micro-story-aaral

আড়াল
দেবব্রত দাশ


“আরে করছ কী তুমি ঐশী, পাবলিক ট্রান্সপোর্টে বাড়ি ফিরবে? — আশ্চর্য! তোমার মতো টলিউডের একজন প্রথম সারির সেলেব্রিটি -সুন্দরী গাড়িতে না গিয়ে… না না না — আমি পৌঁছে দিচ্ছি তোমায় আমার গাড়িতে।”
“কোনও অসুবিধে হয় না আমার!” মুখে মৃদু হাসির রেখা এঁকে ঐশী বলে, “তুমি শুধু শুধু ব্যস্ত হচ্ছ কেন বলো তো আহেরি !”
“আরে— আমিও যাব নর্থে। না হয় তোমার জন্যে আর একটু এগিয়ে তোমাকে…”
“আসলে, কারণটা অন্য।” কথা শেষ করতে না দিয়ে ঐশী বলে, “আহেরি, তুমি তো বহুদিন পরে এলে স্টুডিওতে, তাই জানো না যে, আমি রোজ কাজের শেষে এবং কাজে আসার সময়েও পাবলিক ট্রান্সপোর্ট অ্যাভেল করি!”
“সত্যি সত্যিই তাই!” আহেরির চোখ কপালে উঠে যায়, “আর ইউ নট জোকিং ঐশী ?”
“না, একদম না।” ঐশীর ঠোঁটে রহস্যময় হাসি, “ইন্ডাস্ট্রির সকলেই জানে, তুমি বিদেশে বহু বছর কাটিয়ে সবে দেশে ফিরলে তো, তাই…!”
“তা — জনতা-জনার্দন তোমাকে দেখে রিঅ্যাক্ট করে না”
“আরে — সুযোগই দিই না রিঅ্যাক্ট করার ।”
“মানে?”
“চলো, চলো আমার সঙ্গে ।”
“কোথায়?”
“কোথায় আবার…আমার ড্রেসিংরুমে! মানে বুঝতে গেলে ওখানে যে যেতেই হবে তোমায় আহেরি ।”

দুই


“এই দ্যাখো — দেখেছ? আমার কস্টিউম চেঞ্জ করে তার উপর পরব এটা।”
“মাই গুডনেস! রোজই তুমি এটা পরে আসা-যাওয়া করো?”
“হ্যাঁ, কত সিম্পল অ্যারেঞ্জমেন্ট বলো তুমি! জনতা-জনার্দন দেখতে পাবে শুধু চোখদুটো আমার, তাই তো? চাইলে তোমাকে একটা দিতে পারি, স্পেয়ার আছে আমার কাছে।”
“আমি বুঝতে পারছি না — এ.সি- গাড়ির আরাম-বিলাস ছেড়ে এই জবরজঙ বোরখা পরে কেন তুমি খামোকা…”
“হিসেবটা খুবই সোজা। টালিগঞ্জ থেকে মেট্রো আমাকে প্রতিদিন দমদমে পৌঁছে দেয় ঘড়ি ধরে চৌত্রিশ মিনিটে আর আমি যদি বাই রোড গাড়ি করে যেতাম, তাহলে জ্যামজট কাটিয়ে কম করে লাগত তিনগুণ সময়।” ঐশীর কণ্ঠস্বরে কৌতুক, “স্পেয়ার বোরখাটা নেবে নাকি তুমি?— একদম হেজিটেট কোরো না আহেরি, ভাবনাচিন্তা করে কাল আমায় বোলো। তোমার অ্যাপার্টমেন্ট তো আরও কাছে…শোভাবাজার স্টেশনে নামলেই ওয়াকিং রেঞ্জে।”

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

3 thoughts on “micro-story-aaral

  1. অত্যন্ত সুখপাঠ্য অণুগল্পটি পড়ে শেষ করলাম। এ প্রসঙ্গে লিখতে ইচ্ছা করছে, বিখ্যাত চিত্রপরিচালক ঋতুপর্ণ ঘোষের ফার্স্ট পার্সন বইয়ের প্রথম খন্ডে উনি লিখেছিলেন, উনি একবার প্রীতি জিন্টাকে জিজ্ঞেস করেছিলেন,উনি বোরখা কেন পরেন? প্রীতি উত্তর দিয়েছিলেন, সমস্ত অবয়র ঢাকা থাকা সত্ত্বেও দুটো চোখ খোলা থাকে,এবং সেটি দেখে পুরুষের দৃষ্টি তাকে কীভাবে কল্পনা করে সেটা দেখে ও ভেবে প্রীতির খুব মজা লাগে,তাই উনি মাঝে মাঝেই বোরখা পরে জনসমক্ষে বেরোন।

    আর আমাদের বাংলার অভিনেত্রী রচনা ব্যানার্জিও নিজের ছেলেকে টিউশন পড়তে নিয়ে যাবেন বলে বোরখা পরে মেট্রোতে যাতায়াত করতেন ওই ঠিক গল্পের মতো একই কারণে।
    গল্পটিতে এই আড়াল করার ব্যাপারটা সামগ্রিক ও অনেক বড়ো অর্থে ব্যবহৃত হয়েছে। এত সুন্দর একটি অণুগল্প আমাদের উপহার দেওয়ার জন্য Debabrata Das দাদাকে
    অভিনন্দন জানাই ।

  2. বোরখাটা বড্ড ক্লিশেড হয়ে গেলো না? এটাকে মাস্ক হিসেবে দেখালে বেশ সময়োপযোগী হতো মনে হয়।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *