দোলনচাঁপা দাশগুপ্ত
ধুন্ধুমার কাণ্ড! অমূল্য গুপ্ত নামে এক প্রবাসী বাঙালি বিজ্ঞানীর অকল্পনীয় দুরন্ত আবিষ্কার! কৃত্রিম উপায়ে অথচ সস্তায় পেট্রোল উৎপাদন! যে দেশ এই প্রযুক্তি হাতের মুঠোয় পাবে তারাই হবে বিশ্বের শ্রেষ্ঠ শক্তিধর। তাদের অনুগত হয়ে থাকবে সবাই কারণ পৃথিবীর পেট্রোলের ভাঁড়ার অনিবার্য ভাবেই শেষ হবে একদিন, কিন্তু অমূল্যবাবুর ফর্মুলা যাঁরা পাবে, পেট্রোল তৈরি করে ফেলবে নিমেষেই ল্যাবরেটরিতে।
অমূল্যবাবু নিশ্চয়ই আবিষ্কারের আনন্দে আত্মহারা! অবশ্য বিশ্বস্ত সূত্রের খবর হল তিনি প্রবল রাজনৈতিক চাপে আছেন। আন্তর্জাতিক দড়ি টানাটানি হচ্ছে তাঁকে নিয়ে। কে নেবে তাঁর সে মহার্ঘ্য ফর্মুলা? অমূল্যবাবুর ইচ্ছা ফর্মুলাটা জন্মভূমিকে দেওয়ার। কিন্তু তিনি যে দেশে থাকেন তাঁরা চোখ রাঙিয়ে অমূল্যবাবুকে বলছে, “কী! আমাদের পরিস, আমাদের খাস অথচ ফর্মুলার বেলায় ঘোড়া ডিঙিয়ে ঘাস?” ভারতবর্ষের সাধারণ মানুষ আশায় বুক বাঁধছে অমুল্যবাবুর এই আবিষ্কারে যদিও রাজনৈতিক দলগুলোর মাথায় হাত। দারিদ্র না থাকলে তারা তো লুপ্ত হয়ে যাবে!
আজ খুব নস্টালজিয়া হচ্ছে। বহুলপ্রচারিত এক বাংলা দৈনিকের সাংবাদিক হিসেবে গতমাসেই অমূল্যবাবুর এক সাক্ষাৎকার নিয়েছিলাম। তখন উনি কলকাতায় এসেছিলেন। সুভদ্র, মিতভাষী মানুষটি আমাকে উপহার দিয়েছিলেন নিজের লেখা একটি ছড়া। মৃদু হেসে বলেছিলেন, “ঘরের জিনিস ঘরেই রইল।”
ওঁর সেই ছড়াটাই আওড়াচ্ছি আজ। বারবার।
‘যত মহাদেশ দিয়েছি পাড়ি,
ভাসি যত মহাসাগরে,
তবু বঙ্গের ঋতুর রঙ্গে
মন আনচান করে।
গ্রহের ফেরেতে প্রবাসেতে মরি
কলকাতা এসে বাহনেতে চড়ি।
দিল খুশ হল এবার আমার,
খুঁজে নিও তুমি ধনটি তোমার।
আমার বাংলা প্রতিভাতে ঠাসা
জিরোব এখানে, এইটুকু আশা।
দ্বিচারিতা নয়, সৎপথে হাঁটো।
বাংলারধন সমভাবে বাঁটো।’
ক্লান্ত শরীর নিয়ে খবরের কাগজের অফিসের সামনে থেকেই ট্যাক্সি ধরলাম। ড্রাইভারের সিটের পিছনে লেখা ট্যাক্সির নম্বরটা আমাকে চুম্বকের মতো আকর্ষণ করতে লাগল। আমার বাংলা মানে পশ্চিমবঙ্গ WB. জিরোব মানে 0? দ্বিচারিতা মানে 2? নড়েচড়ে বসলাম। WB 02! ছড়াটা মনে মনে আওড়ালাম। প্রথম লাইনে ‘যত মহাদেশ’ মানে সাতটা, অর্থাৎ 7; মহাসাগর পাঁচটা মানে 5; বঙ্গের ঋতুর রঙ্গে মানে ছ’টা ঋতু। অর্থাৎ 6 আমার হাত পা কাঁপছে! WB02 7569. শেষ সংখ্যা নয় মানে নাইন। এটা তো মিলছে না! বিদ্যুৎচমকের মত হঠাৎ মাথায় এল গ্রহের ফের মানে নবগ্রহকে বুঝিয়েছেন নাকি উনি? তাহলে তো মিলে যাচ্ছে। এই ট্যাক্সিতে কখনও সওয়ার হয়েছিলেন নাকি কলকাতার ছেলে অমূল্য? উনি তো প্রায়ই বলতেন, “কলকাতা মানে আমার কাছে ট্যাক্সিতে চড়া। দামি গাড়ি নয়, ওটাই আমার প্রিয় বাহন।”
“দিল খুশ হল এবার আমার, খুঁজে নিও তুমি ধনটি তোমার।” তাহলে কি এই ট্যাক্সিতেই কোথাও লুকিয়ে রেখে গিয়েছেন ওঁর আবিষ্কারের ফর্মুলাটা ?
মন্ত্রমুগ্ধের মতো হাত বুলালাম WB 02 7569 লেখাটার উপরে। আচ্ছা! WBর মাথাটা কাটা না? ম্যানিকিওর করা নখ দিয়ে চাপ দিতেই WBর কাটা মাথাটা থেকে একটা ছোট্ট বোতামের মত জিনিস আমার হাতে উঠে এল।
এটা কী? মাইক্রোচিপ?
শেষ লাইন দুটো মনে পড়ল। বাংলারধন সবেতেই বাঁটো। তাহলে অমূল্যবাবু কি আমাকেই দায়িত্ব দিয়ে গেলেন বাঙালিকে কুবেরশ্রেষ্ঠ জাতি তৈরি করতে? এই চিপেই কি আছে সম্ভাব্য নোবেলজয়ী অমূল্য গুপ্তর যুগান্তকারী আবিষ্কার?
টেনশনে, আবেগে, ঘেমে চুপচুপে আমি। হৃৎপিণ্ডর লাবডুব বাড়তে বাড়তে আকাশছোঁয়া! প্রবল বাজ পড়ছে কলকাতায়। আর মুষলধারে বৃষ্টি! চিপটা মুঠোর মধ্যে বন্দি করে ভাবতে লাগলাম এই অমূল্য সম্পদ কীভাবে কাজে লাগাব বাঙালির জন্য! আমাকে পারতেই হবে। সততার আজও কোনও বিকল্প নেই! ঠিক যেমন মেধার! শুধু চাই ঠিকঠাক ব্যবহার! এই শহরের আরেক মাণিক যেমনটি দেখিয়েছেন তাঁর ফিল্ম ‘শাখাপ্রশাখায়’!
বাইরে ঘনঘোর বৃষ্টি!
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন
গল্পটিতে বেশ একটা চমক আছে। অভিনব প্লট,অপূর্ব লেখনশৈলী । খুব ভালো লাগল।
শুভেচ্ছা জানবেন।
” অমূল্য ছড়া” অনবদ্য লেখা। ভীষন ভালো লাগলো। অন্যরকম লেখা
এক নিঃশ্বাসে শেষ.. অসাধারণ..অভিনব প্লট.. লেখনশৈলী নিয়ে নতুন করে আর কি বলবো..
খুব সুন্দর। ভীষণ ভাল লাগলো। সত্যজিৎবাবুর কথা মনে পড়ে গেল।
ভালো লাগলো
খুব ভালো লাগলো। একদম ভিন্নস্বাদের।
khub bhalo legeche ..prothom thekei sesh tantan uttejona ..
sesh ta chomotlar , kaljoyee ‘sakhaprosakha’ onek kichui naa bola kotha bujhiyei dae ..
Arow lekha portei chai aapnar ..
বাঃ…. রহস্য ঘনীভূত l লেখার হাত তো লেখকের বরাবরের মতোই চমৎকার…. কিন্তু রহস্যের সমাধান কবে পাবো ?