binodan-smritir-studiopara-part-9

স্মৃতির স্টুডিও পাড়া – পর্ব ৯
ফিল্ম রিভিউ
প্রিয়ব্রত দত্ত


লোকটার নাম অঞ্জন চৌধুরি, হাঁ করলে হেডলাইন হয়

শুনেছি উত্তমকুমারের আচমকা প্রয়ানের পর টালিগঞ্জ স্টুডিও পাড়ায় নাকি তালা পড়ে গিয়েছিল। মাঝারি ও ছোট প্রযোজকরা ছবিতে লগ্নি করার ভরসা পাচ্ছিলেন না। এই পরিস্থিতিটা কতটা সত্য, কতটা অতিরঞ্জিত তার ময়না তদন্ত করার মতো যোগ্যতা বা অভিজ্ঞতা কোনওটাই তখন আমার ছিল না। উত্তমকুমারের প্রয়ানের প্রায় ষোলো বছর পর আমি টালিগঞ্জ স্টুডিও পাড়ায় পা রাখি। ততদিনে বহু বাংলা ছবি রিলিজ করেছে। তার মধ্যে একাধিক ছবি গোল্ডেন জুবিলি এমন কী প্ল্যাটিনাম জুবিলির শিরোপা পেয়েছে। সত্যজিৎ রায় তো মাথার উপর ছিলেনই। মৃণাল সেন, তপন সিংহর মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতি সম্পন্ন পরিচালকরা তখনও নিয়মিত ছবি তৈরি করে চলেছেন। সেইসঙ্গে তখন তরুন মজুমদার, প্রভাত রায়, অঞ্জন চৌধুরি একটু পরে স্বপন সাহারা ক্রমাগত অক্সিজেন জুগিয়ে চলেছেন ইন্ডাস্ট্রিতে।

সালটা ঠিক মনে নেই। ১৯৯৭-৯৮ হবে। এক বৃষ্টির বিকেল। অঞ্জন চৌধুরির ডেকার্স লেনের অফিসে প্রেস কনফারেন্স। কোনও ছবির ঘোষণা বা মুক্তির প্রচার নয়। অঞ্জন চৌধুরি নাকি এমনই চা-শিঙাড়া খাবার জন্য সাংবাদিকদের ডাকেন। গল্পগুজব করেন। কমলদা আমন্ত্রণ পত্রটা হাতে দিয়ে বললেন, চোখ কান খোলা রাখবে। ভদ্রলোকের নাম অঞ্জন চৌধুরি!

এই সতর্ক সংকেতের শিরঃপ্রদাহ মালুম করলাম পরদিন। অঞ্জনের অন্তরে এমন হাই ভোল্টেজ বিদ্যুৎ ওত পেতে থাকে সেটা টের পেলাম হাড়ে মজ্জায়। কারণ, সেই প্রথম আমার অঞ্জন চৌধুরির সঙ্গে মুখোমুখি মোলাকাত।

চা এসেছে। প্লেট উপচে পড়া শিঙাড়া দিয়ে পেট পুজো চলছে। সঙ্গে ডেকার্স লেনের ডাকসাইটে চায়ে চুমুক দিতে দিতে চলছে আড্ডা। মধ্যমণি অঞ্জনদা। ফর্সা ধবধবে প্রৌঢ় মানুষটি রঙচঙে পোশাক পরে তাঁর বর্ণময় পরিচালক জীবনের নানা জমাটি গল্প বলে চলেছেন। আমি হাঁ করে শুনছি আর টুকটাক নোট রাখছি। তার মধ্যেই জানালেন, দুই মেয়ে চুমকি আর রিনার পর পুত্রবধূ বিদিশাকেও এবার সিনেমায় ইন্ট্রোডিউস করতে চলেছেন তিনি। ছবির নাম ‘চন্দ্রমল্লিকা’। নায়কও আনকোরা। নতুন। সম্রাট মুখোপাধ্যায়। আমি হাঁফ ছেড়ে বাঁচলাম। যাক স্টোরি রেডি। পুত্রবধূ বিদিশার সঙ্গে আলাপ করিয়ে দিলেন অঞ্জনদা। সম্রাটকেও বসালেন আমাদের মুখোমুখি। ছেলে সন্দীপও ছিলেন সেদিন। অন্যান্যরা চিনলেও আমি প্রথম দেখলাম। তখন এখনকার মতো বুম নিয়ে কামড়াকামড়ি ছিল না। সেই সময় বেসরকারি টিভি চ্যানেল কোথায়! সিনিয়র সাংবাদিকরাই প্রশ্ন করছেন বেশি। আমি নোটপ্যাডে টুকছি। ঘন্টা আধেকের মধ্যে সাংবাদিক সম্মেলন শেষ। কাগজ কলম গুটিয়ে উঠবো উঠবো করছি, এমন সময় প্লেট সাজিয়ে এলো চিত্তদার চিকেন কাটলেন। খাওয়ানোর ব্যাপারে অঞ্জনদার সুখ্যাতি ছিল প্রবাদ প্রতীম। সেই ফাঁকে বিদিশা আর সম্রাটের সঙ্গে ব্যক্তিগত আলাপটা সেরে ফেললাম। অনুভব করলাম ওদের সঙ্গে কথা বলার সময় আড়চোখে আমাকে অবজার্ভ করছেন অঞ্জনদা। বিদিশা আড়ষ্ট। সম্রাট সপ্রতিভ। তবুও বিদিশার সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতাতে বেশি সময় লাগলো না। আমি ওর নাড়ি নক্ষত্র জেনে নিয়ে কাটলেটে মন দিলাম। এর মাঝে দু’বার অঞ্জনদা আমাকে গরম থাকতে থাকতে কাটলেটটা খেয়ে নেবার কথা বলেছেন। আমি শিল্পীদের সঙ্গে মূল বিষয় নিয়ে কথা বলার সময় খাদ্য, পানীয় কিছুই গ্রহণ করি না। আজও।

ইতিমধ্যে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। অঞ্জনদা আর এক রাউন্ড কাটলেটের অর্ডার দিলেন। বৃষ্টি, কাটলেট চা… রীতিমতো আড্ডা জমে উঠল। তখন সৌরভ গাঙ্গুলির ধুন্ধুমার বাজার। ভারতীয় ক্রিকেট টিমের ক্যাপ্টেন। এর আগে বাঙালির ক্যাপ্টেনগিরি দূর অস্ত, ভারতীয় ক্রিকেট টিমে সুযোগই জুটতো কালেভদ্রে। সৌরভ সেখানে সাম্রাজ্যের শাহেনশা।

ওদিকে অঞ্জন চৌধুরিও তখন বাংলা বাণিজ্যিক ছবির বেতাজ বাদশা। অঞ্জন চৌধুরির ছবি মানেই বক্স অফিসে বিস্ফোরণ। আট থেকে আশি আসমুদ্র পশ্চিমবাংলা অঞ্জনের সংলাপে শিহরিত। উত্তমোত্তর বাংলা বাণিজ্যিক ছবির ট্রেন্ড সেটার তিনি। ‘শত্রু’ ততদিনে টালিগঞ্জ ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ধারাপাত বদলে দিয়েছে। অঞ্জনের বউমা সিরিজ বাঙালির ঘরে ঘরে, হেঁসেলে কলপাড়ে তুমুল আলোড়ন তুলেছে। বাঙালি বধূর মুখে মুখে ‘সেজ বউ’, ‘মেজোবউ’-এর ডায়লগ। ইন্ডাস্ট্রির মুখে অন্ন জুগিয়ে চলেছেন অঞ্জন।

সেইসব নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণের মধ্যেই উঠল সৌরভ প্রসঙ্গ। বেহালার প্রতিবেশিটিকে নিয়ে অঞ্জন চৌধুরির গর্বের শেষ নেই। গদগদ হয়ে অঞ্জনদা ‘শাসক’ সৌরভের সাম্প্রতিক সাফল্যের বিশ্লেষণ করে চলেছেন। জানালেন, কয়েকদিন আগেই একটা অনুষ্ঠানে সৌরভ-ডোনার সঙ্গে দেখা হয়েছিল। বললেন, ‘মহারাজ আর আমি পাশাপাশিই বসেছিলাম। ডোনার নাচ দেখতে দেখতে মনে হল ওদের দুজনকে নিয়ে ছবি করলে কেমন হয়। সৌরভ-ডোনার প্রেম আর বিয়ের ব্যাপারটা বেশ নাটকীয়। ছবি করলে দারুন জমে যাবে। ভাবনাটা সৌরভকে বলতেই হেসে উড়িয়ে দিল। বলল, ধুর ছাড়ুন তো ওসব। আমাদের মতো বিয়ে বহু ছেলেমেয়ে করে। আর আমার এসব নিয়ে ভাবার সময় কোথায়? আমিও ভেবে দেখলাম, সত্যিই দুজনকে একসঙ্গে পাওয়া খুব মুশকিল। তবে ওরা দুজন সিনেমার পক্ষে ভেরি ইন্টারেস্টিং বিষয়… ভাবছি কী করা যায়… আপনারা কী বলেন?’

সিনিয়ররা সাংবাদিকরা হ্যাঁ…হ্যাঁ… ঠিক…ঠিক… বলে তাল ঠুকলেন। এই পর্যন্তই। দ্রুত ভিন্ন প্রসঙ্গে চলে গেলেন সকলে। ওদিকে বৃষ্টি থামতেই যে যার মতো গা নাড়া দিলেন। অঞ্জনদাও বললেন একবার এনটি ওয়ান হয়ে বাড়ি ফিরবেন। বলে বিদিশাকে নিয়ে বেরিয়ে পড়লেন তিনি। আমি শিঙাড়া কাটলেটের ঢেকুর তুলতে তুলতে গুটিগুটি পায়ে সোজা বাড়ি।

পরদিন একটু বেলার দিকে ‘চন্দ্রমল্লিকা’র খবরটা সাজিয়ে, গুছিয়ে লিখে হাত পা দোলাতে দোলাতে আজকাল-এর দফতরে। লম্বা নিউজ রুমে ঢুকে দূর থেকে দেখলাম কমলদা হাজির। যাক কপিটা হাতে ধরিয়েই খাল্লাস!

কমলদা জায়গায় বসে সান্ধ্যর কপি এডিট করছিলেন। আমাকে দেখে মুখ তুলে বললেন, ‘আজকাল-এর ফাইলটা নিয়ে এসো।’ তখন সব সংবাদপত্রের নিউজ রুম বা ডেস্কে কলকাতা থেকে প্রকাশিত প্রধান বাংলা ও ইংরেজি কাগজের একাধিক ফাইল রাখা বাধ্যতামূলক ছিল। ফাইল মানে সেই মাসের খবরের কাগজ তারিখ অনুযায়ী পরপর স্পাইনের দিকে ফুটো করে দড়ি দিয়ে বেঁধে গুছিয়ে রাখা।

আমি কপিটা কমলদার হাতে দিয়ে পাশের ডেস্ক থেকে আজকাল-এর ফাইলটা তুলে নিয়ে এসে ওঁর সামনে রাখলাম। মুখ না তুলেই বললেন, ‘পাঁচের পাতাটা বার করো।’ করলাম। বললেন, ‘অ্যাঙ্কর স্টোরিটার হেডিংটা পড়ো।’ পাতার তলার দিকের মোটামুটি নাতিদীর্ঘ কপিকে অ্যাঙ্কর স্টোরি বলে।

মুখ নামিয়ে হেডিংটা পড়তে যেতেই উল্টোদিক থেকে বাঁ-গালে পড়ল বিরাশি শিক্কার এক চড়। মুহূর্তে গোটা নিউজ রুম স্তব্ধ। পিন পড়লে শব্দ শোনা যাবে। নিউজরুম কাঁপিয়ে কমলদার চিৎকার, ‘কাল ডেকার্স লেনে কী করত গিয়েছিলে? কাটলেট আর বাসি শিঙাড়া সাঁটাতে? কী লেখা আছে হেডলাইনে? সবাইকে পড়ে শোনাও…’

চোখ ফেটে জল বেরিয়ে আসতে চাইছে। কণ্ঠার কাছে বরফটা দলা পাকিয়ে আটকে আছে।

‘কী হল, পড়ো…’

কেঁদেই ফেললাম। কাঁপা কাঁপা গলায় পড়লাম, ‘এবার সৌরভ-ডোনাকে নিয়ে ছবি করছেন অঞ্জন’। বাইলাইন, সুপ্রিয় নাগ।

আমি গিয়েছিলাম সান্ধ্য আজকাল থেকে। সুপ্রিয়দা গেছিলেন ডেইলি আজকাল থেকে ছবি করতে। নিয়ম হলো গুরুত্বপূর্ণ খবর থাকলে সান্ধ্যর হয়ে গেলেও যত রাতই হোক, যেভাবেই হোক ডেইলির নিউজ ডেস্কে খবরটা ব্রিফ করতে হবে।

আমি তো খবরটা ধরতেই পারিনি।

সুপ্রিয়দা ডেইলি আজকাল-এর বিনোদন বিভাগের ফটো জার্নালিস্ট। আমার থেকে বছর দশেকের বড়। বহুদিন চিত্র সাংবাদিকতা করছেন। অভিজ্ঞ। উনি অফিসে ফিরে ছবি ধরাতে এসে চিফ রিপোর্টারকে খবরটা ব্রিফ করেন। তৎকালীন চিফ রিপোর্টার অমিত মুখার্জি খবরটা সুপ্রিয়দাকে লিখে দিতে বলেন।

ধপ করে সামনের চেয়ারে বসে পড়ে নিজের ব্যর্থতার গ্লানিতে হাউহাউ করে কেঁদে ফেললাম। পাশ থেকে সনৎদা উঠে এসে আমার পিঠে মাথায় হাত বোলাতে লাগলেন।

কমলদার ক্রোধ তখনও কমেনি। চুলে মুঠিটা ধরে ঝাঁকিয়ে দিয়ে বললেন, ‘লোকটার নাম অঞ্জন চৌধুরি। উনি হাঁ করলে হেডলাইন হয়। একটা আস্ত ইন্ডাস্ট্রিকে মানুষটা খাইয়ে পরিয়ে বাঁচিয়ে রেখেছেন। অঞ্জন চৌধুরি হাঁচলেও খবর, হাগলেও খবর… এই ছবি জীবনে কোনওদিন হবে না। কিন্তু অঞ্জন চৌধুরি ভেবেছেন মানে সেটাই শিরোনাম। বুঝেছো বা…’ চার অক্ষরের বন্যা। ততক্ষণে একদল কমলদাকে শান্ত করছেন, বাকিরা আমায় সান্ত্বনা দিচ্ছেন।

‘আজ সব কাগজ খবরটা করেছে। কাল ভাগ্যিশ সুপ্রিয় ছিল। না হলে আমার চাকরি নিয়ে টানাটানি পড়ে যেত। প্রেস কনফারেন্সটা চা শিঙাড়া গেলার জায়গা নয়। খবর খোঁজার আস্তাকুঁড়। ওখান থেকেই সবার মধ্যে থেকে তোমায় আলাদা খবর খুঁজে নিয়ে আসতে হবে। তা না পেলে ভিন্ন দৃষ্টিকোণ।’ তখনও রাগে থরথর কাঁপছেন আমার সিনিয়র সাব এডিটর।

আমাকে টানতে টানতে নিউজরুমের বাইরে নিয়ে এলেন সব্যসাচীদা। চা, সিগারেট খেয়ে একটু ধাতস্থ হলাম। সাক্ষীদা এসে বললেন কমলদা ডাকছেন।

চোয়াল শক্ত করে নিউজ রুমে ঢুকলাম। গিয়ে দাঁড়ালাম কমলদার সামনে।

‘বেহালা চোদ্দ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে যে কোনও রিক্সাওয়ালাকে বলবে অঞ্জন চৌধুরির বাড়ি যাব। পৌঁছে দেবে। অঞ্জনদা ‘চন্দ্রমল্লিকা’র কয়েকটা ছবি দেবেন। স্টুডিওতে তোলা। ওগুলো নিয়ে এসো।’

আমি কমলদার দিকে বোকার মতো তাকালাম।

মানিব্যাগ থেকে একটা পঞ্চাশ টাকার নোট বার করে হাতে ধরিয়ে দিলেন।

বেহালা চোদ্দ নম্বর বাসস্ট্যান্ডে পৌঁছে একজন রিক্সাওয়ালাকে বলতেই বললেন উঠে পড়ুন।

সাইকেল রিক্সা গিয়ে দাঁড়ালো একটা মাঝারি চওড়া গলির সামনে। রিক্সাওয়ালাই বললেন ওই যে শেষ বাড়িটা।

বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম। আপনা থেকেই বাঁ গালে হাত চলে গেল। অর্ধচন্দ্রাকার লাল সিঁড়ি। দু’ধাপ উঠে খোলা গ্রিলের গেটের সামনেই দাঁড়াতে এক পাঞ্জাবি পায়জামা পরা যুবক বেরিয়ে এলেন।

‘অঞ্জনদা… কমলদা পাঠিয়েছেন…’

‘আসুন… আসুন… অঞ্জনদা অফিসেই আছেন…’

আমি ভদ্রলোকের পেছন পেছন ভারি পর্দা সরিয়ে একটা ঘরের মধ্যে ঢুকলাম। কাচ বসানো বিশাল টেবিলের ওপারে অঞ্জন চৌধুরি। সাদা ফতুয়া আর চেক লুঙ্গি পরে বসে লিখছিলেন। টেবিলের তিন দিক জুড়ে সারি দিয়ে ছোট ছোট কালীঠাকুরের ছবি। প্রত্যেকটির সামনে টকটকে লাল তাজা জবা ফুল। পেছনের দেওয়ালে তারা মায়ের বিশাল ফ্রেমে বাঁধানো।

মুখ তুলে তাকালেন। মুখে হালকা হাসি।

‘বাবু, ওর জন্য চা আর জলখাবার বল। বেচারি আমার জন্য আজ কমলের কাছে মার খেয়েছে। আয় বোস…’ চোখের ইশারায় উল্টোদিকের চেয়ারটা দেখিয়ে দিলেন।

আমি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেছি। বাবুদা হেসে ঘর থেকে বেরিয়ে গেলেন। পরে জেনেছিলাম উনি অঞ্জনদার প্রধান সহকারী পরিচালক বাবু রায়।

‘তুই আজ আমার এখানে খেয়ে যাবি’, চেয়ারে হেলান দিয়ে বসে বললেন অঞ্জনদা।

‘না… না… আমি খেয়ে বেরিয়েছি… ছবিগুলো…’ আমি উঠে পড়তে পারলে বাঁচি।

‘বেশি কথা বললে এবার আমি গাঁট্টা মারবো। কমলকে খুব ঝেড়েছি। মুখে যা বলার বলো… মারবে কেন…’

আমি ভদ্রলোককে যত দেখছি তত অবাক হয়ে যাচ্ছি। আমার সঙ্গে কথাই শুরু করলেন এমনভাবে যেন কতকালের হৃদ্যতা।

আমি মাথা নামিয়ে বললাম, ‘শাসন না করলে শিখবো কী করে!’

একটা বড় থালায় চারটে ফুলকো লুচি আর ছোট বাটিতে সাদা আলুর তরকারি নিয়ে পর্দা ঠেলে ঘরে ঢুকতে ঢুকতে বাবুদা বললেন, ‘ডায়লগে ক্ল্যাপ পড়বে অঞ্জনদা।’

‘নে খা… কমলের কাছে চড় খেয়েছিলি, তাও ঘন্টাতিনেক হয়ে গেছে। টিফিনটা করে নে। ঘন্টাখানেক বাদে লাঞ্চ করবো, বুঝলি।’

বুঝলাম ইতিমধ্যেই গোটা ঘটনাটি নিয়ে অঞ্জন-কমল কথোপকথন হয়ে গেছে। কমলদার হয়ে মান ভাঙাতে মাঠে নেমেছেন অঞ্জন চৌধুরি স্বয়ং। বললেন, ‘আমি তোকে সব শিখিয়ে, চিনিয়ে দেবো। জেনে রাখ আমি একসময় নিজের সম্পাদনায় একটা পত্রিকা বার করতাম। সুতরাং খবর কী করে তৈরি করতে হয় আমিও জানি।’

সেই শুরু হল আমার অঞ্জন অন্বেষণ। আর অঞ্জন চৌধুরি হয়ে উঠলেন আমার ইন্ডাস্ট্রির অভিভাবক।

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *