হাসিতে ঝরে পড়ছিল প্রাণ বাঁচানোর তৃপ্তি
প্রিয়ব্রত দত্ত

শ্যুটিং স্পট বলুন কিংবা লোকেশন, শহর কলকাতার ‘সাবজেক্ট’ ঈর্ষনীয়। ভারতীয় সিনেমার আঁতুড়ঘরই তো কলকাতা। একদা সিনেমা শিল্পের রাজধানী কেন তার কৌলীন্য হারালো, সে তো ভিন্ন বিতর্কের বিষয়। পরবর্তীতে বম্বে অধুনা মুম্বই ভারতীয় তথা হিন্দি সিনেমা সাম্রাজ্যের অধিপতি হয়ে উঠলেও শ্যুটিং লোকেশন হিসেবে ‘কলকাত্তা’ এই সেদিনও গোটা ভারতের সিনেমাওয়ালাদের কাছে ছিল পছন্দের ডেসটিনেশন।
অধুনা টালিগঞ্জ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির স্বঘোষিত অভিভাবক ফেডারেশন নামক একটি তুঘলঘি সংগঠনের বেয়াদপি বায়নাক্কায় কী মুম্বই, কী দক্ষিণী ছবি সহ ভিন রাজ্যের কোনও সিনেমা প্রযোজক, পরিচালকই আর কলকাতা কেন, এই রাজ্যেই শ্যুটিং করতে আগ্রহ দেখান না।
অথচ কয়েক বছর আগেও পরিস্থিতিটা এমন জটিল ও ভয়াবহ ছিল না। ২০১১ তে রাজ্যে রাজনৈতিক পালা বদলের আগে গন্ডাখানেক গিল্ড আর ফেডারশন ‘জ্যাঠামশাই’টির দাপট ছিল না এমনটা নয়। তবে এখনকার মত বিরক্তিকর জায়গায় যায়নি। সারা ভারতের বিভিন্ন ভাষার সিনেমা প্রযোজক, পরিচালকেরা সেই ভাষার বা ভূমির অভিনেতা-অভিনেত্রী কলাকুশলী নিয়ে দিব্যি ‘সেট ফেলতেন’ কলকাতা ও সংলগ্ন অঞ্চলে। তখনও শ্যুটিং-এ টালিগঞ্জ থেকে কলাকুশলী ও অভিনেতা-অভিনেত্রী নেওয়া বাধ্যতামূলক ছিল। তবে সেটা কখনওই সেই প্রোডাকশনের ঊর্ধে নয়। অর্থাৎ, জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হত না। হিন্দি ছবিই হোক আর ভিন্ন ভারতীয় ভাষার প্রযোজক, পরিচালকরা তাঁদের প্রয়োজন মত শিল্পী, কলাকুশলী নিতে পারতেন। তবে নিতে হতই। এইভাবে যুগে-যুগে, বর্ষে-বর্ষে কলকাতা, শহরতলী ও বাংলার গ্রামীণ পটভূমি ভারতীয় সিনেমার সৌন্দর্য ও সম্মৃদ্ধি ঘটিয়ে এসেছে, আজ যা তলানিতে এসে ঠেকেছে।
১৯৯২ সালে কলকাতার পশ্চিম পারে হুগলি নদীর উপর আধুনিক প্রযুক্তিতে তৈরি সম্পূর্ণ ঝুলন্ত দ্বিতীয় হুগলী সেতু বা বিদ্যাসাগর সেতুটি তৈরি হওয়ার পর গঙ্গার দুই পারের দুই শহরের স্ট্যাটাসই বদলে যায়। ভারতবর্ষে প্রথম, দীর্ঘতম এবং উচ্চতাসম্পন্ন এই অত্যাধুনিক কেবল-স্টেইড ব্রিজটি সিনেমা প্রযোজক, পরিচালকদের তাক লাগিয়ে দেয়। গোটা ভারতের ছোট, বড়, মাঝারি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রি ঝাঁপিয়ে পড়ে কে কত আগে সেতুটিকে ব্যাকড্রপে রেখে সিনেমা বানাবেন সেই প্রতিযোগিতায়।
তখন ২০০৩ সাল। কলকাতার চলচ্চিত্র জগৎ কেঁপে উঠল একটা বোম ব্লাস্টিং খবরে। দক্ষিণী তথা সর্বভারতীয় সিনেমার ব্লকব্লাস্টার পরিচালক মনিরত্নম ড্রামা ও অ্যাকশন প্যাকড একটি আস্ত, হিন্দি সিনেমা বানাবেন মূলত ছাত্র রাজনীতিকে কেন্দ্র করে শহর কলকাতার নদীমাতৃক জীবনের আধারে। অভিনয় করবেন অভিষেক বচ্চন, অজয় দেবগন, বিবেক ওবেরয়, সোনু সুদ, করিনা কাপুর, এষা দেওল, রানি মুখার্জির মত মেগাস্টাররা। এবং ছবির কাহিনির অন্যতম দুই চরিত্র হতে চলেছে হাওড়া ব্রিজ অর্থাৎ রবীন্দ্র সেতু ও সেকেন্ড হুগলী ব্রিজ মানে বিদ্যাসাগর সেতু। প্রায় একমাস ধরে গোটা পরিবার নিয়ে কলকাতায় সংসার পেতে শ্যুটিং করবেন মনিরত্নম। ছবির নাম ‘যুবা’।
নড়েচড়ে বসল প্রশাসনও। ধবধবে সাদা গিলে করা পাঞ্জাবীর হাতা গুটিয়ে ‘বন্ধু’ মনিরত্নমকে দু’হাত বাড়িয়ে আহ্বান করলেন সদ্য মুখ্যমন্ত্রীর চেয়ারে বসা সিনেমাপ্রেমী বুদ্ধদেব ভট্টাচার্য। দলবল নিয়ে মনিরত্নম কলকাতায় পা রাখলেন মে-জুন মাস নাগাদ। নির্দিষ্টমাস, তারিখ আজ আর তেমন স্মরণে নেই। বলাবাহুল্য মিডিয়া সব ছেড়ে আদাজল খেয়ে নেমে পড়ল ‘যুবা’র কভারেজে। তখন অবশ্য এত অডিওভিজুয়াল মিডিয়ার জন্মই হয়নি। তবুও মনিরত্নমের ছবি বলে কথা। বাছা বাছা প্রথমসারির সর্বভারতীয় সংবাদ মাধ্যমের মুদ্রন ও বৈদ্যুতিন বিভাগও থানা গাড়লো কলকাতায়। কিন্তু হলে কী হবে, নিশ্ছিদ্র নিরাপত্তা ব্যাবস্থা। বিশেষ কিছু স্পট ছাড়া মিডিয়ার প্রবেশ নিষিদ্ধ। তাও মাত্র দিন কয়েকের জন্য।
এহেন দুর্গ ও তার অভ্যন্তরের রাজপুত্র, যুবরানি, মন্ত্রী ও কোটাল কন্যা কিংবা সন্তানদের ধারে কাছে পৌঁছনোর কথা ভাবা মানে ‘সাগরে শয্যা পাতা’র মত অলীক ব্যাপার। সাম্রাজ্যধিরাজ মনিরত্নমের ছায়ার ধারে কাছে যাওয়া মানে খোদ কৈলাসে মহাদেবের সঙ্গে বসে ছিলিমে গঞ্জিকা সেবনের মত দৈবিক ‘দুর্ঘটনা’।

আমি তখন বিনোদন সাংবাদিকতায় নেহাতই ‘নাদান লড়কা’। ওই চক্রব্যুহে ছায়া কেন বয়ে আসা বাতাস গায়ে লাগনোটাও স্বপ্নের অতীত। শুনতে পাই ভারতের বাঘা বাঘা রিপোর্টার আর ফটোগ্রাফাররা নৌকো ভাড়া করে গঙ্গাবক্ষে দিনরাত ভাসছেন আর ভাসছেন। আগেই বলেছি কলকাতার নদীমাতৃক জীবনের কাহিনীই ‘যুবা’র মূল উপজীব্য। শ্যুটিং হচ্ছে গঙ্গার পাড় বরাবর বাড়ি, বাড়ির ছাদ, জেটি এইসব লোকেশনে। অভিষেক, অজয়ের টিকির দেখা পাওয়া গেলেই ঝলসে উঠছে ক্যামেরা। পরদিন কাগজের পাতায় ফলাও করে করিনা, বিবেকদের হাঁচি-কাশির প্রতিবেদন। সবার মত আমিও ওই অভিষেক কতবার বাঁ হাতের বদলে ডান হাত ব্যবহার করলেন, শ্যুটিং এর ফাকে অজয় দেবগন কটা সিগারেট খেলেন পড়ছি, দীর্ঘশ্বাস ফেলছি আর স্টুডিও পাড়ায় ঘুরে বেড়াচ্ছি। সেখানে একটু অন্যরকম খবর পাওয়া যায়। কারণ টালিগঞ্জের কলাকুশলীরাও চুক্তি অনুযায়ী কাজ করছেন ‘যুবা’র ইউনিটে, তাঁদের মুখ মারফত নানা খবর ভেসে আসছে স্টুডিওপাড়ার অন্দরে।
দিন যায়। খবর দেখি। গল্প শুনি। ক্রমশ ‘যুবা’র শ্যুটিং প্রায় শেষ পর্যায়ে। বিকালের দিকে এনটি ওয়ানে গেছি। ঢুকেই বাঁ দিকের লম্বা মেঠো গলি মত জায়গাটায় সেদিন দেখি বেশ হাট্টাকাট্টা যুবকদের জটলা। এনটি ওয়ানে ঢুকেই বাঁদিকের বাড়িটার একতলা বেশ কয়েকটা গিল্ডের অফিস। তার মধ্যে জুনিয়র আর্টিস্টদেরটা বিকেল থেকে বেশ সরগরম থাকে। সবাই আসেন কাজের খোঁজে। তার পাশেই ফাইটার ও স্টান্ট ম্যানদের গিল্ড অফিস। আমরা যাঁদের শুধু সিনেমায় অ্যাকশন দৃশ্যে নায়কের হাতে বেধঢ়ক মার খেতে দেখি আর মাঝেমধ্যে মারতে দেখি তাঁরা কিন্তু এক একজন অত্যন্ত সুদক্ষ ফাইটার। ক্যারাটে, কুংফু, জুজুৎসু সহ মার্শাল আর্টের চ্যাম্পিয়ন ক্রীড়াবিদ। কখনও নায়কের, কখনও ভিলেন বা পার্শ অভিনেতার হয়ে ঝুঁকিপূর্ণ শট দেন। এতটাই ঝুঁকিপূর্ণ যে প্রাণহানি ঘটতে পারে এবং ঘটেও। সামান্য পারিশ্রমিকে জীবন বাজি রেখে ওঁরা শট দেন স্রেফ সিনেমা নামক মায়াময় মরীচিকার হাতছানিতে। এঁদের মাস্টারমশাই অর্থাৎ পালের গোদা হলেন সোমনাথ পাল।
আচমকা কাঁধে একটা ভারি পাথর পড়ার মত চাপড়। ককিয়ে কুঁকড়ে গেলাম। চোখের সামনে সরষে ফুলগুলো মিলিয়ে যেতে আবিষ্কার করলাম রসিক মানুষটি আর কেউ নয়, বাংলা সিনেমার ফাইট মাস্টার সোমনাথ পাল।
– কী খবর রিপোর্টার?
রোদে পোড়া মুখে কালো চাপ দাড়ি, টানটান মেদবর্জিত ছিপছিপে চাবুকের মত মাঝারি উচ্চতার সোমনাথ পাল এবার হাত ঝাঁকিয়ে প্রশ্ন করলেন।
– খুব খারাপ… এভাবে পেছন থেকে কেউ থাবা বসায়! মরে যেতাম তো! ঝাঁকুনির ধাক্কা সামলে বললাম।
– চেহারা তোর ঠিকই আছে, একটু মেরামত করতে হবে এই যা। তবে গায়ে কষ দরকার। মোষের মাংস খা, বুঝলি… কলারবোনে হাত রেখে বলছিলেন কথাগুলো, মনে হচ্ছিল গুঁড়ো হয়ে যাবে। হাত ধরে বললেন, ‘আয়, অফিসে চ।’
ঘরে গুটি কয়েক বাছা বাছা পালোয়ান। তবুও সন্তর্পনে সোমনাথদার পাশে গুটিশুটি মেরে বসে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘সৈন্যসামন্ত নিয়ে কোথায় যুদ্ধে চললেন স্যার?’
-‘যুবা’ শ্যুটিং-এ। কাল একটা হেব্বি স্টান্ট সিন আছে। পোলের মাঝখান থেকে গঙ্গায় স্ট্রেট ঝাঁপ। একজনের বাড়িয়ে দেওয়া একটা কাগজে চোখ রেখে বললেন সোমনাথদা।
ঢোঁক গিলে বললাম, ‘কোন পোল থেকে?’
– আরে সেকেন্ড হুগলী ব্রিজের মাঝখান থেকে।
– সে তো বিশাল উঁচু তো গো!
– ওই জন্য একটু চাপে আছি রে। আগে কখনও ট্রাই করিনি। জল আর পোলের একজ্যাক্ট হাইট কত ঠিক জানি না। হাওয়ার গতিবেগেরও কোনও ধারণা নেই। খুব স্ট্রং নার্ভ চাই বুঝলি।’
হাতের কাগজে পাঁচজন স্টান্টম্যানের নাম। তালিকা ধরে ধরে হাঁক পাড়লেন। পাঁচজন অফিস ঘরে সোমনাথদার টেবিলের সামনে এসে দাঁড়ালেন। প্রত্যেকের উচ্চতা ছ’ফুটের উপর। জিম চর্চিত চেহারা। নিখুঁত গড়ন। জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কি রে… পারবি তো? প্রত্যেকেই আলাদা করে আত্মবিশ্বাসের সঙ্গে বললেন, ‘তুমি কোনও চিন্তা করো না দাদা… জান লড়িয়ে দেব।’ তবুও সোমনাথদা স্টিলের আলমারি থেকে প্রেসার মাপার যন্ত্র বার করে পাঁচজনের প্রেসার ও নিজে হাতে পালস মাপলেন।
চা, সিঙাড়া এল। ভাঁড়ে চুমুক দিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম, ‘সবাই কি একসঙ্গে ব্রিজ থেকে ঝাঁপ দেবে নাকি? আর সব এত লম্বা চেহারার ছেলে নিয়েছ?

সিঙাড়ায় কামড় বসিয়ে সোমনাথদা বললেন, ‘অভিষেক বচ্চনের স্টান্ট লাগবে। না হলে তো আমিই লাফ মারতাম। রিস্ক নিচ্ছি না। যদি একজন নার্ভ ফেল করে আর একজন ট্রাই করবে… যাবি নাকি কাল শ্যুটিং-এ?’
শেষ বাক্যটায় কার্যত বিশাল আকারের বিষম খেলাম। জোক অব দ্য ডে। কিছুতেই কাশি থামছে না। রীতিমত জল বাতাসে ধাতস্থ হলাম। বললাম, ‘তুমি ক্ষেপেছ? রাজা উজিররা নাক গলাতে পারছে না। মাঝ গঙ্গায় হত্যে দিয়ে পড়ে আছে। আমি তো কোন চুনোপুটি!
আবার গদাম করে পিঠে একটা চাপড় বসিয়ে বললেন, সেটা আমার উপর ছেড়ে দে। যেতে চাস কিনা বল? সোমনাথদার সব ভালো ছিল। কিন্তু ওই একটা দোষ, হাতের কন্ট্রোল ছিল না। কার ঘাড়ে, পিঠে কখন যে থাবা পড়বে কেউ বলতে পারত না। যাঁরা ভুক্তভুগি, তাঁরা সোমনাথদার সঙ্গে নিরাপদ দূরত্ব রেখে কথা বলতেন। একে বিষম খেয়ে গলা, বুক জ্বলছে, তার উপর সোমনাথদার রয়ালবেঙ্গল টাইপ থাবা। উফ… হরিবল! উপায় নেই খবরের সোর্স। কাছ ঘেঁষে থাকতেই হয়।
বললাম, ‘তুমি ব্যাপারটা বুঝতে পারছ না। চেনা জানা কেউ দেখে ফেললে মিডিয়ায় বাওয়াল মাচিয়ে যাবে। আমাকে একঘরে করে দেবে।’
তোকে দেখতে পেলে তো। আমাদের নিয়ে প্রোডাকশনের ভ্যান সোজা ব্রিজের মাঝখানে শ্যুটিং স্পটে চলে যাবে। কাল ওখানে আমার রাজত্ব। বম্বের ফাইট মাস্টারও থাকবে। তবে যেহেতু বেঙ্গল পার্টে শ্যুটি়ং হচ্ছে, তাই টোটাল দায়িত্ব আমার। বম্বের এটাই গুণ। গানের সিকোয়েন্স হোক বা অ্যাকশন সিন, ডিরেক্টর মাথা গলায় না। শোন তুই আবার কালকে যেন সুবোধ বালকের মত ফুল হাতা শার্ট আর ট্রাউজার পরে আসিস না যেন। জিনস, টি-শার্ট আর স্নিকার পরবি। কাল সকাল আটটায় এখানে চলে আসবি। আমাদের সঙ্গে গাড়িতে উঠে পড়বি। সোজা স্পটে।’ বলে আবার ডান হাতটা তুলে ছিলেন সোমনাথদা। লাফিয়ে চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ে বললাম, ‘প্লিজ… কাল তাহলে সব মাটি হয়ে যাবে।’ হো হো হেসে উঠলেন সোমনাথদা। বললেন, ‘ও হ্যাঁ…এক কপি পাসপোর্ট সাইজের ছবি নিয়ে আসবি অবশ্যই।’
রীতিমতো পেট গুড়গুড় করছিল। বাড়ি ফিরে এলাম। সারারাত ঘুম এলো না। পরদিন সকালে কোনওরকমে নাকে মুখে গুঁজে সোজা এনটিওয়ান। তখন আটটা বাজতে পাঁচ মিনিট বাকি। সবাই হাজির। আমাকে নিয়ে দশ জনের টিম। সোমনাথদা বললেন ছবিটা দে। দিলাম। সেটা আর একজনের হাতে দিয়ে বললেন, ‘ দু মিনিটে রেডি করে দে।’ তিন চার মিনিট পর ছেলেটি একটি ফিতে বাঁধা আইডেনটিটি কার্ড দোলাতে দোলাতে নিয়ে এসে আমার গলায় পরিয়ে দিলেন। কার্ডটা তুলে দেখলাম যুবার টাইটেল লোগো, তার তলায় ছবি, নিচে নাম, সব শেষে লেখা ফাইট অ্যাসিস্ট্যান্ট।
গাড়িতে আমরা দশজন। ড্রাইভার। প্রচুর রকমের সাজ সরঞ্জাম। সোমনাথদা বললেন, ‘তোকেও কিন্তু মাল বইতে হবে।’ ঘাড় কাত করে বললাম, ‘যথা আজ্ঞা স্যার।’
স্পটে পৌঁছে গেলাম সাড়ে ন ‘টার মধ্যে। গাড়ি থেকে নামতেই তাক লেগে গেল। এক তো বিদ্যাসাগর ব্রিজের মাঝখানে সেই প্রথমবার পা রাখা। আমি দু হাতে দুটো দড়ির বান্ডিল তুলে নিলাম। উরি বাবা কী ভারী! সোমনাথদা বললেন, আমার পেছন পেছন আয়।


সবাইকে নিয়ে ব্রিজের মাঝখানে এসে রেলিং টপকে একেবারে ধারে দাঁড়িয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে দেখলেন। সঙ্গের পাঁচ পালোয়ানও ছিল। হু হু করে হাওয়া বইছে। কলকাতা থেকে হাওড়ার দিকে যাওয়ার লেনটি বন্ধ। ফেরার লেনটিতে গাড়ি যাতায়াত করছে। স্পট জুড়ে গোটা পঞ্চাশেক লোক। তিনটে ক্যামেরা সেট আপ। ক্রেন, ট্রলি, স্টেডিক্যাম সব মিলিয়ে জমজমাট ব্যাপার। তবে সুশৃঙ্খল।
হঠাৎ দেখি নো এন্ট্রি বোর্ড লাগানো অর্থাৎ শ্যুটিং যে দিকে হবে সেই লেনটি ধরে ছ’সাতটা অ্যাম্বাসাডর গাড়ির কনভয় এগিয়ে আসছে। আগে পরে কলকাতা ও হাওড়া পুলিসের জিপ। স্পটে একটু দূরে দাঁড়িয়ে পড়ল গাড়িগুলো। মাঝের দুটো গাড়ি থেকে নেমে এলেন পরিচালক মনিরত্নম ও অভিষেক বচ্চন।
সোমনাথদা, মুম্বইয়ের ফাইট মাস্টার (নামটা আজ আর মনে নেই) ওঁদের দিকে এগিয়ে গেলেন। কথাবার্তা বলতে বলতেই ক্যামেরার পজিশন দেখে নিলেন পরিচালক, অভিনেতা। একটা চেজিং সিন। তাড়া খেয়ে অভিষেক ব্রিজ থেকে গঙ্গায় ঝাঁপ দেবে। পোলের উপর তাড়া করার সিনটা হবে পরের দিন। ওদের কথাবার্তায় বুঝলাম নীচে গঙ্গায় নৌকোয় আরও তিনটে ক্যামেরা রয়েছে। ঠিক কোথা থেকে ঝাঁপ দিতে হবে সেটা বুঝে নিতে সেতু লাগোয়া রাস্তার রেলিং টপকে একেবারে ব্রিজের শেষ রেলিংটায় কোমর ঠেকিয়ে নিচে তাকালেন অভিষেক। সিরিয়াস মুখ। রাস্তার রেলিং টপকে দৌড়ে এসে ওঁকে ব্রিজের রেলিং-এর উপর উঠতে হবে। ওই পর্যন্ত ওঁর শট। দুই পাশে দুই ফাইট মাস্টার বুঝিয়ে দিলেন কিভাব শেষ রেলিং টপকানোর ভান করবেন। সব বুঝে শুনে নিয়ে সহকারী পরিচালক অনুরাগ কশ্যপের কাঁধে হাত রেখে দূরে দাঁড় করানো মেকআপ ভ্যানের দিকে চলে গেলেন অভিষেক। সিনেমাটোগ্রাফার ছিলেন রবি কে চন্দ্রন।
অভিষেকের পার্টটুকু আগে নেওয়া হবে। অনুরাগ কশ্যপ গিয়ে অভিষেককে নিয়ে এলেন। কস্টিউম মেকআপে অভিষেক তখন অন্য মানুষ। গোটা লোকেশন কেমন যেন থমথমে। উল্টো লেনে গাড়ি নিয়ন্ত্রন করছে পুলিশ। এদিকে মনিটরের সামনে মনিরত্নম, অনুরাগ, রবিচন্দ্রন সহ সহকারীরা। সোমনাথদা স্পটে। বেশ কয়েকটা ভাগে রেলিং পর্যন্ত টেক হল। এবার টপকানোর শট। সবাইকে চমকে দিয়ে একলাফে শেষ রেলিংটায় এক পা দিয়ে উঠেই নেমে পড়লেন অভিষেক। হাততালি দিয়ে উঠল সবাই।
এবার আসল পরীক্ষা স্টান্ট ম্যানের। রেলিং থেকে নীচে গঙ্গায় ঝাঁপ। কে দেবে। সোমনাথদা সবাইকে নিয়ে গিয়ে রেলিং-এর সামনে দাঁড় করালেন। বাকিদের সঙ্গে আমি দাঁড়িয়ে একটু দূরে। সবাইকে অবাক করে দিয়ে ওই পাঁচ পালোয়ানই মাথা নেড়ে বললেন যে, অত উঁচু থেকে গঙ্গায় তাঁরা ঝাঁপ দিতে পারবেন না!
সোমনাথদার মুখ চুন। মাথা নিচু করে এগিয়ে গেলেন তাঁর মনিস্যারের দিকে। বললেন পুরো ব্যাপারটা। মাথার চুলে হাত বুলিয়ে, পিঠ চাপড়ে মনিরত্নম বললেন কোনও ব্যাপার না। শেষ মুহূর্তে নার্ভ ফেল করতেই পারে। এটা লাইফ রিস্কের ব্যাপার। মুম্বইয়ের ফাইট মাস্টারকে ডাকা হল। উনি তখন একজনকে ডাকলেন। তিনি সব দেখে শুনে বললেন, পারব।
আধঘন্টার মধ্যে ওই স্টান্টম্যানকে অভিষেক বচ্চনের মত মেকআপ, পোষাকে রেডি করা হল। শট রেডি। একবার আকাশের দিকে তাকিয়ে হাত জোড় করে বিড়বিড় ইস্ট দেবতাকে স্মরণ করে নিলেন তিনি। তারপর দুবার রিহার্সাল দিলেন ঠিক যেভাবে আসল অভিনেতা রেলিং এ পা রেখেছিল সেই ভাবে। ফাইনাল অ্যাকশন। দু’পা দৌড়ে রেলিং টপকাতেই মানুষটা অদৃশ্য। পেছনে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখি, চোখ বন্ধ করে আকাশের দিকে মুখ তুলে রয়েছেন মনিরত্নম।

সেদিন সবকিছু ভালোয় ভালোয় উতরে গেলেও পরদিন ঘটে গেল চরম বিপর্যয়। ওই দ্বিতীয় হুগলী সেতুতেই।
একটা জিনিস লক্ষ্য করলাম, সোমনাথদাকে অসম্ভব ভালোবাসেন মনিরত্নম। আর অনুরাগ কশ্যপের সঙ্গে গলায় গলায় বন্ধুত্ব। গাড়িতে ফেরার সময় কাউকেই কিছু বললেন না সোমনাথদা। এরকম নাকি হয়েই থাকে। যেখানে জীবন মরণের প্রশ্ন জড়িয়ে আছে, সেখানে কোনও একজন স্টান্টম্যান পিছপা হলে তাঁকে আর জোর করা হয় না। তবে ওই পাঁচ স্টান্টম্যান যেন মরমে মরে যাচ্ছিলেন। পরে সোমাথদা বলেছিলেন, ‘ওঁদের আত্মবিশ্বাস ফিরিয়ে আনাটাই আমার কাছে এখন বিরাট চ্যালেঞ্জের। আমার যদি অভিষেকের মত হাইট হত, আমিই ঝাঁপ মারতাম।’
পরদিন শ্যুট হবে ঝাঁপ দেওয়ার আগে চেজিং সিনটার। আরও লোক-লস্কর, এক্সট্রা লাগবে। সোমনাথদা বললেন, সকাল ছ’টার মধ্যে এনটিওয়ান চলে আয়।
পরদিন বিদ্যাসাগর সেতু পৌঁছে গেলাম সাতটার মধ্যে। কলকাতার দিকে সেতুর মুখে তিনটে মেকআপ ভ্যান দাঁড়িয়ে। একটা অভিষেক বচ্চনের, অন্য দুটো অজয় দেবগন আর বিবেক ওবেরয়ের জন্য। বেশ কয়েকটা হলুদ ট্যাক্সি, প্রাইভেট অ্যাম্বাসাডর, বাস মিনিবাস। সোমনাথদার বাছাই করা স্টানম্যানরা সেদিন এসেছিলেন নিজস্ব বাইকে। গোটা তিনেক ক্যামেরা। এলাহি আয়োজন। যথারীতি ব্রিজের একদিক বন্ধ। আয়োজন, উপকরণ, লোক লস্কর, অতগুলো গাড়ি নিয়ে কম্পোজিট শট। খুব সম্ভবত অভিষেক থাকবেন ট্যাক্সিতে। সেই ট্যাক্সিটাকে ধাওয়া করবেন অজয় দেবগন ও বিবেক ওবেরয় বাইকে। নাকি অজয় বিবেক একে অপরকে, এখন আর সিনটা ঠিক মনে নেই। তবে ভয়ঙ্কর অ্যাকশন সিন।
কিছুদিন আগে থেকে কলকাতার রাস্তায় নতুন করে পিচ ঢেলে তাতে সারিবদ্ধভাবে স্টোনচিপ লাগানো শুরু হয়েছিল। তাতে নাকি দ্রুতগামী গাড়ির চাকা ব্রেক কষলে পিছলে যাবে না। গ্রিপ ভালো হবে। দুর্ঘটনা কম হবে। কিন্তু এই পরিকল্পনাটি এতই ‘চিপ’ ছিল, কমার বদলে দুর্ভোগ বেড়ে গিয়েছিল ব্যাপক হারে। বিশেষ করে বাইক চালকদের। ভেজা রাস্তায় চাকা পিছলোলে পথে গেঁথে দেওয়া স্টোন চিপে বাইক আরোহির শরীর ক্ষতবিক্ষত হয়ে যেত।
বিদ্যাসাগর সেতুতেও এই ধরনের ম্যাস্টিক পিচ বসানো হয়েছিল। শ্যুটিং শুরু হবে হবে। গাড়ির অভিমুখ কলকাতার দিক থেকে হাওড়ার দিকে। মনিটর শট হবে। মাইকে ঘোষণা হল। সেতুর একপাশ দিয়ে দ্রুত গতিতে বিভিন্ন প্রকারে যানবাহন ছুটে চলেছে হাওড়ার দিকে। সেই যানবাহনের ফাঁক গলে, ডজ করে কাটাতে কাটতে ঊর্ধশ্বাসে ছুটে আসছে দুটো বাইক। চালাচ্ছেন সোমনাথদার দুই স্টান্টম্যান। একজন আর একজনকে তাড়া করেছে। বা, দুটি বাইকই একটি ট্যাক্সিকে ধাওয়া করেছে। মনে নেই। আসলে তখন শুধু বাইকের ছুটে আসার দৃশ্যটি টেক হবে। মনিটার শট ওকে। এবার ফাইনাল টেক। সব গাড়ি আবার ব্যাক গিয়ারে পিছোচ্ছে। এমন সময় এলো ঝমঝমিয়ে বৃষ্টি।
সোমনাথদা আমাকে কাছ ছাড়া করছেন না। মাছি গলতে পারবে না এমন সিকিউরিটি। কলকাতার দিকে পিটিএস থেকে, ওদিকে হাওড়ার দিক থেকে ব্রিজে ওঠার পোলগুলির মুখে পুলিশে পুলিশে ছয়লাপ। আমার হাতে যত রাজ্যের কাগজপত্র ধরিয়ে দিয়েছেন সোমনাথদা। যাকে যা নির্দেশ দেবার প্রথমে আমাকে বলছেন, আমি ছুটে গিয়ে তাকে সেটা বলে আসছি। আমি তখন সোমনাথদার ‘লোক দেখানো’ সহকারীর ভূমিকায়। এর মধ্যে এক ফাঁকে মনিরত্নম আর অনুরাগ কশ্যপের সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিয়েছেন সোমনাথদা। সেদিন আবার অনুরাগের খুব জ্বর। তিনিও সোমনাথদাকে যা বলার আমাকে বলছেন।
বৃষ্টি ভেজা পথ। হেলিয়ে দুলিয়ে ওই ভয়ঙ্কর স্পিডে বাইক চালালে বিপদের সম্ভবনা ষোলোআনা। সোমনাথদাকে এমনি ক্যাজুয়ালি কথাটা বললাম, ‘যেভাবে বাইক চালাচ্ছে তাতে চাকা না স্কিট করে যায়!’
ওদিকে ফাইনাল টেকের আগে অজয় দেবগন আর বিবেককে ডাকলেন মনিরত্নম। ব্রিজে ওঠার আগের রাস্তায় অর্থাৎ উড়ালপুলে স্টেডিক্যামে ওঁদের কিছু ক্লোজ শট নিয়ে ওইদিককার শ্যুটিং পর্বটা মিটিয়ে ফেলতে চাইছেন তিনি। সেইজন্য ওঁদের ডাকা। অনুরাগ ছুটলেন শটগুলো নিতে।

তখন প্রায় দুপুর বারোটা। শট দিয়ে এসে দুই হিরো বসলেন মনিরত্নমের পেছনে মনিটরে সিনটা দেখার জন্য। দুর্ধর্ষ শট। সেই দেখে বিবেক ওবেরয় আচমকা বলে উঠলেন, ‘মনিস্যার নেক্সট শট ম্যায় খুদ দুঙ্গা। সেই শুনে অজয় দেবগন বললেন, ‘ম্যায় ভি।’ শুনে আঁতকে উঠলেন সোমনাথদা। মনিরত্নমকে বললেন, ‘মনিস্যার বহুত বড় রিস্ক হয়ে যাবে। রোড ভিজে আছে। একবার চাকা স্কিট করলে বিরাট বড় অ্যাকসিডেন্ট হয়ে যাবে।’ অনুরাগকে মনিরত্নম জিজ্ঞাসা করলেন, ‘কি রে অনু তুই কি বলিস?’ অনুরাগও মানা করল, ‘শায়েদ রিস্ক হো জায়গা স্যার।’
আসলে বিবেক আর অজয় দুজনেই দুর্ধর্ষ বাইকার। ওঁরা নাছোড়বান্দা। কোনও স্টান্টম্যান নয়, ‘শট হাম খুদ দেঙ্গে।’ বলে সোমনাথদার কাঁধ চাপড়ে বললেন, ‘দাদা… ঘাবরাইয়ে মাত… কুছ নেহি হোগা… এমন দুর্দান্ত অ্যাকশন শট ছাড়তে পারব না… মনিস্যার ডোন্ট ওরি… ওয়ানটেক ওকে করে দেবো।’ এই আলোচনার মাঝে হাজির অভিষেকও। তিনিও অজয়-বিবেককে বারণ করলেন। কিন্তু কে শোনে কার কথা! সোমনাথদা আমায় ফিসফিসিয়ে বললেন, ‘আজ কিছু না একটা হয়ে যায়… জয় তারা…’
শট রেডি। মাইকে ‘অ্যাকশন’ বললেন মনিরত্নম।
কলকাতার দিক থেকে দুরন্ত গতিতে বাস, ট্যাক্সি কাটাতে কাটাতে ছুটে আসছে দুটো বাইক। একটাতে অজয় দেবগন। রাস্তার ডান দিকে। ডিভাইডারের ধার বরাবর। অন্যটায় বিবেক ওবেরয়। মাঝখান দিয়ে। ক্রেন ক্যামেরায় ধরা কম্পোজিট শট। বাকি ক্যামেরা কোনওটা হুডখোলা চলন্ত গাড়িতে আর স্টেডিক্যাম বাইকে। সামনের ট্যাক্সিতে অভিষেক। রাস্তার মাঝখান থেকে বাঁদিক ঘেঁসে চলা ট্যাক্সিটার পাশে আসার জন্য বিবেক ওই দুরন্ত গতিতে ছুটন্ত বাইকটাকে আরও স্পিড বাড়িয়ে বাঁ দিকে হেলে একটা চলন্ত বাসকে কাটিয়ে বেরোতে যেতেই স্কিট করল বাইকের চাকা। বিকট শব্দ করে বাঁদিকে তিনটে পাল্টি খেল বিবেকসমেত বাইক।
সোমনাথদা জানতেন দুর্ঘটনা ঘটবেই। তাই আগে থেকেই আশেপাশে নিজের বাইক বাহিনীকে মোতায়েন রেখেছিলেন। ওরা বিবেককে ফলো করছিলেন। বিবেকের বাইক স্কিট করতেই নিজেদের চলন্ত বাইক ছেড়ে প্রায় উড়ে গিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়লেন বাইক আর বিবেকের শরীরের তলায়। সময় মত পেছনের বাসটা ব্রেক কষেছিল তাই রক্ষে।
ওই পাঁচ স্টান্টম্যানের জন্য বিবেকের মাথাটা বেঁচে গেল। প্রাণও। কিন্তু রক্ষা পেল না বিবেকের বাঁ পা। পুরো সিনবোন তিন টুকরো। এক টুকরো বেরিয়ে পড়েছে খাবলা হয়ে ঝুলে থাকা মাংস ভেদ করে। অজয়, অভিষেক, সোমনাথদা রক্তাক্ত, সংজ্ঞাহীন বিবেককে পাঁজাকোলা করে তুলতেই জ্ঞান হারিয়ে ডিরেক্টর চেয়ার থেকে ডানপাশে হেলে ধপাস করে মাটিতে পড়ে গেলেন মনিরত্নম। সোমনাথদা সেই দেখে বিবেককে ছেড়ে মনিস্যারের দিকে ছুটে আসতে আসতে চিৎকার করে উঠলেন, ‘প্রিয় আমার ছেলেগুলোকে দেখ।’
যে পাঁচজন আগের দিন ভয়ে পিছিয়ে এসেছিলেন, ওঁরাই ম্যাস্টিক খোয়ায় ক্ষতবিক্ষত হয়ে উপুড় হয়ে পড়ে আছেন পোলের ধারে, রাস্তায়, বিবেকের বাইকের তলায়। সর্বশক্তি দিয়ে মানুষগুলোকে তুলে বসালাম। সোমনাথদার বাকি ছেলেরা ততক্ষণে জল, ফাস্টএড নিয়ে ছুটে এসেছেন। ওঁদের রক্তাক্ত মুখগুলো জল ঢেলে ধুয়ে দিলাম।
ওই অসমসাহসী ছেলেগুলোর একজনেরও নাম আজ আর মনে নেই। আর জানারও উপায় নেই। কারণ সোমনাথদাই তো আর নেই। তবে ওই পাঁচ পালোয়ানের মুখের হাসি কোনওদিন ভুলব না। সেই হাসিতে ঝরে পড়ছিল প্রাণ বাঁচানোর তৃপ্তি।