সম্পাদকীয়, অক্টোবর, ২০২০

সম্পাদকীয়

এই সংখ্যার সম্পাদকীয় লেখার শুরুতে ফিরে যাব ঠিক দুশো বছর পেছনে, কারন একটাই, আজ যা ঘটছে তা নির্ধারিত হয়ে গেছিল দুশো বছর আগে। ১৮২০ সালের ২৬শে ডিসেম্বর বীরসিংহ গ্রামের সেই সিংহহৃদয় বীরের জন্ম না হলে বাংলাভাষা এবং বাঙালির সাহিত্য-সংস্কৃতি চর্চাকে পিছিয়ে থাকতে হত আরও কত বছর, জানা নেই।

তিনি নিজে ‘বিদ্যাসাগর’ হলে সেটা কেবল তাঁর নিজস্ব সম্পদ, কিন্তু সেটা তার কখনোই লক্ষ্য ছিল না। বিদ্যাকে সকলের মধ্যে ছড়িয়ে দেবার জন্য তিনি তাঁর একটিমাত্র জীবনে যে বিপুল এবং বিচিত্র আয়োজন করে গেছেন, তা জানলে বিস্মিত হতে হয়। কেননা এই আয়োজনে কেবল শ্রম আর সুচিন্তনই লাগেনি, লেগেছে বিপুল পরিমাণ অর্থসম্পদও। নিজে একবেলা খেয়ে, কখনো বা উপবাসে থেকেও এই শিক্ষার স্বপ্নবয়নের কাজ তিনি চালিয়ে গেছেন আজীবন।

বাংলাভাষার মত একটি সম্ভাবনাময় এবং সম্পদশালী ভাষার উত্তরাধিকার বহন করছি আমরা যাঁরা, দ্বিশতজন্মবার্ষিকীতে মহামানব ঈশ্বরচন্দ্রকে আমাদের শ্রদ্ধা।

যদিও পৃথিবীর শরীর এখন ব্যাধিগ্রস্ত, উৎসবযাপনের জন্য কোনো প্রস্তুতি নেই তার শরীরে মনে, তবুও বাঙালির পক্ষে শারদ আয়োজন না করে থাকা বড় শক্ত। আর সে আয়োজনে নতুন জামা জুতোর সাথে নতুন সাহিত্য পত্রিকার জন্য অপেক্ষা করে থাকাটাও আমাদের পরম্পরা। অতিমারী আতঙ্কে জীবনের সব স্বাভাবিকতাকে রূদ্ধ করে দিলে, জীবনের প্রতি বিরূদ্ধাচার হবে। আমরা যারা জীবিত, তারা প্রবলভাবে বিশ্বাস করি, আমরা একদিন জিতবই, আর জেতার জন্য প্রথমেই আতঙ্কাসুরকে বধ করতে হবে আমাদের,জীবনের ছন্দে ফিরতে হবে।

শারদসম্ভারে সেজেগুজে হাজির ‘অপারবাংলা’, আপনাদের উৎসবের দিনগুলোর সঙ্গী হতে। দূরে থাকলেও আমাদের হৃদয়ের বন্ধন যেন সুদৃঢ় থাকে, শিউলি আর কাশের ছোঁয়া না থাকলেও আমরা যেন পরস্পরের ভালোবাসার ছোঁয়ায় উদযাপন করতে পারি উৎসবের দিনগুলো, এই কামনা।

এপার ওপার বাংলা সহ সারা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের (আমেরিকা, জার্মানি, সিঙ্গাপুর, ইংল্যান্ড) সুলেখকদের রাশি রাশি গল্প, অণুগল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, রম্যরচনা, অনুবাদ, ভ্রমণ, রান্নাঘর ছাড়াও আমরা এবার নতুন বিভাগ “বিনোদন” শুরু করেছি। বিনোদন বিভাগে তথকথিত রিভিউ ছাড়াও অদিতি আর স্বাতী বিশ্লেষণ করেছে কিছু অজানা তথ্য অন্য দৃষ্টিভঙ্গিতে। আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস, পাঠকদের ক্রিটিকাল থিংকিং নিয়ে ভাবতে বাধ্য করবে। আপনাদের মতামত দিয়ে আমাদের ঋদ্ধ করলে আমরা আরো ভালো কাজ আগামীতে আপনাদের সামনে নিয়ে আসতে পারবো। আপনাদের মতামত অন্য বিভাগের কথাতেও সমান ভাবে প্রযোজ্য এবং আপনাদের মতামত আমাদের এগিয়ে চলার পাথেয়।

আশা করি শারদীয়ার প্রাক্কালে এই নতুন পৃথিবীতে আপনাদের একরাশ ভালো লাগা আমরা এনে দিতে পেরেছি এই সংখ্যাতে। সুপ্রিয় চৌধুরী র লেখায় কলকাতার অগোচরের নায়কদের কথা মন নাড়িয়ে দেবে। অমর মিত্রর ভ্রমণ কাহিনীতে আমরা জানতে পারবো বাংলা সাহিত্যের বিদেশের প্রভাবের কথা, আমাদের গর্ব বাংলা ভাষার কথা। বিভিন্ন স্বাদের লেখাতে শ্রদ্ধেয় ত্রিদিব কুমার চট্ট্যোপাধ্যায়, তপন বন্দ্যোপাধ্যায়, সৈকত মুখোপাধ্যায়, আলমগীর রেজা চৌধুরী, কৃষ্ণেন্দু মুখোপাধ্যায়, রূপা মজুমদার, চুমকি চট্টোপাধ্যায়, প্রচেত গুপ্ত, হিমাদ্রি কিশোর দাশগুপ্ত, জয়ন্ত দে, অভিজ্ঞান রায়চৌধুরী, উম্মে মুসলিমা, মেঘ অদিতি, ইন্দ্রনীল সান্যাল, তাপস কুমার দত্ত, পার্থ দে, সুধীর দত্ত, নাজমুন নেসা, বিভাস রায়চৌধুরী, চৈতালী চট্টোপাধ্যায়, মন্দাক্রান্তা সেন, বিমল গুহ, বীথি চট্ট্যোপাধ্যায় সহ আরো অনেক এই মুহূর্তের বাংলা সাহিত্যের উজ্জ্বল নক্ষত্রের সম্ভার অপারবাংলার পাঠক পরিবারের কাছে গর্বের।

শারদীয়ার প্রীতি ও শুভেচ্ছা অপারবাংলা পরিবারের পক্ষ থেকে। সকলে আনন্দে ও শান্তিপূর্ণ ভাবে আগামী দিন গুলো উপভোগ করুন।

ধন্যবাদ,
শুভ নাথ
সম্পাদক, অপারবাংলা
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

4 thoughts on “সম্পাদকীয়, অক্টোবর, ২০২০

  1. খুব সুন্দর সম্পাদকীয়। একরাশ শুভেচ্ছা জানালাম।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *