binodan-nikhoj-ek-maer-golpo

নিখোঁজ, এক মায়ের গল্প
ফিল্ম রিভিউ
অদিতি বসুরায়

বাংলা ওয়েব সিরিজের থ্রিলার যে জোলো ধরনের হয় – এ কথা যাঁরা বিশ্বাস করেন, তাঁরা যে খুব ভুল তা নন। তবে ‘নিখোঁজ, এই তথ্যকে ভুল প্রমাণ করেছে। বিশেষ করে, দ্বিতীয় সেশনটি। তবে সে প্রসঙ্গে পরে আসছি। ২০২৩ সালের আগস্টে ‘নিখোঁজ’-এর প্রথম সেশনটি আসে, অয়ন চক্রবর্তীর পরিচালনায়। দ্বিতীয়টির আসার কথা ছিল – গত বছরের আগস্টেই। কিন্তু কলকাতা শহরে ঘটে যাওয়া নারকীয় ধর্ষণ ও খুনের কারণে ( আরজিকর কান্ড) প্রযোজনা সংস্থা তাঁদের সমস্ত ছবির রিলিজ ডেট পিছিয়ে দেন। এই ছবির গল্প, একটি মেয়ের অন্তর্ধানকে ঘিরে আবর্তিত। এবং সেই সঙ্গে বুনে দেওয়া হয়, কুহেলিকার জাল। মেয়েটির মা, বৃন্দা বসু। উচ্চপদস্থ পুলিশ অফিসার, ডেপুটি পুলিশ কমিশনার। স্বামীর সঙ্গে বিচ্ছদের পরে, মেয়ে দিতিকে ঘিরেই তাঁর জীবন। সেই মেয়ে এক রাতে বন্ধুদের সঙ্গে পার্টি করতে গিয়ে নিখোঁজ হয়ে যায়। মা শহর তোলপাড় করেও সূত্র পান না সেভাবে। সেই সঙ্গে সামনে আসে রমিত সেন (পুষ্পরাগ টোটা রায়চৌধুরী)-এর যোগাযোগ। রমিত সেন, যে চ্যানেলের সাংবাদিক, দিতি সেখানেই ইন্টার্নশিপ করছিল। তাঁকে রক্তমাথা শার্ট গায়ে সংজ্ঞাহীন অবস্থায় পাওয়া যায় সেই গাড়ির মধ্যে, যে গাড়িতে দিতিও শেষবারের মতো চড়েছিল। চ্যানেলে চ্যানেলে ইন্টার্ন – সাংবাদিকের সম্পর্কের রসালো কেচ্ছা ছড়িয়ে পড়ায়, রমিতের পরিবার তাঁর বিপক্ষে চলে যায়। তাঁর স্ত্রী গার্গী (কনীনিকা) ভেঙ্গে পড়েন। এবং প্রথম সেশন শেষ হয় দর্শকদের নানা প্রশ্নের মুখোমুখি দাঁড় করিয়ে। সেই সঙ্গে মায়ের আকুতিও আমাদের মনে রাখার মতো ছিল! কোথায় গেল সদ্য তারুণ্যে পা রাখা মেয়েটি? নিখোঁজের দ্বিতীয় পর্বের জন্য তাই অধীর অপেক্ষা ছিল আমাদের।

দ্বিতীয় পর্বে, প্রত্যাশা মতোই ঘটনাবলি এগিয়েছে। সে সব কাহিনি, লিখলে থ্রিলার দেখার রোমান্স নষ্ট হবে। তবে ছবি হিসেবে, নিখোঁজ-এর দ্বিতীয় সেশন, প্রথমটিকে তিন গোল দেবেই দেবে। দ্বিতীয় পর্বটি, শুরু থেকেই উত্তেজনার পারদ তুঙ্গে চড়িয়ে রাখে। পরপর সামনে আসতে থাকে দিতির উধাও হয়ে যাওয়ার প্রকৃত কারণগুলি। ষড়যন্ত্রের জাল কাটতে থাকে, তার মা বৃন্দা বসুর আপ্রাণ তাগিদে। পরতে পরতে উঠে আসে হিংসা, যৌন তাড়না, সন্দেহ, টক্সিক সম্পর্কের টানাপোড়েন। কী হবে শেষে? এই প্রশ্নের উত্তর দেবে আপনার টেলিভিশনের স্ক্রিন। আপাতত, ছবির কলাকুশলীদের কথায় ফেরা যাক! দুর্দান্ত কাজ করেছেন স্বস্তিকা মুখোপাধ্যায়। দিতির বিধ্বস্ত মা হিসেবে তাঁর একলা কান্নার অনুরণন দীর্ঘদিন মনে থাকবে। আবার দাপুটে পুলিশ অফিসার হিসেবে তাঁর অহং, ব্যক্তিত্ব, প্রতাপ – দুর্দান্ত। কেবল স্বস্তিকাই নন ছবিতে প্রায় সমস্ত অভিনেতাই খুব ভাল কাজ করেছেন। সহকারী অফিসার সাহানার চরিত্রে শাঁওলি চট্টোপাধ্যায় অত্যন্ত স্মার্ট এবং যথাযথ। রমিত সেনের প্রতি পূর্বের অনুরাগ, পুলিশের ব্যক্তিত্ব, কাঠিন্য তিনি সুন্দর ফুটিয়েছেন। রমিত সেন – এই সিরিজের অন্যতম প্রধান চরিত্র। পুষ্পরাগ (টোটা) রায়চৌধুরী যথারীতি অসামান্য রমিতের ভূমিকায়। নামকরা সাংবাদিক, স্নেহময় অভিভাবক, কর্তব্যপরায়ণ স্বামী থেকে যখন সমাজ – পরিবার তাঁর সম্পূর্ণ বিপক্ষে চলে যায় – সেই চুরমার হয়ে যাওয়া রমিতকে টোটা পর্দায় বিশ্বাসযোগ্য করে তুলেছেন তাঁর প্রতিভার জোরেই। বৃন্দা বসুর সহকর্মী, ডিসিপি সামন্ত হিসেবে কাজ করেছেন লোকনাথ দে। তিনি বৃন্দার প্রতি ঈর্ষাপরায়ণ। চরিত্রটির প্রতি সুবিচার করেছেন লোকনাথ। ছোট্ট চরিত্রে রজতাভ দত্ত, পরাণ বন্দ্যোপাধ্যায় যথারীতি প্রশংসাযোগ্য কাজ করেছেন।

পরিচালক অয়ন চক্রবর্তী এবং তাঁর টিমকে ধন্যবাদ, দুর্ধষ এক ক্লাইম্যাক্স উপহার দেওয়ার জন্য। শেষ দৃশ্যে, গঙ্গার ধারে টোটা, স্বাস্তিকার সামান্য কথোপকথন ও জলস্রোতের নীরব মুখরতার স্পর্শ, যেন এক অন্য রূপকথার জন্মের প্রতিশ্রুতি দিয়ে যায়। আসলে খোঁজ তো শেষ হয় না। জীবন চলতে থাকে। আর সব শেষে এক আর্ত মা জেগে থাকেন – ।



এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *