micro-story-body

‘বডি’
পায়েল চট্টোপাধ্যায়


-পারফিউম আছে তো রুমালে?

প্রশ্নটা করতে করতেই লোকটা সামনের দিকে এগিয়ে গেল।

স্যাঁতস্যাঁতে অন্ধকার ঘরটা চেনা অরিত্রর। গতবারও এই মর্গটাতেই ছিল বডিটা। অরিত্রর উত্তর না পেয়ে লোকটা পকেটে থাকা ছোট্ট আতরের শিশিটা বের করে এগিয়ে দিল অরিত্রর দিকে। এক চেনাশোনা ডাক্তারকে ধরে এই মর্গটায় এসেছে অরিত্র। গতবার তবে এই লোকটা ছিল না। এ বড্ড গায়েপড়া। অস্বস্তি হচ্ছে অরিত্রর। এখনো আতরের শিশিটা হাতে ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে লোকটা।

-“আমি রুমালে পারফিউম লাগিয়ে এনেছি।” শব্দগুলো উগরে অরিত্র সামনের দিকে এগিয়ে যায়। ট্রে টেনে লোকটা তাড়াতাড়ি বডিটা বের করে। একটা ঠান্ডা স্রোত এসে ঝাপটা মারে অরিত্রর নাকে। “নাহ! এটা হবে না। নাকে আঁচিলটা যদিও রয়েছে, কিন্তু এটায় তো ডান পায়ের বুড়ো আঙুলটা নেই, কড়ে আঙুলটা রয়েছে।”

মোক্ষম সময়ে তৃণার ফোন।

-“আজ পেলে? মা আজও দাদার নাম করে বিড়বিড় করেছে সারা দুপুর!”
ও প্রান্তের গলায় উদ্বেগ।

নিরাশ হয়ে বাড়ির দিকে পা বাড়ায় অরিত্র। গত দশ দিনে প্রায় চার-পাঁচটা মর্গ ঘুরে সাতটা মৃতদেহ দেখেছে ও। একটা ‘বডি’ প্রয়োজন। বেওয়ারিশ লাশ হলেই চলবে। যার ডান পায়ের কড়ে-আঙুল নেই আর নাকে একটা ইয়াব্বড় আঁচিল।

অরিত্রর দাদা সুহত্র। সেনাবাহিনীর অফিসার। বেসে থেকে যুদ্ধ করছিল শত্রুপক্ষের সঙ্গে। পাহাড়ের অতল খাদে তলিয়ে যাওয়া দলাপাকানো শরীরটা খুঁজে পাওয়া যায়নি। অনুমান করে নেওয়া হয়েছে মাত্র। শোকে পাথর মা অপেক্ষা করছে সন্তানের মৃতদেহ দেখবে বলে। তেরঙা পতাকায় ঢাকা একটা বডি দেখার অপেক্ষায় জীবনের শেষের কটা দিন গুনছে মা। অরিত্রকে একটা অ্যাক্সিডেন্ট থেকে বাঁচাতে গিয়ে দাদার ডান পায়ের কড়ে আঙুলটা বাদ পড়ে। কিছু চেনা মানুষকে বলে কয়ে দাদার শরীরের বৈশিষ্ট্যওলা একটা ‘বডি’ জোগাড় করার চেষ্টা করে চলেছে অরিত্র। বেশ কয়েকটা মর্গ ঘোরা হয়ে গেছে।

তৃণা আবার ফোন করছে। রাস্তার আলোটা লাল, হলুদ… না না সবুজ। ধাক্কা। লরির চাকা দুটো পাথরের মত অরিত্রর শরীরে চেপে বসল। বাকি দুটো চাকা বোধহয় পায়ের ওপর। ডান পায়ের কড়ে আঙুলটা যেন ছিড়ে পড়ছে! লাল রঙের বন্যায় ভেসে যাচ্ছে অরিত্র! তৃণার ফোনটা যদি একবার ধরা যেত! একটু পরেই হয়তো ‘বডিতে’ পরিণত হবে অরিত্র! ডান পায়ের কড়ে-আঙুলবিহীন বডি! তৃণাকে যদি বলা যেত, মায়ের জন্য একটা বডি পাওয়া গেছে! অরিত্রর নিজের নাকেও একটা বেশ বড় আঁচিল রয়েছে। অরিত্রর খুব শীত করছে, সব ঠান্ডা করে দেওয়া শীত।

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *