অমিত কুমার কুন্ডু
গতকাল একজন গাইনোকোলজিস্টের কাছে যেতে হয়েছিল শোভার। ভার্সিটিতে যেতে পারেনি। আজ সকালে ডাক্তারের পরামর্শ মতো একটা কাজ করেছিল। তাই নিয়েই ঘন্টা দু’য়েক পরে নিচে কোলাহল শুরু হয়ে গেল।
ছি! ছি! ছি!
কী হলো? এত ছি ছি দেওয়ার কী আছে?
ছি ছি দেব না, দেখ, তোমার পাঁচতলার ভাড়াটিয়ার মেয়ে কী করেছে?
কী করেছে?
ছাদে গিয়েই দেখো। আগেই বলেছিলাম পুরুষ মানুষ ছাড়া বাসা ভাড়া দিও না। তখন তো দরদ উথলে উঠল, এখন বোঝো?
বাজে কথা বলো না, কী করেছে সেটা আগে বলো?
আমি বাজে কথা বলি, আর তোমার দরদের ভাড়াটিয়া ভালো কাজ করে?
আমি সেটা বলেছি?
তা কী বললে শুনি?
এই সাতসকালে ঝগড়া করতে মোটেও ইচ্ছে করছে না। কী হয়েছে বলো?
আগে ছাদে চলো, গেলেই দেখতে পাবে।
আচ্ছা চলো।
আকবর সাহেব সস্ত্রীক ছাদে গেলেন। ছাদে পৌঁছে আকবর সাহেবের মাথায় হাত। ডান হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলি-তর্জনি দু’পাশে প্রসারিত করে গোঁফ চুলকাতে চুলকাতে বললেন, কী আশ্চর্য!
আকবর সাহেব লেখক মানুষ। ছড়া-টরা লেখেন। পেশায় একটা বেসরকারি বিদ্যুৎ প্ল্যান্টের কনসালটেন্ট। বুয়েট থেকে বিএসসি ইঞ্জিনিয়ারিং পাশ। ফেসবুকে প্রতিবাদী পোস্ট দেন, সুশীল সমাজের পক্ষে, অন্যায়ের বিপক্ষে। তার বাড়িতে কিনা এই অনাচার?
ছাদের এ দৃশ্য দেখে নিজের ফ্ল্যাটে এসে শোভার মাকে ডেকে পাঠালেন তিনি। দশ মিনিট পর শোভার মা বাড়িওয়ালার বাসায় আসতেই, বাড়িওয়ালা বললেন, এ ধরণের কাজ করলে আপনাদের বাড়ি ছাড়তে হবে।
বাড়ি ছাড়তে হবে? কী অন্যায় করেছি? শোভার মা অবাক, যেন আকাশ থেকে পড়লেন।
অন্যায় নয়? বাড়িতে ছেলে-মেয়েরা আছে? অন্যান্য ভাড়াটিয়া আছে, তারা কী বলবে?
শোভার মা এই অহেতুক মোড়লিপানা সহ্য করতে পারছেন না। দাঁতে দাঁত চেপে বললেন, কী হয়েছে? না বললে বুঝব কী করে?
এখনো বুঝতে পারছেন না?
না, পারছি না।
আপনার মেয়ের ঐ সব পোষাক, নাম বলতেও রুচিতে বাধে, ছাদে অইভাবে শুকাতে দেবার কী মানে?
কীভাবে শুকাবে?
কেন, বাসায় গ্যাস নেই? গ্যাসের চুলাতে শুকান যায়। বারান্দায় পাতলা কাপড়ের নীচে দিয়ে শুকান যায়। তাই বলে এভাবে? আকবর সাহেবের মুখ থেকে কথাগুলো কেড়ে নিয়ে ঝড়ের মতো বলে গেল আকবর সাহেবের স্ত্রী।
বুঝেছি! তবে আপনারা যখন এতকিছু বলছেন তখন কারণটা তো জানবেন?
এর আবার কী কারণ থাকতে পারে? আকবর সাহেবের স্ত্রী ঝাল ঝেড়ে বলে উঠল।
মেয়েকে নিয়ে গতকাল গাইনি ডাক্তারের কাছে গিয়েছিলাম। তিনিই খোলা ছাদে রোদে ভালো করে শুকিয়ে ব্যবহার করতে বলেছেন।
আমরাও তো যাই, আমাদেরও তো মেয়ে আছে? কই, এসব বলে না তো? কী হয়েছে মেয়ের? আকবর গিন্নী মুখ ঝামটা দিয়ে কথাটা বলল।
এখানে ভাই আছে, এত কিছু বলতে পারছি না।
বেশ, এই তো বুঝেছেন। ভাই যখন আছে তখন ভাইয়ের সম্মান রাখতে এই শেষবার। আর কখনো দেখলে আমরা আপনাকে এ বাসায় রাখতে পারব না।
আকবর সাহেব আর কিছু বললেন না। শোভার মা, ‘আসি’ বলে, একরকম মাথা নিচু করেই ঘরে থেকে বেরিয়ে এলেন।
মা’র কাছে ঘটনাটা শুনে রাগে শরীর জ্বলতে শুরু করল শোভার। ইচ্ছা হচ্ছিল এখনই বাসা ছেড়ে দিতে। এমন অসভ্য মানুষের বাসা ছেড়ে চলে যাওয়াটাই সম্মানের। যাওয়া হলো না। অনেক সময় মন না চাইলেও অনেক কিছু মেনে নিতে হয়। মানিয়ে নিতে হয়।
৩মাস পরে–
ছি! ছি! ছি! আপনারা বাসা মালিক হয়ে এমন করলে আমরা যাই কোথায় বলেন তো?
শোভা বাইরে যাচ্ছিল। দুইতলার ভাড়াটিয়া চাচার সঙ্গে বাড়িমালিকের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময় শুনে দাঁড়িয়ে গেল।
আকবর সাহেব বলছেন, কী হয়েছে রবিউল ভাই? এভাবে বলছেন কেন?
কী হয়েছে? ওইসব কাপড় এভাবে কেউ ছাদে শুকাতে দেয়? আজ কম্বল রোদে দিতে গিয়ে ছেলের সামনে আমি লজ্জ্বায় মুখ তুলতে পারছিলাম না।
কী করবো ভাই। রোগটা কোনোভাবেই সারছিল না আপনার ভাবির। গাইনোকোলজিস্ট বললেন…।
শোভার যা বোঝার বোঝা হয়ে গেল। এখানে আর বেশিক্ষণ দাঁড়ানো ঠিক হবে না। জোর পায়ে নিচে নেমে এলো। মনে পড়ে গেল, “কী যাতনা বিষে, বুঝিবে সে কিসে, কভু আশীবিষে, দংশেনি যারে।”
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন