পৃথিবীবাসী সংকটাপন্ন, গভীর সংকট তার ভিতরে ও বাহিরে। অতিমারী অনুসৃত অর্থনৈতিকসংকট, স্বাস্থ্যপরিষেবা, শিক্ষাসংক্রান্ত সংকট, মানসিক অবসাদজনিত সংকট গিলে খাচ্ছে পুরো দুনিয়াটাকেই। তবে সাম্প্রতিক কয়েকটা ঘটনা দেখিয়ে দিল মানুষের মনের মধ্যে বাস করা আরও কিছু সংকটের চেহারা। বলপ্রয়োগ আসলে স্বঘোষিত সবলের অন্তরের দূর্বলতারই প্রকাশ, ক্ষমতা কায়েম করতে যারা নিরস্ত্রের বুকে অস্ত্র ধরে, তারা আসলে ভেতর থেকে দূর্বল। সম্প্রতি বর্ণবৈষম্য নিয়ে নিষ্ঠুরতার প্রকাশ আবার দেখিয়ে দিল সাদা চামড়ার আড়ালে থাকা কিছু মানুষের অন্তরের কালিমা, দেখিয়ে দিল ১৮৫০, ১৯৬৩র থেকে এতটুকুও এগোতে পারেনি ২০২০। এছাড়াও রয়েছে আত্মবিশ্বাসের অভাবজনিত অন্তরের সংকট, যা থেকে কিছু ক্ষমতাশালী ব্যক্তি তাদের চারপাশে তৈরি করে এমন মানুষের বৃত্ত, যারা প্রশ্নাতীত আনুগত্য দেখাতে অভ্যস্ত। বিনিময়ে এরাও নিজের নিজের ক্ষেত্রে পায় পৃষ্ঠপোষকতা। এদের আমরা স্বজন বলি। স্বজনের এই অদৃশ্য বলয় সমাজের সর্বত্র। রাজনীতি, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতি সবজায়গাতেই রয়েছে এই বিভাজনরেখার উপস্থিতি। কখনও কখনও এর মার বড় প্রকট হয়ে ওঠে, যার ফলস্বরূপ বিনষ্ট হয় অনেক সম্ভাবনা। আর যখন বঞ্চনা সহ্যাতীত হয়, তখন শোনা যায় অনেক বিদ্রোহী কন্ঠ, একজনের প্রতিবাদে অনেকে এসে গলা মিলিয়ে সমর্থন জানিয়ে বলে, “আমিও”,”আমরাও”। তবে সংকট কখনো শেষ কথা বলে না, বলতে পারে না, এটাই আমাদের বিশ্বাস। চারিদিকে এত মৃত্যু, আঘাত, নৈরাশ্য, তবু এর মধ্যেই জাগে অনন্ত, আনন্দও জাগবে এখান থেকেই। জর্জ ফ্লয়েডের শ্বাসরোধটাই শেষ কথা নয়, শেষ কথা বলেছে প্রতিবাদী হাজার হাজার মানুষ, যে মানুষদের চামড়ার বর্ণে কোনো ভেদাভেদ ছিল না। বুকার পুরস্কারপ্রাপ্ত প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ব্রিটিশ সাহিত্যিক, বার্নাডিন এভারিস্টোর মত আমরাও বিশ্বাস করি, সাহিত্য পেরিয়ে যেতে পারে সব ভেদাভেদের গন্ডি। তাই এই দুঃসময়েও আমরা স্বপ্ন দেখাটা ছাড়িনি। বাংলাসাহিত্যকে নিয়ে বিশ্বব্যাপী যে উড়ানের স্বপ্ন এঁকেছিলাম, তা সার্থক। সকলে হাত রেখেছেন আমাদের হাতে, সাথে মিলিয়েছেন পা। সাবালকত্ব অর্জন করলে সকলেরই কিছু দায়িত্ব বাড়ে, আমরাও প্রস্তুত সেই দায়িত্ব নিতে। মানুষের মনের ভেতরের সংকটমোচনে সাহিত্যের যা দায়িত্ব, তা পালন করতে ‘অপার বাংলা’ নিজেকে প্রতিদিন তৈরি করছে, লেখক এবং পাঠকদের সাথে নিয়ে। সামাজিক দায়িত্ব পালনেও ‘অপার বাংলা’ পিছিয়ে নেই। ঘুর্ণিঝড়ে বিপর্যস্ত পশ্চিমবঙ্গের বইবিক্রেতা এবং জীবন জীবিকা তছনছ হয়ে যাওয়া কিছু মানুষের পুনর্বাসন প্রকল্পে সাহায্য করে তাদের কষ্টের ভাগ নিয়েছে সে সাগ্রহে। ‘অপার বাংলা’ কেবল একটি সাহিত্য পত্রিকা নয়, পৃথিবী জুড়ে ছড়িয়ে থাকা বাঙালির আনন্দ, বেদনা, ভালোবাসা এবং মুক্তির আকাশ হয়ে ওঠার স্বপ্ন দেখে, হতে চায় সকলের পরম আত্মীয়। আমরা জুন মাসে বিশেষ কবিতা গুচ্ছ সংখ্যা প্রকাশ করেছি দুই বাংলা ও আমেরিকা র বিশিষ্ট কবিদের অপ্রকাশিত কবিতা নিয়ে। ‘অপার বাংলা’র পক্ষ থেকে বিশেষ সংখ্যা প্রকাশ করার এটা প্রথম প্রয়াস। অভূতপূর্ব সারা পেয়েছি পাঠক মহলের থেকে। আগামীতে আরো বিশেষ সংখ্যা প্ৰকাশ করার ইচ্ছে থাকলো। ‘অপার বাংলা’র সাবালকত্বর পথে এবারের সংখ্যাও নিয়ে এসেছে সারা বিশ্বের বিশিষ্ট লেখকদের অপ্রকাশিত লেখার সম্ভার। ১৬টি ছোট গল্প , ১২টি অণুগল্প, ২১টি কবিতা ছাড়াও আছে রম্যরচনা, প্রবন্ধ, অনুবাদ, ভ্রমণ, রান্নাঘর, বাংলাদেশের মুক্তি যুদ্ধ নিয়ে ধারাবাহিক স্মৃতি কথা। বিখ্যাত সাহিত্যিক শ্রদ্ধেয় দেবেশ রায়কে নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছেন তপন বন্দ্যোপাধ্যায়। আশা করি এই গৃহবন্দী নতুন জীবনে আমরা পাঠকদের কাছে একমুঠো ভালো লাগা এনে দিতে পেরেছি এই সংখ্যাতে। আমাদের উৎকর্ষতা বৃদ্ধি করতে আপনাদের মতামত ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। সামাজিক দূরত্ব বজায় রেখে আপনাকে এবং আমাদের সুস্থ রাখবেন। ধন্যবাদ শুভ নাথ সম্পাদক, অপার বাংলা
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে এখানে ক্লিক করুন
1 thought on “সম্পাদকীয়, জুলাই, ২০২০”
চমৎকার সম্পাদকীয় পাঠে প্রাণিত হলাম। সুসম্পাদিত এবং বিবিধ রচনা সমৃদ্ধ অপার বাংলা পত্রিকাটির জন্যে অপার মুগ্ধতা। আগামীর জন্যে শুভকামনা জানালাম।
চমৎকার সম্পাদকীয় পাঠে প্রাণিত হলাম। সুসম্পাদিত এবং বিবিধ রচনা সমৃদ্ধ অপার বাংলা পত্রিকাটির জন্যে অপার মুগ্ধতা। আগামীর জন্যে শুভকামনা জানালাম।