ইন্টারভিউ
অদিতি বসুরায়
সাহিত্য একাদেমি পুরষ্কার প্রাপক লেখক, নাট্যকার, পরিচালক, কবি এবং অভিনেতা ব্রাত্য বসুর সঙ্গে কথা বললেন অদিতি বসুরায়
অদিতি : আপনার নানা লেখাপত্র ও সাক্ষাৎকার থেকে আমরা জানি, আপনার প্রিয় লেখক সতীনাথ ভাদুড়ি, সমরেশ বসু, শ্যামল গঙ্গোপাধ্যায় আপনার প্রিয় লেখক। প্রিয় কবি কে?
ব্রাত্য বসু : আমার প্রিয় কবি, প্রয়াতদের মধ্যে – বিদ্যাপতি, গোবিন্দদাস, ঈশ্বর গুপ্ত, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ দাশ, শক্তি চট্টোপাধ্যায়। এবং জীবিত অনেকেই।
অদিতি : আপনার জীবনের অন্যতম চালিকা শক্তি, থিয়েটারপ্রীতি। প্রিয় কবিদের যে তালিকা দিলেন – সেখানে আপনার থিয়েটারর প্রতি যে ভালবাসা তা কী ভাবে সংযুক্ত ?
ব্রাত্য বসু : কবিতা যেভাবে পড়েছি, নাটকও সেভাবে পড়েছি। খুব কম বয়েস থেকেই কবিতা পড়তাম। বাবা- মা দু’জনেই চাকরী করতেন বলে, আমি প্রায়ই বাড়িতে একা থাকতাম। বাবার প্রচুর বইয়ের সংগ্রহ ছিল। তাই নানা রকম দুষ্টামির পর যে সময় হাতে থাকতো, সেই সময় আমি বই-ই পড়তাম। আর বই নিয়ে বাছ-বিচার করার অবকাশ ছিল না বিশেষ। ফলে অল্প বয়েস থেকেই কবিতার বই হাতে আসে এবং পড়া শুরু হয়। নাটক আর কবিতা প্রায় একই সময়ে কাছে আসে।
অদিতি : নাট্যকার, প্রাবন্ধিক, কবি ব্রাত্য বসুর কবিতার বইয়ে থিয়েটারের ছায়া অত্যন্ত প্রকটভাবেই দেখা যায়। ‘থিয়েটার বিষয়ক কবিতা’ নামের বইটির কথা এই প্রসঙ্গে উল্লেখ্য। এই জ্যঁ-এর কবিতা লেখা নিয়ে আপনার চিন্তা-ভাবনা জানতে চাই।
ব্রাত্য বসু : এই বিষয়টা অনেকটা অটো – সাজেশনের মতো। আমি যে কবিতা লিখতে চাইছি বলেই লিখছি – তা একেবারেই নয়। এক সময় দুনিয়ার নানা কবিকে নিয়ে আমি একটা বই লিখেছিলাম, বেরিং তরঙ্গের নিটোল মুক্তো প্রবাল। এই বইটি লেখার সময় বেশ কিছু কবিতা অনুবাদ করি এবং কাব্যের ফর্ম, কবিতা কী ভাবে লিখিত হয়, সারা পৃথিবীতে কআব্যভাষা কীভাবে বদলে যাচ্ছে – ইত্যাদি নিয়ে কাজ করি। বিশেষ করে কোভিদের সময় থেকে এই ব্যাপারটা শুরু হয়েছে – যখন মনে হল আরো কিছু কবিতা লেখা যাক ভাবনা নিয়ে। ওই সময় আমি আয়ারল্যান্ডের নোবেল প্রাপক কবি সিম সিনি-র কবিতা অনুবাদ করতে গিয়ে সমকালীন বিশ্বে কবিতার চর্চা জানতে উৎসাহিত বোধ করি। যদিও সেই সব অনুবাদ আমি কোথাও ছাপাই নি। সেগুলো সব ফেলেও দি। পরে, ওয়ার্ল্ড পোয়েট্রি নিয়ে আবার পড়াশোনা করতে আরম্ভ করে দেখি, আমার নিজেই লিখতে ইচ্ছে করছে – নিজের কবিতা লিখতে শুরু করি। এবং দেখি যে সব লেখা আসছে –সবই থিয়েটার সংক্রান্ত। সুতরাং থিয়েটার সেখানে যাকে বলে, স্থায়ী এক ধ্রুবক। সেইভাবেই কবিতা লিখেছি। এগুলো কবিতা হয়ে উঠছে কি না জানি না। থিয়েটার – অভিনয় – নাটক সব মিলিয়ে আমার যে অভিজ্ঞতা, তাই-ই কবিতায় প্রতিফলিত হয়েছে। আর সেটাই আমার কাছে বিচার্য বিষয়।
অদিতি : একটা অবশ্যম্ভাবী প্রশ্ন করি। প্রেম বিষয়ক কবিতা লিখেছেন?
ব্রাত্য বসু : কম বয়েসে লিখেছি। সেই সময়ে যখন প্রেমে পড়েছি – কবিতা তো লিখেইছি। তবে বয়েস বাড়লে যে আর প্রেম হয় না – তা এখন আমার গভীর বিশ্বাস তবে আমার ব্যক্তিগত বিশ্বাস নিয়ে কথা না বলাই ভাল।
অদিতি : এত ব্যস্ততার মধ্যে লেখেন কখন?
ব্রাত্য বসু : খুব সত্যি কথা হল – আমি প্রথম কবিতাগুলো ঝোঁকের মাথায় লিখি। তারপর সেগুলো নিয়ে একটা বই হয়। তবে সামনে আর কবিতা লিখবো কি না জানি না। নাও লিখতে পারি কারণ না-লেখার চান্সই বেশি। তবে কবিতা ছাড়া অন্য লেখা
যখন লিখি, এবং ঠিক করি আমাকে লিখতেই হবে – তখন দিনের চব্বিশ ঘণ্টার মধ্যে যে কোনও সময় লিখতে পারি। যখনই সময় পাই তখনই যাতে লিখে ফেলতে পারি, সেই মতো নিজেকে প্রস্তুত রাখি। আমি মনে করি, লিখতে চাইলে সময় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না – অন্তত, আমার ক্ষেত্রে তো নয়।
অদিতি : আপনি প্রতিদিন নিয়ম করে সিনেমা দেখেন বলে শুনেছি। সত্যি?
ব্রাত্য বসু : একদম সত্যি। রোজই দেখি। কালই যে সিনেমাটা দেখছিলাম, সেটা একটা কোরিয়ান সিনেমার এড্যাপ্টেশন , যদিও ওরা বলছে এটা একটা জাপানি উপন্যাসের এড্যাপ্টেশন । মূল ছবিটা বহুদিন আগেই দেখেছি , ইন ফ্যাক্ট আমার কাছে আছেও। ছবিটার নাম – দ্যা ডিভোশন অফ সাসপেক্ট এক্স। মাইকেল হ্যানাসের ছবি কিছুদিন আগে দেখেছি, আমার অন্যতম প্রিয় পরিচালক।
অদিতি : আপনি নিজে পরিচালক হিসেবে থ্রিলার ছবি করেন নি তো!
ব্রাত্য বসু : আমি থ্রিলার করার মতো গল্পই পাই নি। শ্রীরাম রাঘবনের আমি খুব ভক্ত। ওই ধরনের কাজ করতে ইচ্ছে করে। আমি ওঁর বিরাট অনুরাগী।
অদিতি : অভিনেতা হিসেবে এই মুহুর্তে কোন কোন ছবিতে কাজ করেছেন ?
ব্রাত্য বসু : আমাকে কেউ নিচ্ছে না এখন। নিলেই কাজ করতাম! ভাল পার্ট পাচ্ছি না। সামনে একটা ছবির রিলিজ আছে, যেখানে আমি অভিনয় করেছি – যার পরিচালক আদিত্যবিক্রম সেনগুপ্ত। ছবিটির নাম – ওয়ান্স আপঅন এ টাইম ইন ক্যালকাটা।
অদিতি : আপনার থিয়েটারে কবিতার ভূমিকা থাকে কী ভাবে?
ব্রাত্য বসু : আমার লেখা নাটকে কবিতা তো থাকে – আমি কবিতা ব্যবহার করেছি। তাছাড়া ‘অদ্য শেষ রজনী’ – নাটকে কবিতার খুব গভীর প্রভাব আছে বলে আমি মনে করি।
অদিতি : বাংলা কবিতার ভবিষ্যৎ কী বলে মনে করেন?
ব্রাত্য বসু : আমি এমন কোনও কাব্য বিশারদ নই – যে বাংলা কবিতার ভবিষ্যৎ নিয়ে কথা বলতে পারি।
অদিতি : বাংলা থিয়েটারের ভবিষ্যত কী?
ব্রাত্য বসু : ভালো কিছু নয়। আমার সাম্প্রতিক উপন্যাস, ‘উদ্বাসিত মান্দাস’- এ এই বিষয় নিয়ে লিখছি। ক্রমশ জানতে পারবেন।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন