aparbangla-editorial-edition-22

সম্পাদকীয়

বাংলা এবং বাঙালি ভালো নেই। সমাজের কঠিন ব্যাধি পরতে পরতে জড়িয়ে ধরে বিকল করে দিয়েছে তার শরীর-মন-আত্মা, রাষ্ট্র ব্যবস্থার ওপর থেকে ভরসার ভিত গেছে নড়ে। এই ক্যানসারকে শরীর থেকে ছেঁটে না ফেলা পর্যন্ত শান্তি লাভের আশা নেই।

একটি নিষ্ঠুর হত্যা হয়েছিল আগষ্টের নয় তারিখে, যা একটি অভূতপূর্ব প্রাতিষ্ঠানিক অপরাধ। সেই অপরাধকে আড়াল করতে রাষ্ঠ্রব্যবস্থা যখন সামনে এসে দাঁড়াল, মুছে ফেলতে চাইল অপরাধের সব প্রমাণ, তখনই দেখা গেল ম্যাজিক। মুখ বুজে মেনে নিতে থাকা বাঙালি জাতিকে, সর্বংসহা মায়ের জাতকে এই প্রথম গর্জে উঠতে দেখা গেল স্বতঃস্ফূর্ত প্রতিবাদে। জাতি-ধর্ম-লিঙ্গ-পেশার পরিচয়কে দূরে সরিয়ে রেখে সমস্ত শ্রেণীর বাঙালি দিনরাত এক করে চিৎকার করছে তিলোত্তমার বিচারের দাবিতে। এই দাবি মুছে দিয়েছে স্থান-কালের ব্যবধান, পৃথিবীর যে দেশে বাঙালি আছে, সেখানেই চলছে প্রতিবাদ, এমন ঘটনা এর আগে কবে দেখেছে বিশ্ব? বিশাল এক সমুদ্রের মাঝে যেন পড়েছে ছোট্ট একটা ঢিল, তা থেকে জন্ম নিচ্ছে একের পর এক তরঙ্গ, সেই তরঙ্গ জন্ম দিচ্ছে আরও তরঙ্গের, ছড়িয়ে পড়ছে দূরে, আরও দূরে।

এ যেন এক যুগ সন্ধিক্ষণ, সাংস্কৃতিক বিপ্লবের সূচনা লগ্ন। প্রতিবাদের ভাষা, প্রতিরোধের আগুন থেকে জন্ম নিচ্ছে প্রিয় বর্ণমালা, বিপ্লবের ভাষায় লেখা হতে থাকছে গান, কবিতা, নাটক, আঁকা হচ্ছে ছবি।

পার্বণ-প্রিয় বাঙালি এই মুহূর্তে উৎসবের আহ্বান থেকে মুখ ফিরিয়ে রয়েছে, বাঙালি জাতির মনের মধ্যে এক নিঃশব্দ বিপ্লব ঘটে গেছে, যার বিন্দুমাত্র আভাস পাওয়া যায়নি আগে।

বিপ্লব ও দ্রোহের আগুনে পুড়েছে আরেক বাংলাও, রাষ্ট্র ব্যবস্থার ভিত নড়ে গেছে সেখানেও। দুই বাংলাই বড় অস্থির এখন, তাই ক্যালেন্ডার যদিও বলছে আগমণী গান গাওয়ার সময় এসে গেছে তবু বাঙালির হৃদয়ে সাড়া জাগছে না। অপারবাংলার এই সংখ্যা তাই এই বছরের জন্য শুধুই শারদীয়া সংখ্যা, উৎসব সংখ্যা নয়।

বিগত ৮ই আগষ্ট চলে গেছেন একজন প্রতিভাবান মানুষ। তাঁর রাজনৈতিক জীবনটা যদি সাহিত্যকর্মকে এবং সাহিত্য অনুরাগকে আড়াল করে না দিত, তবে বাঙালি তাঁকে চিনত একজন বিশিষ্ট সাহিত্যিক হিসাবে। তিনি বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। ছাত্রজীবন থেকে রাজনৈতিক কর্মকান্ডই তাঁর পরিচয় হলেও তিনি ছিলেন আপাদমস্তক সাহিত্যকর্মী। নিজে খুব বেশি লিখতে পারেননি, যতটুকু লিখেছেন তাতে রেখে গেছেন মুন্সীয়ানার ছাপ। ভাষাও জানতেন বেশ কয়েকটি, তাঁর করা মার্কেজের ভাষান্তর “বিপন্ন জাহাজের এক নাবিকের গল্প” বা “চিলিতে গোপনে” পড়া পাঠক জানেন, অনুবাদকর্মে মন দিলে তিনি হতে পারতেন একজন প্রথমসারির অনুবাদক। এই সাহিত্যসংস্কৃতি অনুরাগী মানুষটাকে আমরা শ্রদ্ধা জানাই।

এবারের শারদীয়া সংখ্যার সব বিভাগেই পাবেন অসাধারণ লেখা। “বিবিধ” বিভাগ এবার সমৃদ্ধ কালকূটের শত বর্ষ স্মরণে তাঁর সুযোগ্য পুত্র নবকুমার বসু র লেখা, মুক্ত গদ্য, রম্য রচনা, ফিচার আর পুজো নিয়ে। পড়তে পারবেন পাঁচটি চমৎকার উপন্যাসিকা এসময়ের পাঁচ প্রখ্যাত লেখকের কলমে। এক গুচ্ছ গল্প, প্রবন্ধ, অণুগল্প, কবিতা, অনুবাদ, ভ্রমণ আর নিয়মিত বিভাগ গুলো নিয়ে পরিপূর্ণ একটা সংখ্যা পুজোর প্রাক্কালে আপনাদের কাছে আনতে পেরে আমরা আনন্দিত। স্বাভাবিক ভাবেই অনেক লেখায় আছে তিলোত্তমার রেশ। বাঙালি সমাজকে নাড়িয়ে দেওয়া এমন অপামর আন্দোলন এ সামিল অপারবাংলার বৃহত্তর পরিবার।

উৎসব শুভ হোক। আসুক শুভ বুদ্ধির আর চেতনার বিকাশ। আমরা সবাই মিলে সামিল হই এই শুদ্ধিকরণে।

শুভ নাথ
সম্পাদক
অপারবাংলা ত্রৈমাসিক বাংলা সাহিত্য পত্রিকা




এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *