বৃষ্টি নামার আগে

বৃষ্টি নামার আগে
সৈকত ঘোষ

এই করোনার বাজারে অফিস থেকে বেরোতে লেট হলে বাড়ি ফেরাটা সত্যিই খুব চাপের হয়ে যায়। আটটা সাড়ে আটটার পর এদিকে আর তেমন কিছু পাওয়া যায় না। না বাস, না শাটেল ট্যাক্সি, এই হলো সেক্টর ফাইভের অবস্থা। আর রোজ রোজ ওলা উবের ধরে ফেরাটাও খুব এক্সপেন্সিভ। মাইনের অর্ধেকটাই তাহলে ভোগে যাবে। এই তো দু-একদিন আগেই মোবাইলে র‍্যাপিডো অ্যাপটা নামিয়েছে রূপসা। আজ সাহস করে একটা রাইড বুক করেই ফেললো। এখান থেকে কালিকাপুর বেশিক্ষণের পথ নয়, ফেয়ার চল্লিশ টাকা, বেশ রিজনেবল।

গরমটাও ভ্যাপসা পড়েছে আজ। আকাশে মেঘ মেঘ। মনে হচ্ছে বৃষ্টি হবে। বাড়িতে একটা ফোন করে দেয় রূপসা, নাহলে আবার মা দক্ষযজ্ঞ বাধাবে। ওদিকে র‍্যাপিডোর লোকটা ফোন করছে বোধহয়। স্ক্রিনে একটা খুব চেনা চেনা নাম্বার ভেসে উঠলো
-ম্যাডাম আপনি কোথায় আছেন?
-এই তো টেকনোর সামনে। আপনি চলে আসুন দেখতে পেয়ে যাবো…
-আচ্ছা ম্যাডাম ২মিনিট
ঠিক মিনিট দুয়েকের মধ্যেই একটা বাইক এসে থামলো রূপসার সামনে। রাইডার ছেলেটি একটা হেলমেট এগিয়ে দিলো রূপসার দিকে।
-ম্যাডাম তাড়াতাড়ি উঠে পড়ুন, আশা করছি বৃষ্টির আগেই আপনাকে সেফলি ড্রপ করে দিতে পারবো।
রূপসা বাইকে উঠে বসে। ছেলেটি স্মুথলি চালাচ্ছে। বহুদিন বাদে একটা খুব চেনা গন্ধ অনুভব করছে রূপসা। ঠিক এভাবেই বছর দুয়েক আগে এটা ওর প্রায় ডেলি রুটিন ছিলো। অফিস শেষে ধ্রুব ওকে পিক করতে আসতো। তারপর ওর বাইকেই ফেরা। মাঝে চিংড়িঘাটায় দাঁড়িয়ে একটু চা স্নাক্স নিয়ে আড্ডা মেরে সাড়ে নটার মধ্যে বাড়িতে। আজও ওই জায়গাটা ক্রস করার সময় সেই দিনগুলোকে আঙুলে লেগে থাকা গন্ধের মতো ফিল করে রূপসা। চোখের কোনটা চিকচিক করে ওঠে। কি ছিলো সেই সব দিন…তারপর এই দু’বছরে আর কারও বাইকে ওঠা হয়নি।

ঠিক রূপসার বাড়ির সামনে এসে বাইক দাঁড় করার ছেলেটি। ম্যাডাম…
স্বপ্নের মতো একটা ঘোর যেন কেটে যায়। বাইক থেকে নেমে হেলমেটটা খুলে ছেলেটার হাতে দেয় রূপসা। তারপর গেটটা খুলতে গিয়ে থমকে দাঁড়ায়। কিছু কি ফেলে যাচ্ছে ও…সেই চেনা গন্ধটা! মাথার মধ্যে সবকিছু কেমন যেন তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে। চোখের সামনে স্পষ্ট ভেসে ওঠে নাম্বারটা।

এতক্ষণে ছেলেটি হেলমেটটা খুলে ওর দিকে তাকায়…
-এই দু’বছরে একটুও বদলাওনি দেখছি। একেবারে আগের মতোই…
মুখ দিয়ে কোনও কথা বের হয় না রূপসার। দু’চোখে তখন বৃষ্টি, অঝোর বৃষ্টি…

এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *