অদিতি বসুরায়
পাহাড়ি ফুল –
কঙ্গনা রাণাওয়াত যখন মানালির বাড়ি ছাড়েন, তখন তাঁর বয়েস মাত্র পনেরো-ষোলো! শোনা যায়, অভিভাবকদের সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরে তিনি পালিয়ে আসেন রাজধানী দিল্লিতে। হিমাচল প্রদেশের ছোট্ট শহর থেকে আসা মেয়েটির মনের জোর ছিল দুর্দান্ত। মডেলিং দিয়ে তাঁর কেরিয়ার শুরু। ২০০৬তে ‘গ্যাংস্টার’ ছবিতে অভিনেত্রী হিসেবে আত্মপ্রকাশ এবং এই ছবির জন্যে তিনি ‘বেস্ট ফিমেল ডেবিউ’ হিসেবে ফিলিমফেয়ার পুরষ্কার পান। আর ফিরে তাকাতে হয় নি। সেই থেকে আজ পর্যন্ত কঙ্গনার কার্য-কলাপ বর্ণনা করা স্বল্প পরিসরে প্রায় দুঃসাধ্য! পাহাড়ের নাছোড় মানসিকতা তাঁকে যেমন পরিশ্রমী হিসেবে প্রতিষ্টা দিয়েছে তেমনই অগ্র-পশ্চাত না ভেবে কথা বলার জন্য বারবার বিপাকেও ফেলেছে। কেবল বিস্ফোরক মন্তব্য করাই নয়, তাঁর ব্যক্তিগত জীবনকেও তিনি এমনভাবে বারবার মিডিয়ার ফোকাসে উপস্থিত করেছেন যার জন্য তাঁকে মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির তাবড় মহারথীর কোপে পড়তে হয়েছে। ঋত্বিক রোশনের সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙার পরে ( যদিও ঋত্বিক আজ পর্যন্ত এ কথা স্বীকার করেন নি), একমাত্র তাঁর পক্ষেই প্রকাশ্যে বলা সম্ভব, “ঋত্বিককে (রোশন) আর আমাদের সম্পর্কটা স্বীকার করতে হবে না। ও যখন পালাতে চাইছে, চলে যাক। আমিও আর প্রমাণ হিসেবে স্পার্মমাখা প্যান্টি আর ওর দেওয়া সমস্ত উপহার রাখতে পারছি না”। পরে যখন ঋত্বিক, কঙ্গনার পাঠানো প্রায় ১৫০০ ই-মেলের কথা মিডিয়ার সামনে আনেন, তখন তিনি তা অস্বীকার করেন। উলটে তিনি অভিযোগ করেন ওই ইমেলগুলো তাঁর অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ঋত্বিকই নাকি পাঠিয়েছেন! শেখর সুমনের পুত্র অধ্যয়ন সুমনের সঙ্গেও তাঁর বিচ্ছেদ – সংক্রান্ত কাদাছোঁড়াছুঁড়ি প্রকাশ্যে এসে যায়। শেখর সুমনের পরিবার কঙ্গনার বিরুদ্ধে ডাইনিবিদ্যা প্রয়োগের অভিযোগ আনে। কঙ্গনা প্রেস কনফারেন্সে কেঁদে ফেলে, অধ্যয়নের সম্পর্কে জানান, অধ্যয়ন নাকি কেরিয়ারের জন্য তাঁকে হিংসে করতেন এবং নারী হিসেবে একেবারে সম্মান দেখাতেন না। আবার আদিত্য পাঞ্চালির সঙ্গে ‘লিভ ইন’ করার সময় কঙ্গনা যথেষ্ট প্রেম-প্রেম হাবভাব দেখালেও, সম্পর্ক শেষ হওয়ার পর তিনি বলেন আদিত্য তাঁকে ‘রক্ষিতা’র মতো ব্যবহার করেছেন। জনসমক্ষে বারবার তিনি প্রাক্তনদের হেয় এবং অপমান করে নিজের শ্রেষ্টত্ব প্রমাণ করতে চেয়েছেন। তবে কেবল এক্স-প্রেমিকদের ক্ষেত্রেই নয়, কঙ্গনা বারবার বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন সহকর্মী এবং মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করেও। ফলে প্রায় পুরো মুম্বাই সিনেমা জগতকে তিনি শত্রু করে ফেলেছেন।
নেপোটিজম –
সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুতে বলিউডের বহু-চর্চিত স্বজন-পোষণের বিরুদ্ধে আগ্রাসী মনোভাব দেখানোয় কঙ্গনার ফ্যানরা অবাক হন নি। কারণ, দীর্ঘদিন ধরেই এই অভিনেত্রী টিনসেল টাউনের নেপোটিজম নিয়ে কথা বলে আসছেন। প্রায় তিন বছর আগে, করণ জোহরের চ্যাট শো-তে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে এসে, তিনি করণকে এই ব্যাপারে দোষী করে নাস্তানাবুদ করেন। বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে করণের প্রভাব বেশি থাকায় প্রায় কেউই তার আগে, করণকে প্রকাশ্যে এই জাতীয় কথা বলার সাহস দেখাতে পারেন নি। এই কাজও একমাত্র কঙ্গনা রাণাওয়াতের পক্ষেই সম্ভব। তাই কঙ্গনা যখন ঘোষণা করেন, হলিউডে কাজ পেতে গেলে নায়িকাদের, পরিচালক ও প্রযোজকদের শয্যা-সঙ্গী হতেই হয় এবং তিনি নিজেও সেই ভাবেই কাজ পেয়েছেন, আমরা আর অবাক হই নি। বরং এই মেয়ের সাহসকে কুর্ণিশ জানাতে ইচ্ছে করে। আর এইখানেই কঙ্গনা জিতে যান। একই জিনিস তাঁর কাজের দিকে নজর দিলে চোখে পড়ে! এখনও পর্যন্ত তিন খানের কারো সঙ্গেই তিনি জুটি বাঁধেন নি। একেবারে শুরু থেকে বলতে গেলে, তিনি নিজেই তাঁর ছবিগুলোকে টেনে নিয়ে গেছেন – কুইন, তনু ওয়েডস মন্নু থেকে হালের মণিকর্ণিকা কিংবা জাজমেন্টাল হ্যায় কেয়া অব্দি একই জিনিস দেখা যাবে। ফলে পুরুষ-প্রধান ইন্ডাস্ট্রি কঙ্গনাকে মান্য করতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু বিতর্ক-বিহীন জীবন তাঁর আবার সহ্য হয় না। নিজে ফেমিনিজম নিয়ে সোচ্চার হলেও বারবার তিনি তাপসী পান্নু, ভূমি পেডনেকরদের ‘বি গ্রেডে’-র অভিনেত্রী বলে জন-সমক্ষে হেয় করেছেন। ঊর্মিলা মার্তণ্ডেকরকে ‘সফট পর্ণ স্টার’ তকমা দিয়েছেন। দীপিকা পাড়ুকোণ, আলিয়া ভাট – কেউই কঙ্গনার হাত থেকে রেহাই পান নি।
মহারাষ্ট্র সরকার বনাম কঙ্গনা –
কেন্দ্রীয় সরকারের আস্থাভাজন হিসেবে কঙ্গনাকে ‘ওয়াই’ ক্যাটেগরির নিরাপত্তা দেওয়া হলেও মহারাষ্ট্রের শিবসেনা সরকারের সঙ্গে তাঁর সংঘাত চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে। সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর থেকেই কঙ্গনা ক্রমাগত মহারাষ্ট্র সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে চলেছেন। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরেকে তিনি সরাসরি ‘মুভি মাফিয়া’ বলে আক্রমণ করেছেন এবং এই রাজ্যকে পাকিস্থানের অধীনে থাকা কাশ্মিরের সঙ্গে তুলনা করে তিনি শিবসেনা সরকারের কোপে পড়েন। তারই জেরে তাঁর মুম্বাইয়ের পালি হিলের অফিস, বেআইনি নির্মাণের দোহাই দিয়ে ভেঙ্গে দেওয়া হয়। কঙ্গনার নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা ‘মণিকর্ণিকা ফিল্মস’-এর মূল কেন্দ্র ছিল এটাই। মুম্বাই পুরসভা জানায়, এই বাড়িটির নির্মাণে পরিকাঠামোগত ত্রুটি থাকায় তারা এটি ভাঙতে বাধ্য হয়। ওদিকে এই ঘটনায় কঙ্গনা, স্বাভাবিকভাবেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং তড়িঘড়ি মানালির বাড়ি থেকে মুম্বাই চলে আসেন। এরপরই তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে ‘তুই তোকারি’ করে সাবধান বাণী দেন এবং দু’কোটি টাকা ক্ষতিপূরন চেয়ে মামলা করেন। মুম্বাই ছবির জগতের মাদক-কেচ্ছা নিয়ে সোচ্চার হওয়ায়, প্রায় একই সময়ে, মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে কলঙ্কিত করার জন্য জয়া বচ্চন, কঙ্গনাকে রাজ্যসভায় আক্রমণ করে বলেন, ‘কিছু লোক যে থালিতে খাচ্ছে, সেইখানেই থু থু ফেলছে’। কঙ্গনাও ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নন। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই টুইট্যারে জয়াকে তুলোধোনা করতে শুরু করে দেন। তিনি লেখেন, ‘কোন থালির কথা বলছেন জয়া বচ্চন? সেই থালি, যেখানে দু’মিনিটের রোল, একটা রোম্যান্টিক সিন ও একখানা আইটেম সং অফার করা হয় নায়িকাদের? তাও হিরোর সঙ্গে শোওয়ার পর?’ এবং এইটুকুতেই থামেন নি তিনি। একবার শুরু করলে থামতে হয় কোথায়, জানা নেই বলেই তিনি এরপর জয়াকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকেন, পুত্র অভিষেককে যদি গলায় দড়ি দিতে হত বা কন্যা শ্বেতাকে যদি কেউ মলেস্ট করতো মাদক খাইয়ে, তখনও কি তিনি একই কথা বলতে পারতেন? এমনকি কঙ্গনা এও দাবি করেন যে, অমিতাভের মতো মানুষ পাশে না থাকলে জয়ার অবস্থাও পারভীন বাবি বা জিনাত আমনের মতোই হতে পারতো। এর ফলে যে হাতে গোণা কয়েকজন তাঁর শুভানুধ্যায়ী ছিলেন, তাঁরাও বিরোধী শিবিরে নাম লেখাতে বাধ্য হন। এদের মধ্যে পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপ অন্যতম। তবে এই মুহুর্তে তিনি মুম্বাইতে নেই। ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষ্যে তিনি মানালিতে। লড়াই অবশ্য জারি আছে। মহারাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে এখন তাঁর সংঘাত বলিউডের মাদক-চক্র, সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু ছাড়িয়ে ব্যক্তিগত পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরেকে টুইট করে জানিয়েছেন, “মহিলাদের দয়া, মায়া, করুণাকে যেন কখনও কেউ তাঁদের দুর্বলতা না ভেবে বসেন। যাঁর হারানোর কিছু নেই, তাঁকে যদি ক্রমাগত ধাক্কা দেওয়া হয়, তা হলে তিনি কতটা মারাত্মক এবং ধংসাত্মক হয়ে উঠতে পারেন, তা কেউ ভাবতেও পারবেন না”। সুতরাং এ কথা মানতেই হবে, ভারতীয় ছবির জগতে কঙ্গনার মতো সাহসী অভিনেত্রী আগে আসেন নি এবং তাঁকে গুরুত্ব না দেওয়ার কোনও উপায় তিনি খোলা রাখেন নি কখনও। বাকিটা ভবিষ্যৎ জানাবে।
কঙ্গনা রাণাওয়াত যখন মানালির বাড়ি ছাড়েন, তখন তাঁর বয়েস মাত্র পনেরো-ষোলো! শোনা যায়, অভিভাবকদের সঙ্গে মনোমালিন্যের জেরে তিনি পালিয়ে আসেন রাজধানী দিল্লিতে। হিমাচল প্রদেশের ছোট্ট শহর থেকে আসা মেয়েটির মনের জোর ছিল দুর্দান্ত। মডেলিং দিয়ে তাঁর কেরিয়ার শুরু। ২০০৬তে ‘গ্যাংস্টার’ ছবিতে অভিনেত্রী হিসেবে আত্মপ্রকাশ এবং এই ছবির জন্যে তিনি ‘বেস্ট ফিমেল ডেবিউ’ হিসেবে ফিলিমফেয়ার পুরষ্কার পান। আর ফিরে তাকাতে হয় নি। সেই থেকে আজ পর্যন্ত কঙ্গনার কার্য-কলাপ বর্ণনা করা স্বল্প পরিসরে প্রায় দুঃসাধ্য! পাহাড়ের নাছোড় মানসিকতা তাঁকে যেমন পরিশ্রমী হিসেবে প্রতিষ্টা দিয়েছে তেমনই অগ্র-পশ্চাত না ভেবে কথা বলার জন্য বারবার বিপাকেও ফেলেছে। কেবল বিস্ফোরক মন্তব্য করাই নয়, তাঁর ব্যক্তিগত জীবনকেও তিনি এমনভাবে বারবার মিডিয়ার ফোকাসে উপস্থিত করেছেন যার জন্য তাঁকে মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির তাবড় মহারথীর কোপে পড়তে হয়েছে। ঋত্বিক রোশনের সঙ্গে সম্পর্ক ভাঙার পরে ( যদিও ঋত্বিক আজ পর্যন্ত এ কথা স্বীকার করেন নি), একমাত্র তাঁর পক্ষেই প্রকাশ্যে বলা সম্ভব, “ঋত্বিককে (রোশন) আর আমাদের সম্পর্কটা স্বীকার করতে হবে না। ও যখন পালাতে চাইছে, চলে যাক। আমিও আর প্রমাণ হিসেবে স্পার্মমাখা প্যান্টি আর ওর দেওয়া সমস্ত উপহার রাখতে পারছি না”। পরে যখন ঋত্বিক, কঙ্গনার পাঠানো প্রায় ১৫০০ ই-মেলের কথা মিডিয়ার সামনে আনেন, তখন তিনি তা অস্বীকার করেন। উলটে তিনি অভিযোগ করেন ওই ইমেলগুলো তাঁর অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে ঋত্বিকই নাকি পাঠিয়েছেন! শেখর সুমনের পুত্র অধ্যয়ন সুমনের সঙ্গেও তাঁর বিচ্ছেদ – সংক্রান্ত কাদাছোঁড়াছুঁড়ি প্রকাশ্যে এসে যায়। শেখর সুমনের পরিবার কঙ্গনার বিরুদ্ধে ডাইনিবিদ্যা প্রয়োগের অভিযোগ আনে। কঙ্গনা প্রেস কনফারেন্সে কেঁদে ফেলে, অধ্যয়নের সম্পর্কে জানান, অধ্যয়ন নাকি কেরিয়ারের জন্য তাঁকে হিংসে করতেন এবং নারী হিসেবে একেবারে সম্মান দেখাতেন না। আবার আদিত্য পাঞ্চালির সঙ্গে ‘লিভ ইন’ করার সময় কঙ্গনা যথেষ্ট প্রেম-প্রেম হাবভাব দেখালেও, সম্পর্ক শেষ হওয়ার পর তিনি বলেন আদিত্য তাঁকে ‘রক্ষিতা’র মতো ব্যবহার করেছেন। জনসমক্ষে বারবার তিনি প্রাক্তনদের হেয় এবং অপমান করে নিজের শ্রেষ্টত্ব প্রমাণ করতে চেয়েছেন। তবে কেবল এক্স-প্রেমিকদের ক্ষেত্রেই নয়, কঙ্গনা বারবার বিস্ফোরক মন্তব্য করেছেন সহকর্মী এবং মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রীকে উদ্দেশ্য করেও। ফলে প্রায় পুরো মুম্বাই সিনেমা জগতকে তিনি শত্রু করে ফেলেছেন।
নেপোটিজম –
সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুতে বলিউডের বহু-চর্চিত স্বজন-পোষণের বিরুদ্ধে আগ্রাসী মনোভাব দেখানোয় কঙ্গনার ফ্যানরা অবাক হন নি। কারণ, দীর্ঘদিন ধরেই এই অভিনেত্রী টিনসেল টাউনের নেপোটিজম নিয়ে কথা বলে আসছেন। প্রায় তিন বছর আগে, করণ জোহরের চ্যাট শো-তে আমন্ত্রিত অতিথি হিসেবে এসে, তিনি করণকে এই ব্যাপারে দোষী করে নাস্তানাবুদ করেন। বলিউড ইন্ডাস্ট্রিতে করণের প্রভাব বেশি থাকায় প্রায় কেউই তার আগে, করণকে প্রকাশ্যে এই জাতীয় কথা বলার সাহস দেখাতে পারেন নি। এই কাজও একমাত্র কঙ্গনা রাণাওয়াতের পক্ষেই সম্ভব। তাই কঙ্গনা যখন ঘোষণা করেন, হলিউডে কাজ পেতে গেলে নায়িকাদের, পরিচালক ও প্রযোজকদের শয্যা-সঙ্গী হতেই হয় এবং তিনি নিজেও সেই ভাবেই কাজ পেয়েছেন, আমরা আর অবাক হই নি। বরং এই মেয়ের সাহসকে কুর্ণিশ জানাতে ইচ্ছে করে। আর এইখানেই কঙ্গনা জিতে যান। একই জিনিস তাঁর কাজের দিকে নজর দিলে চোখে পড়ে! এখনও পর্যন্ত তিন খানের কারো সঙ্গেই তিনি জুটি বাঁধেন নি। একেবারে শুরু থেকে বলতে গেলে, তিনি নিজেই তাঁর ছবিগুলোকে টেনে নিয়ে গেছেন – কুইন, তনু ওয়েডস মন্নু থেকে হালের মণিকর্ণিকা কিংবা জাজমেন্টাল হ্যায় কেয়া অব্দি একই জিনিস দেখা যাবে। ফলে পুরুষ-প্রধান ইন্ডাস্ট্রি কঙ্গনাকে মান্য করতে বাধ্য হয়েছে। কিন্তু বিতর্ক-বিহীন জীবন তাঁর আবার সহ্য হয় না। নিজে ফেমিনিজম নিয়ে সোচ্চার হলেও বারবার তিনি তাপসী পান্নু, ভূমি পেডনেকরদের ‘বি গ্রেডে’-র অভিনেত্রী বলে জন-সমক্ষে হেয় করেছেন। ঊর্মিলা মার্তণ্ডেকরকে ‘সফট পর্ণ স্টার’ তকমা দিয়েছেন। দীপিকা পাড়ুকোণ, আলিয়া ভাট – কেউই কঙ্গনার হাত থেকে রেহাই পান নি।
মহারাষ্ট্র সরকার বনাম কঙ্গনা –
কেন্দ্রীয় সরকারের আস্থাভাজন হিসেবে কঙ্গনাকে ‘ওয়াই’ ক্যাটেগরির নিরাপত্তা দেওয়া হলেও মহারাষ্ট্রের শিবসেনা সরকারের সঙ্গে তাঁর সংঘাত চূড়ান্ত রূপ নিয়েছে চলতি বছরের সেপ্টেম্বর মাস থেকে। সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর থেকেই কঙ্গনা ক্রমাগত মহারাষ্ট্র সরকারের বিরুদ্ধে তোপ দেগে চলেছেন। মহারাষ্ট্রের মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরেকে তিনি সরাসরি ‘মুভি মাফিয়া’ বলে আক্রমণ করেছেন এবং এই রাজ্যকে পাকিস্থানের অধীনে থাকা কাশ্মিরের সঙ্গে তুলনা করে তিনি শিবসেনা সরকারের কোপে পড়েন। তারই জেরে তাঁর মুম্বাইয়ের পালি হিলের অফিস, বেআইনি নির্মাণের দোহাই দিয়ে ভেঙ্গে দেওয়া হয়। কঙ্গনার নিজস্ব প্রযোজনা সংস্থা ‘মণিকর্ণিকা ফিল্মস’-এর মূল কেন্দ্র ছিল এটাই। মুম্বাই পুরসভা জানায়, এই বাড়িটির নির্মাণে পরিকাঠামোগত ত্রুটি থাকায় তারা এটি ভাঙতে বাধ্য হয়। ওদিকে এই ঘটনায় কঙ্গনা, স্বাভাবিকভাবেই ক্ষোভে ফেটে পড়েন এবং তড়িঘড়ি মানালির বাড়ি থেকে মুম্বাই চলে আসেন। এরপরই তিনি মুখ্যমন্ত্রীকে ‘তুই তোকারি’ করে সাবধান বাণী দেন এবং দু’কোটি টাকা ক্ষতিপূরন চেয়ে মামলা করেন। মুম্বাই ছবির জগতের মাদক-কেচ্ছা নিয়ে সোচ্চার হওয়ায়, প্রায় একই সময়ে, মুম্বাই ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রিকে কলঙ্কিত করার জন্য জয়া বচ্চন, কঙ্গনাকে রাজ্যসভায় আক্রমণ করে বলেন, ‘কিছু লোক যে থালিতে খাচ্ছে, সেইখানেই থু থু ফেলছে’। কঙ্গনাও ছেড়ে দেওয়ার পাত্রী নন। তিনি সঙ্গে সঙ্গেই টুইট্যারে জয়াকে তুলোধোনা করতে শুরু করে দেন। তিনি লেখেন, ‘কোন থালির কথা বলছেন জয়া বচ্চন? সেই থালি, যেখানে দু’মিনিটের রোল, একটা রোম্যান্টিক সিন ও একখানা আইটেম সং অফার করা হয় নায়িকাদের? তাও হিরোর সঙ্গে শোওয়ার পর?’ এবং এইটুকুতেই থামেন নি তিনি। একবার শুরু করলে থামতে হয় কোথায়, জানা নেই বলেই তিনি এরপর জয়াকে উদ্দেশ্য করে বলতে থাকেন, পুত্র অভিষেককে যদি গলায় দড়ি দিতে হত বা কন্যা শ্বেতাকে যদি কেউ মলেস্ট করতো মাদক খাইয়ে, তখনও কি তিনি একই কথা বলতে পারতেন? এমনকি কঙ্গনা এও দাবি করেন যে, অমিতাভের মতো মানুষ পাশে না থাকলে জয়ার অবস্থাও পারভীন বাবি বা জিনাত আমনের মতোই হতে পারতো। এর ফলে যে হাতে গোণা কয়েকজন তাঁর শুভানুধ্যায়ী ছিলেন, তাঁরাও বিরোধী শিবিরে নাম লেখাতে বাধ্য হন। এদের মধ্যে পরিচালক অনুরাগ কাশ্যপ অন্যতম। তবে এই মুহুর্তে তিনি মুম্বাইতে নেই। ভাইয়ের বিয়ে উপলক্ষ্যে তিনি মানালিতে। লড়াই অবশ্য জারি আছে। মহারাষ্ট্র সরকারের সঙ্গে এখন তাঁর সংঘাত বলিউডের মাদক-চক্র, সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যু ছাড়িয়ে ব্যক্তিগত পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। মুখ্যমন্ত্রী উদ্ধব ঠাকরেকে টুইট করে জানিয়েছেন, “মহিলাদের দয়া, মায়া, করুণাকে যেন কখনও কেউ তাঁদের দুর্বলতা না ভেবে বসেন। যাঁর হারানোর কিছু নেই, তাঁকে যদি ক্রমাগত ধাক্কা দেওয়া হয়, তা হলে তিনি কতটা মারাত্মক এবং ধংসাত্মক হয়ে উঠতে পারেন, তা কেউ ভাবতেও পারবেন না”। সুতরাং এ কথা মানতেই হবে, ভারতীয় ছবির জগতে কঙ্গনার মতো সাহসী অভিনেত্রী আগে আসেন নি এবং তাঁকে গুরুত্ব না দেওয়ার কোনও উপায় তিনি খোলা রাখেন নি কখনও। বাকিটা ভবিষ্যৎ জানাবে।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন