌষালির মুম্বাই চলে আসা তারপর বুবায়ের জন্ম, মা এসবের কিছুই দেখেন নি।
অনেক দিন পর বাবা নিজের মুখে মেথির পরোটা খাবে বলেছিল, তাই যত্ন সহকারে ব্রেকফাস্ট রেডি করতে ব্যস্ত ছিল পৌষালি। বিবেক আর বুবায়ের জন্য সাদা ধোসা আর চাটনি বানিয়েছে। মেথির পরোটা ওদের তেমন পছন্দের নয় সঙ্গে ফ্রুট জুস আর ডিম সেদ্ধ। এদিকে পৌষালির ছেলে বুবাই ডান্স অ্যারোবিক এক্সসারসাইজ নিয়ে ওর ঘরে দরজা বন্ধ অবস্থায়, ওদিকে নিউজ পেপার পেয়ে বিবেক মনোযোগ দিয়ে পড়েই চলেছিল। কাজের মেয়ে চলে যাওয়ার পর দরজাটা তাই খোলা থেকে গেছে।
হঠাৎ কলিং বেল টা ঘন ঘন বাজতে থাকে। ওরা দ্যাখে ওয়াচম্যান শক্ত করে বাবার হাতটা বগলদাবা করে ধরে আছে পাশে রুদ্রমূর্তিতে দাঁড়িয়ে মিসেস চৌধুরী। উনি মাত্র সাত মাস হল এখানে এসেছেন। মুখোমুখি হতেই ঝড়ের মত সমস্ত রাগ উগরে দিতে থাকলেন মিসেস চৌধুরী।
_ ওয়াচম্যান চিনতে না পারলে তো মারধোর, পুলিশ অনেক কিছুই হত; কি করতেন তখন? উনি তো নিজের ফ্ল্যাট নম্বর ই বলতে পারছেন না।
— সরি, উনি আমার বাবা। আসলে বাবা আলঝেইমার পেশেন্ট।
— সেকি! জেনেশুনে এভাবে ছেড়ে দিয়েছেন? যখন নিজেদের হুশ নেই তখন ঘুমের ওষুধ খাইয়ে তো রাখতে পারেন।
আসলে কাজের মেয়ে চলে যাওয়ার পর দরজা খোলাই ছিল। শিবেন্দ্র বাবু সবার অজান্তে কখন ঘর থেকে বেরিয়ে গিয়েছেন কিন্তু ফেরার সময় আর চিনতে পারেন নি। দরজা খুলতেই সোজা মিসেস চৌধুরীদের ঘরের ভেতরে ঢুকে যান, উনি ভয়ে চিৎকার করেন অবশেষে সোসাইটির ওয়াচ ম্যানকে ফোন করেন। সে এসে চিনতে পারে।
অনেক চেষ্টা করেও আজ চোখের জল আটকানো পৌষালির কাছে বড় কঠিন হয়ে পড়েছে । বাবার মুখের দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে পৌষালি। অমানুষিক পরিশ্রম আর অসম্ভব ধৈর্য্য নিয়ে ছেলে মেয়েকে মানুষ করার দিনগুলোর কথা অনেকটাই পৌষালির জানা। বিবেকের দিকে তাকিয়ে পৌষালি বলে ,
— এখন তো দশ মিনিট আগের ঘটনাও বাবা মনে রাখতে পারে না। আমাকেও মাঝে মাঝে চিনতে পারছে না। তবুও দাদার মত বাবাকে আমি ঘরে লক করে রাখতে পারবে না বিবেক।
বিবেকের মৃদু হাসি ও ভ্রুর ভঙ্গি বুঝিয়ে দেয় যে পৌষালির পাশে সব পরিস্হিতিতেই সে সাথে থাকবে। বুবাই দাদুভাইকে আদর করে কপালে একটা আলতো চুমু দিয়ে বলে ,
— আমার সোনা দাদুভাই। আমরা সবাই তোমার সাথে আছি, সো ডোন্ট ওরি – – –
পরোটার টুকরো গুলো বাবার মুখে তুলে দেয় পৌষালি। ঝাপসা দৃষ্টি নিয়ে ভাবে রক্ত মাংসের মানুষ থেকে বাবা ধীরে ধীরে কেমন যেন মূর্তি হয়ে যাচ্ছে।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন