স্মৃতিকথা
শ্যামলী আচার্য
ব্যস্ত এস সি মল্লিক রোড। বাঁদিকে গেলে গড়িয়া বাসস্ট্যাণ্ড। ডানদিকে বান্টি সিনেমাহল। ঠিক মাঝামাঝি বড় রাস্তার উল্টোদিকেই রথতলা গভর্নমেন্ট কোয়ার্টার্স। সিনেমাহলটি কালের গর্ভে হারিয়ে এক আকাশছোঁয়া ফ্ল্যাটবাড়ি তৈরি হলেও হাউজিঙটি আজও রয়েছে একইভাবে, স্বমহিমায়। শুধু তার গায়ে এখন সরকারি নীল-সাদা রঙের প্রলেপ, গাছপালাও কাটা পড়েছে উন্নয়নের প্রয়োজনে। সরকারি কেরানিদের জন্য মাথা গোঁজার ঠাঁই। দু’কামরার ফ্ল্যাট। খাবার জায়গা। রান্নাঘর আর বাথরুম। আরও আছে। একটি চমৎকার বারান্দা। সাতের দশকে আমাদের ‘কে’ ব্লকের তিন নম্বর ফ্ল্যাটটি ছিল দোতলায়। আর তার বারান্দাটি ঝুঁকে পড়েছে বড় রাস্তার দিকে কোয়ার্টার্স-এর সীমানা ঘেরা পাঁচিলের ওপরে। সারাদিন সেই বারান্দা দিয়ে শুষে নেওয়া যায় চলমান ব্যস্ততা।
এখন অনেক বেশি সাজানো-গোছানো। মাঠ আছে, কিন্তু মাঠে হুটোপাটি করে খেলার লোক কমেছে। কিন্তু তখন, সেই সাতের দশকের শেষ, আটের দশক জুড়ে একটু অগোছালো, ধুলো-ময়লার সরকারি আবাসনে অনেক আনন্দ ছিল। সরল সোজা খুশি আর মজা। মাটিতে ঘর কেটে এক্কাদোক্কা খেলায় যত দম লাগত, গাদি কিংবা হাডুডুতে দম লাগত আরও বেশি। একটা বা বড়জোর দুটো ডলপুতুলকে রেঁধেবেড়ে নাইয়ে-খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে কেটে যেত ছুটির দুপুর। পুতুলের বিয়ের মজা আর ঝুলন সাজানোর উত্তেজনায় এখন খুঁজে পাই তুচ্ছ জিনিস দিয়ে অসামান্য করে চারদিক সাজিয়ে রাখার ক্ষমতা। অথচ তখন আর্ট অ্যাণ্ড ক্রাফটের এত প্রচলন ছিল না। তখন প্রাইভেট টিউটর লাগত কম; স্কুলের মাস্টারমশাই-দিদিমণিরা অত্যন্ত স্বল্প এবং অনিয়মিত বেতনের পরেও মেধাবী ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে টেনে নিতেন শুধু তাদের ভালো ফলের আশায়। রোজ সকালে পড়া মুখস্থ করার শব্দ, সন্ধ্যায় হারমোনিয়ামের বেলো টিপে সারেগামা রেওয়াজ, দুপুরের বারান্দায় লুঙ্গি গামছা শাড়ি আর ইজেরের সহাবস্থান নিয়ে সে এক নিটোল সময়। সকাল হলেই হরিণঘাটার দুধের ডিপোতে মোটা কাঁচের বোতলে দুধ নিয়ে বাবা বাড়ি ফেরেন। ওপরের ছিপিটা যত্নে রেখে দেওয়া হয় হাঁড়ি-কড়াই মাজার জন্য। উনুনের ছাইয়ের সঙ্গে ওই ছিপিটি দিয়ে মোক্ষম ডলা। রীতিমতো কবজির জোর লাগত বাসন মাজতে। মধ্যবিত্ত পরিবারে তখনও গৃহবধূরাই সব কাজ করেন। পরিচারিকা প্রয়োজন হয় না। ছাই-তেঁতুলের যুগলবন্দিতে স্টিলের বাসন রূপোর মতো ঝিকিয়ে উঠত আর কাঁসা-পিতলের বাসনে লাগত সোনার আভা। বিকেলে পাড়ার টিউবওয়েলে পিতলের ঘড়া, মাটির কলসী, কালো কুঁজোর ভিড়। ওখানেই যা একটু শ্রেণিবৈষম্য।
বাজার অনেকটাই দূরে। তবু রোজ যেতে হয়। কারণ ফ্রিজ তখনও অধরা। প্রতিদিন রান্না, প্রতিদিন চেটেপুটে খেয়ে ফুরিয়ে ফেলা। দুপুরের রান্নায় ‘এসো জন-বোসো জন’-এর কথা ভাবা হত। হঠাৎ কেউ বাড়িতে চলে এলে তাকে ভাত না খাইয়ে ছাড়া যায় নাকি? কিন্তু রাতের রান্না মাপমতো। পরেরদিনের জন্য রেখে দিতে হলেও সানকিতে জল দিয়ে তার মধ্যে রান্না করা ভাত-তরকারি ঝুড়ি চাপা দেওয়া। হিন্ডালিয়ামের বাটি, কলাই করা থালায় খেতে বসে নিজেদের নিম্নবিত্ত বা সর্বহারা মনে হয়নি কখনও। ঠিক যেমন চিনেমাটির অল্প কয়েকটি কাপ-প্লেটই ‘বাইরে’র লোকের জন্য। সেটুকুই পোশাকি বাসন। সাবধানে তাকে তোলা থাকে। জাল লাগানো মীটসেফে ভাতে জল দেওয়া থাকত কতদিন। গরমের সকালে সেই পান্তাভাত দিয়েই ব্রেকফাস্ট। সঙ্গে মুসুর ডাল বা পলতা পাতার বড়া। পশ্চিমবঙ্গীয়দের ছিল পোস্ত’র প্রতি অদম্য টান।
তখনও টিভির উপদ্রব এসে পৌঁছয়নি। মা-কাকিমারা বিকেলে গা ধুয়ে চুল বেঁধে পাড়ার মধ্যে একজোট হয়ে গল্প করতেন। প্রতিবেশির ছেলেমেয়েকে কান মলে বা চড় মেরে শাসন করাই তখন স্বাভাবিক। উলের কুরুশের বা চটের আসনে ডিজাইন বিনিময় আর লাইব্রেরির বই পড়ে প্রতি সপ্তাহে ফেরত দিতে যাওয়া অবশ্যকর্তব্য। সন্ধেটা তখন সিরিয়াল গিলে খায়নি। আর আনন্দের ধারা এখনকার মতো জটিল আর প্যাঁচানো ছিল না। সবই যে তোলা উনুনের সাদা ধোঁয়ার মতো পবিত্র ছিল, তা’ও নয়। কিন্তু মূল্যবোধ শব্দটা তখনও মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় জরুরি অবলম্বন ছিল।
শীতের ছুটি মানে যেমন মামা-মাসি-কাকা-পিসিদের বাড়ি যাওয়া-আসা-থাকা ঠিক তেমনই শীত মানে বিকেলে মাথার ওপর একঝাঁক মশা নিয়ে মাঠে খেলে বেড়ানো। ছোটদের ব্যাডমিন্টন বিকেল থেকে সন্ধে। বড়োদের সাইকেলে হাফ-প্যাডেল প্র্যাকটিস একা একাই। রাস্তার আলো জ্বলার পরে বাচ্চারা বাড়ির বাইরে থাকা গর্হিত অপরাধ। শাঁখ বেজেছে আর বাড়িতে ঢুকে হাত-পা ধুয়ে পড়তে বসিনি মানে সাতদিনের ফাঁসি অবধারিত। অ্যানুয়াল পরীক্ষা দোরগোড়ায় এলেই পাড়ায় সমস্বরে পড়া মুখস্থ’র আওয়াজ। সবাই তখন মাধ্যমিক বোর্ড, সবাই তখন বাংলা মিডিয়াম। পাড়ার স্কুলে হেঁটে হেঁটে যাওয়া আর স্কুলের পোশাক দেখে স্কুলের নাম চিনে ফেলা… স্কুল তখনও ইঁদুরদৌড়ের কারখানা হয়ে ওঠেনি। মাধ্যমিকের নম্বরের আলাদা গুরুত্ব ছিল।
সন্ধেবেলা লোডশেডিং আর হারিকেনের আলোর সঙ্গে ইতিহাস-ভূগোল বইয়ের যে কী প্রবল শত্রুতা। ততক্ষণে ঘুমে চোখ জড়িয়ে আসে যে! পিকে দে সরকার আর কে সি নাগ—এই দুই ভদ্রলোকের ওপর ছেলেমেয়েদের ছিল প্রচণ্ড আক্রোশ। ইংরেজি ট্রানস্লেশন করতে করতে গুলিয়ে যেত চৌবাচ্চায় ঠিক ক’টি নল দিয়ে জল ঢোকে আর বেরোয়। এমন চৌবাচ্চা কারা বানাত কে জানে! বাঁদরেরাই বা তেলমাখানো বাঁশ বেয়ে ওঠানামা করে কেন সময় নষ্ট করত, আজও বুঝিনি।
দুপুর ঠিক বারোটা দশ। হোমিওপ্যাথ ডাক্তারের চেম্বার বন্ধ হয়ে যায় এই সময়। পাশেই দুলালকাকুর দোকান। অলঙ্কার জুয়েলার্স। দোকানের কালো গ্রিলের ফাঁকে দেখা যায় একটা বড় ঘড়ি। স্কুলবাস থেকে নেমে সেটাতেই সময় দেখে নিই। স্কুল বাসের হেল্পার অমূল্যদা বাস থেকে নামিয়ে দেয়। বড় রাস্তা পার হতে হবে। অমূল্যদা হেঁকে বলে, ‘সাবধানে-এ-এ’। সাদা বাস ছেড়ে দেয়। আমি খুব ভালো করে দু’পাশ দেখে রাস্তা পেরোই।
এই শুরু হল আমার অবাধ স্বাধীনতা। বাবার অফিস, মায়ের স্কুলের দিদিমণিগিরি। অতএব, একা এবং একা। পাশের ফ্ল্যাটে মান্তুদের কাছ থেকে ডুপ্লিকেট চাবি নিয়ে দরজা খোলা। ব্যস। আর পায় কে! সাদা কেডস জুতো ছিটকে চলে গেল খাটের তলায়। মোজা দুটো আড়ি করে মুখ ঘুরিয়ে দু’জন দুই দিকে। স্কুলড্রেসের ভারি দায় পড়েছে হ্যাঙ্গারে উঠে ঝুলতে। সে দিব্যি গুটিসুটি পাকিয়ে শুয়ে পড়ল পড়ার টেবিলের কোণায়।
হুড়মুড় করে জল পড়তে শুরু করল বাথরুমের শাওয়ার থেকে। উতল ধারা। লাল মগে ভরে ভরে সেই জল ছিটিয়ে দেওয়া তিনদিকের দেওয়ালে। সমস্ত বাথরুম জুড়ে দাপাদাপি। কাচের শার্সি বেয়ে, সিমেন্টের দেওয়াল বেয়ে জলের ফোঁটারা লাইন করে নামতে থাকে। তখন জম্পেশ ব্যাকগ্রাউণ্ড মিউজিক– ‘এ বৃষ্টিতে কে ভিজবে সে এসো না– বৃষ্টি আমি আজ কিছুতেই থামতে দেব না’…
এই সময় নিজে চেঁচিয়ে গান গাওয়া যায়। ভুল ধরার কেউ নেই ত্রিসীমানায়। যদিও টনসিলে ফোলা গলা। বারোমাস বন্ধ নাক। ‘ম’ কিংবা ‘ন’ বলতে গেলে শোনায় ‘ব’। উঁচু স্কেলে চড়ায় গলা পৌঁছয় না। সেখানে গুনগুন, হুঁ হুঁ। কিছুদিন আগেই শোনা গান। আরতি মুখোপাধ্যায়ের। তাঁর রিনরিনে গলায় এই সেদিন শোনা গেল আন্তর্দেশীয় প্রচারতরঙ্গে।
রান্নাঘরের পাশে মিটসেফের ওপর ঠাকুর্দার বড় রেডিও। ভালভ সেট। ইলেকট্রিক সুইচ টিপলে তার মধ্যে ধীরে ধীরে একটা মায়াবী হলুদ আলো জ্বলে ওঠে। সাদা চৌকো সুইচে অন-অফ। দুপাশে দুটো গোল মোটকা নব। একটা ঘোরালে শব্দ বাড়ে-কমে। আর অন্যটাতে কাঁটা ঘুরে ঘুরে চলে যায় এক স্টেশন থেকে অন্য স্টেশন। ওই কাঁটা ঘোরানো রেডিওটি থাকে মায়ের জিম্মায়। সকালে মায়ের হাতের ছোঁয়ায় বেজে ওঠে বাংলা সংবাদ আর রবীন্দ্রসঙ্গীত। তখন ঘড়ির কাঁটা মিলিয়ে নেওয়া। সাড়ে সাতটা আর সাতটা চল্লিশ। যদিও রোজ সকালের এই রুটিন আমার সামনে ঘটে না। আমার চিরকাল মর্নিং ইশকুল। বরং শনি-রবি আর অন্যান্য ছুটির দিনে পড়ার টেবিলে দুধের গেলাস পৌঁছলেই আমি বুঝতে পারি এইবার সাড়ে সাতটা বাজবে। কিছুক্ষণের মধ্যে রবীন্দ্রসঙ্গীত শুরু হতেই অর্ধেক তরকারি কাটা অবস্থায় বঁটি পেতে রেখেই মা ছুটে গেছে গীতবিতানের কাছে। সেই আশ্চর্য বইয়ের পাতার মধ্যে থেকে উঠে আসছে ‘আরও কত দূরে আছে সে আনন্দধাম’ কিংবা ‘দুয়ারে দাও মোরে রাখিয়া নিত্য কল্যাণ কাজে হে’। যিনি গান গাইছেন, তাঁর নাম অর্ঘ্য সেন। আর রবিবার সকালে ‘রবীন্দ্রসঙ্গীত শিক্ষার আসর’ শুরু হলে বাড়িতে কথা বলা যাবে না। ভাতের হাঁড়ির পাশে খোলা রয়েছে গানের খাতা।
আমাদের মতো পরের প্রজন্মের জন্য একটি ছোট্ট ট্রানজিস্টার। ফিলিপ্স। তার গায়ে একটি নস্যি রঙের জ্যাকেট। জ্যাকেটের বোতাম খুলে জামা ছাড়িয়ে ফেললে দিব্যি ফর্সা ধবধবে চেহারা তার। রোজ একলা দুপুরবেলায় এটাই ছিল আমার একমাত্র কথা-বলা সঙ্গী। বিবিধভারতীর ‘মন চাহে গীত’ শুনতে শুনতে সুর্যের কাঁটা এগোয়। লতা-আশার গানের পাশে জেগে থাকেন রফি-কিশোর। হেমন্তকুমার তাঁর রোম্যান্টিক আবেদন পাঠান। ‘তুম পুকার লো, তুমহারা ইন্তেজার হ্যায়…’। স্কুল থেকে ফিরে হাত-মুখ ধুয়ে জামা-কাপড় কোনওমতে ছেড়েই রেডিও চালানো। দুপুর একটা না বাজলে শোনার মতো নেই কিছু। ওই সময় স্কুলের হোম-ওয়ার্কের খাতার পেছনে আনমনে লেখা হতে থাকে ‘তুম যো মিল গয়ে হো, তো ইয়ে লাগতা হ্যায়… কে জাঁহা মিল গয়া’। ছবির নামটা বাড়তি যত্ন নিয়ে মনে করে রেখেছিলাম। ‘হঁসতে জখম’।
Hall & Knight- এর Algebra থেকে বেশি জরুরি হয়ে পড়ে ‘তীর বেঁধা পাখি আর গাইবে না গান’। শব্দগুলো লিখে রাখা থাকে ভূগোল বইয়ের পিছনের সাদা পাতায়। এখনও মনে আছে সন্ধ্যা মুখোপাধ্যায়, আশা ভোঁসলে, লতা মঙ্গেশকরের চেয়ে আমার পছন্দের পাল্লা ভারি থাকত গীতা দত্তের দিকে। সেনসেশন্যাল শব্দটা তখনও প্রয়োগ করতে শিখিনি। কিন্তু ক্লাস ইলেভেনে যেদিন হাতখরচের পঞ্চাশ টাকা মাসে মাসে পেতে শুরু করি, তখন থেকেই ক্যাসেট-জীবন শুরু। আর সেই ক্যাসেট সংগ্রহে প্রথম এসে জায়গা করে নিয়েছিলেন গীতা দত্ত। বন্ধুর জন্য প্রেমপত্রের কোটেশন হিসেবে “ইয়ে লো ম্যাঁয় হারি পিয়া, হুয়ি তেরি জিত রে… কাঁহে কা ঝগড়া বালম, নয়ি নয়ি প্রীত রে…” গানটি লিখে দিয়েছিলাম। সে প্রেমের পরিণতি অবশ্য আজ আর মনে নেই।
মঙ্গলবারের দুপুর একটা চল্লিশে কলকাতা ‘ক’। সেই সময় শুরু হবে গীতিনাট্য। ‘সোনাই মাধব’ সেই প্রথম শোনা। ‘শ্যামা’ চিত্রাঙ্গদা’ শাপমোচন’-এর গান তো শুনে শুনে ঠোঁটস্থ। উত্তীয়র জন্য গলার কাছে চিনচিনে ব্যথা। ‘জীবনপাত্র উচ্ছলিয়া মাধুরী’ কেমন করে হৃদয় নিংড়ে দান করতেন চিন্ময় চট্টোপাধ্যায়… উত্তীয়র আত্মত্যাগ বড় দাগা দিত সেই সময়। প্রতিদিন একবার করে দুঃখ পাওয়া। ‘বাল্মীকিপ্রতিভা’র ডাকাতের গান– আহা! সবচেয়ে পছন্দের। ‘ভানুসিংহের পদাবলী’র সব ভাষা না বুঝলেও সুর আর উচ্চারণ কানে গেঁথে রয়েছে আজও। বাড়তি উত্তেজনা ‘বুদ্ধু-ভুতুম’ আর ‘লালকমল-নীলকমল’এর দিন। সেদিন খাটের নীচে পা ঝুলিয়ে বসে থাকা মুশকিল। যদি কেউ বসে থাকে খাটের তলায়! রাক্ষস-খোক্কসের সমবেত খোনা গলায় গায়ে কাঁটা দেয়। সুধীন দাশগুপ্ত নামক ভদ্রলোকের নাম জানতাম না তখন। অনেক পরে বড় হয়ে বুঝেছি, কালজয়ী সুরকার বলতে কী বোঝায়। এই সময় রাস্তার ধারের জানালাটা পুরো খুলে দিতাম আমি। পর্দা সরিয়ে তাকিয়ে থাকতাম বাইরের রাস্তায়। নাহ। কেউ কোত্থাও নেই। নিশ্চিন্ত। আর যেদিন ‘হিংসুটে দৈত্য’ তার বাগানের পাঁচিল ভেঙে ঢুকতে দেয় সব ছোট্ট বন্ধুদের, সেদিন ওদের সঙ্গে আমিও টুক করে ঢুকে পড়ি সেই বাগানে।
সারা দুপুর শুধু বিস্কুট। বিস্কুট-দুপুর। সঙ্গে বন্ধু বিবিধভারতী। মাছ-ভাত-তরকারিরা চুপ করে ঢাকা থাকে টেবিলে। কেউ কোনও কথা বলে না। নালিশ নেই। ঝগড়া নেই। দুপুরবেলা সবাই চুপ। কথা বলে একা রেডিও। একটা ছোট্ট সাদা ট্রানজিস্টর। ওটা আমার দখলে। বড় ভালভ সেট রেডিওটা বহু পুরনো, ওটা মায়ের জিম্মায়। ছোট্ট ট্রানজিস্টরটা সারাদিন বাজে। বেজেই চলে। বেলা গড়ায়। গানও গড়িয়ে যায়। স্নান হয় না। খাওয়া হয় না। লাল রঙের বিস্কুটের কৌটো ভর্তি বিস্কুট একটু একটু করে ফুরোয়। স্কুলের হোম-ওয়ার্ক শেষ হয়ে যায়। ওই জানালার ধারে খাটে বসে বসেই। টেবিল চেয়ারে কে বসে! বসলেই পিঠ ব্যথা। তার চেয়ে বাবা খাটের ওপর পা তুলে উবু হয়ে বোসো। রেডিওতে কথা, গান। নির্জন ঘরের একমাত্র বক্তা।
ফাগুনের শুকনো হাওয়ায় শিমুল ফুল পড়ে থাকে। বিল্ডিঙের পাশেই বিরাট গাছটা। শিমুল গাছ। যেমন বড়, তেমন ঝাঁকড়া। এখন উঁচু ডালগুলোতে শুধু আগুন জ্বলছে। টকটকে লাল ফুল। কোনও পাতা নেই। ন্যাড়া মাথায় লাল ছাতার মতো একগাদা ফুল সব ডালে। খুব ছোটবেলা ওই জানালার শিক ধরে দুলে দুলে গাইতে ইচ্ছে করত ‘শিউলি ফুল, শিউলি ফুল’। শিউলি আর শিমুলের জাত-ধর্ম বিচার করবার মতো তখন বুদ্ধি পাকেনি। যখন পাকল, তখন শিমুল গাছটাই মুছে গেল।
গাছটা ছিল আমার প্রিয় বন্ধু। স্কুলের হোম-ওয়ার্ক শেষ হয়ে গেলে জানালার বড় তাকে গিয়ে চুপ করে বসি। তখন একা একা গাছের সঙ্গে গল্প। ততক্ষণে ঘড়ির কাঁটা আড়াইটেতে। রেডিওর বিবিধভারতী থেকে এবার আন্তর্দেশীয় প্রচারতরঙ্গ। বাংলা সিনেমার গান। ‘এমন স্বপ্ন কখনও দেখিনি আমি… মাটিতে যে আজ স্বর্গ এসেছে নামি’। সিনেমার নামটা বলল রেডিওতে। ‘আমি সে ও সখা’। ঠিক বোঝা গেল না সঠিক মানেটা। সখা কে? মা’কে জিগ্যেস করতে হবে।
নাঃ। মা’কে নয়। মা’কে এইরকম কিছু অদ্ভূত প্রশ্ন জিগ্যেস করলেই বকবে। রেডিওর কথা তো বলাই যাবে না। বলতে হবে কোনও গল্পের বইতে পাওয়া গেছে। মা রেডিওর নাম শুনলেই চটে কাঁই হয়ে যায় একদম। সারাদিন ধরে রেডিও শুনিস কেন? কী আছে রেডিওতে? তার চেয়ে বিশ্বকোষ এনে দিয়েছি। পড়তে তো পারো। যত্ত সব আজেবাজে হিন্দি গান। বাড়িটা কী পানের দোকান? বিবিধভারতী চলছে সর্বক্ষণ। মন চাহে গীত। আপ কে ফরমায়েশ। বিশেষ জয়মালা। আমার একের পর এক গান মুখস্থ। লতা মঙ্গেশকর আশা ভোঁসলে সুমন কল্যাণপুর বাণী জয়রাম হেমলতা সকলের গলার ফারাক এক মুহূর্তে শোনামাত্র বলে দেওয়া ছিল আমার কাছে একটা মজার খেলা।
শুক্রবার রাত আটটা। শনিবার বিকেল তিনটে। রবিবার দুপুর আড়াইটে। তার মানেই কলকাতা ‘ক’-এর বাংলা নাটক। স্পষ্ট মনে আছে, বহু বিশিষ্ট সাহিত্যিকের সেরা গল্পের নাট্যরূপ শুনেছি প্রথমে রেডিওতে। পরে বইতে খুঁজেপেতে পড়েছি। আজকের নাটক ‘সেপ্টোপাসের খিদে’। কিংবা ‘তিমি তিমিঙ্গিল’। আবহ অলোকনাথ দে। রেডিও-কর্মী এই অন্তর্মুখী অথচ অসীম প্রতিভাবান মানুষটিকে আজ আর কেউ মনে রেখেছেন কী? শিকড়-বিস্মৃত বাঙালি তার পূর্বজদের মুছে ফেলে যে কী আনন্দ পায়! রবিবার দুপুরে শুনতাম বিবিধভারতীর অসংখ্য নাটক। সব চরিত্র কাল্পনিক। অথচ কি ভীষণ জীবন্ত। জগন্নাথ বসু থেকে স্বরাজ বসু। ঊর্মিমালা বসু থেকে সৌমিত্র বসু। যে কোনও নাটক শুনলেই ‘বসু পরিবার’-এর গলা খুঁজে নিতে পারতাম এক নিঃশ্বাসে। রবিবার দুপুর বারোটার ‘বোরোলীনের সংসার’ থেকে একটা পঞ্চাশে ‘অমর কাহিনী আরব্যরজনী’। শনিবার দুপুর একটায় ‘মনের মতো গান’ হয়ে ‘হাতুড়ি মার্কা ফিনাইল-এক্স-এর শনিবারের বারবেলা’। বিজ্ঞাপনী নাটকে তখন স্বরাজ বসু, মুরারি চক্রবর্তী অপ্রতিরোধ্য। অথচ আমার কানের কাছে মায়ের বকুনি। সামনে বাবার রাগী চোখ। এগুলো সঙ্গে ফ্রি। এইসব এড়ানোর জন্য রেডিও ঢুকে পড়ে বাথরুমে। স্নানের ভান করে শুনে নেওয়া– তীব্র নেশার টান যেমন হয়।
শনিবার দুপুরে আমার ছুটি আর মায়ের হাফ-ইশকুল থাকত বলেই তো ঠিক দুপুর একটায় ‘ওয়েসিস মনের মত গান আর মনে রাখা কথা’র পাশে গিয়ে চুপটি করে বসা যেত। ছোট্ট ফিলিপস রেডিওর মধ্যে থেকে কী আশ্চর্য স্বপ্ন আর নেশা-জড়ানো গলা ভেসে আসত। প্রশ্ন পড়া হয়। আর তার সমস্ত শিরশিরে অনুভূতি জাগানো উত্তর। তক্ষুনি অমন সব উত্তর মাথাতেও আসে বাবা! চিঠি আর গান। ‘মন শুধু মন ছুঁয়েছে, ও সে তো মুখ খোলেনি’। কখনো শ্রাবন্তীর সুরেলা প্রশ্নে ভূপিন্দরের উত্তর– ‘যার নাম তার মুখে ভাল লাগে না’। আমি ভাবতাম, বড় হয়ে একদিন নিশ্চই নিজে নিজে চলে যেতে পারব ওই ঘরটাতে। যেখানে মাইক্রোফোনের সামনে বসে কথার মায়ায় বুঁদ করে রাখেন শ্রাবন্তী মজুমদার।
রেডিওর নব ঘুরিয়ে কখনো ‘মন চাহে গীত’ কখনও ‘ভুলে বিসরে গীত’। বিশেষ জয়মালাতে তারকাদের ভিড়। আমিন সায়ানির গলায় মেদুর পেলবতা মুগ্ধ করত। বোর্নভিটা ক্যুইজ কনটেস্টের চেয়ে বেশি প্রিয় ছিল রবিবার বিকেলে ‘গল্পদাদুর আসর’। পরবর্তীকালে সেই ‘গল্পদাদু’ পার্থ ঘোষকে সামনাসামনি দেখে ছেলেবেলার পাকাচুলের সেই কল্পনার ‘দাদু’কে আর খুঁজে পাইনি। যেমন কখনও যাওয়া হয়নি ‘শিশুমহল’-এ ইন্দিরাদির কাছে। অমন মিষ্টি করে ‘ছোট্ট সোনা বন্ধুরা’ আর কেউ কক্ষনোও বলতে পারেননি। কখনও আবার রেডিওতে মন দিয়ে শুনেছি যাত্রার বিজ্ঞাপন। কখনও নাটকের। কোনওদিন বীণা দাশগুপ্তার ‘নটী বিনোদিনী’ কোনওদিন শান্তিগোপালের ‘চেঙ্গিস খাঁ’। রাতের দিকে শোনা যায় ‘নহবত’ নাটকের বিজ্ঞাপন। সত্য বন্দ্যোপাধ্যায়, বিকাশ রায়, রত্না ঘোষালের সব ডায়ালগ ঝরঝরে মুখস্থ। শুনতে শুনতে একদিন বাবা বলে ফেলেন, চলো দেখেই আসি। যাত্রা দেখার সুযোগ নেই দক্ষিণ কলকাতায়। কিন্তু থিয়েটার দেখা হয়। রেডিওর বিজ্ঞাপন শুনে শুনেই তো আগ্রহ বাড়ে।
সন্ধের পরে ঝুপ করে লোডশেডিং হয়ে গেলেই শুরু হয় ‘ছায়াগীত’। সঙ্গে হারিকেনের আলোয় অঙ্ক কষা চলতে থাকে পুরোদমে। যেন এই সঙ্গত হবারই ছিল। রান্নাঘরে কড়াই থেকে আলুভাজার গন্ধ। রাঁধুনি ফোড়নের সঙ্গে ভাজা শুকনোলংকায় এবার ঝাঁপ দেবে মুসুর ডাল। ঘড়ির কাঁটায় দৌড়ে চলে আকাশবাণী। ‘হাওয়ামহল’-এ হিন্দি নাটক না শুনে কলকাতা ‘ক’-এ চলে আসে শ্রোতার মনোযোগ। খবর পড়েন দেবদুলাল বন্দ্যোপাধ্যায়। দিদিভাই যাকে ছেলেবেলা থেকে ‘বিদ্যুলাল’ বলে জানে।
রেডিওর বিজ্ঞাপন শুনে শুনে সব মুখস্থ। শ্যামবাজার পাঁচ মাথার মোড়ে কোথায় আছে সেই গজকুমার ব্রাদার্স। খুঁজে খুঁজে চলে যাওয়া একদিন। সেখান থেকে কেনা কোট আজও কাঠের আলমারির কোনায়। হ্যাঙারে ঝোলানো। ন্যাপথালিনের গন্ধে ভরপুর।
একটু রাত বাড়লে কারেন্ট আসে। রেডিও বন্ধ হয় না। সে তার মত কথা বলে যায়। আমার পড়ার বইয়ে মিসিসিপি নদীতে ডুব দেন আর্কিমিডিস; রোমান সাম্রাজ্যের পতনের জন্য কেশব চন্দ্র নাগকেই একমাত্র দায়ী বলে মনে হতে থাকে। হঠাৎ মনে পড়ে গত সপ্তাহে সুবোধ ঘোষের ছোটগল্প শুনিয়েছিল একটা নাটকে। সেই গল্পটা কোথাও থেকে খুঁজে নিয়ে পড়তে হবে। নাটক শুনে গল্পের শেষটা তো নাগালে এল না কিছুতেই! ‘আপ কে ফরমায়েশ’ গুনগুন করে শুনিয়ে যায়, ‘কঁহি বিতে না ইয়ে রাতে, কঁহি বিতে না ইয়ে দিন’। দু’চোখ জুড়ে ঘুম নেমে আসে।
রেডিওর টান হঠাৎ ফুরিয়ে গেল একদিন। বাঙালি সংস্কৃতিতে জুড়ে গেল দূরদর্শন। শুধু শোনা নয়, এবার দেখার আনন্দ। বরাবর পড়েছি মর্নিং স্কুলে। অনেক সকালে স্কুল থাকে। সেই ভোর ছ’টা দশে স্কুলের বাস এসে দাঁড়ায় বাড়ির সামনে বড় রাস্তায়। বাবার হাত ধরে রাস্তা পেরোলেই দূরে দেখা যায় হেলেদুলে এগিয়ে আসছে সাদা রঙের বাস। কোয়েলী জায়গা রাখবে জানালার ধারে। একটু পরেই ইলীনা উঠবে। একটা দুধের ডিপোর সামনে দুটো বিরাট লম্বা বিনুনি দুলিয়ে ইলীনা দাঁড়িয়ে থাকে তার মায়ের সঙ্গে। খুব চুপচাপ দাঁড়িয়ে থাকে না। আমরা দূর থেকে দেখি, ও দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে লাফায়। এদিক সেদিক ছুটোছুটি করে। আর ওর মা ওকে গম্ভীর মুখে বকেন। আমরা তিন প্রাণের বন্ধু। বাসে উঠেই ঝাঁপিয়ে পড়ে ওদের গল্প। আটের দশকের মাঝামাঝি তখন সকলের ঘরেই ঢুকে পড়েছে টেলিভিশন। রেডিও তার কৌলীন্য হারিয়েছে। সন্ধে হলে টিভির আওয়াজ ভেসে আসে কোনও কোনও বাড়ি থেকে। কেউ আবার চরম রক্ষণশীল। টিভি চললে ছেলেমেয়ের বারোটা বেজে যাবে বলে ওই বস্তুটিকে বর্জন করেছেন। আমার মতো দুর্ভাগা প্রাণী তাই বন্ধুদের কাছে টিভির নিষিদ্ধ আকর্ষণের ভাগ নেয়। আমাদের বাড়িতে তখনও টিভি আসেনি। চারতলার ফ্ল্যাটের লাল্টুদের বাড়িতে মাঝেমধ্যে গিয়ে টিভি দেখতে হয়। আর তার জন্য অনুমতি পাওয়া এক কঠিন সাধনা। কতগুলো অংক করলে তবে ওটুকু পাওয়া যায়! শনিবার সন্ধেবেলা কী বাংলা ‘বই’ দেখাবে, তার জন্য আগেভাগে সীট বুক করে রাখার পালা ছিল। একটা ছোট্ট ঘরে সাদা-কালো চলমান ছবিওলা বাক্সের দিকে পাড়ার সকলের অখণ্ড মনোযোগ। যৌথ পরিবার তখন ভাঙনের মুখে, কিন্তু প্রতিবেশী তখনও সুরে বেজে চলা মধুর বাঁশির মতো। টিভি কেউ একলা দেখে না, দল বেঁধে উপভোগ করতে হয়। দূরদর্শনের প্রতিটি সন্ধে তখন সাংস্কৃতিক বিনোদন। সারাদিন ধরে চলা সূর্যগ্রহণের ফাঁকে জুড়ে দেওয়া ‘পথের পাঁচালী’, জর্জ বিশ্বাসের অমলিন হাসিমুখে শেষ বয়সে ‘আমার পানে চেয়ে চেয়ে খুশি থাকো’র মতো সরল উচ্চারণ, একের পর এক আড্ডায় গুণিজন সান্নিধ্য (যাকে এখন বলি ইন্টারভিউ), মঙ্গলবারের সন্ধেবেলা ‘জনি সোকো অ্যান্ড হিজ ফ্লাইং রোবোট’-এর জন্য অপেক্ষাগুলো বেশি মনে পড়ে। ধীরে ধীরে শুরু হল সিরিয়াল। বাংলার ‘তেরো পার্বণ’ আর হিন্দিতে কী দাপুটে সব কাহিনি। ‘বুনিয়াদ’ থেকে ‘হামলোগ’, ‘তমস’ থেকে ‘কচ্চি ধূপ’, ‘সার্কাস’ থেকে ‘ফৌজি’… স্পষ্ট মনে আছে শার্লক হোমসের সিরিজ দেখতাম ওই ছোট্ট সাদা-কালো টিভিতেই। সময়সারণি অনুযায়ী এরা কে আগে, কে পরে তা’ আর মিলিয়ে দেখতে ইচ্ছে করছে না। ‘খানদান’ দেখে কর্পোরেট দুনিয়া বুঝতে চেষ্টা করেছি, আবার শনিবারের বাংলা ছবির উজ্জ্বল উদ্ধারে সমৃদ্ধ হয়েছি। সপ্তাহে একদিন হিন্দি ছবির গানে সাজানো ‘চিত্রহার’ আর রবিবারের সন্ধের হিন্দি ‘বই’কে বাবা-মা মনে করতেন ‘বখে’ যাবার উপকরণ। বখাটে হয়েছি কিনা, সে তর্কে যাচ্ছি না। তবে, সাদা আর কালোর মধ্যে যে একটা বিরাট রঙিন ক্যানভাস থাকে, তা’ আটের দশকের দূরদর্শন যারা দেখেছেন, তারা স্বচ্ছন্দে মনে করতে পারবেন।
অবশ্য আমার টিভি দেখার পারমিশন ছিল না। মায়ের খুব কড়া রুটিন। সন্ধের পরে টিভি দেখাই যাবে না। অথচ চওড়া বাক্সের দরজাওলা সাদা-কালো ইসি অথবা ওয়েবেল কোম্পানির টিভির অনুষ্ঠান শুরুই হয় সন্ধে থেকে। অতএব, প্রতিদিন বন্ধুদের কাছে টিভির গল্প শুনেই পেট ভরাতে হয়। ছোট্ট একটা টিভি যখন ঘরে এসে পৌঁছল, তখন মীটসেফের ওপর রাখা রেডিওটা প্রাণহীন।
সেই ‘চোখে দেখিনি, শুধু বাঁশি শুনেছি’— গ্ল্যামারটাই হারিয়ে গেল। শ্রুতির কল্পনা ছেড়ে দৃশ্যমাধ্যমের বাস্তবতা মেখে আমরা বড় হয়ে গেলাম।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন
এক শ্বাসে পড়ে ফেললাম। হুবহু নিজের ছোটোবেলাটা পড়েছিলাম।
সবার ছোটবেলাই মিলে মিশে একাকার।চমৎকার বুনন আর বাঁধুনী!ফিরে দেখা ছোটবেলা…
নিজের ছোটোবেলাটা দেখতে পেলাম যেন। হরিণঘাটার দুধের ছিপির সঙ্গে ছাই ডলে বাসন মাজা থেকে কাজের লোকেদের হিন্ডেলিয়াম বা কলাইয়ের বাসনে খেতে দেওয়া। লাস্ট বাট নট লিস্ট হল ট্রানজিস্টর রেডিও।
চমৎকার আত্মকথন। যেন হারিয়ে যাওয়া ‘ভুলে বিসরে গীত’।
নিজের ছোটোবেলাটা দেখতে পেলাম যেন। হরিণঘাটার দুধের ছিপির সঙ্গে ছাই ডলে বাসন মাজা থেকে কাজের লোকেদের হিন্ডেলিয়াম বা কলাইয়ের বাসনে খেতে দেওয়া। লাস্ট বাট নট লিস্ট হল ট্রানজিস্টর রেডিও।
পুরোনো দিনগুলো চোখের সামনে ভেসে উঠছিলো,নস্ট্যালজিয়া আমাদের ছোটোবেলা ১৯/২০ সবার কথা।
একদম মিলে যাচ্ছে। এইটস্ এর। ছেলেবেলা অপূর্ব এঁকে দিলে। ওহ্ আর একটা ছিল নেসফিল্ডের গ্রামার। কে সি নাই তো চৌবাচ্চায় সেই রে নাকানিচুবানি খাইয়ে সর্দি ধরিয়েছে সেই ট্র্যাডিশন সমানে চলেছে। শ্রাবন্তী মজুমদার কে খুব নকল করতাম। “সুরভিত এ্যন্টিসেপ্টি ক্রিম বোরোলিন!!
নিজের ছোটবেলা কেউ যেন আবার মনে করিয়ে দিল। সেই সেপ্টোপাসের ক্ষিদে,,সুরভিত অ্যান্টিসেপ্টিক ক্রিম বোরোলীন,,, আবার শুনতে পেলাম ।ছবির মত।