bibidho-kodanda-grohey-poshuder-kando

কোদন্ড গ্রহে পশুদের কান্ড
রম্যরচনা
শেলী শাহাবুদ্দিন


ভূমিকা


ইহা মোটেও আশ্চর্যের বিষয় নহে যে কোদণ্ড গ্রহের পশুরা পৃথিবীর পশুদের চাইতে বহুগুনে উন্নত। কারণ কোদণ্ড গ্রহের বয়স পৃথিবীর দ্বিগুন। সে কারণে সেখানকার পশুদের বুদ্ধি পৃথিবীর পশুদের দ্বিগুন। একথা অবশ্য কোদণ্ডের মানুষদের বেলায় প্রযোজ্য নহে। বিষয়টি জটিল, এবং সে কারণে অন্যত্র আলোচ্য ।

যাহা হউক, এইসব কারণে কোদণ্ড পশুরা নিজেদের মধ্যে অনর্গল বিভিন্ন জান্তব ভাষায় মানুষের মতো অনর্গল কথা বলিতে পারে।

উপরন্তু সেখানে ভিন্ন ভিন্ন জাতের পশুরা এক সর্বস্বীকৃত আন্তর্জাতিক ভাষায় পরস্পরের সাথে ভাবের আদান প্রদান করিয়া থাকে। যেহেতু পশুদের মধ্যে ‘হিংসা’ সর্বাধিক মৰ্য্যাদাপূর্ণ আদর্শ, সেহেতু পশুরা এই আন্তর্জাতিক ভাষার নাম দিয়াছে হিঙরেজী। তাহাদের ভাষায় রেজি অর্থ ভাষা।

(এ প্রসঙ্গে পৃথিবীর মানুষের সাথে কোদণ্ড পশুদের লক্ষ্যণীয় সাদৃশ্য এই যে, যেহেতু ‘ঈর্ষা’ পৃথিবীর মানবসমাজের সর্বাধিক মৰ্য্যাদাপূর্ণ আদর্শ, সে কারণে তাহাদের সর্বাধিক ব্যবহৃত আন্তর্জাতিক ভাষার নাম ইংরেজি)।


এক
হারু পর্ব


কোদণ্ড গ্রহে একদিন এক বাঘ একটি হরিণ শিশুর পশ্চাৎধাবন করিয়া তাহার ঠেং কামড়াইয়া ধরিল। কিন্তু তাহার উচিত ছিল গলা কামড়াইয়া ধরা।
ফলে হরিণ শিশু পরিত্রাহি চিৎকার শুরু করিল। পরমাশ্চর্যের বিষয় এই যে কোথা হইতে অকস্মাৎ হরিণ শিশুর মা আসিয়া এমন জোরে বাঘের পা কামড়াইয়া ধরিল যে বাঘের মনে হইলো তাহার দফা-রফা হইয়া যাইবে। সে চিৎকার করিয়া হরিণ শিশুর পা ছাড়িয়া দিবা মাত্র হরিণ-মা তাহার পা ছাড়িয়া দিলো।

আরো আশ্চর্য্য হইয়া বাঘ দেখিলো যে এই হরিণ-মা মুক্ত শিশুকে লইয়া পলায়ন করিবার পরিবর্তে অতি ক্রূদ্ধ দৃষ্টিতে তাহার দিকে তাকাইয়া রহিয়াছে। তাহার সন্দেহ হইলো যে এই হরিণ নিশ্চয় ডাইনি এবং প্রয়োজন হইলে সে আবারও তাহার ঠেং কামড়াইয়া ধরিবে।

বাঘ কিঞ্চিৎ ভয় পাইলো।

কিন্তু বাঘ হিসাবে সে তাহার মানমৰ্য্যাদার কথা ভাবিয়া সাহসে বুক বাঁধিয়া প্রশ্ন করিল, “তুমি হরিণ, অতিশয় নিচু জাতের পশু। আমি বাঘ। আমি তোমাকে বা তোমার ছানাকে খাইবো। তুমি সম্ভব হইলে পলায়ন করিবে। ইহাই আমাদের পরস্পরের ধর্ম। ইহাই বিধির বিধান। সর্বোপরি ইহাই আমাদের পশু সমাজের আইন। তুমি কোন সাহসে হীনবল হরিণ হইয়া আমার মতো সম্ভ্রান্ত বাঘের পা কামড়াইয়া ধরিলে?”

হরিণ-মা উত্তপ্ত কণ্ঠে কহিল “তোমরা যুগ যুগ ধরিয়া আমাদের উদরস্থ করিয়া বাঁচিয়া রহিয়াছ। আবার তোমরাই আমাদের নিচু জাতি আখ্যা দিয়া আমাদের উন্নয়ন রোধ করিয়া রাখিয়াছ। আমাদের জাত নির্ধারণ করিবার অধিকার কে তোমাদের দিয়েছে? ইদানিং তোমাদের ক্ষুধা ক্রমান্বয়ে বাড়িয়া চলিয়াছে। অতীতে তোমরা অপেক্ষাকৃত বৃদ্ধ হরিণদের বধ করিতে। এখন শিশু ও তরুণ হরিণদেরও বধ করিতেছ। তোমরা আমাদের বংশবৃদ্ধি রোধ করিয়া আমাদের দুর্বলতর করিবার চেষ্টা করিতেছ। অতএব, এখন হইতে আমাদের ছানাদের আক্রমণ করিলে আমরাও তোমাদের ছাড়িয়া দিবো না।” এই উত্তর শুনিয়া বাঘ ক্রূদ্ধকণ্ঠে গর্জন করিয়া মুখ ব্যাদান করিয়া লাঙ্গুল আস্ফালন করিতে লাগিল। কিন্তু হরিণ-মা ভয় পাওয়ার পরিবর্তে খুর দিয়া মাটি আঁচড়াইয়া, বাঘের মতোই দাঁত বাহির করিয়া ভ্যাংচাইতে লাগিল।

বিস্ময়ের ওপর বিস্ময়!! বাঘ দেখিলো, হরিণ-মায়ের দুই চোয়ালে বাঘের মতোই বড় বড় ধারালো দাঁত রহিয়াছে!
বাঘ হতবুদ্ধি হইয়া গেলো!

আত্মসম্মান রক্ষার জন্য বাঘ কিছুক্ষন লোক দেখানো তর্জন-গর্জন করিয়া বলিল “কোদণ্ড পশু-জাতিসংঘের আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী আমি তোমাকে ও তোমার যে কোনো ছানাকে যে কোনো সময় আক্রমণ ও আহার করিবার অধিকার রাখি। অবশ্য ছানাপোনাদের বিষয়ে জাতিসংঘের কিছু ফালতু নিয়ম-কানুন রহিয়াছে। সেইসব আমি মানি না। আইন অনুযায়ী তোমার ঐরকম বড় বড় ধারালো দাঁত থাকিবার কথা নহে। ইহা আন্তর্জাতিক আইনের নির্লজ্জ লঙ্ঘন ও অবশ্য দণ্ডনীয় অপরাধ । আইন অনুযায়ী তোমাদের দাঁত হইবে দুর্বল, ক্ষুদ্রকায়, শুধুমাত্র ঘাস খাইবার উপযোগী আন্তর্জাতিক সভ্য সমাজের সভ্য দাঁত।”

এবারে হরিণ উপহাস করিয়া হাসিয়া বলিল’ “তাহা হইলে অসভ্য দাঁত-নখের কারণে তোমরা যে অসভ্য তাহা স্বীকার করিতেছ?”

বাঘ হুঙ্কার দিয়া বলিল, “কখনোই নহে। আমরা রাজা। রাজার জন্য যাহা সভ্য, প্রজার জন্য তাহাই অসভ্য। রাজার জন্য যাহা জন্মাবধি অধিকার, প্রজার জন্য তাহা আজীবন অনধিকার।”

এই পর্যায়ে একদিনের জন্য যথেষ্ট বিতর্ক হইয়াছে মনে করিয়া হরিণ চলিয়া যাইতে উদ্যত হইলে বাঘ পুনরায় গর্জন করিয়া বলিল, “থাম। তুমি অনুন্নত নীচ বংশীয় পশু। তোমাকে বলিতে হইবে তুমি কি করিয়া এমন উন্নত রাজকীয় দাঁতের অধিকারী হইলে?” “তোমাদের অত্যাচারে অতিষ্ঠ হইয়া আমরা আত্মরক্ষার জন্য কিছু ব্যবস্থা গ্রহণ করিয়াছি। ইহার অধিক আপাততঃ আমি তোমাকে কিছুই জানাইবো না। শুধু জানিয়া রাখ যে, ক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও তোমাদের মতো অন্য প্রাণীকে নির্বিচারে হত্যা করিবার জন্য আমরা দাঁত ব্যবহার করিনা। আমরা শুধুমাত্র আত্মরক্ষার জন্য আমাদের দাঁত ব্যবহার করি।”

“তাহাও বেআইনি কাজ হইবে। তুমি আমাদের আক্রমণ হইতে পলাইবার জন্য দৌড়াইতে পারো, লুকাইতে চেষ্টা করিতে পারো, পারিলে গাছে উঠিতে পারো। আমরা রাজকীয় বদান্যতার বশে তোমাদের জন্য আন্তর্জাতিক আইনে এইসব ধারা যুক্ত করিয়াছি। কিন্তু একটি নিকৃষ্ট প্রাণীজাতি হিসাবে তোমরা উন্নত ধারালো দাঁত ব্যবহার করিতে পারনা। ইহা পশুত্ববিরোধী আন্তর্জাতিক অপরাধ। তদুপরি, তোমাদের কাছ হইতে এই অস্ত্র বেহাত হইয়া অন্যান্য হীনবল নিকৃষ্ট প্রাণীদেরও হস্তগত হইতে পারে। তোমরা কোনো দায়িত্বশীল নির্ভরযোগ্য প্রাণী নও। ইহাতে পশুসমাজে আন্তর্জাতিক শান্তি শৃঙ্খলা বিনষ্ট হইবে। আমরা পশুদের মুরুব্বি হিসাবে তাহা হইতে দিতে পারিনা। তোমাদেরকে আন্তর্জাতিক পশু সমাজের নিয়মকানুনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হইতে হইবে। আমি তোমার দাঁত উপড়াইয়া ফেলিব।”

বজ্রনির্ঘোষে কথাটি ঘোষণা করিয়া বাঘ নিজের দীর্ঘ বকতৃতায় নিজের গুরুত্ব উপলব্ধি করিয়া এতই খুশি হইলো যে তাহার নাচিতে ইচ্ছা হইলো। কিন্তু অবস্থার গুরুত্ব এবং তার নিজের রাজকীয় গুরুত্ব উপলব্ধি করিয়া সে আত্মসংবরণ করিল।

“পারিলে উপড়াইতে চেষ্টা করো। আমিও তোমাকে ছাড়িয়া দিবোনা।” হরিণ তাচ্ছিল্ল্যভরে কহিল।

বাঘ তেলে-বেগুনে জ্বলিয়া উঠিল। কিন্তু বুঝিতে পারিল যে একা সে এই দাঁতাল হরিনের সাথে সুবিধা করিতে পারিবে না। তাহাকে দলবল লইয়া আক্রমণ করিতে হইবে। সে গরগর করিয়া ঘোষণা করিল, “আন্তর্জাতিক পশুসম্প্রদায় তোমাদের বেয়াদপি সহ্য করিবে না। তোমাদের ধারালো দাঁত ধ্বংস করা হইবে। তোমাদের ছানাপোনা সহ ধ্বংস করা হইবে। তোমরা নির্বংশ হইবে। ইহাই আমাদের শেষ কথা।”

“তোমার কথা শেষ হইয়াছে জানিয়া খুশি হইলাম। আমি চলিলাম। ছানাকে দুধ খাওয়াইবার সময় হইয়াছে। যাওয়ার আগে তোমাকে সাবধান করিয়া দিতেছি। যাহা করিবে ভাবিয়া চিন্তিয়া করিও। দিন বদলাইতেছে। কোদণ্ড বদলাইতেছে। তোমাদের দাদাগিরি চিন্তা-ভাবনাও বদলাইবার সময় আসিয়াছে।” কথাটা বলিয়া হরিণ-মা ছানা সহ প্রস্থান করিল।

বাঘ ক্রূদ্ধ লোলুপ দৃষ্টিতে তাহাদের চলিয়া যাওয়া দেখিতে লাগিল। তাহার চোয়াল বাহিয়া লালা ঝরিতে লাগিল। সে মনের মধ্যে নানারকম শয়তানি ফন্দি আঁটিতে আঁটিতে ডেরায় ফিরিল।

ডেরায় ফিরিয়া হারু-বাঘ ইনাইয়া-বিনাইয়া দলপতি বড় বাঘের কাছে নালিশ করিল।

“জাহাঁপনা, পশু সমাজের কল্যাণ ও শান্তি-শৃঙ্খলার জন্য আমরা এতদিন ধরিয়া যে সকল আইন-কানুন মানিয়া আসিয়াছি, দাঁতাল-হরিণ তাহা অমান্য করিয়া ভয়ানক অন্যায় করিয়াছে। তাহাকে এবং তাহার মত অন্য যাহারা এইভাবে বেআইনি দাঁত সংগ্রহ করিতেছে, তাহাদের উপযুক্ত শাস্তি দিতে হইবে। তাহাদের দাঁত উপড়াইয়া ফেলিতে হইবে। তাহাদের মধ্যে যাহারা পালের গোদা, এইসব বেআইনি কাজে যাহারা উৎসাহ ও সহায়তা দিয়া যাইতেছে, তাহাদের নির্বংশ করিতে হইবে। এই কাজ এখনই করিতে হইবে। নহিলে অচিরে আমরাই তাহাদের খাদ্যে পরিণত হইব।”

এতক্ষনে দলপতি হারু-বাঘের বকতৃতা থামাইয়া জানিতে চাহিলেন যে তৃণভোজীরা মাংস বা আমিষ খাওয়া শুরু করিয়াছে এমন কোনো ঘটনা বা তথ্য-উপাত্ত কাহারো জানা আছে কিনা।

বাঘেদের মধ্যে কানাকানি শুরু হইলো। কিন্তু হরিণ বা অন্যান্য খাঁটি তৃণভোজীরা মাংস বা আমিষ খায় এমন প্রমান কাহারো কাছে নাই। ফলে এই পর্যায়ে কেহই কিছু বলিতে পারিল না।

“কিন্তু হরিনের এমন উন্নত দাঁত হয়, একথাও আমরা এতদিন কেহই শুনি নাই। অথচ আজ যে আমি তাহাদেরই একজনের রামকামড় খাইয়া লেংচাইতেছি তাহাতো দেখিতেই পাইতেছ। আমার কথা বিশ্বাস না করিলে পরে পস্তাইতে হইবে, তাহা এখনই বলিয়া রাখিলাম।” হারু-বাঘ নিজের রক্তাক্ত পা তুলিয়া ধরিয়া সবাইকে বুঝাইতে চেষ্টা করিতে লাগিল। অনেক্ষন কথা বলিয়া হারু-বাঘের হাঁপ ধরিলে সে বসিয়া পড়িল। এই সুযোগে সুযোগ-সন্ধানী কিছু গুজব-প্রেমিক বাঘ নিজেদের মতামত প্রকাশ করিতে শুরু করিল। কেহ বলিল, সে একটা হরিণকে পঁচা মাংস খাইতে দেখিয়াছে। কেহ বলিল, বড় হরিণেরা ছোট হরিণদের খাইয়া ফেলিতেছে। একজন খুব জোর গলায় ঘোষণা করিল যে সে একটা হরিণকে তাজা নেকড়ে বাঘের মাংস খাইতে দেখিয়াছে। সভায় একটা হুলস্থুল শুরু হইয়া গেলো।

ব্যাঘ্র দলপতি বিরক্ত হইয়া সেদিনের মত সভা ভাঙিয়া দিলেন।


দুই
গোয়েন্দা পর্ব


পরদিন দলপতি দলবল লইয়া ব্যাঘ্র মহারাজাকে ঘটনা জানাইলেন। মহারাজা মাংসাশীদের এক জরুরি সভা আহবান করিলেন। সভা শুরু হইলে গুজবপ্রবণ পশুরা পুনরায় গোলমাল শুরু করিল। মহারাজার গোঁফে পাক ধরিয়াছে। ফলে বুদ্ধিও পাকিয়াছে। তিনি প্রথমে একটি ছোটোখাটো হুঙ্কার দিয়া সকলকে চুপ করিতে বলিলেন। সকলে চুপ করিলে তিনি কথা বলিতে শুরু করিলেন। “তোমরা শান্ত হও। প্রথমতঃ আমাদের জানিতে হইবে যে নিরীহ নিকৃষ্ট হরিণেরা কি করিয়া আমাদের সমকক্ষ এত উন্নত জাতের দাঁতের অধিকারী হইলো? আরো অধিক গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন এই যে, ‘কি করিয়া এক হীনবল অসভ্যশ্রেণীর প্রাণী হরিণ, অভিজাত প্রভুশ্রেনীভুক্ত এক সুসভ্য ব্যাঘ্র সদস্যকে আক্রমন করিবার কথা ভাবিতে পারিল?’

সে জন্য পশুসমাজের সর্বাধিক চতুর গোয়েন্দা শৃগাল-প্রধানকে আমি অবিলম্বে কারণ অনুসন্ধানের নির্দেশ দিতেছি।”

শৃগাল প্রধান কুর্নিশ করিয়া বলিল “যো হুকুম মহারাজ।”

ব্যাঘ্র মহারাজা কাশিয়া গলা পরিষ্কার করিয়া পুনরায় বলিতে লাগিলেন:

“দ্বিতীয়তঃ, ইহা সামান্য বিষয় নহে। অনুন্নত প্রাণিজাতি হিসাবে হরিণ সমাজ উন্নত দাঁত বা অন্য কোনোপ্রকার আত্মরক্ষার অস্ত্রের অধিকারী হইতে পারেনা। এইসব নীচ শ্রেণীর অসভ্য প্রাণীর এইরকম অগ্রগতি হইলে আমাদের মত অভিজাত পশুজাতিসমূহ বিলুপ্ত হইয়া যাইবে। ইহা পশুসমাজের অস্তিত্বের প্রশ্ন। আমাদেরকে এই সম্যসার একটি স্থায়ী সমাধান খুঁজিয়া বাহির করিতে হইবে।

গোয়েন্দারা খবর সংগ্রহ করিয়া ফিরিবার পর আমরা সকল তথ্য-উপাত্ত লইয়া আমাদের মহান সম্রাট সিংহের নিকট সদলবলে প্রতিকারের আর্জি জানাইব। তাহার আগে সকল মাংসাশী প্রাণীকে ঐক্যবদ্ধ থাকিয়া এইসব অনুন্নত বদমাইশ প্রাণীদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক পশুজনমত গড়িয়া তুলিবার অনুরোধ করিতেছি।

আমাদের পশু-গণমাধ্যম সর্বদা অনুন্নত পশুদের শোকে-দুঃখে কাতরতা প্রকাশ করিয়া থাকেন। কিন্তু তাঁহারা দিনের শেষে সর্বদাই অভিজাত শ্রেণীর স্বার্থ রক্ষা করেন। তাহাঁদের এ প্রকার তীক্ষ্ণ মেধাসম্পন্ন কার্যকৌশলের স্বীকৃতি স্বরূপ আমরাও সর্বদা তাঁহাদের স্বার্থ ও সন্মান রক্ষা করিয়া থাকি। আশা করি পশুসমাজের এই পাশবিক ক্রান্তিকালে তাঁহারা কখনোই কর্তব্যকর্মে পিছাইয়া থাকিবেন না।”

উত্তরে পশু-গণমাধ্যমের সর্বজনশ্রদ্ধেয় সর্বস্বীকৃত সর্বপ্রকারে স্বাধীন তেজস্বী ব্যক্তিত্ব হায়েনা ঠিক হায়েনার মত হাঁসিয়া মহারাজাকে সম্মতি জানাইলো (যেহেতু কুর্নিশ করিলে তাঁহার মতপ্রকাশের স্বাধীনতা কিঞ্চিৎ খর্ব হয়)।

সভা ভঙ্গ হইলো। মাংসাশীরা সেদিনের মত ডেরায় ফিরিয়া পরস্পরের শরীরের পোকা ধরিয়া মুখ বদলাইয়া সন্তুষ্ট চিত্তে ঘুমাইয়া পড়িল।

পরদিন হইতে শৃগাল-প্রধানের নির্দেশে শৃগালেরা দলে দলে ভাগ হইয়া অরণ্যের আনাচে-কানাচে হরিণদের গতিবিধি লক্ষ্য করিতে লাগিল। দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর শৃগাল দলপতি ব্যাঘ্র মহারাজার নিকট এক অতি গোপনীয় প্রতিবেদন পেশ করিলেন। পুরস্কার হিসাবে শৃগাল সমাজকে পরিশ্রম বা চৌর্য্য বৃত্তি ছাড়াই একবছরের জন্য বাঘ-সিংহের পরিত্যক্ত বাসি মাংস অতি অল্প সুদে খাইতে দেয়া হইলো।

সংক্ষেপে প্রতিবেদনটি ছিল নিম্নরূপ।

১. এই অরণ্যে অন্য অরণ্য হইতে সম্প্রতি এক ভেষজ-জ্ঞানী হরিনের আবির্ভাব হইয়াছে। এই প্রাণী কোনো কৌশলে উন্নত পশুজাতির বিদ্যা আয়ত্ত করিয়াছে। তাহার পরামর্শে, বিগত দুই দশক যাবৎ সুসভ্য পশুসমাজের অজ্ঞাতে এক অপরাধপ্রবণ হরিণসমাজ অতি উন্নত ধরণের দাঁতের অধিকারী হইয়াছে। তাহাদের শাবকদের শৈশব হইতে মাতৃদুগ্ধের পাশাপাশি কোনো বিশেষ গোপনীয় ভেষজ খাওয়ানো হইতেছে। ইহাই তাহাদের এই অস্ত্র অর্জনের প্রধান উপায়।

২. জানা গিয়াছে যে বহিরাগত এই বৈজ্ঞানিকের নাম হীম। সে হিমালয় হইতে আসিয়াছে। তাহার পরামর্শে হরিণ-শিশুরা জন্মাবধি প্রতিদিন দুই ঘন্টা ইক্ষু, বাঁশ ও অন্যান্য কঠিন খাদ্য চিবাইয়া থাকে। ফলে তাহাদের দাঁত শক্ত ও ধারাল হইয়া গড়িয়া ওঠে।

৩. হীমের পরামর্শে হরিণেরা আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা গোপনে প্রতিরাতে নিষিদ্ধ খনিজ পাহাড়ের পাথর ও মাটি চিবাইয়া থাকে। এইভাবে তাহারা দাঁত শক্ত করিবার খনিজ উপাদানগুলি সংগ্রহ করে। ইহা বেআইনি কাজ। কারণ আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী মাংসাশী প্রাণী ছাড়া অন্য সকল প্রাণীর জন্য এইসব সমৃদ্ধ আণবিক উপাদান নিষিদ্ধ।

৪. আচার্য্য হীম প্রতি সপ্তাহে হরিণদের দাঁত পরীক্ষা করিয়া নিয়মিত ব্যবস্থাপত্র দিয়া থাকেন। আনুমানিক কুড়িজন প্রশিক্ষিত প্রবীণ হরিণ তাঁহাকে সহায়তা করিয়া থাকে। ইহারা ক্রমান্বয়ে নবীনদের প্রশিক্ষণ দিয়া থাকে। এইভাবে তাহারা একটি অতি আধুনিক বেআইনি বৈজ্ঞানিক প্রতিষ্ঠান গাড়িয়া তুলিয়াছে।

৫. হরিণেরা এইসব সভ্যতা-বিরোধী বেআইনি এবং প্রকৃতি-বিরুদ্ধ কাজ করিলেও তাহারা এখনও শতকরা একশতভাগ তৃণভোজী প্রাণী। তাহাদের কাহাকেও কোনোদিন আমিষ আহার করিতে দেখা যায় নাই।


তিন
শান্তি পর্ব


এই প্রতিবেদনের প্রথম চারিটি মূল তথ্য ও অন্যান্য লক্ষাধিক লক্ষন বিচার করিয়া অভিজাত শ্রেণীর পশু-বুদ্ধিজীবীরা এই সিদ্ধান্তে উপনীত হইল যে হরিণেরা এযাবৎ তৃণভোজী হইলেও অচিরেই তাহারা বাঘ, সিংহ প্রভৃতি অভিজাত প্রাণীর খাদ্যাভ্যাস বদলাইবার পাঁয়তারা কষিতেছে। কে না জানে যে অভিজাত পশুদের স্বাভাবিক খাদ্যাভ্যাসের কারণে কোদণ্ডে আন্তর্জাতিক শান্তি-শৃঙ্খলা বিরাজ করে। পঞ্চম গোয়েন্দা তথ্যটি যদিও ইহার বিপরীত লক্ষণ বলিয়া মনে হয়, কিন্তু ইহা ধোঁকাবাজি ছাড়া কিছুই নহে। শাস্ত্রেই লেখা রহিয়াছে যে নিম্নশ্রেণীর প্রাণীদের বিশ্বাস করা যায় না। তাহারা যদিও মুখে আত্মরক্ষামূলক প্রগতির কথা বলিতেছে, গোপনে নিশ্চয় তাহারা ধ্বংসাত্মক দাঁত-নখ গড়িবার পরিকল্পনা করিতেছে।

সর্বোপরি, অনুন্নত প্রাণীদের উদ্দেশ্য সৎ হইলেও তাহারা সভ্য প্রাণীদের মত আধুনিক উন্নত দাঁত-নখ ব্যবহার করিবার সক্ষমতা অর্জন করিবে, ইহা কখনোই গ্রহণযোগ্য নহে। ইহা চূড়ান্তভাবে পাশবিকতার সকল মহৎ উদ্দেশ্য ও আদর্শ পরিপন্থী।

বুদ্ধিজীবীরা পশু-গণমাধ্যমের সহায়তায় ঘোষণা করিলেন যে, যেহেতু এইধরণের মনোভাব আন্তঃপশুসমাজের মূল্যবোধ বিরোধী, এবং অরণ্যের বিভিন্ন পবিত্র কনভেনশন অনুযায়ী এধরণের মনোভাব পাশবিকতা-বিরোধী, সে কারণে এই বেয়াদব ও তস্কর স্বভাবের প্রাণীদের অবিলম্বে দমন না করিলে সমগ্র কোদণ্ড গ্রহে পশুশান্তি বিনষ্ট হইবে।

কোদণ্ডের পশু-গণমাধ্যম নিষ্ঠার সাথে তাহাদের কর্ত্যব্য পালন করিল। ফলে আপামর মাংসাশী প্রাণীর সাথে কিছু নিরীহ নিরামিষাশী প্রাণীও আতংকিত হইয়া উঠিল। কি কারণে কি হইতেছে অধিকাংশই বুঝিতে পারিতেছিলোনা। ফলে আতঙ্ক বাড়িতে লাগিল।

এদিকে সাধারণ মাংসাশীরা দাঁতাল-হরিনের খবরে আতংকিত হইলেও হরিণেরা গায়ের জোরে তাহাদের সাথে পারিয়া উঠিবে বলিয়া তাহাদের বিশ্বাস হইতেছিল না। কিন্তু চিন্তাশীল ও নেতৃস্থানীয় মাংসাশীরা খাদ্যাভ্যাস পরিবর্তনের ষড়যন্ত্রের তথ্যটি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করিতে লাগিল। অনুন্নত প্রাণীদের শরীরের দেহাস্ত্র বা দেহশক্তিকে তাহারা ভয় পায় না। কিন্তু তাহাদের মস্তিষ্ককে তাহারা ভয় পায়। এই মস্তিষ্কের কারণে তাহারা নিরামিষাশী হওয়া সত্ত্বেও সংখ্যায় শ্রেষ্ঠ।

মাংসাশীরা চিন্তা করিল যে তৃণভোজীদের কৌশলের ফাঁদে পা দিয়া মাংসাশীরা যদি আমিষ ছাড়িয়া ঘাস ও লতা-পাতা খাইতে প্ররোচিত হয়, তাহা হইলে তাহারাও তৃণভোজীদের মত অহিংস প্রাণীতে পরিণত হইবে।

সেক্ষেত্রে মাংসাশী প্রাণীদের ধ্বংস অনিবার্য। কারণ অহিংস প্রাণীরা অন্যের ওপর প্রভুত্ব করিতে পারেনা। অহিংস প্রাণীদের সারাদিন খাদ্য সংগ্রহে পরিশ্রম করিতে হয়। অথচ মাংসাশী প্রাণীরা অতি অল্প সময় পরিশ্রমের মাধ্যমে শিকার ধরিয়া আহারের পর সারাদিন বিশ্রাম, নিদ্রা ও অন্যান্য আমোদ-প্রমোদে সময় কাটাইতে পারে। সর্বোপরি বিস্তীর্ণ ভূখণ্ডের ওপর মাংসাশী প্রাণীদের যে রাজকীয় অধিকার, যুগে যুগে স্বীকৃত ও প্রতিষ্ঠিত, অহিংস হইলে তাহা হারাইতে হইবে।

আর একটি বিষয়। প্রাণীজীবনের সর্বোত্তম আদর্শ হিংসা ত্যাগ করিলে জীবনের কোনো অর্থ থাকিবে কি? শুধু বাঁচিয়া থাকাই কি জীবন? হিংসাই যদি বর্জন করিতে হয়, তাহা হইলে কোথায় থাকে বীরের গৌরব, কোথায় থাকে এই শৌর্য-বীর্য্য? প্রচন্ড তেজে জ্বলিয়া উঠিয়া, প্রচন্ড বেগে শিকারের পশ্চ্যাৎধাবন করিয়া মুহূর্তে তাহার টুটি কামড়াইয়া ধরার যে তাৎক্ষনিক, প্রায় অলৌকিক মহান উত্তেজনা, পশুজীবনে আর কোথায় তাহার তুলনা মেলে?

সমস্যার সমাধানের জন্য ব্যাঘ্র মহারাজা পশু-সম্রাট সিংহের কাছে সকল তথ্য-প্রমান সহ আবেদন জানাইলেন। সকল মাংসাশী শ্রেণীর নেতৃস্থানীয় পশু, গোয়েন্দা সমাজ, পশু-বুদ্ধিজীবী, পশু-গণমাধ্যম, ও অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ পশু-বিভাগের প্রধানদের মধ্যে গোপনীয় তথ্য ও মতামতের মুহুর্মুহু আদান প্রদান ঘটিতে লাগিল। ভূখণ্ডের সীমারেখা লইয়া বিভিন্ন মাংসাশী শ্রেণীর মধ্যে সচরাচর স্বাভাবিক যে সকল মতভেদ ও মতবিরোধ থাকে তাহা আপাততঃ পশু-সমাজের বৃহত্তর স্বার্থে স্থগিত রহিল।

অবশেষে সম্রাট সিংহের ইচ্ছা অনুযায়ী পশু-জাতিসংঘের এক বিশেষ শান্তি-অধিবেশন অনুষ্ঠিত হইলো। সিংহ, বাঘ, চিতাবাঘ, জাগুয়ার, প্যান্থার, নেকড়ে, হায়েনা, শৃগাল, কুমির, গৃধিনী, শকুনি, অজগর, বিষধর, ইত্যাদি, এবং আরো বহুপ্রকারের অভিজাত মাংসাশী শ্রেণীর প্রতিনিধিরা সাতদিন দিবারাত্রি বিতর্ক ও আলোচনা করিয়া ভয়ানক পরিশ্রমের পর সর্বসম্মতিক্রমে পশুজাতিসংঘশান্তি-১৫ নামে এক বাধ্যতামূলক আন্তর্জাতিক যুগান্তকারী ঘোষণা প্রকাশ করিল। বলা বাহুল্য এই ঘোষণার প্রধান উদ্দেশ্য: পশু-সমাজে স্থায়ী শান্তি প্রতিষ্ঠা করা। ঘোষণাটি নিম্নরূপ।

১. যেহেতু পশুসমাজের সামগ্রিক কল্যাণের জন্য পশুসমাজকে দায়িত্বপূর্ণ আচরণ করিতে হইবে, সেই হেতু শিকার ধরিবার বা আক্রমণ করিবার উপযুক্ত বৃহৎ ও ক্ষুরধার দাঁত ও অন্যান্য দেহাস্ত্র অর্জন ও রাখিবার অধিকার শুধুমাত্র মাংসাশী প্রাণীদের জন্য সংরক্ষিত থাকিবে। এইসব মারণাস্ত্র তৃণভোজীদের জন্য সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ হইলো।

২. যে সমস্ত তৃণভোজী ইতিমধ্যে আক্রমণাত্মক দাঁতের অধিকারী হইয়াছে, তাহাদের মধ্যে যাহারা সম্রাটের কথামত চলিবে (যেমন বন্য শূকর), কতিপয় নিদৃষ্ট শর্তে আপাততঃ তাহাদের এইসব দাঁত ব্যবহার করিতে দেয়া হইবে। এইসব মহাগুরুত্বপূর্ণ শর্তসমূহের একটি উদাহরণ হইলো এই যে, ‘উত্তর কোদণ্ড পশু-সামরিক জোটের (উকোসাজো) স্বার্থে এইসব দাঁত ব্যবহার করা যাইবে। অন্যথায় নহে।’ সকলেই জানে যে কোদণ্ড গ্রহের পশুদের পাশবিক মূল্যবোধ ও গণতান্ত্রিক অধিকার রক্ষার জন্য উকোসাজো এযাবৎ বহু ত্যাগ শিকার করিয়াছে।

৩. হরিণ ও অন্যান্য সহজবধ্য, সুখাদ্য, ও সংখ্যাসমৃদ্ধ জাতিগুলিকে তাহাদের অর্জিত বা পরিকল্পিত উন্নত প্রযুক্তির দাঁত ও অন্যান্য দেহাস্ত্র অবিলম্বে ধ্বংস করিতে হইবে। অন্যথায় তাহাদের বিরুদ্ধে স্যাংশন বা ‘একঘরে’ করার ব্যবস্থা করা হইবে। সকল প্রকার সমৃদ্ধ তৃণভূমি ও জলাশয় হইতে তাহাদের বিতাড়ন করা হইবে। উকোসাজোর আত্মনিবেদিত সেনারা এইসব পবিত্রভূমি দিবারাত্রি পাহারা দিবে ও রক্ষা করিবে।

৪. হীম ও তাহার নিকট প্রশিক্ষণ প্রাপ্ত শতজন পশুবৈজ্ঞানিককে পাশবিকতার শত্রু হিসাবে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হইলো। এই মৃত্যুদণ্ড অবিলম্বে কার্য্যকরী করা হইবে। যাহারা পলাতক, তাহাদের জীবিত বা মৃত ধরিয়া আনার জন্য প্রতিক্ষেত্রে একশত হরিণ (পর্যায়ক্রমে) বিনাশ্রম আহার করিতে দেয়া হইবে।

৫. এখন হইতে এই ঘোষণা পশুসমাজ ও পাশবিকতার রক্ষাকবচ হিসাবে বিবেচিত হইবে। কোদণ্ড গ্রহের সকল পাশবাধিকার সংগঠন এই ঘোষণার মান নিয়ন্ত্রণ করিবে। তাহারা নিয়মিত জরিপ, গবেষণা ও প্রতিবেদন প্রকাশ করিয়া আন্তর্জাতিক পশুসমাজকে অবহিত করিবে। সম্রাটের পক্ষ হইতে তাহাদের যে অনুদান দেয়া হইবে, তাহা প্রয়োজনের অতিরিক্ত হইলেও তাহার আসল পরিমান কোনোদিন প্রকাশ করা যাইবেনা।

৬. পাশবাধিকার সংগঠন গুলিকে এখন হইতে তাহাদের সমস্ত পরিশ্রম ও মনোযোগ তৃণভোজীদের বিষয়ে প্রয়োগ করিতে হইবে। তৃণভোজীদের এতকাল এবিষয়ে অবহেলা করিয়া সমাজ তাহাদের প্রতি বৈষম্যমূলক আচরণ করিয়াছে। পাশবাধিকার সংগঠন গুলিকে একথাও জানানো যাইতেছে যে মাংসাশী প্রাণীদের জন্য এখন হইতে তাহাদের নিয়মরক্ষামূলক বিবৃতি দেয়া ছাড়া আর কোন দায়িত্ত্ব থাকিবেনা। কারণ পাশবাধিকার ও পশু-গণতন্ত্র রক্ষার জন্য মাংসাশীরা কুমিরের কাছ হইতে এতো অধিক পরিমানে অশ্রু ধার করিয়াছে যে কোনোকালে এই অশ্রু শেষ হইবে না এবং এই ধারও শোধ হইবেনা। মাংসাশীদের এই আত্মত্যাগের কারণে মাংশাসী শব্দ, পাশবাধিকার, ও গণতন্ত্র সমার্থক হইয়া দাঁড়াইছে।

৭. পশু-গণমাধ্যম গুলিকেও আরো দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হইবে। তৃণভোজীদের মধ্যে সামান্যতম সহিংস বা মাংসাশী, বা আত্মরক্ষামূলক প্রবণতা দেখা দিলে, তাহার গন্ধ পাইবামাত্র ‘তিল কে তাল’ করিতে হইবে, কোদণ্ডময় আলোড়ন ও আতঙ্ক সৃষ্টি করিতে হইবে, এবং এইভাবে তাহাদেরকে পশু-শান্তি ও শৃঙ্খলার অতন্দ্র প্রহরী হিসাবে কাজ করিতে হইবে। মনে রাখিতে হইবে যে যুগের পরিবর্তনের সাথে সাথে তাহাদের স্বাধীন পশু-সাংবাদিকতার বস্তাপঁচা মূল্যবোধের দৃষ্টিভঙ্গিও বদলাইতে হইবে।


শেষ খবর


এই ঘোষণা অত্যন্ত সফল ভাবে কার্যকরী হইয়াছিল। কোদণ্ড গ্রহে শান্তি বিরাজ করিতেছিল। তৃণভোজীরা ক্রমাগত কোনঠাসা হইতেছিল। কিন্তু মনে-মনে তৃণভোজীরা এই একতরফা ঘোষণা মানিয়া লইতে পারে নাই। শোনা যায় একটা নতুন গোলমাল শুরু হইয়াছিল। তৃণভোজীরা প্রতিরোধ গড়িতে থাকে। দুই পক্ষেই বিশাল আকৃতি ও প্রকৃতির ক্ষুরধার দাঁত-নখ, গজদন্ত, শ্বদন্ত, শিং, খুর, দেহবর্ম, দেহকণ্টক, ও ভয়ানক ধরণের হলাহল ও অন্যান্য রাহসায়নিক দেহাস্ত্র তৈরির উৎসব শুরু হয়। “ আগে কেবা প্রাণ করিবেক দান তারই লাগি কাড়াকাড়ি” শুরু হইয়া যায়। গোলমালের পরিমান বাড়িতে বাড়িতে পৃথিবীর সাথে কোদণ্ড গ্রহের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হইয়া যায়।

অতি সম্প্রতি পৃথিবীর বৈজ্ঞানিকেরা কোদণ্ড গ্রহের সাথে আন্তঃগ্রহ-যোগাযোগের সর্বশেষ প্রযুক্তি ব্যবহার করিয়াও কোন সাড়াশব্দ পাইতেছেন না। লক্ষণ সুবিধার মনে হইতেছেনা।

আমরা আশা করিব যে কোদণ্ড গ্রহের পশু-সমাজে শেষ পর্যন্ত শুভ-বুদ্ধির উদয় হইয়াছে এবং তাহারা ধ্বংসের দুয়ার হইতে ফিরিয়া আসিয়াছে।

কিন্তু বর্তমান অবস্থায় প্রার্থনা করা ছাড়া আমাদের আর কিছুই করার নাই।

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *