binodan-anko-ki-kothin

অঙ্ক কি কঠিন
ফিল্ম রিভিউ
অদিতি বসুরায়


অঙ্ক কি কঠিন, আসলে এক পাড়ার কথা বলে। সেই পাড়ায় অসুস্থ শ্রমিক, দেহপোজীবি, গৃহ পরিচারিকা, আয়াদের বাচ্চারা স্বপ্ন দেখে। তাদের ইস্কুল বন্ধ। মানে সরকারী বিদ্যালয় ঝাঁপ ফেলেছে। আর নিম্নবিত্তের মানুষগুলোর পক্ষে বেসরকারী স্কুলের মাইনে গোনা একেবারেই অসম্ভব। বাচ্চারা তাই দলবেঁধে খেলা করে। ঘোরে – খাবার ভাগ করে খায়। এবং একখানা বিশাল হাসপাতাল তৈরির স্বপ্ন দেখে। তাদের সেই স্বপ্নের কারখানায় যোগ দেয় আরও অনেকে। টায়ার, ডলি, বাবিন – এই তিন খুদে অভাব-অনটনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে রামধনু দেখে স্বপ্নে। শাহরুখদাও তাদের মতোই গরীব। সেও বাজি রাখে দিন আনা-দিন খাওয়া জীবনকে। ডলির মা, একটা মাত্র ফিশফ্রাইকে যখন তিন টুকরো করে বাচ্চাদের পাতে দেয় – মনে হয়, এ জীবন তুচ্ছ হলেও আনন্দের খনি। আমরা একলা বটে কিন্তু বিচ্ছিন্ন নই। অঙ্ক কি কঠিন – সেই বার্তাই দেয়। প্রতিটি চরিত্র এমন মানবিক ভাবে রচিত – যে দর্শকদের তা দু’বার ভাবাবেই। কিংবা তার বেশিও। টায়ারের মায়ের কথাই ধরুন। সে একদিন বিউটিপার্লার খুলবে বলে প্রাণপণে টাকা জমায়। ছেলের জন্মদিনে শেখায়, আগে ‘ভাল মানুষ’ হতে হবে তাকে। ‘ভাল মানুষ’ কাকে বলে? ওই তারাই ভাল মানুষ, যারা বিপদে অন্যের পাশে দাঁড়ায়। হাত ছাড়িয়ে যায় না, বন্ধু হয়। আমরা বিস্মিত হই – কারণ মা বলে না, ডাক্তার – ইঞ্জিনিয়ার হতে। বলে, ‘তোর যা ইচ্ছে হয় তাই হবি’। সঙ্গে শর্ত কেবল, আগেই বলেছি, ভাল মানুষ হতে হবে। ওদিকে বাবিনের অসুস্থ বাবার জন্যে, কাজের বাড়িতে কিছু টাকা ধার চায় তার মা। পরিচারিকা বলে নিত্য হেনস্থার স্বীকার সে। তারপরেও, যখন সে পাঁচশোটি টাকা ফেরত দিয়ে দেয় – বোঝা যায়, দারিদ্র তার শিরদাঁড়া ক্ষইয়ে দিতে পারেনি। মরচে ধরে নি তার আত্মবিশ্বাসেও।

পরিচালক সৌরভ পালধি, এক স্বপ্ন রঙের টোন দিয়ে এই ছবি নির্মাণ করেছেন। সেখানে দারিদ্রকে মহিমান্বিত করেননি তিনি – যা করেছেন, তা হল, দারিদ্রকে অতিক্রম করে জীবন ডানা মেলতে পারে, যদি সহমর্মিতা এবং বন্ধুত্ব থাকে। এই বার্তাটিকে চমৎকার সুরে বেঁধেছেন লগ্নজিতা তাঁর গান, ‘আমাকে গল্প বলো’ দিয়ে। টায়ার, ডলি, বাবিনের চরিত্রে দারুন কাজ করেছে – ছোট্ট অভিনেতা , তন্ময় দেব, রিদ্ধিমান ব্যানার্জি, গীতাশ্রী চক্রবর্তী। বাবিনের বাবা এবং মায়ের ভূমিকায় একেবারে যথাযথ শঙ্কর দেবনাথ, সঞ্জীতা। ঊষসী চক্রবর্তী চমৎকার। তবে বিশেষ ভাবে উল্লেখ করতে হয়, টায়ারের মায়ের ভূমিকায় কাজ করা দীপান্বিতা নাথের কথা। অসামান্য অভিনয় করেছেন তিনি – শারুক হিসেবে প্রসেনজিত সোমও দুর্দান্ত।

এই অন্ধকার সময়ে যখন দুনিয়ার নানা প্রান্তে যুদ্ধ চলছে – গণহত্যার মিছিল করছে রাষ্ট্রনায়করা – নিহত শিশুদের দীর্ঘশ্বাসে বাতাস ভারি হয়ে থাকছে, সেই মুহুর্তে দাঁড়িয়ে বাচ্চাদের জন্য এক অমলিন ছবি উপহার দেওয়ার জন্য পরিচালক সৌরভ পালধিকে ধন্যবাদ জানাতেই হবে।



এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *