স্বাতী চ্যাটার্জী ভৌমিক
নব্বইয়ের দশকের মাঝামাঝি সময় থেকে শুরু। প্রথমে স্টেজ, কলেজ ফেস্ট আর তারপর বাংলা এফএমের দৌলতে তখন একটু-একটু করে পরিচিত হয়ে উঠছেন তিনি। তারপর ‘ভোকাট্টা, ‘ও চাঁদ’, ‘মেঘ নেমে এল’, ‘তোমার টানে সারা বেলার গানে’, ‘তুমি কি আকাশ ভেবে’, এমন অজস্র জনপ্রিয় আধুনিক গানের মাধ্যমে বাংলা গানের জগতে জায়গা করে নিলেন তিনি। এর সঙ্গে বাংলা ছবির জন্য গাইলেন ‘গভীরে যাও’, ‘রূপকথারা’, ‘চুপি চুপি রাত’, ‘তবু যদি তুমি’, ‘সেটাই সত্যি’, ‘এ তুমি কেমন তুমি’, ‘জাগো উমা’র মতো একের পর মন ছুঁয়ে যাওয়া গান, আর এইসব গানের মাধ্যমে বাঙালী শ্রোতার মনে চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করে নিলেন রূপঙ্কর বাগচী। ১৯৯৫-তে মুক্তি পেয়েছিল প্রথম অ্যালবাম। সেদিক দিয়ে দেখলে ২০২০ তাঁর সঙ্গীত জীবনের পঁচিশতম বছর। এতগুলো বছরের অভিজ্ঞতায় নানাভাবে সমৃদ্ধ হয়েছেন তিনি। অপার বাংলার শারদ সংখ্যায় তাঁর সঙ্গীতজীবন ও বাংলা গানের বর্তমান অবস্থা প্রসঙ্গে নানা কথা বললেন রূপঙ্কর। শুনলেন স্বাতী চ্যাটার্জী ভৌমিক।
প্রশ্ন: এত বছর হয়ে গেল তোমার বাংলা গানের জগতে। ছোটবেলা থেকেই কি গায়ক হতে চেয়েছিলে? কেমন ছিল গায়ক হয়ে ওঠার শুরুর দিনগুলো?
রূপঙ্কর: না, ছোটবেলায় গায়ক হবার কোন ইচ্ছে ছিল না। মানে তেমন কোন অ্যাম্বিশন ছিল না কোনদিন। তবে আমাদের বাড়িতে সকলেই গান গাইতেন। সেভাবে দেখলে গান শুনেই আমি বেড়ে উঠেছি বলা যায়। কলেজের পর থেকেই স্টেজে গান গাইছি। তারও আগে কলেজে পড়তে পড়তে গ্র্যান্ড হোটেলে গজল গাইতাম। কাজেই পেশাদার মঞ্চে গান গাওয়া আমার সেই সময় থেকেই। ১৯৯৫ তে প্রথম অ্যালবাম বেরোয় ‘তুমি শুনবে কি?’ তারপর ‘৯৬, ‘৯৮ তেও পরপর অ্যালবাম করেছি। প্রত্যেক মানুষের জীবনেই যেমন স্ট্রাগল থাকে, আমারও ছিল। সেটা নিয়ে আলাদা করে বলার মতো কিছু আছে বলে আমি মনে করি না। কিছুটা কষ্ট করতে হয়েছে, শো পেতে সমস্যা হয়েছে, তবে না খেতে পাওয়ার মতো কষ্ট করতে হয়নি। আমি কোনদিনই চাকরি করিনি। গান নিয়ে কেরিয়ারটা করবো এটা ঠিক করে নিয়েছিলাম। বাবা মায়ের সমর্থন ছিলই। তারপর একটু-একটু করে নিজের জায়গাটা তৈরি করেছি।
প্রশ্ন: প্রথম গান রেকর্ডিংয়ের দিনটার কথা মনে আছে? কেমন লেগেছিল সেদিন স্টুডিওতে দাঁড়িয়ে? ভয়, নাকি আত্মবিশ্বাস, কোনটা বেশী ছিল?
রূপঙ্কর: অবশ্যই মনে আছে সেই দিনটার কথা। ন্যাশনাল নেটওয়র্কের একটা টেলিফিল্মের জন্য চন্দন রায়চৌধুরীর সুরে একটা গান গাইতে গিয়েছিলাম। প্রথমবার কানে হেডফোন লাগিয়ে ফিডব্যাক নিয়ে গান গাইবার একটা অন্যরকম অনুভূতি তো ছিলই। তবে আমি যে কোন অবস্থাতেই খুব তাড়াতাড়ি মানিয়ে নিতে পারি। আমাকে যদি আজ কুস্তি করতেও বলা হয়, সেটা শুরুতে না পারলেও কিছুদিনের মধ্যে আমি সেটা ঠিক শিখে নেব। কোন পরিস্থিতিতেই আমি ঘাবড়ে গিয়ে পালিয়ে আসার পক্ষপাতী নই। যে কাজটা করব বলে ঠিক করেছি সেটা কঠিন হলেও আমাকে করতে হবে, এটা মাথায় রাখি। তাই প্রথম অবস্থায় কানে ফিডব্যাক নিয়ে যখন গান রেকর্ডিং করলাম তখন টেনশন নয়, উল্টে ইন্টারেস্টিং লেগেছিল। যাদের গান শুনে বড় হয়েছি তারাও এইভাবে গানগুলো গেয়েছেন ভেবে খুব আনন্দ হয়েছিল।
প্রশ্ন: তুমি মাঝে মাঝেই তোমার অনুষ্ঠানে বলে থাকো রেডিও তোমাকে গান শিখিয়েছে। এই ব্যাপারটা একটু ব্যাখ্যা করবে কি?
রূপঙ্কর: রেডিওর কাছে আমার প্রচুর শেখা। তখন রেডিওর মূল তিনটে স্টেশন, কলকাতা ক, কলকাতা খ আর বিবিধ ভারতী। এরা আমাকে গান গাইতে শিখিয়েছে বলা যায়। আমি খুব সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে ছিলাম, বাড়িতে কোন রেকর্ড প্লেয়ার ছিল না। টেলিভিশনের তো প্রশ্নই নেই। বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল রেডিও। কলকাতা ক’য়ে শুনতাম রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলগীতি, অতুলপ্রসাদের গান। কলকাতা খ’য়ে ইংরেজি গান শুনতাম। আর বিবিধ ভারতীতে শুধু হিন্দী ছবির গান। বাবা রিতেন্দ্রনাথ বাগচী ছিলেন জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ, তারাপদ চক্রবর্তীর ছাত্র। বাবার কাছে ক্লাসিকাল শিখেছি। মা সুমিত্রা বাগচী ছিলেন দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের ছাত্রী। মায়ের কাছে শিখেছি রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের গান। এছাড়া নানা সময়ে সুকুমার মিত্র, মেনকা ঠাকুর, জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, সাগিরুদ্দিন আলি খাঁয়ের কাছে তালিম নিয়েছি। আসলে আমাদের বাড়িটাই গানের বাড়ি। আমাদের বাড়িতে সকলেই গান করেন। হয়তো প্রফেশনালি করেন না, কিন্তু আমার বাবা মা দাদা জ্যেঠু কাকা সকলেই গান জানেন, মামারবাড়িতেও সকলেই গান জানেন।
প্রশ্ন: তোমার প্রথমদিকের অ্যালবামগুলো যখন বেরোচ্ছে সেই সময়ে এফএমে প্রচুর বাংলা বেসিক গান বাজতো। আমাদের স্কুল বা কলেজের দিনগুলোয় নতুন বাংলা গানের খবর আমরা এফএমের থেকেই পেয়ে এসেছি। সেটা একসময় কমতে-কমতে আজ এফএমে বাংলা বেসিক গান আর খুঁজেই পাওয়া যায় না। অথচ কলকাতায় এফএম স্টেশনের সংখ্যা নেহাত কম নয়। বাংলা বেসিক গান না বাজার কারণ হিসেবে কি হিন্দী বা বাংলা ছবির গানই দায়ী?
রূপঙ্কর: হিন্দী বা বাংলা ছবির গান আগেও এফএমে বাজতো। তখন তো বেসিক গানের ওপর কোপ পড়েনি। এখন কেন চালানো হয় না সেটা ওরাই ভাল বলতে পারবেন। আমার ধারণা এফএম চ্যানেলগুলো যারা চালান তারা অবাঙালী, তাদের হেডকোয়ার্টার দিল্লী বা মুম্বইতে। তারা মনে করেন বাংলা গানের কোন টিআরপি নেই, তাই সঞ্চালকদের বাধ্য হয়ে হিন্দী গান বাজাতে হয়। একটা সময় ‘আমার এফএম’-এ বাংলা বেসিক গান শোনানো হতো। সেই স্টেশনটাই বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকেই মনে করেন ওটা বন্ধ হয়ে যাবার কারণ ওতে প্রধানত বাংলা গান চালানো হতো।
প্রশ্ন: বাংলা ছবি, নাকি বেসিক গান, নাকি রবীন্দ্র-নজরুল, কোন ধরণের গান গাইতে বেশী ভাল লাগে?
রূপঙ্কর: গান নিয়ে আমার কোন বাছবিচার নেই। বেসিক গান, ছবির গান কিংবা রবীন্দ্রনাথ বা নজরুলের গান, আমার কাছে সবই পছন্দের। সবরকম গানই আমি খুব আনন্দ করে গাই।
প্রশ্ন: আগে যেমন বাংলা ছবিতে প্রচুর গান থাকতো যতদিন যাচ্ছে এই প্রবণতা কমে আসছে। এখন বহু ছবিতে গান প্রায় থাকেই না, আবহ সঙ্গীতের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
রূপঙ্কর: এটাই তো হওয়া উচিত ছিল। আমার চিরকালই মনে হয়েছে যে ছবিতে এত গান থাকার কোনও মানে হয় না। সারা পৃথিবীর কোথাও ছবিতে এত গান ব্যবহার করা হয় না। কাজেই এখানেও যে সেই ব্যাপারটা আসছে সেটা ভালই হয়েছে। হঠাৎ করে নায়ক নায়িকা কোন পরিস্থিতিতে গান গেয়ে উঠবেনই বা কেন? দর্শক যে সেটা গ্রহণ করেছেন সেটা অবশ্যই আশার কথা। আগেকার ছবির মতো নায়কের গলায় গান, এই ব্যাপারটা আর ফিরে আসবে বলে মনে হয় না। সিচুয়েশনাল কিছু গান যেমন হচ্ছে সেটা হয়তো থাকবে, তবে আগের মতো অত গান আর ছবিতে না থাকাই ভাল।
প্রশ্ন: তাহলে যারা নতুন গান গাইতে আসছে তাদের ভবিষ্যৎ কী?
রূপঙ্কর: বেসিক গান গাইবে তারা। মাইকেল জ্যাকসন তো আর ছবির গান গেয়ে জ্যাকসন হননি। বেসিক গান এখন সারা বছরই বেরোচ্ছে। আগে সিডি বা ক্যাসেটের যুগে অনেকগুলো গান একসঙ্গে বেরোতো। এখন সেটাই সারা বছর ধরে একটা করে বেরোয়। তাই এমন নয় যে গান কমে যাচ্ছে। প্রচুর নতুন গান হচ্ছে। তবে আগে একটা গানের অ্যালবাম শ্রোতাদের ওপর যে প্রভাব ফেলত সেটা আর এখন ফেলে না বলে আমার ধারণা। পুজোর গানের জন্য শ্রোতারা অপেক্ষা করে থাকতেন। গান শোনার একটা নির্দিষ্ট মাধ্যম ছিল। এখন সেটা এতভাবে ভাগ হয়ে গেছে, এতরকম অপশন এসে গেছে যে গানটা আর গুরুত্ব পায় না। আমার নিজের ওই পুরনো ক্যাসেট সিডির যুগটাই বেশী প্রিয় ছিল।
প্রশ্ন: ‘জাতিস্মর’ ছবিতে কবীর সুমনের পরিচালনায় ‘এ তুমি কেমন তুমি’ তোমাকে জাতীয় পুরস্কার এনে দিয়েছিল। কেমন ছিল ওঁর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা?
রূপঙ্কর: ভীষণই ভাল অভিজ্ঞতা। একজন জ্ঞানী মানুষ, এত জানেন উনি, ওঁর সঙ্গে কাজ করে অনেক কিছু শেখা যায়। ভীষণ গুণী মানুষ কবীর সুমন, অসাধারণ মিউজিশিয়ন, গান নিয়ে অসামান্য ব্যাপ্তি ওঁর। ওঁর সঙ্গে কাজ করা আমার পরম পাওয়া।
প্রশ্ন: ‘জাতিস্মর’এর হাত ধরে জাতীয় পুরস্কার এলো, কিন্তু হিন্দী ছবির গান গাওয়ার ডাক এলো না কেন? আজ অবধি আমরা হিন্দী ছবির গানে তোমাকে পাইনি। অনেকেই তো দুই ইন্ডাস্ট্রিতেই কাজ করছেন।
রূপঙ্কর: আমি কোনদিন ডাক পাইনি হিন্দী ছবি থেকে। কেন পাইনি সেটা ওরাই বলতে পারবেন। যারা দু’জায়গায় কাজ করেন তাদের ওখানে অনেক বেশী সময় দিতে হয়। ওখানে গিয়ে থাকতে হয়। আমার কোনদিন ইচ্ছেও ছিল না যাবার। যদি কখনো ডাক আসে তাহলে গিয়ে কাজ করে আসবো, কিন্তু ওখানে গানের জন্য পড়ে থাকতে পারব না। বাংলা গানের সঙ্গে নিজের শহরের প্রতিও আমার টান অনেক বেশী।
প্রশ্ন: কিছুদিন আগেই তোমাকে রিয়ালিটি শোয়ের বিচারকের আসনে দেখেছি আমরা। এই যে প্রতি বছর নানান শো থেকে এতজন সেরা গায়ক গায়িকা উঠে আসছেন, এঁদের জন্য কি লড়াইটা আরো কঠিন হয়ে যাচ্ছে না?
রূপঙ্কর: সেটা জেনেই তো তারা আসছেন। আর যেহেতু অনেকে উঠে আসছেন সেখানে প্রতিযোগিতা বেশী থাকছে। এর ফলে কাজের সংখ্যা ও মান আরো উন্নত হবে বলেই আমি মনে করি। এঁদের স্ট্রাগলটা কিন্তু আমাদের সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। আমাদের সময়ে একটা গান গেয়ে সেটা শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া অনেক সহজ ছিল। এখন এতরকম মাধ্যম আর এত বেশী প্রতিযোগিতা যে গান হারিয়ে যেতে সময় লাগে না। আর এখন তো শুধুমাত্র গান গাইলেই হয় না, আরও অনেক কিছু জানতে হয়। কিভাবে তাকে স্টেজে দাঁড়িয়ে গাইতে হবে, কেমন দেখতে লাগবে, কী পোশাক পরতে হবে এই সবকিছু মাথায় রাখতে হয়। তাই ওদের লড়াইটা অনেক বেশী কঠিন।
প্রশ্ন: রিয়ালিটি শোয়ে কী কী জিনিস মাথায় রাখতে হয় বিচারকদের, শুধুই গান নাকি গানের সঙ্গে স্টেজ পারফরম্যান্সের জন্যেও নম্বর দিতে হয়?
রূপঙ্কর: দুটোই দেখতে হয়। গান আর পারফরম্যান্স ৫০-৫০ নম্বর থাকে। এই চ্যালেঞ্জগুলো ওদের অনেক বেশী। আমাদের সময়েও স্টেজে কিভাবে গাইতে হয় সেটা জানতে হতো, এটা শেখার মতোই জিনিস। যদিও এগুলো চিরকালই একজন শিল্পীর সহজাত ক্ষমতা বলেই ধরা হয়, তবু আমি বলবো আমাদের সময় এগুলো এত নিখুঁতভাবে করার চাপ ছিল না। তবে সেই সময়েও যেমন লড়াই করে নিজের জায়গাটা ধরে রাখতে হতো এখনও সেটা করতে হয়। বরং এখন সেই চ্যালেঞ্জটা আরো অনেক কঠিন।
প্রশ্ন: রিয়ালিটি শোয়ের ফাইনালে মুম্বইয়ের নামী শিল্পীরা ছিলেন, কলকাতা থেকে তুমি আর লোপাদি (লোপামুদ্রা মিত্র) ছিলে। সেখানে কী কিছুটা কোণঠাসা লাগছিল নিজেদের? বাংলা গান তো প্রায় শোনাই গেল না ফাইনালে।
রূপঙ্কর: কোণঠাসা হওয়াটাই স্বাভাবিক বলে আমার মনে হয়। কিশোর কুমারের জনপ্রিয়তা চিরকালই শ্যামল মিত্রের চেয়ে অনেক বেশী ছিল, আর লতাজীর জনপ্রিয়তা সন্ধ্যা মুখার্জীর চেয়ে বেশী। এটাই স্বাভাবিক। সর্বভারতীয় স্তরে বিখ্যাত হলে তাঁকে বেশী হাইলাইট করা হবে এটা খুব স্বাভাবিক ঘটনা। আমি এসব নিয়ে কোনরকম অভিযোগে বিশ্বাসী নই। যেটা বাস্তব সেটা না বোঝার কিছু নেই। আর বাংলা গান রিয়ালিটি শোতে চলে না, বাংলা গানে টিআরপি কমে যায়, চ্যানেল কর্তারা প্রমাণ করে দিয়েছেন, কাজেই কিছু বলার নেই। খারাপ লাগা থাকবেই, তবে বাস্তবকে মেনে নেওয়া ছাড়া কিছু করারও নেই আমাদের।
প্রশ্ন: গায়ক না হলে রূপঙ্কর বাগচী কী হতেন?
রূপঙ্কর: কী হতাম…(একটু ভেবে), হয়তো অভিনেতা হতাম। অভিনয় করতে আমার ভালই লাগে। মাঝে মাঝেই করে থাকি, ভবিষ্যতেও করবো। তবে সেটার জন্য গানের সঙ্গে কমপ্রোমাইজ করবো না এটুকু বলতে পারি।
প্রশ্ন: পুজোয় তো এবার অনুষ্ঠান নেই বোধহয়। প্রতি বছর যেটা থাকেই। পুজোয় কী করবে ভেবেছ?
রূপঙ্কর: গত সতেরো বছর আমি পুজোয় কলকাতায় থাকতে পারিনি। এ বছর থাকবো। চাকদায় একটা অনুষ্ঠান আছে। এছাড়া কিছু অনলাইন অনুষ্ঠানও করার কথা। পরিস্থিতি ঠিক হতে কতদিন লাগবে জানি না। ততদিন সকলেই টিকে থাকার জন্য অনলাইনে গান গাইছেন, আমিও গাইছি। কিন্তু সেটা একটা স্টেজ শোয়ের জায়গা নিতে পারে না কোনভাবেই। স্টেজে দাঁড়িয়ে একটা অনুষ্ঠান করার পিছনে যে পরিশ্রম থাকে তার যোগ্য প্রশংসা, অর্থ বা তৃপ্তি কোনটাই অনলাইন শোয়ে আসা সম্ভব নয়। তবু করতে হচ্ছে উপায় নেই বলেই। সকলের মতো আমিও অপেক্ষায় রয়েছি সবকিছু স্বাভাবিক হবার।
প্রশ্ন: এত বছর হয়ে গেল তোমার বাংলা গানের জগতে। ছোটবেলা থেকেই কি গায়ক হতে চেয়েছিলে? কেমন ছিল গায়ক হয়ে ওঠার শুরুর দিনগুলো?
রূপঙ্কর: না, ছোটবেলায় গায়ক হবার কোন ইচ্ছে ছিল না। মানে তেমন কোন অ্যাম্বিশন ছিল না কোনদিন। তবে আমাদের বাড়িতে সকলেই গান গাইতেন। সেভাবে দেখলে গান শুনেই আমি বেড়ে উঠেছি বলা যায়। কলেজের পর থেকেই স্টেজে গান গাইছি। তারও আগে কলেজে পড়তে পড়তে গ্র্যান্ড হোটেলে গজল গাইতাম। কাজেই পেশাদার মঞ্চে গান গাওয়া আমার সেই সময় থেকেই। ১৯৯৫ তে প্রথম অ্যালবাম বেরোয় ‘তুমি শুনবে কি?’ তারপর ‘৯৬, ‘৯৮ তেও পরপর অ্যালবাম করেছি। প্রত্যেক মানুষের জীবনেই যেমন স্ট্রাগল থাকে, আমারও ছিল। সেটা নিয়ে আলাদা করে বলার মতো কিছু আছে বলে আমি মনে করি না। কিছুটা কষ্ট করতে হয়েছে, শো পেতে সমস্যা হয়েছে, তবে না খেতে পাওয়ার মতো কষ্ট করতে হয়নি। আমি কোনদিনই চাকরি করিনি। গান নিয়ে কেরিয়ারটা করবো এটা ঠিক করে নিয়েছিলাম। বাবা মায়ের সমর্থন ছিলই। তারপর একটু-একটু করে নিজের জায়গাটা তৈরি করেছি।
প্রশ্ন: প্রথম গান রেকর্ডিংয়ের দিনটার কথা মনে আছে? কেমন লেগেছিল সেদিন স্টুডিওতে দাঁড়িয়ে? ভয়, নাকি আত্মবিশ্বাস, কোনটা বেশী ছিল?
রূপঙ্কর: অবশ্যই মনে আছে সেই দিনটার কথা। ন্যাশনাল নেটওয়র্কের একটা টেলিফিল্মের জন্য চন্দন রায়চৌধুরীর সুরে একটা গান গাইতে গিয়েছিলাম। প্রথমবার কানে হেডফোন লাগিয়ে ফিডব্যাক নিয়ে গান গাইবার একটা অন্যরকম অনুভূতি তো ছিলই। তবে আমি যে কোন অবস্থাতেই খুব তাড়াতাড়ি মানিয়ে নিতে পারি। আমাকে যদি আজ কুস্তি করতেও বলা হয়, সেটা শুরুতে না পারলেও কিছুদিনের মধ্যে আমি সেটা ঠিক শিখে নেব। কোন পরিস্থিতিতেই আমি ঘাবড়ে গিয়ে পালিয়ে আসার পক্ষপাতী নই। যে কাজটা করব বলে ঠিক করেছি সেটা কঠিন হলেও আমাকে করতে হবে, এটা মাথায় রাখি। তাই প্রথম অবস্থায় কানে ফিডব্যাক নিয়ে যখন গান রেকর্ডিং করলাম তখন টেনশন নয়, উল্টে ইন্টারেস্টিং লেগেছিল। যাদের গান শুনে বড় হয়েছি তারাও এইভাবে গানগুলো গেয়েছেন ভেবে খুব আনন্দ হয়েছিল।
প্রশ্ন: তুমি মাঝে মাঝেই তোমার অনুষ্ঠানে বলে থাকো রেডিও তোমাকে গান শিখিয়েছে। এই ব্যাপারটা একটু ব্যাখ্যা করবে কি?
রূপঙ্কর: রেডিওর কাছে আমার প্রচুর শেখা। তখন রেডিওর মূল তিনটে স্টেশন, কলকাতা ক, কলকাতা খ আর বিবিধ ভারতী। এরা আমাকে গান গাইতে শিখিয়েছে বলা যায়। আমি খুব সাধারণ মধ্যবিত্ত ঘরের ছেলে ছিলাম, বাড়িতে কোন রেকর্ড প্লেয়ার ছিল না। টেলিভিশনের তো প্রশ্নই নেই। বাইরের দুনিয়ার সঙ্গে যোগাযোগের একমাত্র মাধ্যম ছিল রেডিও। কলকাতা ক’য়ে শুনতাম রবীন্দ্রসঙ্গীত, নজরুলগীতি, অতুলপ্রসাদের গান। কলকাতা খ’য়ে ইংরেজি গান শুনতাম। আর বিবিধ ভারতীতে শুধু হিন্দী ছবির গান। বাবা রিতেন্দ্রনাথ বাগচী ছিলেন জ্ঞানপ্রকাশ ঘোষ, তারাপদ চক্রবর্তীর ছাত্র। বাবার কাছে ক্লাসিকাল শিখেছি। মা সুমিত্রা বাগচী ছিলেন দ্বিজেন মুখোপাধ্যায়ের ছাত্রী। মায়ের কাছে শিখেছি রবীন্দ্রনাথ, নজরুলের গান। এছাড়া নানা সময়ে সুকুমার মিত্র, মেনকা ঠাকুর, জটিলেশ্বর মুখোপাধ্যায়, সাগিরুদ্দিন আলি খাঁয়ের কাছে তালিম নিয়েছি। আসলে আমাদের বাড়িটাই গানের বাড়ি। আমাদের বাড়িতে সকলেই গান করেন। হয়তো প্রফেশনালি করেন না, কিন্তু আমার বাবা মা দাদা জ্যেঠু কাকা সকলেই গান জানেন, মামারবাড়িতেও সকলেই গান জানেন।
প্রশ্ন: তোমার প্রথমদিকের অ্যালবামগুলো যখন বেরোচ্ছে সেই সময়ে এফএমে প্রচুর বাংলা বেসিক গান বাজতো। আমাদের স্কুল বা কলেজের দিনগুলোয় নতুন বাংলা গানের খবর আমরা এফএমের থেকেই পেয়ে এসেছি। সেটা একসময় কমতে-কমতে আজ এফএমে বাংলা বেসিক গান আর খুঁজেই পাওয়া যায় না। অথচ কলকাতায় এফএম স্টেশনের সংখ্যা নেহাত কম নয়। বাংলা বেসিক গান না বাজার কারণ হিসেবে কি হিন্দী বা বাংলা ছবির গানই দায়ী?
রূপঙ্কর: হিন্দী বা বাংলা ছবির গান আগেও এফএমে বাজতো। তখন তো বেসিক গানের ওপর কোপ পড়েনি। এখন কেন চালানো হয় না সেটা ওরাই ভাল বলতে পারবেন। আমার ধারণা এফএম চ্যানেলগুলো যারা চালান তারা অবাঙালী, তাদের হেডকোয়ার্টার দিল্লী বা মুম্বইতে। তারা মনে করেন বাংলা গানের কোন টিআরপি নেই, তাই সঞ্চালকদের বাধ্য হয়ে হিন্দী গান বাজাতে হয়। একটা সময় ‘আমার এফএম’-এ বাংলা বেসিক গান শোনানো হতো। সেই স্টেশনটাই বন্ধ হয়ে গেছে। অনেকেই মনে করেন ওটা বন্ধ হয়ে যাবার কারণ ওতে প্রধানত বাংলা গান চালানো হতো।
প্রশ্ন: বাংলা ছবি, নাকি বেসিক গান, নাকি রবীন্দ্র-নজরুল, কোন ধরণের গান গাইতে বেশী ভাল লাগে?
রূপঙ্কর: গান নিয়ে আমার কোন বাছবিচার নেই। বেসিক গান, ছবির গান কিংবা রবীন্দ্রনাথ বা নজরুলের গান, আমার কাছে সবই পছন্দের। সবরকম গানই আমি খুব আনন্দ করে গাই।
প্রশ্ন: আগে যেমন বাংলা ছবিতে প্রচুর গান থাকতো যতদিন যাচ্ছে এই প্রবণতা কমে আসছে। এখন বহু ছবিতে গান প্রায় থাকেই না, আবহ সঙ্গীতের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়।
রূপঙ্কর: এটাই তো হওয়া উচিত ছিল। আমার চিরকালই মনে হয়েছে যে ছবিতে এত গান থাকার কোনও মানে হয় না। সারা পৃথিবীর কোথাও ছবিতে এত গান ব্যবহার করা হয় না। কাজেই এখানেও যে সেই ব্যাপারটা আসছে সেটা ভালই হয়েছে। হঠাৎ করে নায়ক নায়িকা কোন পরিস্থিতিতে গান গেয়ে উঠবেনই বা কেন? দর্শক যে সেটা গ্রহণ করেছেন সেটা অবশ্যই আশার কথা। আগেকার ছবির মতো নায়কের গলায় গান, এই ব্যাপারটা আর ফিরে আসবে বলে মনে হয় না। সিচুয়েশনাল কিছু গান যেমন হচ্ছে সেটা হয়তো থাকবে, তবে আগের মতো অত গান আর ছবিতে না থাকাই ভাল।
প্রশ্ন: তাহলে যারা নতুন গান গাইতে আসছে তাদের ভবিষ্যৎ কী?
রূপঙ্কর: বেসিক গান গাইবে তারা। মাইকেল জ্যাকসন তো আর ছবির গান গেয়ে জ্যাকসন হননি। বেসিক গান এখন সারা বছরই বেরোচ্ছে। আগে সিডি বা ক্যাসেটের যুগে অনেকগুলো গান একসঙ্গে বেরোতো। এখন সেটাই সারা বছর ধরে একটা করে বেরোয়। তাই এমন নয় যে গান কমে যাচ্ছে। প্রচুর নতুন গান হচ্ছে। তবে আগে একটা গানের অ্যালবাম শ্রোতাদের ওপর যে প্রভাব ফেলত সেটা আর এখন ফেলে না বলে আমার ধারণা। পুজোর গানের জন্য শ্রোতারা অপেক্ষা করে থাকতেন। গান শোনার একটা নির্দিষ্ট মাধ্যম ছিল। এখন সেটা এতভাবে ভাগ হয়ে গেছে, এতরকম অপশন এসে গেছে যে গানটা আর গুরুত্ব পায় না। আমার নিজের ওই পুরনো ক্যাসেট সিডির যুগটাই বেশী প্রিয় ছিল।
প্রশ্ন: ‘জাতিস্মর’ ছবিতে কবীর সুমনের পরিচালনায় ‘এ তুমি কেমন তুমি’ তোমাকে জাতীয় পুরস্কার এনে দিয়েছিল। কেমন ছিল ওঁর সঙ্গে কাজ করার অভিজ্ঞতা?
রূপঙ্কর: ভীষণই ভাল অভিজ্ঞতা। একজন জ্ঞানী মানুষ, এত জানেন উনি, ওঁর সঙ্গে কাজ করে অনেক কিছু শেখা যায়। ভীষণ গুণী মানুষ কবীর সুমন, অসাধারণ মিউজিশিয়ন, গান নিয়ে অসামান্য ব্যাপ্তি ওঁর। ওঁর সঙ্গে কাজ করা আমার পরম পাওয়া।
প্রশ্ন: ‘জাতিস্মর’এর হাত ধরে জাতীয় পুরস্কার এলো, কিন্তু হিন্দী ছবির গান গাওয়ার ডাক এলো না কেন? আজ অবধি আমরা হিন্দী ছবির গানে তোমাকে পাইনি। অনেকেই তো দুই ইন্ডাস্ট্রিতেই কাজ করছেন।
রূপঙ্কর: আমি কোনদিন ডাক পাইনি হিন্দী ছবি থেকে। কেন পাইনি সেটা ওরাই বলতে পারবেন। যারা দু’জায়গায় কাজ করেন তাদের ওখানে অনেক বেশী সময় দিতে হয়। ওখানে গিয়ে থাকতে হয়। আমার কোনদিন ইচ্ছেও ছিল না যাবার। যদি কখনো ডাক আসে তাহলে গিয়ে কাজ করে আসবো, কিন্তু ওখানে গানের জন্য পড়ে থাকতে পারব না। বাংলা গানের সঙ্গে নিজের শহরের প্রতিও আমার টান অনেক বেশী।
প্রশ্ন: কিছুদিন আগেই তোমাকে রিয়ালিটি শোয়ের বিচারকের আসনে দেখেছি আমরা। এই যে প্রতি বছর নানান শো থেকে এতজন সেরা গায়ক গায়িকা উঠে আসছেন, এঁদের জন্য কি লড়াইটা আরো কঠিন হয়ে যাচ্ছে না?
রূপঙ্কর: সেটা জেনেই তো তারা আসছেন। আর যেহেতু অনেকে উঠে আসছেন সেখানে প্রতিযোগিতা বেশী থাকছে। এর ফলে কাজের সংখ্যা ও মান আরো উন্নত হবে বলেই আমি মনে করি। এঁদের স্ট্রাগলটা কিন্তু আমাদের সময়ের চেয়ে অনেক বেশি। আমাদের সময়ে একটা গান গেয়ে সেটা শ্রোতাদের কাছে পৌঁছে দেওয়া অনেক সহজ ছিল। এখন এতরকম মাধ্যম আর এত বেশী প্রতিযোগিতা যে গান হারিয়ে যেতে সময় লাগে না। আর এখন তো শুধুমাত্র গান গাইলেই হয় না, আরও অনেক কিছু জানতে হয়। কিভাবে তাকে স্টেজে দাঁড়িয়ে গাইতে হবে, কেমন দেখতে লাগবে, কী পোশাক পরতে হবে এই সবকিছু মাথায় রাখতে হয়। তাই ওদের লড়াইটা অনেক বেশী কঠিন।
প্রশ্ন: রিয়ালিটি শোয়ে কী কী জিনিস মাথায় রাখতে হয় বিচারকদের, শুধুই গান নাকি গানের সঙ্গে স্টেজ পারফরম্যান্সের জন্যেও নম্বর দিতে হয়?
রূপঙ্কর: দুটোই দেখতে হয়। গান আর পারফরম্যান্স ৫০-৫০ নম্বর থাকে। এই চ্যালেঞ্জগুলো ওদের অনেক বেশী। আমাদের সময়েও স্টেজে কিভাবে গাইতে হয় সেটা জানতে হতো, এটা শেখার মতোই জিনিস। যদিও এগুলো চিরকালই একজন শিল্পীর সহজাত ক্ষমতা বলেই ধরা হয়, তবু আমি বলবো আমাদের সময় এগুলো এত নিখুঁতভাবে করার চাপ ছিল না। তবে সেই সময়েও যেমন লড়াই করে নিজের জায়গাটা ধরে রাখতে হতো এখনও সেটা করতে হয়। বরং এখন সেই চ্যালেঞ্জটা আরো অনেক কঠিন।
প্রশ্ন: রিয়ালিটি শোয়ের ফাইনালে মুম্বইয়ের নামী শিল্পীরা ছিলেন, কলকাতা থেকে তুমি আর লোপাদি (লোপামুদ্রা মিত্র) ছিলে। সেখানে কী কিছুটা কোণঠাসা লাগছিল নিজেদের? বাংলা গান তো প্রায় শোনাই গেল না ফাইনালে।
রূপঙ্কর: কোণঠাসা হওয়াটাই স্বাভাবিক বলে আমার মনে হয়। কিশোর কুমারের জনপ্রিয়তা চিরকালই শ্যামল মিত্রের চেয়ে অনেক বেশী ছিল, আর লতাজীর জনপ্রিয়তা সন্ধ্যা মুখার্জীর চেয়ে বেশী। এটাই স্বাভাবিক। সর্বভারতীয় স্তরে বিখ্যাত হলে তাঁকে বেশী হাইলাইট করা হবে এটা খুব স্বাভাবিক ঘটনা। আমি এসব নিয়ে কোনরকম অভিযোগে বিশ্বাসী নই। যেটা বাস্তব সেটা না বোঝার কিছু নেই। আর বাংলা গান রিয়ালিটি শোতে চলে না, বাংলা গানে টিআরপি কমে যায়, চ্যানেল কর্তারা প্রমাণ করে দিয়েছেন, কাজেই কিছু বলার নেই। খারাপ লাগা থাকবেই, তবে বাস্তবকে মেনে নেওয়া ছাড়া কিছু করারও নেই আমাদের।
প্রশ্ন: গায়ক না হলে রূপঙ্কর বাগচী কী হতেন?
রূপঙ্কর: কী হতাম…(একটু ভেবে), হয়তো অভিনেতা হতাম। অভিনয় করতে আমার ভালই লাগে। মাঝে মাঝেই করে থাকি, ভবিষ্যতেও করবো। তবে সেটার জন্য গানের সঙ্গে কমপ্রোমাইজ করবো না এটুকু বলতে পারি।
প্রশ্ন: পুজোয় তো এবার অনুষ্ঠান নেই বোধহয়। প্রতি বছর যেটা থাকেই। পুজোয় কী করবে ভেবেছ?
রূপঙ্কর: গত সতেরো বছর আমি পুজোয় কলকাতায় থাকতে পারিনি। এ বছর থাকবো। চাকদায় একটা অনুষ্ঠান আছে। এছাড়া কিছু অনলাইন অনুষ্ঠানও করার কথা। পরিস্থিতি ঠিক হতে কতদিন লাগবে জানি না। ততদিন সকলেই টিকে থাকার জন্য অনলাইনে গান গাইছেন, আমিও গাইছি। কিন্তু সেটা একটা স্টেজ শোয়ের জায়গা নিতে পারে না কোনভাবেই। স্টেজে দাঁড়িয়ে একটা অনুষ্ঠান করার পিছনে যে পরিশ্রম থাকে তার যোগ্য প্রশংসা, অর্থ বা তৃপ্তি কোনটাই অনলাইন শোয়ে আসা সম্ভব নয়। তবু করতে হচ্ছে উপায় নেই বলেই। সকলের মতো আমিও অপেক্ষায় রয়েছি সবকিছু স্বাভাবিক হবার।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন
দারুন লাগল। ইন্টার্ভিউটি মনে রাখার মতো।