binodan-jalsa-jiboner-jolchhobi

জলসা – জীবনের জলছবি
ফিল্ম রিভিউ
অদিতি বসুরায়


বিদ্যা বালান এবং শেফালি শাহ – এই দুই অভিনেত্রী, একটি ছবিকে কিভাবে অন্যমাত্রায় রুপান্তরিত করে ফেলতে পারেন – তার সাক্ষী থাকতে হলে, জলসা ছবিটি দেখা বাধ্যতামূলক। মায়া মেনন ( বিদ্যা বালান), এক দুঁদে সাংবাদিক। তাঁর টক শো, তুমুল জনপ্রিয়। শহরজুড়ে হোর্ডিং – সেখানে জ্বলজ্বল করে তাঁর মুখ। তাঁরই বাড়ির সাহায্যকারী শেফালি শাহ। এই দুই নারীর কাহিনী সমান্তরালে ভাবে তুলে ধরেছেন, পরিচালক সুরেশ ত্রিবেণী। জলসা, মানুষকে তার সমস্ত বিচ্যুতিসমেত নির্মিত এক ছবি – যেখানে বিবেকবান সাংবাদিক, মুহুর্তের দোলাচলে, তাঁরই গাড়ির সঙ্গে সংঘর্ষে মারাত্মক আহত কিশোরীকে রাস্তায় ফেলে পালিয়ে যান। আবার, মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে যাওয়া মেয়ের মা, শান্ত মাথায়, মেয়ের কেস গড়াপেটার জন্য, টাকার দর কষতে পারে। এভাবেই এগিয়ে যায় – রক্ত, মাংসের মানুষের রোজনামচা। যেখানে সমস্ত প্রতিকূলতা- বিষাদ পার হয়ে কেবল অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার লড়াই জেগে থাকে । সেই লড়াইয়ের সামনে বাকি সমস্ত কিছু ম্রিয়মাণ। সেই দিক দিয়ে, আমাদের তৃতীয় বিশ্বের সাধারণ, মেহনতি নাগরিক-জীবনযাত্রার বাস্তব চিত্র ফুটে উঠেছে পর্দায়। তাদের বিপন্নতা, আর্থিক দূরবস্তার পাশাপাশি মায়া মেননের মতো বিত্তশালী পরিবারের চালচিত্রও দেখতে পাই। মায়ার সেরিব্রাল পলসি-তে আক্রান্ত পুত্রের কেয়ারগিভার রূকসানা ( শেফালি সাহ)। দুর্ঘটনার রাতে মায়ার ফিরতে দেরী হবে বলে, সে সপুত্র ওই বাড়িতেই রয়ে যায়। খানিক বেশী রাতে দু:সংবাদ এলে, সেখান থেকেই হাসপাতালে ছোটে সে। মায়া এগিয়ে আসে সাহায্য করতে – দর্শক বুঝতে পারেন,এ আদতে মায়ার বিবেক দংশনের কারণে। দাপুটে সাংবাদিক মায়ার দাম্ভিকতার আড়ালে লুকিয়ে থাকা মরমী মনটি উন্মোচিত হয়, যখন সে গভীর রাতে ছেলেকে জড়িয়ে ধরে। লিফট-এ চিৎকার করে একা। আসলে এই ছবি নাগরিক জীবনের অসহায়তার রূপচিত্র। নিয়তি-তাড়িত শহুরে মানুষের অক্ষমতা থেকে পরিচালক নির্মাণ করেছেন এই সৎ এবং বলিষ্ট স্টেটমেন্ট। যেখানে শেষ পর্যন্ত মায়া মানবিকতার কাছেই নিজেকে সমর্পন করে। ছবির শেষের বার্তাটি তাই অত্যন্ত ইতিবাচক হয়ে ওঠে। তবে কয়েকটা ব্যাপারে অসংগতি আছে। বিশেষ করে একজন সদ্য কাজে যোগ দেওয়া জুনিয়র রিপোর্টার কি করে তার বসের অজান্তে আক্সিডেন্টের তথ্য এতো সহজে উদ্ধার করতে পারেনা। ওদিকে মায়া মেননের ঘটনায়, অন্যান্য মিডিয়ার অনুপস্থিতিও খুব চোখে লাগে – এই দুটি ব্যাপার বাদ দিয়ে, জলসা ছবিটি নিঃসন্দেহে একটি ল্যান্ডমার্ক হিসেবে রয়ে যাবে।

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *