bibidho-muktogoddyo-pagolnama

পাগলনামা
মুক্তগদ্য
সুপ্রিয় চৌধুরী

 

একমুখ দাড়িগোঁফ
অনেক কালের কালো ছোপ ছোপ 
জটপড়া চুলে তার
উকুনের পরিপাটি সংসার
পিচুটি চোখের কোণে
দৃষ্টি বিস্মরণে মগ্ন
বাবু হয়ে ফুটপাতে
একা একা দিনরাত রঙ্গে
পাগল! পাগল!
সাপলুডো খেলছে বিধাতার সঙ্গে। 

 

রাজা বিশ্বনাথ

—————–  

সেই কোন ৯০ দশকের গোড়ায় একগাল দাড়ি, জিন্স শোভিত, হাতে বন্দুকের মত গিটারটা বাগিয়ে স্টেজে ওঠা চল্লিশোর্দ্ধ একটা লোকের গানের এই লাইনগুলো শুনলেই আমার খালি বিশ্বনাথের কথা মনে পড়ে যায়। বিশ্বনাথ। বয়স এই তিরিশ বত্রিশ মতো হবে বড়জোর। উদোম গা, পরনে শতচ্ছিন্ন নোংরা একটা লুঙ্গি, জটপাকানো একমাথা ঝাঁকড়া চুল। শীত গ্রীষ্ম বর্ষা ওই একই চেহারায় এবং একই পোশাকে যথারীতি। বড় বড় একজোড়া চোখে জ্বলজ্বলে কিন্তু ফাঁকা, জাগতিক বোধশূন্য একটা দৃষ্টি! হাত-পা ছড়িয়ে বসে থাকতো পার্ক সার্কাস চার নম্বর ব্রিজের মুখটায় খোলা ফুটপাতে। সেই ৮০-দশকে। বৈশাখ জৈষ্ঠ্যের গনগনে রোদ, আষাঢ় শ্রাবণে আকাশফুটো অঝোর বৃষ্টি, ভাদ্দরের কাঁঠাল পচা গরম, পৌষ আর মাঘের হাড় ছ্যাঁদা করে দেওয়া ঠান্ডা…বিশ্বনাথ ছিলো বিশ্বনাথেই। নিজের মেজাজে। উদাসী এক রাজার মত। নাম বিশ্বনাথ। নাম শুনলেই বোঝা যায় সাতজম্মে মুসলমান হওয়ার কোনোরকম সম্ভাবনা নেই। কিভাবে যেন এসে পড়েছিল এই আপাদমস্তক সংখ্যালঘু প্রধান মহল্লায়। নাম বিশ্বনাথ কিন্তু বিশেষ আসক্তি ছিলো একটি খাদ্য পদে। গোস (গোস্ত) ভাত। পাতি বাংলায় যার মানে গোমাংস আর ভাত। বোঝা যেতো, পার্ক সার্কাস থেকে বেনিয়াপুকুর হয়ে এন্টালি, একাধিক সংখ্যালঘু মহল্লার ফুটপাতেই অসংখ্য দিন ও রাত গুজরান করেছে সে। আর তাকে ওই বিশেষ খাদ্য পদ দুটি খাওয়ানোর লোকের সংখ্যাও নেহাৎ কম ছিল না। তবে এর পিছনে একটি গোপন স্বার্থ ছিল, যার পুরোটাই অর্থকেন্দ্রিক। এই খাওয়ানেওয়ালারা প্রায় প্রত্যেকেই পাকা সাট্টাবাজ। সাট্টা। ৭০ দশকের মাঝামাঝি রতনলাল ক্ষেত্রী নামক এক বোম্বাইয়া (মুম্বাই হয়নি তখনো) মাফিয়ার হাত ধরে এই নব্য জুয়া খেলাটির উদ্ভাবন ঘটে এবং অচিরেই তা ছড়িয়ে পড়ে গোটা দেশে। তো এই খেলাটা চলতো মোটামুটিভাবে আমেরিকান-ইতালিয়ান মাফিয়াদের নাম্বার’স গেমের কায়দায়। সন্ধে ছটা আর রাত বারোটা দু-খেপে খেলা হতো। নাম ছিল ওপেন আর ক্লোজ। অত বিশদে যাচ্ছি না, খুব সংক্ষিপ্তভাবে বলি, ১ থেকে ১০-এর মধ্যে যে কোন একটা নম্বর খুলতো প্রতিবারে। সেই  নম্বরের সঙ্গে যে খেলুড়ের নম্বর মিলে যাবে সে এক টাকা পিছু সাড়ে সাত টাকা করে পাবে। বিশ্বনাথের অসংলগ্ন কথাবার্তার মধ্যে নাকি সম্ভাব্য নম্বরের ইঙ্গিত লুকিয়ে থাকতো। যেরকম একদিন সে নাকি ফুটপাতে গুম মেরে বসে থাকতে থাকতে হঠাৎই জোরসে চেঁচিয়ে উঠে বলেছিল – “আজ রাতে নিগ্ঘাত শালা কালকেউটে কাটবে!” ব্যাস! যে সমস্ত সাট্টাবাজরা খবরের আশায় তাকে ঘিরে বসেছিল, ওমনি নিজেদের মধ্যে জোর ক্যালকুলেশনে বসে গেল সবাই। রাতে কাটবে বলেছে মানে রাত বারোটার খেলা অর্থাৎ ‘ক্লোজ’ হবে আর ফনা তোলা কালকেউটে দেখতে তো অনেকটা ইংরিজি নয়ের মত। পেনসিলারের ঠেকে ছুটে গিয়ে প্রত্যেকে ন নম্বরে বাজি লাগালো। সেই রাতে ক্লোজের খেলায় ন নম্বর ঘরই খুলেছিল আর বিশ্বনাথের জন্য টালির চালের সস্তা হোটেলের ভুনা গোস-ভাতের সঙ্গে একপ্লেট সালাড আর একটা আইসক্রিম সোডাও এসেছিল। 

     ঘোড়ার থুড়ি বিশ্বনাথের মুখের খবর যে সবসময় মিলতো তেমনটা নয় তবে বেশিরভাগ সময়েই মিলে যেতো, এরকমই একটা ফুশফাশ গুঞ্জন উড়ে বেড়াতো মহল্লার বাতাসে বিশেষ করে সাট্টাবাজ মহলে। তবে বিশ্বনাথ তো বাবা বিশ্বনাথই। দেবাদিদেব মহাদেবের মতই মেজাজ। এই জলের মতো ঠান্ডা তো পরমুহূর্তেই ভাঁটা ভাঁটা দু-চোখ পাকিয়ে খ্যাপা উচ্চণ্ড মার্তণ্ডের মতো লাফ দিয়ে উঠে কলাই করা ভাতের থালায় এক লাথি মেরে চেঁচিয়ে বলে উঠতো – “মর গে শালারা! খাবো না তোদের বালের ভাত!” আর বলেই একহাতে খুলে যাওয়া ছেঁড়াখোড়া লুঙ্গির কষি সামলাতে সামলাতে দিগবিদিক জ্ঞান শূন্য হয়ে এক ছুটে বেরিয়ে যেতো কোন অজানার উদ্দেশ্যে। ফিরেও আসতো দিন পনেরো বা একমাস বাদে। আবার যদ্দিন না ভাতের থালায় লাথি মেরে চলে যাওয়ার সময় আসে।

   এহেন বিশ্বনাথকে শেষবারের মত দেখেছিলাম ৯০-এর একদম গোড়ার দিকে ওই চার নম্বর পুলের গায়েই ফুটপাতে। যদ্দুর মনে পড়ছে জানুয়ারি মাসের গোড়ার দিকে। দুদিন ধরে বেশ গুমোট ভাব ছিল একটা। বিকেল থেকেই হাল্কা টুপটাপ দুচার ফোঁটা পড়তে শুরু করেছিল। এ্যাকোরিয়ামে মাছেদের খাওয়ার কেঁচো ফুরিয়েছিল। সন্ধের মুখে আনন্দ পালিত রোডের ফ্যান্সি ফিশ এম্পোরিয়ামে গেছিলাম কেঁচো কিনতে। আকাশের ভাবগতিক দেখেই ছাতা নিয়ে বেরিয়েছিলাম সাথে। কেঁচো কিনে দোকান থেকে বেরোতে না বেরোতেই আকাশ ঝেঁপে বৃষ্টি নামলো। সঙ্গে ‘কড়কড়াৎ!’ প্রবল বজ্রগর্জন আর হাড় ফুটো করে দেওয়া শনশনে বরফঠান্ডা ঝোড়ো হাওয়া! গোটা পাঁচেক স্টপেজের মামলা। সাধারণত হেঁটেই মেরে দিই, কিন্তু সেদিন ঝড়ের তেজ দেখে বাসের খোঁজে একটু দূরেই স্টপেজে এসে দাঁড়ালাম। ভাগ্য অতীব সুপ্রসন্ন, একটা লাল রঙের সরকারি তেত্রিশ নম্বর বাস, যে বাস পেয়ে গেলে সেদিন স্টেট লটারির টিকিট কাটা যেতে পারতো খুব স্বচ্ছন্দে, এসে দাঁড়ালো সামনে। উঠতেই পাঁচ মিনিটে চার নম্বর পুলের মোড়। তখনও জায়গাটা আজকের মত এতটা ভয়ংকর রকম ঘিঞ্জি হয়ে ওঠেনি। প্রবল ঝড়বৃষ্টির দাপটে শুনশান চারপাশ! আর ঠিক তখনি চোখে পড়লো তেকোনা ফুটপাতটায় একদম চার হাত-পা ছড়িয়ে খোলা আকাশের নীচে রাজার মত বসে আছে আমাদের বিশ্বনাথ! পরনের মলিন শতচ্ছিন্ন লুঙ্গিটা কি এক আজব পাগলের খেয়ালে বিড়ে পাকিয়ে মাথায় বাঁধা। অঝোর ধারায় ভিজে যাচ্ছে সম্পূর্ণ নিরাভরণ টানটান উলঙ্গ শরীর! ঠিক সেই সময় আকাশ কাঁপিয়ে বাজ পড়লো একটু দূরেই কোথাও! সেই তীব্র আলোর ঝলকানিতে বিশ্বনাথ! সেই সার্চ লাইটের মত জ্বলজ্বলে বড় বড় একজোড়া চোখ! মুখে এক অদ্ভুত, অলৌকিক, ঐশ্বরিক হাসি! পরমুহূর্তেই স্প্রিংয়ের মত জমি ছেড়ে লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো ফুটপাতের উলঙ্গ রাজা! তারপর লম্বা লম্বা পা ফেলে ব্রিজের চড়াই ধরে মিলিয়ে গেল অঝোর বরিষণের সেই ধূসর চাদরের আড়ালে। ব্যাস! ওটাই শেষ! তারপর থেকে আর কোনদিনই তার সাথে দেখা হয়নি আমার!

 

ডান্স আকবর 

—————–

বিশ্বনাথের কথা হবে আর ডান্স আকবরের কথা হবে না? তাই কখনো হয়? পার্ক সার্কাসের সংখ্যালঘু মহল্লায় বিয়ে থেকে ঈদ, যে কোনরকম পরব পাব্বনে মাইক বেজে উঠলেই হাজির আকবর। আর নাচ শুরু সঙ্গে সঙ্গে। ৮০ / ৯০ দশকের মুসলিম বিয়েবাড়ি মানেই প্রচুর হৈহল্লা, গালাগালি, বিরিয়ানির ব্যাচে আগে বসার জন্য প্রবল ধাক্কাধাক্কি, কখনো কখনো হাতাহাতি পর্যন্তও গড়াতো ব্যাপারটা। তবে এসবকিছুকে ছাপিয়ে যেটা উপচে পড়তো সেটা তুমুল আনন্দ। অনাবিল, অপরিসীম আনন্দ! ফলে আকবর এসে পড়লেই একটা প্রবল হররা উঠতো বিয়েবাড়ির ভেতর থেকে – “আবেএএ! ডান্স আকবর আ গিস!” প্রথমেই পুরি ভাজি পেট ভরে খাইয়ে দেওয়া হবে যা হোক একটা কিছু! এক ঘটি জল। হাতটাত ধুয়ে নিয়ে, বাকিটা ঢকঢকিয়ে গলায় ঢেলে শুরু হয়ে যাবে নাচ। তখন মিঠুন যুগ চলছে। “আই এ্যাম এ ডিস্কো ডান্সার’ থেকে ‘গানমাস্টার জি নাইন’। টানা নেচে চলবে আকবর। বিশ্বনাথের মতই হঠাৎ একদিন পার্ক সার্কাসের এই দরিদ্র সংখ্যালঘু মহল্লায় এসে পড়েছিল আকবর। বিশ্বনাথের মত ঘোর উন্মাদ নয় মোটেই। মুখে সর্বদা মুচকি একটা হাসি। পুরোনো ছেঁড়াখোঁড়া জামা প্যান্টেও একটা মিঠুন মিঠুন আদবকায়দা, কথাবার্তাতেও তাই । হুবহু মিঠুনিয় স্টাইলে কথার মাঝে মাঝে হেঁকে উঠতো – “ওয়য়!” কোথা থেকে এসছিল, পূর্ব পরিচিতি, নিবাস…কিচ্ছু জানতে চায়নি কোনদিন কেউ। ঠিক যেভাবে এই ধরণের মানুষদের ক্ষেত্রে কখনোই এসব জানতে চাওয়া হয় না। তবে পার্ক সার্কাস সংখ্যালঘু মহল্লায় পরব, উৎসব আর আকবরের নাচ, এই দুটো সমার্থক শব্দ হয়ে গেছিল যেন। ওর নাচের কোন জাতবিচার ছিলো না। সামশুল হুদা রোডের ওপর আমাদের ব্যারাকের মত বারো ঘরের ফ্ল্যাটবাড়িটা মহল্লায় পরিচিত ছিলো ‘বাঙ্গালি কোঠি’ নামে। আর সামনের ছোট মাঠটা ‘দুগ্গি ময়দান’। কারণ প্রত্যেক বছর দুর্গা পুজো হতো সেখানে (আজও হয়)। ষষ্ঠীর সকালে ঢাকে কাঠি পড়ামাত্র আকবর এসে হাজির। সঙ্গে তার নাচ। চারদিন ধরে। টানা। প্রসাদ পাবে, দশমীর দিন দু’চার টাকা, পুরোনো জামাপ্যান্ট…  পাবে। দু’পক্ষেই কেউ কোনদিন জিগ্যেস করেনি, “তে কাহে যাকে হিন্দুলোগ কা পান্ডাল (প্যান্ডেল) মে নাচা?” অথবা “তুই কেন আমাদের পুজোয় এসে নাচছিস?” জিগ্যেসের প্রশ্নটাই ওঠেনি। এতটাই সচ্ছল আর স্বাভাবিক ছিলো পুরো ব্যাপারটা। 

   পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে নাচার কম্পিটিশন হয়েছে কিনা জানা নেই, থাকলে আকবরের নাম নির্ঘাত সেই গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে উঠতো। মনে আছে মাঠের আরেক পাশে আমাদের ফ্ল্যাট লাগোয়া টালিখোলার বস্তিটায় একটা বাড়িতে বিয়ের অনুষ্ঠান। সকাল সকাল যথারীতি এসে হাজির আকবর। নেমন্তন্ন ফেমন্তন্নর বালইটালাই নেই। গেস্ট হিসেবে অটোম্যাটিক এ্যান্ড ন্যাচারার চয়েস ওর নামটা। আর সঙ্গে ওর নাচটাও। এসেই একপেট হালুয়া-পুরি খেয়েটায়ে নিয়ে লেগে গেছিল নিজের কাজে। 

   বাড়িতে আমার শোয়ার জায়গাটা ছিলো জানলার ধারে। ঘুম ভেঙে গেছিল অনেক রাতে। পাশে ছোট টেবিলে রেডিয়াম ঘড়িটার কাঁটা প্রায় তিনটের ঘর ছুঁই ছুঁই। বাতাসে বাসি বিফ বিরিয়ানির গন্ধ। বিয়েবাড়ির প্রবল হইহট্টগোল, সব চুপচাপ এই মুহূর্তে! শুধু মাইকটা বাজছে। খোলা মাঠে একা একা নিজের ঘোরে তন্ময় হয়ে মিঠুন ডান্স নেচে চলেছে আকবর। সেই মুহূর্তে আকবরকে একজন মিশনারি বলে মনে হয়েছিল আমার! নাচটাই জীবনে যার একমাত্র লক্ষ্য! দ্য ওনলি মিশন! আর কোনকিছুই সেখানে ম্যাটার করে না!

  এহেন আকবরের নৃত্যময় জীবন হয়তো একই ছন্দে আর তালে কেটে যেতো। সেটা কাটলো না স্রেফ একজনের জন্য। পাগলি। হ্যাঁ, ওই নামেই পরিচিত ছিলো সে। আকবরের মতই হঠাৎই একদিন এসে পড়েছিল মহল্লায়। যেরকম ওই ধরণের মানুষেরা এসে পড়ে আর কি। পাগলি। সঙ্গে দুটি বাচ্চা। একটি ছেলে। একটি মেয়ে। পাগলির সাখে প্রথম থেকেই বেশ বনে গেছিলো আকবরের। ফুটপাতে বসে মিঠে খুনসুটি চলতো দুজনের মধ্যে। বিয়েবাড়িতে আকবর নাচতে এলে পাগলিও সাথে আসতো। লুচিপুরি আর বেঁচে যাওয়া বিরিয়ানির ভাগ পেতো সেও। আকবর নাচতো আর মাঠের এককোনায় নিম গাছটার ছায়ায় বসে দেখতে দেখতে হেসে কুটিপাটি হতো পাগলি। উদোম বাচ্চাদুটো খেলতো ফুটপাতে। তারপর হঠাৎই একদিন ফুটপাতের সংসার গুটিয়ে উধাও হয়ে গেল দুজনে! হুবহু সেই বিশ্বনাথের মতই! এর বহুদিন বাদে একটা গান শুনেছিলাম। বাড়ি বাড়ি খবরের কাগজ ফেরি করা এক হকার আর তার প্রেমিকা ফ্ল্যাটবাড়ির এক কাজের মেয়ের প্রেম সে গানের উপজীব্য। গানের সুরটা গোয়ানিজ ক্যালিপসো টিউনে বিপুল গতিময় আর হুল্লোড়ে। কিন্তু শেষের চারখানা লাইন একেবারে অমোঘ!   

এরপর বৌদিমনির কাজের মেয়ে
পালিয়ে ওই কাগজওয়ালার সঙ্গে গিয়ে
সিনেমার মতই সুখে রইলো কিনা 
সে খবর বঙ্গদেশে কেউ রাখে না 
তোমরা ভেবে করবে কি!

শুধু পাগলরা কেন, তথাকথিত এই উন্নয়ন নামের রুপকথায় বেবাক চুপকথা হয়ে যাওয়া এইসব মানুষরাও যে হঠাৎ করে কোথায় হারিয়ে যায় সে খবর অধুনা এই টু অথবা থ্রি ভি এইচ কে-র কলকাতা রাখতে ভুলে গেছে অনেকদিন হলো! 

অতঃপর এই বছরতিনেক হলো পার্ক সার্কাসের সামশুল হুদা রোডে দুগ্গি ময়দানের বসতভিটে ছেড়ে সাতশো কুড়ি ফুটের ফ্ল্যাটবাড়িতে এসে উঠেছি। কারণ বৃটিশ আমলের ওই বিশাল জরাজীর্ণ ফ্ল্যাট সারানোর মত আর্থিক সামর্থ্য ছিলো না। তাই যারা পারবে, সেরকম এক সম্পন্ন শ্রেষ্ঠী পরিবারের কাছে সেটি বিক্রি করে চলে আসতে হয়েছে যাদবপুরের এই ফ্ল্যাটে। তবুও কত্তাগিন্নি পুজোর সময় প্রতি অষ্টমীতে যাই একবার নিয়ম করে। মূলতঃ ওই গিন্নির তাগিদেই। কারণ এই অধমের ধম্মোকম্মে কোনদিনই আদৌ কোন মতি নেই। তবু তো গেলে পুরোনো মানুষজনের সঙ্গে দেখা হয়। এগিয়ে আসে তাহের, করিম, শাকিল, মুস্তারিরা – “কেয়া ভাবী, কেয়া বাপ্পিদা, ক্যা খবর? সব খ্যায়রিয়ত হ্যায় না?”…ঢাক বাজছে ছোট্ট দুগ্গি ময়দানের প্যান্ডেলে। “ইয়া দেবী সর্বভূতেষু…!” মন্ত্রোচ্চারণ করছেন বৃদ্ধ পুরোহিত মশাই। শুধু আকবর, পাগলি আর বাচ্চাদুটো সেখানে নেই! 

 

ফ্ল্যাশব্যাক 60 / 70

———————- 

কোন ক্লাস তখন? জিতেন্দ্র নারায়ণ ইশকুলে ক্লাস টু না থ্রি? আপার সার্কুলার রোড তখনও আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোড হয়ে ওঠেনি সম্ভবত। রামমোহন লাইব্রেরির উল্টোদিকে আমাদের বাড়ি আর দেহাতি চায়ের দোকানটার ঠিক মাঝখানে বড়সড় একটা পাথরের স্ল্যাবের ওপর বসে থাকতো লালতিয়া। আর খোনা খোনা ভারী মিঠে গলায় গান গেয়ে চলতো একটানা। দুর্বোধ্য ভাষা আর টানা টানা ভীষণ করুণ একটা সুর। কিছুই বুঝতাম না কিন্তু সুরের মধ্যে বুক নিংড়ে উঠে আসা শোকতাপ আর হাহাকারটা ধরতে অসুবিধে হতো না সেই বয়েসেই। 

      লালতিয়া। শীর্ণকায়, ছোটখাটো শরীর। পরনে মলিন ছেঁড়াখোঁড়া শাড়ি। সুরেলা গলার মতই সর্বক্ষণ মুখে লেগে থাকা ভারী মিঠে একটা হাসি। মাঝে মাঝে দু-পাঁচ মিনিটের জন্য গানের বিরতি। 

     আমার বাবা-মা, শ্রী অমিত রঞ্জন চৌধুরী এবং শ্রীমতী অঞ্জলি চৌধুরী, গরিবগুর্বো আর বিপদাপন্ন মানুষের পাশে দাঁড়াবেন, এই শপথ নিয়েই সম্ভবত মাতৃগর্ভ থেকে এ ধরাধামে আবির্ভূত হয়েছিলেন দুজনে। মায়ের রেল অফিসের চাকরি। সেকেন্ড স্যাটারডে, রবিবার বা ছুটিছাটার দিনে বাড়ি থাকলেই একতলার জানলার পর্দা তুলে ডাক দিতো – “এ্যাই লালতিয়া, ভাত খাবি?” সঙ্গে সঙ্গে ভারী মিঠে হাসিটা ঝলমলিয়ে ছড়িয়ে পড়তো গোটা মুখখানায়! “দে মায়ি!” কারো কাছে কোনদিন হাত পেতে কিছু চাইতে দেখিনি। কিন্তু হিন্দুস্থানী দোকানের চা-বিস্কুট, এবাড়িওবাড়ি থেকে ডাল ভাত তরকারি, কিছু না কিছু জুটে যেতো ঠিকই। আসলে এলাকাটার নাম গড়পাড়। এখনকার কথা বলতে পারবো না কিন্তু সে সময় ও পাড়ায় কারো না খেতে পেয়ে মরে যাওয়ার যো ছিলো না। 

           অবসর পেলে জানলার পর্দা সরিয়ে লালতিয়ার সাথে টুকটাক গল্পসল্প করতো মা। কথায় বলে ভাষার কোন সীমানা নেই। মনটা মিললেই হলো। “ঘর কোথায় তোর?” – জিগ্যেস করলেই একগাল হেসে উত্তর। “জিলা গোরখপুর, মায়ি।” ব্যস, এর বেশি আর কিছু না। তবে দুর্বোধ্য সেই দেহাতি বুলি থেকেই দক্ষ প্রত্নতাত্ত্বিকের মত লালতিয়ার ভেতরের কিছুটা খুঁড়ে বের করে আনতে পেরেছিল মা। যেটুকু জানা গেছিল, বাচ্চা না হওয়ার কারণে ওকে তাড়িয়ে দিয়েছিল ওর স্বামী। তারপর তো এঘাট ওঘাট ভাসতে ভাসতে ঋত্বিক ঘটকের বাড়ি থেকে পালিয়ে সিনেমার ওই গানটার মতো, ‘আমি অনেক ঘুরিয়া শ্যাষে আইলাম রে কইলকাতা!’…না, লালতিয়া কিন্তু আকবর, পাগলি বা বিশ্বনাথের মত হারিয়ে যায়নি। চলে গিয়েছিল এক শীতের সকালে এ শহর ছেড়ে বরাবরের জন্য। গানের ঘোরে মত্ত হয়ে ফুট পেরোনোর সময় কুয়াশা ঢাকা আপার সার্কুলার রোড ধরে ছুটে আসা ওই লাল রঙের তিন নম্বর ডবল ডেকার বাসটাকে চোখেই পড়েনি। কুয়াশার জাল কেটে চালকের চোখে পড়তে পড়তে সম্ভবত অনেকটা দেরি হয়ে গেছিল! মুহুর্তে ‘দ্য এন্ড!’ জিলা গোরখপুর থেকে উৎপাটিত হয়ে চলে আসা কোন আরেক গাঁয়ের বধূর কাহিনী! যাকে নিয়ে গান বাঁধেননি কোন সলিল চৌধুরী! লালতিয়ার আধুরি কাহানি খতম ওখানেই! 

 

কারেন্ট 

——— 

শুভনাম শীতল ভট্টাচার্য। তবে সে জায়গাটা যদি হয় গড়পাড়, তাহলে সেটা কখনোই ওখানে মানে ওই একই জায়গায় থ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকবে না এটা গ্যারান্টি। শীতল থেকে শেতল এবং শেতল থেকে শেতলা (ত-য়ের নীচে অবধারিতভাবে হসন্ত) হয়ে যাবে অচিরেই। আর সেই শেতলা যদি জন্ম থেকেই হয় বদ্ধ উন্মাদ এবং জড়বুদ্ধি তাহলে তার নামের পেছনে ‘পাগলা’ পদবিটা যোগ হয়ে যাবে অনতিবিলম্বেই। 

   যে সময়কার কথা বলছি, তখন পুরোনো কলকাতার ওইসব পাড়ায় ‘স্প্যাসটিক’, ‘স্পেশাল চাইল্ড’, ‘মেন্টালি চ্যালেঞ্জড’ জাতীয় শব্দের নামই শোনেনি কেউ। ওই ধরণের মানুষদের পাগল, পাগলা, এমনকি সময় সময় পেছনে আরো দু-অক্ষর যোগ করে ডাকাটাই রেওয়াজ ছিল। কারণ ওই ডাকগুলোই খুব স্বাভাবিক। তবে নিজেরা পেছনে যেমন লাগবে আবার বুক দিয়ে আগলেও রাখবে তেমনি একইভাবে। বাইরের কেউ পেছনে লাগতে এলে অশেষ দুঃখ নাচবেই নাচবে তার কপালে । তবে শেতলার কপালে এই পেছনে লাগার দুর্ভোগটা বেড়ে গেছিল একটি ঘটনায়। মাঝে মাঝে তার ওি খ্যাপামো এমন ভয়ংকর জায়গায় গিয়ে পৌঁছোতো যে রাতদিন ঘরে আটকে রাখতে হতো। ছ-নম্বর গলির একটা খুপরি কয়লার ঘরে তালা লাগিয়ে। জানলার গরাদ শক্ত মুঠোয় ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে শেতলা। রক্তলাল একজোড়া চোখে হাড় হিম করে দেওয়া দৃষ্টি আর খাঁচাবন্দী বাঘের মত গর্জন! দেখেশুনে পাড়ায় কে বা কারা যেন শেতলার বড়ভাই কেনোদাকে (শুভ নাম কানাই ভটচায) পরামর্শ দিয়েছিল শেতলাকে মানসিক রোগীদের হাসপাতালে নিয়ে যেতে। গোবরার হাসপাতালে শেতলার শক ট্রিটমেন্ট হয়েছিল আর সেই অতি ভয়াবহ অভিজ্ঞতা থেকেই সম্ভবত কারেন্ট – এই শব্দটির প্রতি তীব্র আতঙ্ক আর ক্রোধের এক মিশ্র প্রভাব পড়েছিল ওর মনের মধ্যে। আর এই খবরটা অনতিবিলম্বেই উল্কার গতিতে ছড়িয়ে পড়েছিল গোটা গড়পাড় এবং গড়পাড়ের সীমা ছাড়িয়ে হরিনাথ দে রোড,  যুগিপাড়া, বলদেপাড়া, কালু ঘোষ লেন, মানিকতলা, হালসী বাগান, গুল মাঠ, লালাবাগান অবধি। শেতলা। পরিধানে হাঁটু ঝুল ঢোলা হাফপ্যান্ট আর ঢলঢলে সস্তার শার্ট, ওই বিশাল এলাকার অলিগলি, বড়রাস্তা যেখান দিয়েই সে হেঁটে যাক না কেন, গলিগলতার আনাচকানাচ থেকে নানানরকম স্বরে “কারেন্ট!” ডাকটা ভেসে আসতে শুরু করলো নিয়মিতভাবে। প্রথমদিকে বেজায় ক্ষেপে গিয়ে পিতৃমাতৃ কূল উদ্ধারকারী কাঁচা খিস্তি, কিন্তু তাতে বিশেষ কাজ না হলো না। কারণ যারা পেছনে লাগছে তারা তো ওই গালাগালটাই শুনতে চায়। ফলে অন্য পন্থা আবিস্কারের পথে হাঁটলো শেতলা। গোটাচারেক স্টপেজ হাঁটলেই তো শেয়ালদা স্টেশন। রোজ সকালে উঠেই কাইজার স্ট্রিট রেল কোয়ার্টারের অলিগলি দিয়ে ঢুকে রেললাইনের খোয়া পাথর কুড়িয়ে ঢোলা হাফ প্যান্টের পকেট ভর্তি করে ফিরে আসতো এলাকায়। গলিঘুঁজির আনাচকানাচ থেকে “কারেন্ট!” ডাক ভেসে এলেই পাতলুনের পকেট থেকে বেরিয়ে আসতো খোয়া পাথর। তারপর মেশিনগানের বুলেটের মত ছুটে যেতো শব্দের উৎস লক্ষ্য করে। অনেকটা পুরাণের ওই শব্দভেদী বাণের মত ব্যাপারস্যাপার আর কি। কয়েকজনের কানমাথা ফাটার পর সতর্ক হয়ে গেছিল প্রত্যেকে। হাতেগোনা দু-চারজন ভয়ানক রকম বেয়াড়া বিচ্ছু ছেলেছোকরা ছাড়া শেতলার পেছনে লাগার আগে অন্তত দশবার ভাবতো সবাই। 

   তবে পেছনে না লাগলে বছরে গরমকালের ওই পনেরো দিন একমাস ছাড়া মোটের ওপর নিরীহই ছিলো আমাদের শেতলা। গড়পার থেকে লালাবাগান, এই বিশাল এলাকা জুড়ে প্রায় প্রত্যেকটা বাড়িতে বিয়ে, শ্রাদ্ধ, মুখেভাত, অটোমেটিক চয়েস ছিলো ও। বাড়ির নারায়ণ পুজো হোক বা পাড়ার বারোয়ারি, সেখানেও ওই একই চিত্র। “কাল মিত্তিদের বিয়েবাড়িতে কি খেলি শেতলা?” – এ জাতীয় প্রশ্ন করলেই নুন, লেবু থেকে শেষ পদটা অবধি মুখস্থ বলে যাবে ঝাড়া গড়গড়িয়ে। কোথাও একটা আইটেমও বাদ পড়ার যো নেই। 

   ক্লাস এইটে উঠে পুরোনো কলকাতার ওই প্রাণাধিক প্রিয় পাড়াটা ছেড়ে যখন মফস্বলে চলে এলাম (দমদম তো তখন মফস্বলই) শেতলা তখনো স্বমহিমায় বিরাজমান গড়পাড়ে। মাঝেমাঝে ওপাড়ায় গেলে দেখা হয়ে যেতো রাস্তাঘাটে। শেষ দেখেছিলাম গড়পাড় রোডে একদা উপেন্দ্রকিশোর, সুকুমার, সত্যজিত…একদা রায়দের বসতভিটে এথেনিয়াম স্কুলের নীচে ইউ রায় (উপেন্দ্রকিশোর রায়চৌধুরী) এ্যান্ড সন্স নামে ছাপাখানার পাশে চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে আনমনে। মুখে ভারী উদাসীন একটা হাসি! শেতলার সঙ্গেও সেই আমার শেষ দেখা! আর কি অদ্ভুত সমাপতন! ঠিক লালতিয়ার মতই শেতলাও মারা গেছিল গাড়ি দুর্ঘটনায়। শ-দুই মিটার আগে গড়পার রোড আর আচার্য প্রফুল্লচন্দ্র রোডের (আপার সার্কুলার রোডের পরিবর্তিত নাম) মোড়ে। যদ্দুর মনে পড়ছে লরির ধাক্কায়। পাড়ার লোক ঝেঁটিয়ে গেছিলো শেতলার শবযাত্রায়। চাঁদা তুলে কেনা বোম্বাই খাটে চেপে ফুল আর মালার স্তুপে ঢেকে বরাবরের মত গড়পাড় ছেড়ে চলে গিয়েছিল শীতল ভট্টাচাজ, আমাদের শেতলা!

 

প্রশ্নগুলো সহজ আর উত্তরও তো জানা 

———————————————-

না। এনাকে কখনো চোখে দেখিনি আমি। শুধু শুনেছি লোকের মুখে মুখে। ৭২, ৭৩ সাল নাগাদ এসে চুপ করে বসে থাকতেন কলেজ স্ট্রিটের ওপর মেডিক্যাল কলেজের ঠিক মাঝখানের গেটটার একপাশে। অত্যন্ত অভিজাত চেহারা, দামী শাড়ি, এক মাঝবয়েসীনি। গায়ে চড়ানো এ্যাপ্রন আর গলায় জড়ানো স্টেথো ডাক্তারবাবুদের বেরোতে বা ঢুকতে দেখলেই উঠে গিয়ে উৎকন্ঠিত, করুণ স্বরে জিগ্যেস করতেন, “ডাক্তারবাবু, আমার খোকা বাঁচবে তো?” প্রশ্নের জবাবে থমথমে মুখ, ডাক্তারবাবুরা বেরিয়ে যেতেন নীরবে! ফের এসে নিজের জায়গায় চুপচাপ বসে পড়তেন মহিলা। মাঝে মাঝে জিগ্যেস করতেন আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকা মানুষজন বা পথচারীদেরও। “আমার খোকাকে দেখেছো তোমরা? এই তো ছিল? কোথায় যে গেল!” কি আর উত্তর হয় এ প্রশ্নের! কিন্তু ওইসব ডাক্তারবাবুদের মধ্যে অনেকেই জানতেন, জানতো হাসপাতাল মর্গের ডোমরাও, ৭১ সালের মাঝামাঝি এক ভোররাতে মর্গের গেটের সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল ঘাতকবাহিনীর কালো ভ্যানটা। মর্গের করিডরে ছুঁড়ে দেওয়া বুলেটে ফুটোফাটা কয়েকটা লাশের মধ্যে ওনার ছেলের শরীরটাও ছিলো! স্থানীয় মানুষজনেরা যারা মর্গের চতুর্থ শ্রেণির ওইসব কর্মচারীদের থেকে ঘটনাটা শুনেছিলেন, তাদের কারো কারো কাছে পরবর্তীতে বৃত্তান্তটা শুনেছিলাম আমি। তাঁরা আরও বলেছিলেন, প্রত্যেকদিন অনেক রাতে নাকি একটা দামী গাড়ি এসে দাঁড়াতো কলেজ গেটের সামনে। গাড়ি থেকে নেমে আসতেন সম্ভ্রান্ত চেহারার কয়েকজন মানুষ। না খুব কিছু একটা বোঝাতে হতো না। চুপচাপ গিয়ে তাদের সাথে গাড়িতে উঠেতেন মহিলা। পরদিন সকালে আবার সেই একই রুটিন। প্রায় বছরদুয়েক মতো চলেছিল এই ঘটনাক্রম। অতঃপর হঠাৎই একদিন বন্ধ হয়েছিল আসা। আর তারপর? তারপর তো কতকাল আগে শোনা ওই গানটার মতো… ‘তার আর পর নেই! নেই কোন ঠিকানা!’…অসম্পূর্ণ থেকে যাচ্ছে সমাজের চোখে বেকার বেমতলব বাতিল হয়ে যাওয়া এরকম আরো অনেক চরিত্রের অসমাপ্ত আখ্যান, স্বাভাবিক মানুষ যাদের ‘পাগল’ নামে ডাকে। সুযোগ পেলে সেইসব অসমাপ্ত বৃত্তান্ত শোনানোর ইচ্ছে রইলো এখানেই।

 

3 thoughts on “bibidho-muktogoddyo-pagolnama

  1. দুরন্ত হয়েছে লেখটা।

  2. এ লেখা পড়লে মন হু হু করে পাগল পাগল লাগে। মনে হয় একদম পাগল হয়ে যাই।

  3. খুব ভালো লাগলো। মন ছুঁয়ে যাওয়া লেখা‌।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *