এবার নিউ ইয়র্কে বেশ গরম পড়েছে। বাস স্টপে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ঘামছিলাম আমি। এদিকে বাসের দেখা নেই। রুমাল দিয়ে কপালের ঘাম মুছে সেটাকে সবে পকেটে রেখেছি এমন সময় দেখলাম এক বয়স্ক কালো লোক আমার পাশে এসে দাঁড়িয়েছে। পরনে পুরোনো আধময়লা পোশাক, পায়ে ছেঁড়া জুতো। বয়সের ভারে কোমর বেঁকে গেছে, চোখে মুখে একটা গভীর দুঃখের ছাপ। একটু বিব্রত আর বিরক্ত হলাম আমি। কী চায় রে বাবা? পাশেই একটা সুপ কিচেন অর্থাৎ দরিদ্র ভোজনালয় আছে। তারা বিনি পয়সায় খাবার বিলি করে, গৃহহীন (হোমলেস) আর অন্যান্য গরিবরা দুপুরে আর রাতে খেতে আসে। আমি চেষ্টা করি এদিকটায় বেশি না আসতে কিন্তু যখনই আসি সব সময় কেউ না কেউ সিগারেট বা খুচরো পয়সা চায়। নিজের গায়ের রঙ বাদামি হলে কী হবে কালোদের তাও সন্দেহের চোখে দেখি! সিগারেট তো খাই না তাই দিতে পারি না তবে পকেটে খুচরো পয়সা থাকলে দি। কিছুটা ‘লেস ফর্চুনেট’দের সাহায্য করার চেষ্টায় আর কিছুটা ভয়ে। আমার এক বন্ধু একবার কিছু না দিয়ে ওদের একজনের কাছে ঘুঁসি খেয়েছিল সেই গল্প আমার জানা আছে। আজকেও সেই ভয়েই পকেটে হাত ঢোকাতে যাচ্ছিলাম তখন দেখি লোকটা নিজের পকেট থেকে একটা ছোট জলের বোতল বার করছে।
আমাকে জিজ্ঞেস করল, “নেবে?”
আমার অবস্থা ‘তৃষ্ণাতে যে ছাতি ফাটে যাতনায় মরি’র মতন। ওর হাতের দিকে তাকিয়ে দেখলাম। কুঁচকানো চামড়া কিন্ত হাত তো পরিষ্কার বলেই মনে হল। বোতলটাও সীল করা। হাত বাড়িয়ে বোতলটা নিলাম। ‘থ্যাঙ্ক ইউ’ বলে পকেট থেকে কিছু ডলার বার করতে যাবো ওমা লোকটা দেখি হাঁটা দিয়েছে!
“ইউ মেড হিস ডে! বোতলটা নিয়ে ওর আজকের দিনটাকে সফল করে দিলে তুমি!”
কথা শুনে ফিরে তাকিয়ে দেখলাম একটা বছর তিরিশেকের অ্যাফ্রো ছেলে।
ছেলেটা সুপ কিচেনে কাজ করে, সেই বলল, “জো-র অবস্থা বেশ ভাল ছিল এককালে। ছেলে-মেয়ের নামে সব লিখে দিয়ে নিজে এখন পথে বসেছে। ওরা দেখে না। তাও প্রবল ইচ্ছা অন্যের জন্যে কিছু করবে। সব সময় সুযোগ পায় না। আজ গরম বলে একটা সংস্থা থেকে এসে সুপ কিচেনের সবাইকে বাড়তি জলের বোতল দিয়েছে। সেগুলোকেও পকেটে করে নিয়ে ঘুরছে জো! জানো ও নিজের খাবার থেকেও লুকিয়ে পাউরুটি পকেটে ভরে রাখে পাখিদের দেবে বলে! ওই দেখো!”
আমি তাকিয়ে দেখলাম। একটু দূরেই এক ঝাঁক পায়রাদের মধ্যে দাঁড়িয়ে পাঁউরুটি ছিঁড়ে ছুঁড়ে ছুঁড়ে দিচ্ছে জো। মুখে একটা পরম তৃপ্তির ভাব। ওকেও কারো প্রয়োজন আছে!এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে এখানে ক্লিক করুন