ছন্দা বিশ্বাস
আমবুটিয়ার চা বাগিচার সামনে দাঁড়িয়ে পুলিশের আধিকারিক মিঃ অরণ্য বসু হাত উঁচু করে দেখালেন, “স্যার, ওই যে ওইদিকে একবারটি দেখুন, দেখতে পাচ্ছেন পাহাড়ের গাটা?”
তাকিয়ে দেখি পশ্চিম দিকের পাহাড়ের গায়ে বেশ খানিকটা অঞ্চল একেবারে গাছপালা হীন জনবসতি শূন্য ফাঁকা হয়ে আছে। ছাল চামড়া উঠে গিয়ে বিশাল বড়ো ক্ষতের মতো দেখাচ্ছে।
অরণ্য আমায় বললেন, “স্যার, কিছুদিন আগেই এখানে ভয়ংকর এক ল্যান্ড স্লাইড হয়ে গেছে। গোটা এশিয়ায় এতো বড়ো ল্যান্ড স্লাইড এর আগে কখনো ঘটেনি। সেই রাতে প্রচন্ড ভূকম্পণ অনুভূত হয় এবং তারপরেই একটা গোটা গ্রাম নিশ্চিহ্ন হয়ে যায়। প্রায় দুশোটি পরিবার!”
আমি তাকিয়ে দেখি সত্যি বীভৎস এবং কদাকার দেখাচ্ছে। খবরের কাগজে পড়েছিলাম আর এখন নিজের চখে দেখছি। এক মুহূর্তে একটি পাহাড়ি জনপদ নিশ্চিহ্ন হয়ে গেল!
তদন্তের স্বার্থে আজ আমাকে ওনারা এইখানে ডেকে এনেছেন। মন্ত্রীত্বের দায়িত্বভার পাওয়ার পরে কার্শিয়াং এ অনেকবার এসেছি কিন্তু এইভাবে কখনো দেখা হয়নি। আমরা পাহাড়ের উপরে যেখানে এখন দাঁড়িয়ে আছি সেখান থেকে চা বাগিচার তিনশ ষাট ডিগ্রী দেখা যায়। চারিদিক পাহাড় দিয়ে ঘেরা অদ্ভুত শান্ত পরিবেশ। নীল আকাশের নীচেয় সবুজ গালিচা বিছানো চা বাগিচা। লাটিমের লেত্তির মতো রাস্তার গা কেটে বানানো পথ ঘুরে ঘুরে ক্রমশঃ নীচের দিকে নেমে গেছে। উপর থেকে একেবারে সমতল পর্যন্ত দেখা যাচ্ছে। নীচের দিকে নামতে থাকা গাড়ীগুলোকে উপর থেকে দেশলাই বাক্সের মতো দেখাচ্ছে। বেশীক্ষণ চোখ রাখা যায় না। মাথার ভিতরে পাক খায় শূন্যতা।
খুব ছোটবেলায় রাইকে এরকম কত ছোটো ছোটো গাড়ি কিনে দিয়েছি। গাড়ীর শখ ছিল খুব মেয়েটার। কী বায়না করতো। নিত্য নতুন ব্রান্ডের গাড়ি চালাতে ভালোবাসত। কিন্তু শেষের সেদিন কেন যে সব চাইতে পুরানো কম দামী গাড়ীটা নিল। ড্রাইভার নিলয়কে সঙ্গে নিয়ে বেরিয়েছিল সেদিন এ পথে। নিলয় আমার দশ বছরের পুরানো ড্রাইভার। হ্যান্ডসাম, অমায়িক এবং বিশ্বস্ত।
শুনলাম সেদিক রাই নাকি নিলয়কে সরিয়ে জোর করে নিজেই ড্রাইভ করছিল।
পাহাড়ি পথে অবশ্য রাই এর আগেও অনেকবার চালিয়েছে। কিন্তু সেদিন হঠাৎ,-
আমি এটাই জানতাম। কিন্তু গোয়েন্দা পুলিশ অন্য কথা বলছেন। বলছেন কেউ ওকে পিছন দিক থেকে ধাক্কা দিয়ে খাদে ফেলে দেয়। তারপর গাড়ীটাকে। অপরাধী চিহ্ন রাখতে চায়নি।
এই চা বাগিচা থেকে হাজার ফুট নীচেয় রাই এর লাশ পাওয়া যায়। রাই এর প্রিয় গাড়ীটা তারও অনেকটা নীচেয় ভগ্ন অবস্থায় পড়ে আছে দেখে এলাম। দেখে বোঝার উপায় নেই এটাই আমার গাড়ি কিনা।
রাই এর তদন্তে আরো অনেক তথ্য উঠে আসে। পোস্ট মর্টেম রিপোর্টে লেখা আছে, রাই অন্তঃসত্বা ছিল।
ওর রক্তে নার্কোটিক ড্রাগেরও নমুনা মিলেছে। গতকাল নিলয়কে জোর জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন গোয়েন্দা অফিসারেরা মিলে। জেরায় সে স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে একজনের প্ররোচনায় সে এই কাজটি করেছে এবং এর জন্যে সে পঞ্চাশ হাজার টাকা পেয়েছে।
রাইয়ের মোবাইল এখন গোয়েন্দাদের হাতে। ওর মোবাইল ফোন চেক করে কয়েকটি ফটো পাওয়া গেছে। নিলয়ের সঙ্গে রাই এর মা মানে আমার মিসেসের অন্তরঙ্গ কিছু মুহূর্ত ধরা আছে তাতে।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন
একরাশ ভাললাগা।