অনুপম রায়
কথা বললেন অদিতি বসুরায়
প্রশ্ন: যখন সাদা খাতায় শব্দ লেখো, সেটাকে গান হিসেবে ভাবো নাকি কবিতা?
অনুপম : ঠিক করে রাখি আগে থেকেই কী লিখতে বসছি – গান নাকি কবিতা। আমার মাথায় যদি কোনও লাইন আসে, যাকে ‘হুক লাইন’ বলে, তাতে সুর এসে গেলে গান লিখতে বসি- উল্টোটাও ঘটে। সুর আগে এলেও গান লিখতে বসি। কথা বসাতে বসাতে সেই গানকে এগিয়ে নিয়ে যাই। কবিতা তা নয়। কবিতার জন্যে আলাদা ভাবনা কাজ করে। দুটো প্রসেস একেবারে আলাদা।
প্রশ্ন: কবিতা লেখার ক্ষেত্রে ঠিক কী ধরণের ভাবনা তোমাকে প্রভাবিত করে?
অনুপম : যখন বয়েস আরো অল্প ছিল, তখন প্রেমই সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলত কবিতায়। আমার প্রথম কবিতার বইতে মূলত প্রেমের কবিতাই আছে। ২০১১-২০১২ সালে সেই বই প্রকাশিত হয়। সময়ের সঙ্গে বিষয় পালটে যায় – আমার কবিতাও তেমন। সেখানে খুব উচ্চকিত কিছু থাকে না। রাগ, ভালবাসা সবই চারদিকের ঘটনা দেখে হয় – এখন যেমন হাতরাশের ঘটনা কাগজে পড়ে এতো রাগ হয়েছিল, যে কী করবো বুঝতে পারছিলাম না। প্রায় একই রকম খারাপ লেগেছিল সুশান্ত সিং রাজপুতের মৃত্যুর পর মিডিয়ার অসভ্যতা দেখে। কিন্তু তার জন্যে গান বা কবিতা কিছুই লিখতে পারি নি !
প্রশ্ন: গত দশ বছরে বাংলায় যে কটি গান বিপুল জনপ্রিয়তা পেয়েছে – সবকটাই তোমার গাওয়া বা তোমার সুরে বা কথায়। এবং তুমি নতুন গায়ক-গায়িকাদের যেভাবে সুযোগ দাও তা প্রশংসনীয়। অপেক্ষাকৃত নতুন শিল্পীদের নিয়ে কাজ করার এই রিস্ক নাও কিভাবে?
অনুপম : দেখো, আমি যাদের নিয়ে কাজ করি, তাদের সম্পর্কে অবগত হয়েই, স্টুডিওতে ডাকি। নতুনদের থেকে অনেক কিছু শেখা যায় – তাদের মন অনেক তাজা থাকে। খুব এনজয় করি এটা। বাংলা গানের ছোট্ট ইন্ডাস্ট্রি এতে একটু বড় হতে পারবে – আশা করি। সবাই এক সময় নবাগত থাকে – আমিও ছিলাম।
প্রশ্ন: গানে সুর ও কথা নিয়ে তুমি তো নানা রকম এক্সপেরিমেন্ট করো। শিল্পের আবশ্যিক শর্ত যে এই এক্সপেরিমেন্ট – এটা মানো ?
অনুপম : নিশ্চয় মানি আর এই জন্যেই যে সম্মান, যে ভালবাসা বাঙালি দিয়েছে তার জন্যে আমি আরো নতুন ভাবে কাজ করার অনুপ্রেরণা পাই। আমার মনে হয়, এটাই তো সময় নতুন কিছু করার। দশ বা কুড়ি বছর বাদে, মানুষ আর আমার গান শুনবে কি না জানিনা তাই তখন আর আমার এক্সপেরিমেন্ট করার জায়গাটাই থাকবে না। এখন আমি যা এক্সপেরিমেন্ট করার তা করে নিচ্ছি।
প্রশ্ন: আগামি কোন কোন ছবিতে কাজ করছো?
অনুপম : বেশ কয়েকটা ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনার কাজ করেছি ইদানীংকালে। তার মধ্যে অনিন্দ্য চট্টোপাধ্যায়ের আগামি ‘প্রেম টেম’ ছবিতে আমার স্পেশাল অ্যাপিয়ারেন্স আছে। নিজের গান পারফর্ম করতে করতে। পরমব্রত চট্টোপাধ্যায়ের ‘বনি’ নামের নতুন ছবিতে সঙ্গীত পরিচালনা করলাম। একটি মারাঠি ছবিতে কাজ করলাম। পরিচালক সুজয় ঘোষের কন্যা দিয়ার ‘বব বিশ্বাস’-এ কাজ করেছি। ‘কাহানি’র বব বিশ্বাসকে নিয়ে এই ছবি। তাছাড়া সিংগলস যেগুলো করি, মানে নন-ফিল্মি গান, সেগুলো করতে থাকছি নিয়মিত।
প্রশ্ন: নতুন বইয়ের পরিকল্পনা আছে ?
অনুপম : গদ্য লিখি বহুদিন ধরেই। ইন ফ্যাক্ট, ‘আমাকে আমার মতো থাকতে দাও’ গান রিলিজের অনেক আগেই আমার গদ্য ‘কৌরব’-এ প্রকাশিত হয়েছিল। আপাতত কিছু নভেলা লেখা আছে – সেগুলো কী করা যায় দেখা যাক ! উপন্যাসও লিখেছি একটা।
প্রশ্ন: গানের জগতে তুমি যখন পা রেখেছিলে – বাইরে থেকে এসে কোনও শত্রুতার মুখোমুখি হতে হয় নি?
অনুপম : আমাকে প্রথম থেকে অডিয়েন্স দারুণ ভাবে গ্রহণ করেছিল। সেটাই এগিয়ে নিয়ে গিয়েছিল। গোড়ায় সৃজিতই আমাকে কাজ দিতো – তারপর বলিউড অব্দি আমাকে কাজ দিয়েছে। আসলে নিজেকে ক্রমাগত প্রমাণ করতে হয় – এখানে। সত্যি বলতে, আমি এখন ওতো সব ভাবি না – কাজ না থাকলে নিজেই গান বানিয়ে বের করবো।
প্রশ্ন: কোভিডের কারণে এই যে দীর্ঘদিন বাড়িতে থাকতে হল – কেমন অভিজ্ঞতা তার ?
অনুপম : এমনিতে ভালোই। আমি আর আমার স্ত্রী অবশ্য সারাক্ষণ পরস্পরের মুখ দেখে দেখে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম – এটাই যা মুশকিল। তাছাড়া মঞ্চ না থাকলে সত্যিই অন্য কিছু তেমন ভালো লাগে না। শুধু আমি বলেই তো নয় একটা বিশাল ইন্ডাস্ট্রির রুটিরুজি আমাদের মঞ্চের সঙ্গে যুক্ত। তাই কাজ না করতে পারলে – অনেক কিছুই আটকে থাকে।
প্রশ্ন: বিনোদন জগতের অবস্থা এই পরিস্থিতিতে কেমন ?
অনুপম : এখন আস্তে আস্তে সামান্য স্বাভাবিক হচ্ছে বটে তবে অবস্থা গত কয়েক মাসে বেশ খারাপ হয়েছে। কেবল গায়ক আর যন্ত্রশিল্পীদের নিয়েই তো আর মিউজিক ইন্ডাস্ট্রি নয় – যাঁরা মঞ্চ তৈরি করেন, বাঁশ বাঁধেন – সবাই আমাদেরই লোক। এই বিরাট অংশের রোজগার একেবারেই ছিল না কারোনা কালে। যা খুব ক্ষতিকর ও দুঃখজনক। তবে আশা করা যায়, সবকিছু আবার আগের মতো হবে। আমরা তো সবাই গানের লোক।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন