micro-story-correction

কারেকশন

দেবাঞ্জন মুখোপাধ্যায়

শপিং মলে ব্লেজার সেকশনে এদিক ওদিক করছিলেন দেবব্রত চৌধুরী। সকালে অফিসে হঠাৎ ঘোষণা করা হয়েছে কোম্পানির শীর্ষকর্তা শহরে আসছেন জরুরি মিটিংয়ের জন্য। সমস্যায় পড়েছেন দেবব্রত। সবে শীত গেছে তাই স্যুটটা ড্রাই ক্লিনিংয়ে পাঠিয়েছেন। আরেকটা ব্লেজার তাঁর ছেলে নিয়ে বাইরে গেছে নিজেরটা ময়লা হয়ে যাওয়ায়। কিন্তু করপোরেট মিটিংয়ের আলাদা পারিপাট্য আছে। সেখানে আপোষ চলে না।যেহেতু কয়েক ঘন্টার ব্যাপার, দেবব্রত চাইছিলেন সস্তার উপরে কাজ সারতে। দেবব্রতর প্রয়োজনটা বুঝে মহিলা অ্যাটেন্ডেন্ট তাঁকে সেকশনের এক কোণে নিয়ে গিয়ে বললেন ব্লেজারগুলোয় সামান্য খুঁত থাকার কারণে পঞ্চাশ সতাংশ ছাড়ে পাওয়া যাচ্ছে। একটু বেছে নিতে পারলে কাজ চালানোর মতো জিনিস পাওয়া যাবে।খুঁত বিশেষ পাচ্ছিলেন না দেবব্রত, কিন্তু সেগুলো তাঁর বড়সড় চেহারা আঁটার মতো নয়। অনেক খুঁজে একটা ব্লেজার দেখে তাঁর মনে হল এতে তিনি নিজেকে স্বচ্ছন্দে মুড়ে নিতে পারবেন। সেটাকে নিয়ে ট্রায়াল রুমের দিকে এগোচ্ছেন, এমন সময় কিছু কথোপকথন তাঁর চলার গতি কমিয়ে দিল। যে অ্যাটেন্ডেন্ট তাঁকে সাহায্য করেছেন একটু আগে তিনি আরেক সহকর্মীর সঙ্গে কথা বলছেন। দেবব্রত কান খাড়া করে শুনলেন। অ্যাটেন্ডেন্টটি কাঁদছেন এবং সহুকর্মীটি ভরসা দিয়ে বলছেন,”অত ভাবিস না। কিছু ব্যবস্থা হবেই। ধারই তো নিবি। এতে আবার চেনা অচেনার কী আছে? যে দেবে তাকেই ধার শোধ করতে হবে। আমি দেখছি দাঁড়া।”এগোতে এগোতে দেবব্রত শুনতে পাচ্ছিলেন অ্যাটেন্ডেন্ট বলছেন,”আজ একটু আগে ছাড় পেলেও ভদ্রলোকের সঙ্গে দেখা করতে পারতাম। কী জীবন যে হয়ে গেল! সামান্য একটা ভুলের জন্য নিরীহ ভালমানুষটার চাকরি চলে গেল! পোশাক ঠিক নেই, এটা এত বড় অপরাধ? তুমি তো অতনুকে দেখেছ সুপ্রীয়াদি! জানো তো একেবারে নরম মানুষ ও।এক বছর হতে চলল, তবু ওই ঘটনার ধাক্কা ও সামলে উঠতে পারেনি আজও। এখানে আমি যা পাচ্ছি, তাতে কী হয় বলো? অনেকগুলো টেস্ট করাতে হবে ওর। পেন্ডিং রয়েছে অনেকদিন, শুধু টাকার অভাবে। জানি না কোথা থেকে জোগাড় হবে।”ব্লেজারের দাম মিটিয়ে বেরোনোর সময় অ্যাটেন্ডেন্টটিকে খুঁজে নিয়ে আড়ালে ডাকলেন দেবব্রত। তাঁর ওয়ালেটে সদ্য উইথড্র করা পঞ্চাশ হাজার টাকা ছিল। সেটি অ্যাটেন্ডেন্টের দিকে এগিয়ে দিলেন। বললেন,”আপনার বিপদের কথা শুনলাম। এটা রাখুন!”অ্যাটেন্ডেন্ট বিস্মিত, হতবাক। আমতা আমতা করে বললেন,”কিন্তু কেন? আমি ধার শোধ করবো কেমন করে?””করবেন না। কারণ এটা ধার নয়। আপনার স্বামীকে বলবেন একটা ভুল হয়ছিল, সেটা কারেকশন করা হয়েছে।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *