মারিয়া সালাম
অনেকটা পথ হেঁটে ক্লান্ত শেখ মোহসিন। মাথার ওপরে গনগনে সূর্যের তাপ, হাতদুটো রশি দিয়ে শক্ত করে বাঁধা। অন্যসব আধমরা সৈনিকদের সাথে তাল মিলিয়ে চলতে গিয়ে হিমশিম খাচ্ছে মোহসিন। হাজার মাইল হাঁটা সৈনিকের পা দুটো আজ বিদ্রোহ করছে তার সাথে। মনের সব ভার যেন পা দুটোতে ভর করেছে, বারবার পিছে ফিরে দেখতে গিয়ে তাল হারিয়েছে সে।
হাঁটু ভেঙে দুইবার যশোর রোডের শক্ত কংক্রিটের বুকে আছড়ে পড়েছে। পেছনের সহযোদ্ধা ধরে দাঁড় করিয়েছে দুদবারই, ধুলো লাগা ইউনিফর্মের শক্ত কাপড় ভেদ করে ক্ষত থেকে ঝরা রক্তের দাগ স্পষ্ট দৃশ্যমান।
সেদিকে খেয়াল নেই মোহসিনের, কেবল পেছনে ফিরে ফিরে অপলার মিলিয়ে যাওয়া দেখছে। মার্শাল ট্রায়ালে ওর ফাঁসি হতে পারে, ছাড়াও পেয়ে যেতে পারে বা নির্মম নির্যাতনের মুখোমুখি হতে পারে সে।
যুদ্ধে বিদ্রোহী সৈনিকের কপালে কি জুটতে পারে জানে মোহসিন, যে কোনো সাজা সে মাথা পেতে নেবে। ব্রিটিশ সরকার তাকে রাষ্ট্রদ্রোহী বলে ফাঁসি দিক বা ফায়ারিং স্কোয়াডে দিক, সে নিজেকে দেশপ্রেমী মনে করে আর দেশমাতার সম্মানে মৃত্যুকেও প্রয়োজনে আলিঙ্গন করে নেবে।
এ মুহূর্তে সে ভাবছে কেবল অপলার কথা। মেয়েটার বয়স কতই বা হবে, বড়জোর তের বা চোদ্দ। নেতাজির ঝাঁসি ব্রিগেডের সর্বকনিষ্ঠ সদস্যদের মধ্যে একজন অপলা। নীচুজাতের বাঙালি হিন্দু, পড়ালেখা বলতে গেলে জানে না কিছুই, তবু জীবনের হিসাবটা জেনে গেছে এই বয়সেই। জাতপাতের বিভেদ ঘুচাতে চেয়েছে মেয়েটা, স্বাধীন ভারতে একজন স্বাধীন মানুষ হিসেবে মাথা উঁচু করে বাঁচতে চেয়েছে অপলা, তাই সবছেড়ে নেতাজীর ডাকে যুদ্ধে নেমেছিল।
যুদ্ধের মাঠেই পরিচয় অপলা আর মোহসিনের। এরকম স্বাধীনচেতা মেয়ে আগে দেখেনি মোহসিন। গড়ে উঠেছে ভালোবাসা আর সম্মানের অদ্ভুত এক সম্পর্ক। একদম অল্পদিনেই মেয়েটার দাদাভাই হয়ে উঠেছে সে, তাই পরিস্থিতি যাই হোক এতদিন বুক দিয়ে আগলে রেখেছিল মেয়েটাকে।
মোহসিনরা চেয়েছিল ভারতমাতাকে স্বাধীন করতে, কিন্তু বিধিবাম। আজ তারা রাষ্ট্রদ্রোহী আর বিদ্রোহী, মায়ানমারের যুদ্ধের ময়দান থেকে তাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ঝিকরগাছায়।
সেখানেই চলবে বিচার, বেশিরভাগ নারী সহযোদ্ধা নিরাপদে সরে গেলেও অপলার মতো বেশ কয়েকজন এখনও বন্দি। তবে ব্রিটিশ সরকারের আদেশে মেয়েদের আজ সরিয়ে নেয়া হচ্ছে, তাদের ক্ষমা করে দিয়েছে সরকার।
সংবাদটা শুনেই আনন্দে কেঁদে উঠেছিল মোহসিন। অপলা বেঁচে যাবে, এইমুহূর্তে তার কাছে এরচেয়ে বড় সুখের সংবাদ আর নেই। যাবার সময় মোহসিন চেয়েছিল হাসিমুখে অপলাকে বিদায় দিতে, কিন্তু মেয়েটা এমন জেদাজেদি শুরু করে দিল! মোহসিনকে রেখে সে নড়বে না একপাও। অবশেষে টেনেহেঁচড়ে তাকে এমনভাবে দল থেকে আলাদা করা হলো, বিদায়ের সময় মেয়েটাকে মোহসিনের কিছুই বলা হলো না।
‘দাদাভাই এরা আমাকে নিয়ে মেরে ফেলবে রে! ব্রিটিশদের বিশ্বাস নাই…’
গলা ফাটিয়ে বলল অপলা। মোহসিনের ঝাপসা চোখের সামনে দিয়ে পথের বাঁকে মিলিয়ে যেতে যেতে অপলা ফের বলল, আমি আবার আসব রে তোর সাথে দেখা করতে।
হাঁটু ভেঙে দুইবার যশোর রোডের শক্ত কংক্রিটের বুকে আছড়ে পড়েছে। পেছনের সহযোদ্ধা ধরে দাঁড় করিয়েছে দুদবারই, ধুলো লাগা ইউনিফর্মের শক্ত কাপড় ভেদ করে ক্ষত থেকে ঝরা রক্তের দাগ স্পষ্ট দৃশ্যমান।
সেদিকে খেয়াল নেই মোহসিনের, কেবল পেছনে ফিরে ফিরে অপলার মিলিয়ে যাওয়া দেখছে। মার্শাল ট্রায়ালে ওর ফাঁসি হতে পারে, ছাড়াও পেয়ে যেতে পারে বা নির্মম নির্যাতনের মুখোমুখি হতে পারে সে।
যুদ্ধে বিদ্রোহী সৈনিকের কপালে কি জুটতে পারে জানে মোহসিন, যে কোনো সাজা সে মাথা পেতে নেবে। ব্রিটিশ সরকার তাকে রাষ্ট্রদ্রোহী বলে ফাঁসি দিক বা ফায়ারিং স্কোয়াডে দিক, সে নিজেকে দেশপ্রেমী মনে করে আর দেশমাতার সম্মানে মৃত্যুকেও প্রয়োজনে আলিঙ্গন করে নেবে।
এ মুহূর্তে সে ভাবছে কেবল অপলার কথা। মেয়েটার বয়স কতই বা হবে, বড়জোর তের বা চোদ্দ। নেতাজির ঝাঁসি ব্রিগেডের সর্বকনিষ্ঠ সদস্যদের মধ্যে একজন অপলা। নীচুজাতের বাঙালি হিন্দু, পড়ালেখা বলতে গেলে জানে না কিছুই, তবু জীবনের হিসাবটা জেনে গেছে এই বয়সেই। জাতপাতের বিভেদ ঘুচাতে চেয়েছে মেয়েটা, স্বাধীন ভারতে একজন স্বাধীন মানুষ হিসেবে মাথা উঁচু করে বাঁচতে চেয়েছে অপলা, তাই সবছেড়ে নেতাজীর ডাকে যুদ্ধে নেমেছিল।
যুদ্ধের মাঠেই পরিচয় অপলা আর মোহসিনের। এরকম স্বাধীনচেতা মেয়ে আগে দেখেনি মোহসিন। গড়ে উঠেছে ভালোবাসা আর সম্মানের অদ্ভুত এক সম্পর্ক। একদম অল্পদিনেই মেয়েটার দাদাভাই হয়ে উঠেছে সে, তাই পরিস্থিতি যাই হোক এতদিন বুক দিয়ে আগলে রেখেছিল মেয়েটাকে।
মোহসিনরা চেয়েছিল ভারতমাতাকে স্বাধীন করতে, কিন্তু বিধিবাম। আজ তারা রাষ্ট্রদ্রোহী আর বিদ্রোহী, মায়ানমারের যুদ্ধের ময়দান থেকে তাদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ঝিকরগাছায়।
সেখানেই চলবে বিচার, বেশিরভাগ নারী সহযোদ্ধা নিরাপদে সরে গেলেও অপলার মতো বেশ কয়েকজন এখনও বন্দি। তবে ব্রিটিশ সরকারের আদেশে মেয়েদের আজ সরিয়ে নেয়া হচ্ছে, তাদের ক্ষমা করে দিয়েছে সরকার।
সংবাদটা শুনেই আনন্দে কেঁদে উঠেছিল মোহসিন। অপলা বেঁচে যাবে, এইমুহূর্তে তার কাছে এরচেয়ে বড় সুখের সংবাদ আর নেই। যাবার সময় মোহসিন চেয়েছিল হাসিমুখে অপলাকে বিদায় দিতে, কিন্তু মেয়েটা এমন জেদাজেদি শুরু করে দিল! মোহসিনকে রেখে সে নড়বে না একপাও। অবশেষে টেনেহেঁচড়ে তাকে এমনভাবে দল থেকে আলাদা করা হলো, বিদায়ের সময় মেয়েটাকে মোহসিনের কিছুই বলা হলো না।
‘দাদাভাই এরা আমাকে নিয়ে মেরে ফেলবে রে! ব্রিটিশদের বিশ্বাস নাই…’
গলা ফাটিয়ে বলল অপলা। মোহসিনের ঝাপসা চোখের সামনে দিয়ে পথের বাঁকে মিলিয়ে যেতে যেতে অপলা ফের বলল, আমি আবার আসব রে তোর সাথে দেখা করতে।
এই পৃষ্ঠাটি লাইক এবং শেয়ার করতে নিচে ক্লিক করুন