সম্পাদকের কলমে…
কুড়িটা বছর অতিক্রান্ত হলো ওয়ার্ল্ড ট্রেড সেন্টারে বিমান হানার অকল্পনীয় সন্ত্রাস। ৯/১১ র হিসাব মেটাতে আমেরিকার সন্ত্রাসবাদ নির্মূল করার শপথ, ফলত আফগানিস্তানে সেনা মোতায়েন। ঠিক কুড়ি বছর পরে আফগান নাগরিকদের বেঁচে থাকার স্বপ্নগুলো যখন পুনরায় কব্জা করে নিল তালিবানেরা, তখন, আশ্চর্যজনকভাবে বাকি পৃথিবীকে আমরা নিশ্চুপ দর্শকের ভূমিকায় দেখতে পেলাম। কিভাবে সাধারণ আফগান নাগরিক দেশ ছেড়ে পালাতে চেষ্টা করছে, কিভাবে তালিবানি ফতোয়ায় তাদের ওপরে নেমে আসছে মধ্যযুগীয় বর্বর শাস্তি- মিডিয়ার কৃতিত্বে কিছুটা সকলেই দেখতে পাচ্ছে। শিল্পী, সাহিত্যিক, কবি সমাজকর্মীদের একবিন্দুও নিরাপত্তা নেই ওদেশে, কারন তারাই মানুষকে বাঁচার গল্প শোনায়।
গ্লোবালাইজেশন নিয়ে আমরা বড় গর্বিত ছিলাম। আফগানদের বিপন্ন মানবাধিকারের প্রশ্নে বাকি পৃথিবীর গা-বাঁচানো নীতি প্রমাণ করে দিল ‘গ্লোবালাইজেশন’ কেবল রাজনৈতিক আর অর্থনৈতিক মুনাফা ঘরে তোলার সময় প্রয়োগ করতে হয়, মানবতা বিপন্ন হলে ‘যার যার তার তার’ নীতি। বৃথাই বিশ্বাস করেছিলেন কবি,
“আগামি পৃথিবী আর রবে না খন্ডিত হয়ে
সমুদ্র ও পাহাড়ের সীমান্ত রেখায়
নিঃসঙ্গ দ্বীপের মত ছিন্ন অসহায়
হবে তার সীমার বিস্তার
এক মহাদেশ আর এক পরিবার।”
শারদীয় উৎসব দুয়ারে, যা বাংলাসাহিত্যেরও উৎসব। শিল্প-সাহিত্যই তো মানুষের কথা মানুষের কাছে পৌঁছে দেবার একমাত্র মাধ্যম, শতাব্দী পার করেও যা টিঁকে থাকে। সাহিত্যিকদের রাজনৈতিক ভাবে সচেতন থাকাটা অত্যন্ত জরুরি, এটাই সময়ের দাবি। এখন যদিও সময় অত্যন্ত দুঃসময় হয়ে পড়েছে, তবু আমাদের এগোতে হবে, মাথা সোজা রেখে, দৃঢ় পায়ে।
নানারকম সমস্যাকে দূরে সরিয়ে রেখে ‘অপারবাংলা’ তৃতীয় শারদীয় সংখ্যা প্রকাশিত হল নির্ধারিত সময়ে। উৎসবের সঙ্গে মানানসই এই সংখ্যার আয়োজন। গল্প, কবিতা এবং অন্যান্য নিয়মিত বিভাগের সঙ্গে এতে থাকছে উপন্যাস আর ‘বিবিধ’ বিভাগ, যাতে রয়েছে নানারকম মন ভালো করা লেখা। সব শ্রেণির পাঠকের প্রত্যাশা পূরণ করতে সচেষ্ট ‘অপারবাংলা’।
ওয়েবজিনে উপন্যাস কতটা পাঠোপযোগী সেটা সময় বলবে। এবার একটা বড় আর একটা ছোট উপন্যাস প্রকাশ করা হলো। পাঠকদের মন্তব্যের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করবো। বাইশটা গল্প আর তেইশটা অণুগল্প নিয়ে এক বিপুল সমাহার পাঠকদের কাছে। এপার ওপার সাগরপাড়ের এই মুহূর্তের বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্র সম্ভার খালি গল্পতে নয়, আরো অনেক বিশেষ বিভাগে আছেন। কালকূট নিয়ে সমরেশ বসুর ছেলে, নবকুমার বসুর থেকে আর কে ভালো বলতে পারবেন? পড়ুন তাঁর লেখা বিবিধ বিভাগে। বাংলা সাহিত্যর একের পর এক ইন্দ্রপতন খুব তাড়াতাড়ি আমাদের হতদরিদ্র করেছে। তাঁদের সারাজীবনের কাজ আমাদের দুর্লভ সংগ্রহ। সত্যজিৎ রায়, উৎপল দত্ত, ননী ভৌমিক, অনীশ দেব কে নিয়ে স্মৃতিচারণা, স্মৃতিকথা তাঁদের প্রতি আমাদের শ্রদ্ধাজ্ঞাপন আর অপারবাংলার পাঠকদের কাছে আরো একবার স্মরণ করিয়ে দেওয়া।
অপারবাংলার নাম, কাজ আর উদ্দেশ্যের সাথে সঙ্গতি রেখেই দেশ বিদেশের প্রেক্ষাপটে প্রবন্ধ, ভ্রমণ, বিবিধ, রান্নাঘর এবং অন্যান্য বিভাগ সাজানো হয়েছে। পবিত্র সরকার স্যারের কিছুদিন আগে আমেরিকার এক সাহিত্য সম্মেলনে যোগদান এবং সেখানে আলোচ্য বিষয়ে অনেক প্রশ্ন আর তার উত্তর নিয়ে এসেছেন প্রবন্ধতে। জয়া চৌধুরীর মেক্সিকোর ইতিহাস নিয়ে বলিষ্ট লেখনী অনেক অজানা তথ্যে ভরা। অনুবাদে তপন বন্দ্যোপাধ্যায়, বৈশাখী ঠাকুর এবং বিপ্লব গঙ্গোপাধ্যায় কলম ধরেছেন অন্য দেশের, ভিন্ন সময়ের সাহিত্য নিয়ে। রান্নাঘর বিভাগকে আমরা এবার একটু অন্য ভাবে সাজিয়েছি কিচেন কুইন শুক্লা মুখোপাধ্যায়ের লোভনীয় রেসিপি, পাঞ্চালি দত্তর ঠাকুরবাড়ির রান্নার ইতিহাস আর তৃষ্ণা বসাকের প্রেসার কুকারের সাথে বাঙালির সম্পর্কের নিখুঁত বিশ্লেষণে।
অপারবাংলার পাঠক পরিবার সারা বিশ্বে ছড়িয়ে আছেন। বহু বছর বিভিন্ন দেশে থাকা বাঙালিদের সাহিত্যচর্চা ও রুচির পরিবর্তনের কথা মাথায় রেখে এবারের শারদীয়ার লেখাগুলো আশা করি আপনাদের সবার ভালো লাগবে।
পাঠকদের সম্পূর্ণ নিখরচায় এমন উৎকর্ষ শারদীয়া বাংলা সাহিত্য সম্ভার সারা বিশ্বতেই বিরল। আপনাদের সহযোগিতা আমাদের চলার পাথেয়। বরাবরের মতো এবারো আমাদের সাথে থাকবেন এই কামনা করি। ২০২১ এর এটাই আমাদের শেষ সংখ্যা। পরবর্তী সংখ্যা নতুন বছরের জানুয়ারিতে নিয়ে আসবো আমরা।
অপারবাংলা পরিবার থেকে আপনাদের এবং আপনার পরিবারকে শারদ প্রীতি ও শুভেচ্ছা।
ধন্যবাদ
শুভ নাথ
সম্পাদক – অপারবাংলা ওয়েবজিন সাহিত্য পত্রিকা
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন
ধন্যবাদ অপার বাংলার সমস্ত গুণিবৃন্দে, মেধা মনন আর পরিযত্নের যুগল মিলনে এই সাহিত্যবাসর।