‘‘ওরা তোমার সাথে বেশ মানিয়ে নিয়েছে । আমিতো বেশ ভয়ে ভয়ে ছিলাম যদি ওরা তোমাকে ঠিক গ্রহণ করতে না পারে। এখন আমি একেবারেই নির্ভার, দুশ্চিন্তামুক্ত। তুমি সব সামলে নিতে পারবে…” এসএমএস করা এই কথাগুলোইতো সেদিন নাস্তার টেবিলে বসে বলেছিল অনিরুদ্ধ! শ্রাবন্তীর বিস্ময় কাটে না ! স্ত্রীর মৃত্যুর পর অনিরুদ্ধ দুই মেয়েকে নিয়ে খুবই দিশাহারা হয়ে পড়েছিল। সোহানা ৮, অহনা ৫। অফিস সামলে মেয়েদের দেখাশুনো তার পক্ষে অসম্ভব হয়ে উঠেছিল। প্রথম এক মাসতো ছুটি নিয়ে বাড়িতে মেয়েদের সামলেছিল সে। তারপর থেকেই মাইনে করা লোকের মাধ্যমে জোড়াতালি দিয়ে চলছিল। কিন্তু এভাবে আর কদিন ! পিএ হওয়ায় এসবের প্রায় সবকিছুই সে জানতো। ভেতরে ভেতরে দিশাহারা ও বিষন্ন অনিরুদ্ধর প্রতি খানিকটা সহানুভূতি, না ভালোবাসা জন্মেছিল সে নিজে ঠিকমতো বুঝতে না পারলেও হঠাৎ করে যেদিন তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে বসল, সে অবাক হলেও খুব আগপাছ না ভেবে রাজি হয়ে গেল। সংশয় তার মনেও ছিল। মেয়ে দুটো তাদের মায়ের জায়গায় তাকে মেনে নিতে পারবে তো? কিন্তু ওদেরকে মানিয়ে নেওয়ার সংকল্পটা মনে মনে সে নিজেই করেছিল এবং বলা যায় বেশ দ্রুতই জয়ী হয়েছিল। প্রাথমিক অস্বস্তি কাটিয়ে মেয়ে দুটো তার সাথে সহজ ও আন্তরিক হয়ে উঠেছিল। সোহানা একটু সময় নিলেও অহনা দ্রুতই তাকে ’মা’ ডাকতে শুরু করেছিল। সবকিছু দেখে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলা অনিরুদ্ধ সেদিন নাস্তার টেবিলে ওই কথাগুলো বলেছিল। তখন কথাগুলোর মধ্যে কোনো ইঙ্গিত খুঁজে পায়নি শ্রাবন্তী, বরং তার উপর নির্ভরতার প্রতিদান দিতে পারায় মনে মনে খুশিই হয়েছিল সে। ভেবেছিলো, যাক, লোকটাকে অন্তত ভারমুক্ত করতে পেরেছে। কিন্তু তা কি এতটাই! অফিসের কাজ ছেড়ে দেওয়ার পর ওখানকার বিষয় নিয়ে সে কখনো মাথা ঘামায়নি। সহকর্মীদের কারো কারো সাথে ফোনে মাঝে মাঝে এক-আধটু কথা হতো, তাদেরই কারো কাছ থেকে একটু উড়ো উড়ো শুনেছিল যে অনিরুদ্ধ বিদেশে বড় এক কোম্পানির চাকরির অফার পেয়েছে। ইউকেতে পোস্টিং, অনেক বেতন। কিন্তু মেয়েদের কথা ভেবে সে রাজি হচ্ছে না। এইটুকুই। অনিরুদ্ধ কখনো নিজে থেকে তাকে বলেনি বলে সেও গরজ করে জিজ্ঞাসা করেনি। আজই জানল। পুরো এসএমএসটা বারকয়েক পড়ে সে দ্রুত অনিরুদ্ধকে ফোন করল, কিন্তু সংযোগ দেয়া সম্ভব হচ্ছে না জানল। বুঝতে পারলো, এতক্ষণে বোর্ডিং হয়ে গেছে। সব ভার তার কাঁধে চাপিয়ে দুশ্চিন্তামুক্ত, নির্ভার অনিরুদ্ধ উড়োজাহাজের ডানায় ভর করে ছুটে চলেছে নতুন গন্তব্যে।এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে এখানে ক্লিক করুন
Eta ki nirvarota na swarthaparota?