ফিল্ম রিভিউ
অদিতি বসুরায়
ছবির রোলার কোস্টার শুরু হয় একটি মেয়েকে দিয়ে। এই মেয়েটি আই এ এস অফিসার। মেয়েটি স্বামীকে হত্যার অপরাধে জেল খাটছে। মেয়েটিকে একটা অন্ধকার, ভুতুড়ে প্রাসাদে রাখলে, সে হয়ে ওঠে এক মৃত রাণীর আত্মার মিডিয়াম। মেয়েটির নাম চঞ্চল চৌহান( ভূমি পেডনেকর )। মেয়েটিই এই ছবির চালিকা। নায়িকার চরিত্রের এই অসামান্য কম্বিনেশন, দুর্গামতী ছবিটি শুরু হওয়ার মিনিট পনেরোর মধ্যে আমরা জেনে যাব। টাইটেল কার্ড শেষ হতে না হতেই – ক্যামেরা জাম্প কাট করে চলে যায় একটা গ্রামে, যেখানে গর্ভবতী নারী থেকে শিশুকে কেউ হত্যা করছে নির্বিচারে – গোড়াতেই প্লটের পূর্বাভাষ রচনা করে দেয় এই সিনটি। যদি এটুকুতেই ধরে নেন, এবার একখানা জবরদস্ত ভূতের ছবি শুরু হতে যাচ্ছে – তবে এক্ষুনি এক্ষুনি সিদ্ধান্ত নিয়ে না নেওয়াই ভাল – ছবিটার শেষে আপনি সামান্য হলেও অবাক হবেনই। এবার গল্পের কথায় আসা যাক ! রানী দুর্গামতীর পরিত্যক্ত্ব হাভেলিতে দিন – দুপুরেও গ্রামের লোক পা রাখে না, রাতে তো দূরের কথা। দুটি তথ্য এই ব্যাপারে পাওয়া যায় ! প্রথমত, শোনা যায়, অতীতে দুর্গামতী নামের এক রানী ছিলেন এবং প্রজাদের মধ্যে কেউ, তাঁর আদেশের বিরুদ্ধে গেলেই তাকে প্রাসাদে বন্দী করে হত্যা করতেন। প্রবল প্রতাপশালি সেই রানীর আত্মা এখনও সেই প্রাসাদে ঘুরে বেড়ায় এবং অনিষ্ট করে মানুষের। এবং কয়েক বছর আগে নাকি দুর্গামতী নামের একটি মেয়েকে গাঁয়ের কয়েকজন যুবক এই হাভেলিতে পিকনিক করতে নিয়ে আসে এবং পরে মেয়েটিকে গণ –ধর্ষণ করে পালিয়ে যায় ও মেয়েটি গলায় দড়ি দিয়ে ওই প্রাসাদের মধ্যেই আত্মহত্যা করে। এহেন হন্টেড হাউসে অপরাধী চঞ্চল চৌহানকে নিয়ে যাওয়া হয় সি বি আই এনকোয়ারির ট্রায়ালে এবং সেখানেই তাকে রাখা হয়। সঙ্গে মাত্র তিনজন পুলিস কনস্টেবল তাও তারা রাতে প্রাসাদের বাইরে থাকে। প্রাসাদে সে একেবারে একা। প্রথম রাত থেকে চমকপ্রদ সব ঘটনা ঘটতে থাকে সেখানে। এরপর যা যা ঘটে – তার জন্যে ছবিটা দেখা প্রয়োজন। ভূমি পেডনেকর অসামান্য কাজ করেছেন। তাঁকে যোগ্য সহায়তা করেছেন যীশু সেনগুপ্ত এবং আরশাদ ওয়ারশি। আরশাদ ছবিতে ঈশ্বরপ্রসাদ নামের এক মন্ত্রীর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন। কিছু কিছু দৃশ্যে তাঁর ম্যানারিজম অতিরঞ্জিত এবং চড়া দাগের মনে হলেও চরিত্রের প্রয়োজনে তা যথাযথ। একই কথা বলা যায় ভূমির ক্ষেত্রেও। বিশেষ করে রানী দুর্গামতীর ভূমিকায় তিনি অত্যন্ত মেলোড্রামাটিক । তবে এটাও মানিয়ে যায় চিত্রনাট্যের খাতিরে। পরিচালক অশোক, ছবিটির নির্মাণে আর একটু যত্ন নিলে, ছবিটি আর একটু বাস্তবসম্মত হতে পারতো! যেমন – মানসিক হাসপাতালে ওই ভাবে যখন খুশি, যে কেউ ঢুকে যেতে পারে না। একজন কয়েদিকে হঠাত করে একটা প্রাসাদে, একেবারে একাও রাখে না কখনও পুলিশ। সবচেয়ে বড় কথা, মিডিয়ার এই রমরমার যুগে, কোনও মন্ত্রী দিনের পর দিন তাঁর অসৎ কাজকারবার চালিয়ে যাবেন এবং কাকপক্ষীটি টের পাবে না – এও কার্যত অবিশ্বাস্য! তবে কিনা মাশালা হিন্দি ছবি দেখতে বসলে যুক্তি-বুদ্ধির ধার কম রাখাই সুবিধাজনক। শেষে এটুকু বলা যায়, দুর্গামতীর গল্প বেশ আশাব্যঞ্জক যাকে বলে প্রমিসিং – কিন্তু পরিচালকের আর একটু মনোযোগ দাবী করে ছবিটি। ওইটূকূ বাদ দিলে,এই ছবিটি না দেখার কোনও কারণ নেই কারণ ছবির শেষ অব্দি আপনি মূল টুইস্টটি আন্দাজ করতে পারবেন বলে, মনে হয় না। ওটিটি প্ল্যাটফর্ম-এ সম্প্রতি রিলিজ করেছে দুর্গামতী।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন